–আপনি এটা আমার সাথে করতে পারলেন? সেই প্রথম থেকে আপনি যা বলেছেন শুনেছি। আমার বাড়ির লোক বারণ করেছিল, তবু আমি আপনাকেই আঁকড়ে ছিলাম। সেই আপনি শেষকালে–
ফোনে অনিমেষ ডাক্তারের কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। পাশেই গিন্নি বসে আড়চোখে নজর রাখছে।
–বুঝলাম ম্যাডাম (মা এর চেয়ে ম্যাডামই এখানে যুতসই মনে হলো), কিন্তু আমার অপরাধটা কি?
–আমি পিয়ালি বলছি। আমার প্রেগনেন্সীর শুরু থেকে আপনাকে দেখাচ্ছি। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলেছিল কোলকাতায় বড় কোনো গাইনোকলজিস্ট দেখানোর জন্য।
পিয়ালি অনর্গল–শুধু আমার মা বলেছিলেন, না, আমাদের এখানে অনিমেষ ডাক্তার আছে। আমিও নাকি আপনার কাছেই হয়েছি, তাই ওরা রাজী হয়েছিল। কিন্তু এ আপনি কী করলেন?
অনিমেষ একটু ধাতস্থ হলেও, এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। –ঠিক আছে, তোমার কোনো অসুবিধে থাকলে, তুমি চলে এসো। আমি তো রুগী দেখছি।
এবারে কান্নায় ভেঙে পড়েছে মেয়েটি, আমার সামনের মাসে এক্সপেক্টেড ডেট আর এই সময়ে আপনি কোভিড ডাক্তার হয়ে গেলেন?
মানে?–একটু বিস্মিত অনিমেষ ডাক্তার।
সবাই তো বলছে আপনি একজন কোভিড মা-এর সিজার করেছেন।
এবার একটু পরিষ্কার হলো অনিমেষের কাছে। গত সপ্তাহে এক ‘পোস্ট সি এস’ মাএর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসায় যখন কোনো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না তখন অনিমেষ দেখে বাচ্চাটার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে এক জটিল অবস্থায়। এখানের সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থাযুক্ত হাসপাতালে, সবরকম প্রতিষেধক আর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সজ্জিত হয়ে অনিমেষ দ্রুত সিজার করে বাচ্চার সেই চিরপরিচিত মন ভালো করা কান্নার আওয়াজ শুনেছিল।
আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এখন আমাকে কোলকাতায় নিয়ে যাচ্ছে। এ আপনি কি করলেন ডাক্তারবাবু –ফোঁপাচ্ছিল মেয়েটি।
অনিমেষ ডাক্তার মনে মনে ভাবছে, ও কি তাহলে একটা নতুন উপাধি পেল, ‘কোভিড ডাক্তার’।
শ্রীকান্ত শুনলেই খুশি হবে, বুড়োর আর একটা পেসেন্ট কমল।
সপ্তাহখানেক বাদে চেম্বারেই বসে আছে অনিমেষ। মোবাইলে অচেনা নম্বর বেজে উঠল–আমি নিখিলেশ, আমাকে হয়তো আপনি চিনবেন না। আমার স্ত্রী পিয়ালি আপনার পেসেন্ট ছিল ।
–হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। ওর কী খবর? ডেলিভারি হয়ে গেছে?
–ওর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি ডাক্তারবাবু।
–কেন? কি হল?
–আমরা কোলকাতায় এক নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। কাল সিজারিয়ান হবার কথা।আজ কোভিড টেস্টের রিপোর্ট করেছে–পজিটিভ।
ভেঙে পড়া গলায় নিখিলেশ বলল, এখন ওরা বলছে আমাদের সব রকম আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও ‘কোভিড মা’ এর জন্য পৃথক ওটির ব্যবস্থা নেই। ডাক্তারবাবু —
ঐ ডাক্তারবাবু ডাকটা শুনলেই এখনও অনিমেষের ভেতরে একটা আলোড়ন তোলে।
–নিখিলেশ চটপট ওকে নিয়ে এসো ।
এ পাশে তাকিয়ে দেখে, শ্রীকান্ত আড়াল থেকে সব শুনছে।
মুচকি হেসে বলল, আর কি, এবার লেগে পড়। দ্যাখ বাবা শ্রীকান্ত, পিয়ালি নামটা তোর আমার বোন, দিদি, ভাইঝি যে কোনো কারুর হতে পারে। আয় না, না হয় কোভিড মা-এদের ডাক্তারের অ্যাসিস্টান্ট হলি! ক্ষতি কী!