(এই পর্বের সব চিঠিই অন্যদের আমাকে লেখা। আমার বাবা ক্রমাগত অসুস্থ্ থাকায় আমাকে মাঝে মাঝেই ধানবাদে আমার বাড়ীতে আসতে হত। বাকি সময় আমি আর চঞ্চলা দুজনেই রাজহরায় থাকায় চিঠির অপ্রতুলতা।)
২০/১/১৯৮৪
অরবিন্দ আমাকে (ইংরেজী থেকে অনুবাদ)
প্রিয় আশীষ,
আশা করি গতসংখ্যার মিতান পেয়েছো। তোমার মতামত চাই আরো কিভাবে এই পত্রিকাকে উন্নত করা যায়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে পত্রিকার এই সংখ্যা পঞ্চাশ কপি বিক্রি করেছি, সামান্য পঁচিশ পয়সা দাম, তাও অনেকে দিতে চায় না।
শৈবাল কাজে ভীষণভাবে ব্যস্ত। আমি হল ঘরে একটা আড়াই ফুট বাই তিন ফুট কালো রাবার sheet টাঙ্গিয়ে দিয়েছি এতে পেপার কাটিং ইত্যাদি staple করে দেওয়া যায়। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
২৮/১/১৯৮৪
শৈবাল চঞ্চলাকে
আশীষ পাশের চেয়ারে বসে তোকে চিঠি লিখছে।
আমরা এখানে মোটামুটি আছি। আশীষ নতুন কাজকর্ম করছে। আর আমি রোগ দেখছি, পড়ছি আর চিকিৎসা করছি। কখনও নিজে না পারলে আশীষের সাহায্য নিচ্ছি, মোটামুটি একটা টিম হিসেবে ভালই কাজকর্ম করছি।
১৯ শে জানুয়ারী কেমন বনধ হলো? এখানে লোকেরা কাজে গিয়েছিল।
ইউনিয়নের বক্তব্য
১। political demand-কে সাপোর্ট করছে।
২। কিন্তু যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা শ্রমিকশ্রেণীকে ভুল পথে চালাচ্ছে।
৩। ইউনিয়ন অনেক দিন ধরে NSA-র বিরুদ্ধে লড়ছে, কিন্তু কোন ট্রেড ইউনিয়ন এখনও support করেনি। অথচ এরা শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
৪। যেহেতু আমরা NSA-র বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি ও চালিয়ে যাবো, CMSS বর্তমান অবস্থায় কাজে যাওয়া আর না যাওয়ার সামান্য ব্যপার মনে করছে।
তুই এবার সার্জারী ছেড়ে গাইনী শুরু কর।
৫/২/১৯৮৪
শৈবাল আমাকে
অনেকদিন অপেক্ষা করার পর তোর চিঠি পেলাম। সবাই বেশ চিন্তা করছিল। অনেক কথা লেখার আছে।
হাসপাতাল তুই, বিনায়কদা ছাড়া চলছে। ডাঃ ফালকো অসম্ভব পরিশ্রম করছে। মাঝে অর্থাৎ ৩/২/১৯৮৪ দুজন রুগী মারা যায়। অনেক চেষ্টা করেও কিছু করা যায়নি। আর একটা বাচ্চা দশ দিন অজ্ঞান হয়ে আছে। তোর surgical patient এখন ভালো আছে। বাড়ী থেকে যাওয়া আসা করে। ব্যথা এখনও আছে। তবে খুব বেশী নয়। জ্যেঠু এখনও ভর্তি। হাঁটুর ঘাটা সেরে গেছে। নিচেরটা আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। সরজু বাড়ী গিয়ে খুজ্জি primary health center-এ daily dressing করিয়ে এখন ভালো আছে।
সমস্যা অনেক। সুকুমারকে নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে সুকুমারের দোষ নেই। মোটামুটি একটা organized attack করার চেষ্টা চলছে। যেমন অনেকে বলছে সরজুর স্ত্রীর সাথে সুকুমারের সম্পর্ক। দু তিনবার পয়সা চুরি করার পিছে সুকুমার দায়ী। যদিও আমার ব্যক্তিগত ধারণা অন্য কেউ পয়সা চুরি করে। তক্ষলাল আসে না। এমনকি আমাদের সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা লোকের কাছে প্রচার করে। মাঝে মাঝে হাসপাতালে জাসুসী করার জন্য আসে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমরা যে decision নিয়েছি এটাতে health worker-রা খুশী নয়। যদিও কেউ মুখে কিছু বলে না। এদিকে বরসাইত ছাড়া কেউ regular আসে না। এমনকি খিউলালও না।
আমরা ভেবেছিলাম pregnancy with related problems নিয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে লিখবো। কিন্তু উৎসাহের অভাবে হচ্ছে না। ডাঃ ফালকোর ইচ্ছা রয়েছে. বিনায়কদা আগের মতোই। জানি না এই অবস্থায় কতটা এগোতে পারবো। মাঝে মাঝে এমন সমস্ত জিনিষ চুরি হচ্ছে যা ঠিক আশা করা যায় না।
১০/২/১৯৮৪
অরবিন্দ আমাকে
প্রিয় আশীষ,
জীবন একইভাবে চলছে। আমাকে Dept. of Teaching AIDS NCERT New Delhi আমন্ত্রণ জানিয়েছে একটা workshop-এর resource person হিসেবে। প্লেনের ভাড়া আর সাম্মানিক অর্থ দেবে।
একটা ভালো খবর। হোসাঙ্গাবাদ একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক নতুন পত্রিকা প্রকাশ করছে। আমার কথামত নাম দিয়েছে “চকমক”। আমরা মিতানের পোষ্টাল রেজিষ্ট্রেশন পেয়ে গেছি। আমরু বালোদে কম্পোজ করা শিখছে। আশা করছি তিনমাসের মধ্যে মিতান সাপ্তাহিক পত্রিকা হয়ে যাবে। আমি খেটে খেটে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। ভিলাই এ তীব্র অত্যাচার চলছে। শৈবাল ভালো। নিয়োগী লম্বা সফরে— ভোপাল, টাটানগর, গৌহাটি। চিঠি দিও।
তারিখ নেই, তবে এই সময়ে লেখা
শৈবাল আমাকে
নারায়ণপুর থেকে ফিরে তোর চিঠি পেলাম। চিঠিটা এখানে সবাই পড়েছে। তোর পারিবারিক অবস্থা, মনের অবস্থা অনুমান করে খুব খারাপ লাগছে। আশা করি মেসোমশায় এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর রবীন নিশ্চয় ভালো আছে। দুজনের অবস্থার খবর দিয়ে চিঠি দিস।
আমরা আগের মতই। খালকোর যাওয়ার সময় হয়ে এলো। আজ একটা hydrocoele operation করলাম। সুকুমার anaesthetist, খালকো assistant. দু’সপ্তাহ আগে একটা phimosis করেছি একলা। মোটামুটি হয়েছে। আগেকার operation-এর মধ্যে lipoma (যে মহিলার পেট কাটতে হয়েছিল) একমাস পরে এসেছিলেন। ভালোই আছেন। Ganglion ঠিকই আছে। ঘা শুকাতে দেরী হয়েছিল আর জায়গাটা ফুলে আছে। তবে অনেকদিন ও আসছে না। গ্রামে চলে গিয়েছে। মাঝে হাসপাতালে তিন দিনে তিন জন মারা যায়, সবই expected ছিলো। তারপর থেকে indoor-এ রুগী খুবই কম। পাঁচ ছয়ের বেশী হচ্ছে না। অনেকে তোর খোঁজ করছে। অপারেশন করাতে চায়। ছুটিতে শুনে মুখটা ব্যাজার করে চলে যাচ্ছে।
Health worker-রা আগের মতোই। এক stagnant অবস্থার মধ্যে আছি। এই অবস্থাটা কাটিয়ে ওঠা মুস্কিল আছে। আমার আর বিনায়কদার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তোর প্রয়োজন বিশেষ ভাবে feel করছি। সত্যি কথা বলতে কি individual satisfaction ছাড়া collective কাজ করার আনন্দ পাচ্ছি না। যদিও ডা খালকো খুবই service দিয়েছে। এত কম সময়ে এর চেয়ে ওর পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। অরবিন্দের “মিতান” বেরোচ্ছে। গতকাল অরবিন্দ দিল্লী থেকে ফিরলো। NCERT-তে lecture দেওয়ার জন্য দিল্লী গিয়েছিল। কাল ও পরশু লছমন “নয়া আঞ্জোর”-এর তরফ থেকে সঙ্গীত প্রতিযোগিতা organize করছে। তবে লছমনকে সাহায্য করার লোকের অভাব। Union-এর activity আগের মতোই। NGCSএর টাকা মজদুররা পেতে চলেছে। আমি নারায়ণপুরের মেলা দেখতে গিয়েছিলাম। সারারাত আদিবাসী নাচ দেখেছি। খুব ভালো কেটেছে চার দিন। বরসাইত আর কেদার সাথে গিয়েছিল।
১৪/২/১৯৮৪
চঞ্চলা আমাকে
এতদিনে নিশ্চয় ধানবাদে চলে এসেছিস। রুগী এখন বেশী নেই। দুজনকে দেখলাম, ব্যাস। আবার হয়ত এসে যাবে এক্ষুনি। লোকেশ সামনে বসে ব্যায়াম করছিল। এক্ষুনি ওকে ছুটি দিয়ে দিলাম। আর বেশী উন্নতি হয়নি। আমি ওকে ব্যায়াম করিয়ে দিতে গেলে আমারই হাত ব্যথা হয়ে যায়। পাঁচ মিনিটের বেশী পারি না। আর ওরও বেশী ব্যথা লাগে, তাই passive exercise আর বেশী হচ্ছে না। আমাদের অপারেশনের রুগী ভালো আছে। তুই চলে যাবার পর জ্বর আসেনি। ক্লোরোকুইন দিয়ে সেরেছে সম্ভবত। Stitch line একেবারেই ভালো। একদম নিচের পয়েন্টে একটু serous discharge। ওকে ছুটি দিতে চাইছি। যেতে চাইছে না। রবিবার যাবে। হাসপাতালের সব বেড ফুল। একটা বাজে রুগী ভর্তী হয়েছে। ন’মাস pregnancy সাথে হাঁটুর টিবি। হাঁটুর movement একেবারেই restricted। দুমাস বাদেই এসেছে। primigravida.
এখানে ইলেকশন নিয়ে অফিসে খুবই ব্যস্ততা। শেষ পর্যন্ত ছটা জায়গা থেকে দাঁড়াচ্ছে। দুর্গে তিনটে, রাজনাদগাঁওয়ে তিনটে। প্রচুর poster, banner, flag তৈরী হচ্ছে।
আমি নার্সদের নিয়ে কাল বসেছিলাম। ঠিক হয়েছে সপ্তাহে দুদিন করে ওদের সাথে বসব। মাঝে একটা medical termination of pregnancy আর একটা D.E. করেছি।
১৪/৪/১৯৮৪
শৈবাল চঞ্চলাকে
আশা করছি আগামী ডিসেম্বর থেকে হাসপাতাল পুরোদমে চালাতে পারবো। আশীষ ভালো জায়গায় অপারেশন শিখতে পারলে ভালো। নাহলে ওর রাজহরায় ফিরে আসা উচিত। তোরা জুনে রাজহরা আসছিস কিনা জানাস।
মাঝে ছদিনের জন্য এখানে হরতাল হলো। মজদুররা Dalli Mechanized Mines ঘেরাও করে রেখেছিলো। NGCS-এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আরো দু একদিন হরতাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। SKMS-এর সাথে যে “সংঘর্ষ সমিতি” হয়েছিলো ভেঙ্গে গিয়েছে।
অরবিন্দ দল্লী ছাড়ছে। এখন পুনাতে। চাকরির চেষ্টা করছে। মিতান আপাতত বন্ধ। হাসপাতাল একরকম চলছে। ফালকো যাওয়ার পর অভয় এসেছে। ও একমাস থাকবে। এর ফলে আমাদের কিছুটা সুবিধা হয়েছে। তবে ফালকো খুবই খেটেছে। তবে তোর প্রয়োজনটা হাসপাতালের সবসময়ের জন্য থেকেই যাচ্ছে। আমাকে এখন প্রায়ই ডেলেভারী করতে হচ্ছে। মাঝে হাসপাতালে দুটো induction করলাম। Forceps দিতে হয়েছিলো। Borderline disproportion ছিল।
এখানে এখন প্রচন্ড গরম শুরু হয়েছে। আজ অনেক মজদুর নিয়োগীর সাথে ভিলাই গিয়েছে। আজ NGCS-এর agreement হবে।
৩১/৭/১৯৮৪
শৈবাল আমাকে
আমাদের অবস্থাটা একই রকম। ভীড় বেড়েছে। কখনও কখনও ১৬০ পর্যন্ত হয়ে যায়। একদিন ২০০ হয়েছিলো। চলছে—চালাতে হচ্ছে। তবে গত বছরের মত কলেরা এবারে হয়নি। বর্তমানে এখানে বেশ গরম হাওয়া চলছে। Telegraph-এ নিশ্চয় নাদগাঁও-এর বি. এন. সি. মিলের খবর পড়েছিস। নিয়োগী ওখানেই থাকে। নাদগাঁও-এর ৩৫০০ মজদুর লালহরা ইউনিয়ন বানিয়েছে আর আন্দোলন চালাচ্ছে। ৭৫ জন মজদুর গ্রেপ্তার। মিল বন্ধ। অনেকে আহত। জনকও নাদ্গাঁও-এ থাকে। রাজহরাতেও প্রতিদিন ধর্ণা আর ভুখ হরতাল চলছে –তিন ছাঁটাই drilling মজদুরের জন্য।
করুণা পট্টনায়ক এসেছে। ও সম্ভবত আমাদের হাসপাতালে কাজ করতে চায়। তবে ওর টাকা পয়সার সমস্যা রয়েছে। এখন যেখানে কাজ করে ওখানে ১৭০০ টাকা পায়। কিন্তু ওখানে কাজ করে আনন্দ পায় না।
ফালকো মাঝে চিঠি দিয়েছিলো ও M.D. তে পাশ করতে না পেরে দিল্লিতে থাকবে ঠিক করেছে।
অরবিন্দের চিঠি থেকে জানলাম সীতারাম রাঁচিতে কোন এক ম্যাগাজিনে কাজ নিয়েছে।
Telegraph-এ পড়লাম পুরো সিংভূমে কার্ফু জারী হয়েছে। মাঝে শঙ্কর এসেছিলো। প্রায় পাঁচ দিন ওরা নিয়োগীর সাথে কথা বার্তা বলে চলে যায়। আমি আগের মতই। পেটটা ভালো থাকে না। হাসপাতালে health worker-রা খুবই কাজ করছে। নতুন দুএকজন worker-ও এসেছে।
(চলবে)