এই পর্বে সব চিঠিই অন্যদের আমাকে লেখা। কারণ আমি বাবার অসুস্থতার কারণে বেশীরভাগ সময়েই ধানবাদে।
এখানে বাবার অসুস্থতার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানানোর দরকার। বাবা কয়লা খনিতে কাজ করতেন। কোলিয়ারি ম্যানেজার। তখন আমরা ঝরিয়াতে থাকতাম। বাবা রোজ খনিতে যেতেন। বাবা রিটায়ার করার পরে বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন আমরা ঝরিয়ার বাড়ী ছেড়ে ধানবাদে চলে এসেছি। দিদি ধানবাদে নামকরা ডাক্তার হওয়ার ফলে নামী ডাক্তার দেখানোর অসুবিধা ছিল না। অনেকেই দেখলেন। নিদান দিলেন – বাবার টিবি হয়েছে। টিবির চিকিৎসা শুরু হল। কিছুদিন পর বাবার চোখের দৃষ্টি কমতে শুরু করল। ধানবাদে এর কোন সুরাহা হল না।
আমি ধানবাদে গিয়ে বাবাকে কলকাতায় নিয়ে এলাম। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। আমার মাষ্টার মশায়রা অনেক চেষ্টা করলেন। বললেন টিবির ওষুধ থেকে চোখ নষ্ট হয়েছে—Ethambutol Toxicity, এরপর চঞ্চলার মাষ্টারমশাই কলকাতার এক স্বনামধন্য চিকিৎসক জানালেন –বাবার টিবি নয়। নিউমোকোনিওসিস হয়েছে—কয়লার ধুলো থেকে। এর কোন চিকিৎসা নেই। বাবাকে ধানবাদে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম।
বাবা শ্বাসকষ্ট এবং প্রায় অন্ধত্ব অবস্থায় মাঝে মাঝেই অসুস্থ হতেন আর আমি ধানবাদে দৌড়াতাম।
২৯/৩/১৯৮৪
শৈবাল—আমাকে
এখানকার অনেক খবর আছে। প্রথমত নরসু চলে গেছে। কারণটা ফালতু। হোলীতে নরসু ছুটি নিয়ে গ্রামে যায় আর যথারীতি দেরী করে আসে। বিনায়ক ওকে নিয়োগীর সাথে দেখা করে তারপর কাজ শুরু করতে বলে। কিন্তু ও নিয়োগীকে বলে বাড়ী চলে যায়। এর ফলে বেশ এক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সবাই আমাকে এসে বলছে। মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি এই সমস্যার হল হয়ে যাবে।
এদিকে বিনায়ক মহল্লার কাজ শুরু না করে স্বাস্থ্য কর্মীদের হাসপাতালে সপ্তাহে কেবলমাত্র দুদিন আসার জন্য বলেছে। কিন্তু আমার মনে হয় organized effort ছাড়া individually ওদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। এবল ও বর্সাইত-এরও একই মত। তাছাড়া হাসপাতাল অথবা পুরো programme যে অবস্থার মধ্যে চলছে সেখানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এর ফলে health worker-রা ভাবছে—আজ staff আসার ফলে আমরা ওদের ভাগিয়ে দিচ্ছি। মোটামুটি আজকের হাসপাতালে ওদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
আরো একটা নতুন ছেলে এসেছে staff হিসাবে। আমি আর বিনায়ক choice করেছি। laboratory-র কাজ শেখাব।
আমি এখন antiliquor movement চালাছি। নিয়োগী সবাইকে আমার কাছে পাঠাচ্ছে। Union ও non-union সবার মধ্যে সাধ্যমত কাজ করছি। Addict-দের মধ্যে থেকে দুজন খুব ভালো health worker পেয়েছি। একজনকে তুই জানিস –“ভান্ডারী”। খালকো 25th চলে গেছে। সুরেশ পরীক্ষা শেষ করে মজা লুটছে। “নাদিয়া” আন্দোলন বিজয় প্রাপ্ত করার পরে সবাই একদিন নাদিয়া ঘুরে এসেছে। তোর প্রিয় বন্ধু ‘মাল’ pamphlet বের করেছে। ওটাতে আমাদের সম্বন্ধেও বেশ কিছু লিখেছে। যাই হোক তোর অভাবটা খুব feel করছি। তাড়াতাড়ি চলে আয়। রাম অবতার প্রায় তোর খোঁজ করে। ওর fistula in ano সমস্যাটার সমাধান তোকে দিয়েই করাবে।
২/৬/১৯৮৪
শৈবাল—আমাকে
গত বছর এই দিনটার কথা মনে পড়ছে। আমরা অনেকে কোলকাতা থেকে দল্লী এসেছিলাম। দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেল। শহীদ হাসপাতালের কাল একবছর পূর্ণ হবে। একবছর অনেক সমস্যার মধ্যে আমরা কাটিয়েছি। আগে চলতে আরো অনেক সমস্যা আসবে—সমাধানও হবে। তুই চলে যাওয়ার পর সমস্যাটা আরো বেড়েছে। মহল্লাতে কাজকর্ম বন্ধ। চালু করতে চাই—কিন্তু উৎসাহ ও লোকবলের অভাবে হয়ে উঠছে না।
যাই হোক আগামীকালটা আমরা একবছর পালন করছি। সকাল থেকে হাসপাতালে প্রদর্শনী ও রাতে হাসপাতালের সমস্ত কর্মীরা নাটক করছে। এ নাটকে নরসু ও সিস্টাররা সবাই রয়েছে। বর্সাইত নাটক লিখেছে। এবারে “নয়া অঞ্জোর” প্রোগ্রাম করছে না। হাসপাতালের তরফ থেকে ৪ ঘন্টার প্রোগ্রাম থাকছে। এছাড়া “অর্ধ সত্য” সিনেমাটা দেখানো হচ্ছে।
এবারে শহীদ দিবসে নতুন অতিথি B.N.C. মিলের সাথীরা। কয়েকদিন আগে B.N.C. মিলের প্রায় সমস্ত কর্মচারীরা ইউনিয়নে সামিল হয়েছে।
হাসপাতালের নতুন বুকলেট আগামী সপ্তাহে বেরোলে তোদের পাঠাবো। নতুন খবর দেওয়ার নেই। হাসপাতাল ভর্তি। খুব ভীড় হচ্ছে। দুজনে হাঁপিয়ে উঠছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের চিঠি দিস। তাহলে ওরা অনেকটা মনে জোর পাবে। নয়া অঞ্জোর-এর বর্তমান পরিস্থিতিতে লছমনের খুবই মন খারাপ। ওকে আমাদের নাটক করার জন্য বলেছি। ও রাজীও হয়েছে। এই প্রথম এখানে নাটকে কোরাস গান থাকছে বাজনা ছাড়া। গানগুলো বর্সাইত ও জগ্গু লিখেছে। কবিতাগুলো খিউলাল লিখেছে। সমস্তটা ছত্তিশগড়ীতে হবে।
তারিখ নেই
অভয় (ডাঃ শুক্লা) আমাকে দিল্লী থেকে। (হিন্দি থেকে অনুবাদ।)
আশীষজী নমস্কার,
আশা করছি তোমরা সবাই কুশলে আছো। আমি এবং নিয়োগীজি দল্লী রাজহরা থেকে কানপুর হয়ে ২০ জুলাই দিল্লী পৌঁছেছি। দুর্ভাগ্যবশত আসার আগে আপনার সাথে বেশী কথাবার্তার সুযোগ হয়নি। যেটার খুব দরকার ছিল। বোধ হয় নিয়োগীজি আপনাকে জানিয়েছেন—আমি দু/তিন মাসের মধ্যে M.D.-র পড়াশোনা ছেড়ে দল্লী রাজহরা চলে আসব। এরপর শহীদ হাসপাতালে কাজ করার সাথে সাথে রাজনৈতিক শিক্ষা কার্যক্রমে দায়িত্ব নেবার চেষ্টা করব। এই শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে নিয়োগীজির সাথে আপনার বোধহয় কথাবার্তা হয়েছে। এই কাজে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে অন্তত ৫০-৬০ বিষয়কে স্টার্ট করার চেষ্টা করা হবে। যেহেতু আপনি পুস্তকালয় এবং কিছু শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছেন, সে জন্য আপনার অভিজ্ঞতা খুব কাজে লাগবে। আমি জানতে চাইব এই কাজ করতে গিয়ে আপনার কি ধরনের অসুবিধা হয়। মজদুরদের কি বিষয়ে আলোচনা করতে রুচি হয়। পুস্তকালয় চালানোর অভিজ্ঞতা কি, যে মজদুরেরা পড়াশোনা জানে না তাদের শিক্ষার ব্যাপারে আপনি কি উপায় ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি। আমরা যদি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি তাহলে কি বিষয় নিয়ে শুরু করবো আর লিখিত বিষয় কি ওদের দেবো।
আপনি যদি বিস্তারিত ভাবে আমায় লিখে জানান তাহলে খুব ভালো হয়। এবারে শহীদ হাসপাতালে আমার involvement খুব কাজের হয়নি। কারণ আমার ভূমিকা হাসপাতালে কি তা পরিষ্কার ছিল না। তাছাড়া লোকজনের সাথে আলাপ পরিচয় করতেই সময় চলে গেল। এবারে যখন আসব তখন বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবো।
সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি আমি এক সপ্তাহের জন্য আসব। নিয়োগীজিকে এটা জানিয়েছি, কিন্তু আপনিও মতামত দিলে ভাল হয়।
শৈবালদাকে নমস্কার জানাবেন। এছাড়া চঞ্চলাজী, বিনায়কদা, সুকুমার, মদন, নরসু, কেদার, সুজাতা বাই, রোমেন বাই, খেওলাল, এবল, বর্সাইত—সবাইকে আমার নমস্কার জানাবেন।
তারিখ নেই
সহদেব সাহু আমাকে। (হিন্দি থেকে অনুবাদ।)
ডাক্তার আশীষ কুন্ডু এবং চঞ্চলা বোন,
আমার এবং সংগঠন এবং দীনেশ ওমপ্রকাশ এবং অন্যান্যদের তরফ থেকে আপনার দীর্ঘ সংঘর্ষশীল জীবনের জন্য শুভ কামনার সাথে লাল সেলাম।
৩১/৭/৮৪ তে ডাঃ জানার সাথে কথা বলতে বলতে জানলাম আপনারা আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আপনারা ভাববেন না আপনাদের আমি ভুলে গেছি বা ভবিষ্যতেও কখনও ভুলবো।
এখন রোজ নাঁদ্গাওয়ে বি. এন. সি. মিলে লাল হরা ঝন্ডার নেতৃত্বে মজদুর আন্দোলন চলছে। রাজহরাতেও কিছু দাবীদাওয়া নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলছে। সব সংগঠন প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে চলেছে। নিয়োগীজি ১৩/৭/৮৪ থেকে রাজনাদ্গাঁওয়েই থাকেন, সাথে জনকলাল আছে।
আপনি চঞ্চলা কেমন আছেন জানাবেন। আমি রাজনাদ্গাঁওয়ের কিছু ডকুমেন্ট পাঠাচ্ছি।
১২/৯/১৯৮৪
(এই দিন রাজনাদ্গাঁওয়ে বি. এন. সি. মিলের মজদুরদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়, চারজন শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মারা যান। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। নিয়োগীজিকে গ্রেপ্তার করে রায়পুর জেলে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে তড়িঘড়ি রাজহরা যাওয়ার ট্রেন ধরি। কি মনে হতে দুর্গ পর্যন্ত না গিয়ে রায়পুরে নেমে পড়ি। সোজা রায়পুর সেন্ট্রাল জেল। জেলার সাহেবকে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বললাম নিয়োগীজির সাথে দেখা করতে চাই। জেলার সাহেব দেখলাম অতি ভদ্রলোক। আমাকে একটা ঘরে বসিয়ে নিয়োগীজিকে নিয়ে এলেন।
আমরা অনেকক্ষণ কথা বললাম। নিয়োগীজি বললেন আপনি রাজহরা না গিয়ে রাজনাদ্গাঁও চলে যান। গুলি চলার পর মজদুরদের মনোবল একদম ভেঙ্গে পড়েছে। ওদের মনোবল বাড়াতে হবে।
আমি আগে কোনদিন রাজনাদ্গাঁও যাইনি। ভিলাই–এ ইউনিয়ন অফিসে গিয়ে বললাম কেউ একজন আমাকে নাদ্গাঁও পৌছে দিতে। প্রথমে কেউ রাজী হল না। নাদ্গাঁওয়ে শ্রমিক বস্তি এলাকায় তখন কার্ফু চলছে। বিকেল চারটে থেকে ছটা ছাড়। শেষে একজন জানালো সে আমাকে মোটরসাইকেলে চারটে থেকে ছটার মধ্যে পৌছে দিয়ে চলে আসবে।
তারপর রাজনাদ্গাঁও শ্রমিক বস্তিতে যত দূর মনে পড়ে তিনদিন ছিলাম। ওখানে শ্রমিক বস্তি রাজহরার মত নয়। সরু রাস্তার দুপাশে লাইন দিয়ে মাটির বাড়ি। অনেকগুলো দোতলা। সকাল সন্ধ্যে ছোট ছোট গ্রুপ মিটিং করতাম। রোজ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি চলে যেতাম। সব বাড়ীতেই আমাকে দোতলায় থাকতে দিত। দোতলার ছোট্ট জানালা দিয়ে নজর রাখতাম পুলিশ আসছে কিনা।
তিনদিন পর নাদ্গাঁও হাসপাতালে গেলাম আহতদের দেখতে। কিন্তু ঢুকতে পারলাম না। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোতিলাল ভোরা হাসপাতালে এসেছেন গুলিতে লাঠিতে আহতদের দেখতে এসেছেন চারিদিকে পুলিশে ঘেরা। অতঃপর রাজহরায় ফিরে গেলাম।)
What a lot of events. Had spent a couple of days at Dalli in August. Was there on 15th August. Remember meeting you and Saibal Da. Stayed at Binayak’s house. He told me about the Andolan ar Rajnandgaon then. Did not know Abhay in those days