কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত অধিকাংশ ব্যক্তির সাধারণত জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি, গলা ব্যথা হয়। তাঁরা সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রায় ১৫% রোগীর মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়। এনাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫% রোগীর কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের দরকার হয়। এবং এনাদের মধ্যে অনেকেরই সবরকম প্রচেষ্টা স্বত্বেও মৃত্যু ঘটে।
নিউমোনিয়া কি?
ফুসফুসের যে অংশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় হয় সে জায়গাটাকে বলে অ্যালভিওলি। এই অ্যালভিওলি গুলি বাতাস ভর্তি ক্ষুদ্র থলির মতো। অ্যালভিওলি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে এর ভেতরের বাতাস পূর্ণ স্থান পুঁজ ও তরল দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। যার ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময় বাধা পায়। ফলে রক্তে অক্সিজেন কমতে থাকে এবং শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। রোগী চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত হয় শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা নিয়ে। একেই নিউমোনিয়া বলা হয়।
নিউমোনিয়ার কারণঃ
অনেকরকম ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস নিউমোনিয়া করতে পারে। এখন কোভিড-১৯ এর মহামারী চলছে। তার মানে এই নয় যে অন্য জীবাণুর দ্বারা নিউমোনিয়া হচ্ছে না। এই মহামারীর সময়েও কিন্তু অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া যেমন স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি একই রকমভাবে নিউমোনিয়া করে চলেছে। একটা পরিসংখ্যান জানাই। ২০১৮ সালে নিউমোনিয়াতে শুধু পাঁচ বছরের নীচের বাচ্চা মারা গেছে আট লাখ। অর্থাৎ প্রতিদিন ২০০০ এরও বেশি বাচ্চা মারা গেছে।
নিউমোনিয়াকে চিকিৎসকেরা মূলত তিনভাগে ভাগ করেন।
১. কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া (CAP)
২. হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া (HAP)
৩. ভেন্টিলেটর অ্যাসোসিয়েটেড নিউমোনিয়া (VAP)
এই বিভাগগুলির বিস্তারিত বিবরণ নিষ্প্রয়োজন। শুধু এটুকুই বলার কোভিড-১৯ কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া ও হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া দুটোই করতে পারে। স্বাস্থ্যকর্মীরা মূলত আক্রান্ত হন হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়াতে।
কাদের করোনাতে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
যেকোনো বয়সেই নিউমোনিয়া হতে পারে। কিন্তু নীচের ব্যক্তিদের মধ্যে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা এবং তার থেকে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
১. ৬৫ বছরের বেশি বয়স। বয়স ৮৫ বছরের বেশি হলে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
২. অ্যাজমা রোগী।
৩. ফুসফুসের অন্য কোনো রোগ। যেমন ব্রঙ্কাইটিস, ইন্টারস্টিসিয়াল লাং ডিজিজ ইত্যাদি।
৪. ডায়াবেটিসের রোগী।
৫. হার্টের অসুখ।
৬. উচ্চ রক্ত চাপের রোগী।
৭. কিডনির অসুখ।
৮. অত্যধিক স্থূলতা। বডি মাস ইনডেক্স ৪০ এর বেশি।
৯. ধূমপায়ী।
১০. যাদের ইমিউনিটি দুর্বল। যেমন ক্যানসার রোগী, এইচআইভি রোগী, স্টেরয়েড ব্যবহারকারী রোগী।
১১. স্বাস্থ্যকর্মী যারা কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া রোগীদের চিকিৎসার সাথে যুক্ত।
কিভাবে করোনা রোগীদের নিউমোনিয়া নির্ণয় করা যায়?
চিকিৎসক বিভিন্ন লক্ষ্মণ দেখে বুঝতে পারেন নিউমোনিয়া হতে পারে। যেমন হৃদগতি বৃদ্ধি, শ্বাসের গতি বৃদ্ধি, উচ্চ তাপমাত্রা, প্রচুর ঘাম, বুকের অ্যালভিওলার শ্বাস শব্দের পরিবর্তন। তাছাড়াও রক্তে লিম্ফোসাইট কাউন্ট কমে যায় এবং সি- রিয়্যাকটিভ প্রোটিন (CRP) বেড়ে যায়।
এক্সরে এবং সিটি স্ক্যান করে নিঃসন্দেহ হওয়া যায়। সিটি স্ক্যানে দুপাশের ফুসফুসেই ক্ষত দেখা যায়। চিকিৎসকরা এই ক্ষতকে “ground glass” বলেন।
কোভিড-১৯ নিউমোনিয়ার কি কোনো চিকিৎসা আছে?
নিউমোনিয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে অক্সিজেন দেওয়া হয়। প্রায় ৫% রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বজায় রাখতে ভেন্টিলেটর লাগে।
ডিহাইড্রেশন যাতে না হয় তার জন্য স্যালাইন চালানো হয়।
ওষুধঃ
মিডিয়ার কল্যাণে আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ইত্যাদি কোভিড-১৯ এর নিউমোনিয়াতে ব্যবহৃত হয়। এর সাথে অনেক সময় অ্যাজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা হয়।
তাছাড়াও অনেক অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ যেমন রেমডেসেভির ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও বলার সময় আসেনি এই ওষুধ গুলি কোভিড-১৯ নিউমোনিয়াতে কতটা কাজ করে, অথবা আদৌ কাজ করে কিনা।
যেমন খুব সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণা বলছে কোভিড-১৯ নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় সম্ভবত হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইনের বিশেষ কার্যকারিতা নেই।
উপরের ছবিঃ নিউমোনিয়া কোভিড ১৯ সিটি স্ক্যান
Khub upokari post.janlam anek kichhu.khub sohoj kore bolechhen,amar moto sadharon manush o jaa bujhte pare.thank you doctor.thank you doctor’s dialogue.
Very informative and enough for personal protection and well narrated. Thank you for sharing so that we can take necessary preveventive actions.
Regards Abhoy Krishna Mitra
M 9433568992
Very informative and useful.