(১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত চিঠি খুব কম। কারণ আমরা সবাই দল্লী রাজহরাতে। শুধু কিছু টুকরো ছবি চোখের সামনে ভাসে। এই স্মৃতি যদিও ডায়েরী নয়। তবুও কিছু কিছু লিখছি।)
এই সময়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার রাজহরায় আসতেন আমাদের কাজকর্ম দেখতে—হাসপাতাল, কোঅপারেটিভ গ্যারেজ, ইউনিয়ন পরিচালিত স্কুল, ইউনিয়নের মজদুরদের জন্য ক্লাস। বিশিষ্ট ব্যক্তি যাঁরা এক বা একাধিক বার এসেছেন তাঁরা হলেন – স্বামী অগ্নিবেশ, এ কে রায়, ভি. পি. সিং, প্রফেসর শুক্লা—আই আই টি কানপুর। একবার গদার এসেছিলেন কয়েকদিনের জন্য। সারা দিন গান গাইতেন নিজের মনে। এসেছিলেন আনন্দ পটবর্ধন তাঁর সিনেমা নিয়ে। এসেছিলেন ইমরানা কাদীর—JNU, কমলা এস. জয়া রাও—Institute of Nutrition। অতিথিরা এলে আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতাম। সময় ভালোই কাটতো গল্পগুজব করে। মাঝে মাঝেই নিয়োগীর সাথে ভিলাই যেতাম জীপে করে। ফিরতে অনেক রাত হতো। দুদিন এরকম হল ফেরার সময় ড্রাইভার গাড়ী চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়লো। দুদিনের মধ্যে একদিন নিয়োগীজিই ড্রাইভার। দুদিনই অল্প একটুর জন্য মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্টের থেকে বাঁচলাম।
বিলাসপুরে নারায়ণ সিং দিবস। আমি ট্রাকে। সহদেব ট্রাক চালাচ্ছে। আমাকে দেখানোর জন্যই বোধহয় উদ্দম গতিতে আড়াইশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গেল।
শীতকালে গ্রামে মেলা হত। ধান কাটার পরেই শুরু হয়ে যেত। আমি আর শৈবাল মাঝে মাঝে দূর দূর গ্রামে চলে যেতাম মেলা দেখতে। এই ভাবেই এক গ্রামে গিয়ে দেখলাম নাটক হচ্ছে। চরনদাস চোর। হাবিব তানবীরের এই নাটক আগেই দেখেছিলাম। এবার দেখলাম গ্রামীণ মৌলিক চরনদাস চোর। অনেকটা আমাদের যাত্রার মত। ভোরের আলো ফুটলে শেষ হল।
মাসে চারপাঁচদিন মাছ খেতাম। শ্রমিক মুহল্লায় মাছের বাজার বেশ সস্তা। কাঁটার জন্য রুই কাতলা শ্রমিকরা খুব একটা খেত না। চঞ্চলা, শৈবাল রান্না করত। মনে হত অমৃত খাচ্ছি। কোয়ার্টারে আমরা একটা মাটির ফ্রীজ বানিয়েছিলাম। ফ্রীজ মানে একটা বড় কলসির মধ্যে কিছু পাথর ফেলে একটা ছোট কলসি বসিয়ে দেওয়া। দুটো কলসির মাঝে জল। ওপরে ঢাকনা। ওপর দিয়ে কাপড় দুই কলসির মাঝে জলে ডুবে থাকত। ভেতরে temperature অন্তত দশ ডিগ্রী কম হত। সব্জি মাছ একদিন বেশ ভালোই থাকত।
আর হাসপাতালের কাজে নানারকম ঘটনা তো ঘটতেই থাকত। একবার রাত নটা নাগাদ আমি আর শৈবাল একটা অসুস্থ বাচ্চাকে দেখতে গেছি। দেখছি বাচ্চাটি ক্রমাগত পাতলা পায়খানা করে যাচ্ছে। আর একজন বৈগা—স্থানীয় ডাক্তার হাতে ধুলো নিয়ে ফুঁ দিয়ে বাচ্চার শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। একে বলে ঝাড়ফুঁক। বৈগা বলেছে দেখো দেখো আমি ফুঁ দিচ্ছি আর ওর শরীর থেকে বিষাক্ত মল বেরিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা একেবারে নেতিয়ে পড়ল। তখন শৈবাল আচ্ছা করে ধমক লাগালো বাচ্চার বাবা আর বৈগাকে—এখনি হাসপাতালে নিয়ে চল, না হলে মারা যাবে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে i.v. fluid দিয়ে বাচ্চাটাকে বাঁচানো হল।
আবার এই শৈবালকেই দেখেছি—শৈবাল খুব অসুস্থ। কি অসুখ মনে নেই। শৈবাল তখন ওই অঞ্চলে ভগবান। দলে দলে লোক আসছে শৈবালকে দেখাতে। আমাদের চিকিৎসা চলছে। তারমধ্যে একজন বৈগা এসে শৈবালকে বললো আমি ঝাড়ফুঁক করবো। শৈবাল অম্লান বদনে বললো করো। লোকটা ফুঁকে দিয়ে চলে গেল। আমি তো অবাক। আমি হলে করতেই দিতাম না। এই হচ্ছে শৈবাল।
একবার এক মাতাল কান প্রায় সম্পূর্ণ কাটা হাসপাতালে আসে। পুরো কানটা উল্টে গিয়ে লতির থেকে ঝুলছে। আমি তখন রাজহরায় ছিলাম না। চঞ্চলা কিছু হবে না ভেবেও কানটাকে সোজা সামনে পেছনে আচ্ছা করে সেলাই করে জুড়ে দেয়। দশদিন পরে সেলাই কাটা হয়। চঞ্চলা দেখে কান জুড়ে গেছে। আমি রাজহরায় ফিরে লোকটার কানটা আচ্ছা করে মুলে দেখি কান একদম স্বাভাবিক।
১৯৮৬ সালে পুণ্য আসার পরে আমি আর পুণ্য একসাথে বেশ কিছু অপারেশন করি। একবার পুণ্য একটা hydrocele কাটতে গিয়ে ছুরি চালিয়েই বুঝতে পারে ওটা hydrocele নয়, টিউমার। আমাকে ডেকে পাঠায়। আমরা বুঝতে পারি ওটা seminoma—testicular cancer, cancer হিসেবেই বাকি অপারেশনটা করা হয়। তারপর তাকে ইন্দোর পাঠানো হয় radiotherapy -র জন্য। সে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
আমাদের বিধায়ক জনকলালের মা তখনও খাদানে শ্রমিক। জনকলাল বেশ কিছুদিন আমাদের সাথে কোয়ার্টারে ছিল। আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই জনকলাল উঠে পুরো কোয়ার্টার ঝাড়ু দিত।
আর ছিল নিয়োগীর সাথে আড্ডা গল্প নতুন সমাজ দেখার স্বপ্ন-পরবর্তী কর্মসূচী।
এই সময় নিয়োগীজির সাথে আমার দুবার মনোমালিন্য হয়।
প্রথমবার, কুরিয়ন আর সহদেব ইউনিয়নকে লুকিয়ে ম্যানেজমেন্টের সাথে একটা compromised ফয়সালা করে। মজদুররা দুজনকে ধরে আনে ইউনিয়ন অফিসের সামনে এবং বেদম প্রহার দেয়। নিয়োগী খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং দুজনকে ইউনিয়ন অফিসের মধ্যে ঢুকিয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। অফিসের বাইরে মাঠে কয়েক হাজার উন্মত্ত জনতা। উনি বলেন ডাক্তার সাব এদের দুজনের জ্ঞান ফেরান। ওদের কিছু বলতে হবে, কেন এরকম করলো। নাহলে লোকেরা ওদের পিটিয়ে মেরে ফেলবে। আমি মাটিতে পড়ে থাকা দুজনকে ভাল করে পরীক্ষা করে বুঝলাম ওরা অজ্ঞান হওয়ার ভান করে আছে প্রাণ বাঁচাতে। আমার খুব খারাপ লাগলো। মনে পড়লো জার্মানির নাৎসী ডাক্তারদের কথা।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম—নিয়োগীজি, আমি এটা পারবো না। ওদের জ্ঞান ফেরাতে পারবো না। নিয়োগী রাগে ঝলসে ওঠেন। বলেন তাহলে আপনি এখানে আছেন কেন? হাসপাতালে ফিরে যান। আমি মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাই। পরে এই দুজনকে ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
দ্বিতীয়বার। একদিন নিয়োগী আমাকে সন্ধ্যে বেলায় আলাদা ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেন, ডাক্তার সাহেব আপনি ডাক্তারী ছেড়ে দিয়ে পুরো সময় ইউনিয়নের কাজে যোগ দিন। আমার মতো। কেন নিয়োগী সবাইকে ছেড়ে আমাকেই বেছে নিলেন আমি আজও তা জানিনা।
আমি পরিষ্কার জানাই—নিয়োগীজি, আমি সব কাজ করতে রাজী, কিন্তু নিজের profession ছাড়ব না। নিয়োগী কিছুটা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন। এরপর বিনায়কদা স্বেচ্ছায় ডাক্তারী অনেক কমিয়ে দিয়ে ইউনিয়নের কাজকর্ম জড়িয়ে যান।
আমি ১৯৮৭ সালে কলকাতায় ফিরে আসি। চঞ্চলা থেকে যায়। বহু কষ্টে আমি একটা অল্প মাইনের চাকরী যোগাড় করি। একটা ছোট ঘর ভাড়া করি। আর পড়াশোনা শুরু করি। ১৯৮৮ সালে চঞ্চলা চলে আসে। চঞ্চলা পড়াশোনা শুরু করে।
(১৯৮৮ সালে শৈবালের বিয়ে হয় আলপনা (আলপনা দে সরকার)-র সাথে। পনি ছিল P.G. হাসপাতালে staff nurse। ও গিয়ে প্রথমে হাসপাতালের নার্সিং–এর দায়িত্ব নেয়। পরে ডাক্তারীও অনেক কিছু শিখে নেয়।এখন ও বিভিন্ন অপারেশন করে। যেমন caesarian section)
২৬/১০/১৯৮৭
(পুণ্য চঞ্চলাকে)
প্রিয় চঞ্চলাদি
তোমার চিঠি পেয়ে খুব ভাল লাগলো। শৈবালদার কাছে আজ আশীষদার চিঠি এসেছে।
কয়েকদিন “তিহার” এর ছুটি ভালই গেল। আজ বিকেল থেকে ভীড় হচ্ছে। তবে ৬.৩০ টার মধ্যে ভীড় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহে মঙ্গলবার ছুটি থাকায় আজকাল একটূ অন্য কাজও করা যায়। অনুপ ১২ তারিখে হাসপাতালে join করতে এসেছে, health worker হিসেবে কাজ করবে।
হোমিওপ্যাথদের আসার ব্যপারে নিয়োগীর সাথে কথা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আপাততঃ কাজের যা অবস্থা তাতে সম্পুর্ণ নতুন একটা discipline হাতে নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে ওদের এখানে কাজ করার পথ বন্ধ করব না। আর আমাদের infrastructure-এ integrated medicine-এর experiment-ও feasible বলে মনে হয়নি।
শীঘ্রই ডোন্ডী লোহারা ক্ষেত্রে দশটা সেন্টার খোলা হচ্ছে যেগুলিকে কেন্দ্র করে CMM-এর nucleus-ও গড়ে উঠবে। হাসপাতালের দোতলা খোলার অপেক্ষা। বড় হলের flooring আজ শুরু হল।
নিয়োগী ভাল আছেন। পায়ে অল্প ভর দেওয়া শুরু করেছেন, mobility অনেক বেড়ে গেছে। যে কোন জীপেই এখন চড়তে পারেন।
(নিয়োগীজির ভোপালে fracture neck femur হয় ডান পায়ে। ভিলাই হাসপাতালে অপারেশন করে ঠিক হয়।)
CMM ১৬, ১৭, ১৮ ডিসেম্বর National Meeting ডাকছে—শিল্প, কৃষি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে ওপর আলোচনা করতে যার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। ২৭শে নভেম্বর থেকে Acupuncture Training শুরু হচ্ছে। হাসপাতালে সবাই ভাল। তবে প্রচন্ড economic crisis চলছে। বাজারে নতুন প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা ধার।
৭/৩/১৯৮৮
শৈবাল আমাকে
দুদিন আগে তোর চিঠি পেয়েছি। তোর কথামত ট্রাঙ্কটা পাঠাচ্ছি না। তবে ট্রান্সপোর্টে পাঠাব কিনা জানাস। হয়ত এপ্রিল মাসে পুণ্য যাবে। তখন পুণ্যর সাথে পাঠাতে পারি। এখানে সবাই ভালো আছে। হোলীতে নিয়োগীজি খুব খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আমরা যাইনি। আমাদের এখানে মুরগী পাঠিয়েছিলেন। আমরা সুরেশদের বাড়ীতে ওদের সাথে খেয়েছি।
গুলাব ভালো আছে। ওর biopsy report-এ T.B. এসেছে। তবে ও কতদিন চিকিৎসা করাবে বলা মুস্কিল। বাচ্চাটাও ভালো আছে। মাঝে gastroenteritis হয়েছিলো। পুণ্যর কথা মতো ওকে আবার অপারেশন করতে হবে। রায়পুরে পাঠাবে ঠিক করেছে, সবারই ছুটি হয়ে গেছে।
মুন্নি (পোষা হরিণ) ভালো আছে। তবে দুধটা এখনও ছাড়েনি। পনি চলে গেলে ওর বেশ অসুবিধে হবে। মদন নতুন একটা পাখী এনেছে, বেশ সুন্দর দেখতে। ওর জোড়ীটা বাসে ভীড়ের চাপে মরে গেছে।
রাজহরার সবাই বোনাস পেয়েছে। কিছুদিন বাদে production bonus পাবে। এছাড়া interim relief পাবে। তাই রাজহরার লোকেরা বেশ খুশী।
রাজনাদ্গাঁও-এর ১৬ জন চাকরী পাওয়াতে স্বভাবতই সবাই খুশী। অর্চনা পটারীজের কাজ শুরু হবে আশা করা যায়। বাকি থাকলো দানীটোলা আর গ্লুকোজ ফ্যাক্টরি। সোহন, সুদামা, কানহাইয়্ ব্যাইগা কাজ শুরু করেছে।
১/৩/১৯৮৮
শৈবাল আমাকে
আশীষ, পনির আজ যাওয়া হল না, ওর খুব জ্বর হয়েছে। ম্যালেরিয়া অথবা টাইফয়েড হবে। Antimalarial দেওয়া হয়েছে, তবুও জ্বর কম হয়নি। কবে যাবে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেব। হর্ষ মন্দর দুর্গের collector হয়েছে। নাদ্গাঁওয়ে রায়পুর থেকে নতুন collector এসেছে।
২১/৩/১৯৮৮
শৈবাল চঞ্চলাকে
তোর চিঠি পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সত্যি বলতে কি তুই এতদিনে কোথাও কিছু জোগাড় করতে পারলি না—বেশ আশ্চর্য লাগছে।
পনি গতকাল কলকাতা গিয়েছে। হাসপাতাল মোটামুটি চলছে। আগের থেকে আউটডোরে ভীড়টা কম হচ্ছে। ধারের ব্যপারে কড়াকড়ি করার জন্য ভীড়টা কম হচ্ছে মনে হয়। রোজ প্রায় ৮০-৯০ রোগী হয়। ইনডোর আগের মতোই চলছে। প্রদীপ কাজ শুরু করেছে। ভালোই কাজ করছে। মাঝে জগগুর বোনের সিজারীয়ান হল। এটা তৃতীয় বার। তুই যাওয়ার পর labour কম হচ্ছে। পুণ্য এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহে কোলকাতা যাচ্ছে। আমি ২৫ এপ্রিল বম্বে মেলে কোলকাতা যাচ্ছি। আজ ক্রাচ ছেড়ে লাঠি ধরেছি। (৮৭–র শেষদিকে শৈবালের পায়ের হাড় ভাঙে (femur)। আমি ওকে ভিলাই–এ BSP হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই অবস্থাতেই ও ৮৮–র জানুয়ারীতে বিয়ে করে)। দুচার দিন লাঠি নিয়ে চলব। তারপর ঠিক হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।
মুন্নী ভালোই আছে। পনি থাকায় সুবিধা হয়েছে। তবে ওর চালচলন ছোটীর থেকে আলাদা। ছোটী ভালই আছে। মুরগী ডিম দিচ্ছে। খরগোশের তিনটে বাচ্চা হয়েছে। অন্যান্য পাখী ও জানোয়ার ভালোই আছে।
২১/৭/১৯৮৮
শৈবাল আমাকে
প্রিয় আশীষ
তোর চিঠির উত্তর দিতে দেরী হল আমার আর পনির দুজনেরই bacillary dysentery হল। পনির বেশ খারাপ অবস্থা হয়েছিল, এখন পুণ্যর হয়েছে। হাসপাতালে সুকুমার ও ফুলেশ্বরীরও হয়েছিল। মনে হয় আমাদের জলের ট্যাঙ্কে কোন গোলমাল হয়েছিলো।
এবার তোর ট্রাঙ্কের কথায় আসি। আমরা ট্রাঙ্কটা transport-এ book করেছিলাম, কিন্তু নিয়োগীজি transport অফিস থেকে ট্রাঙ্কটা নিয়ে আসে। নিয়োগীজির কথা যদি ট্রাঙ্কটা নিয়ে যেতে হয় তবে তোকে এসে নিয়ে যেতে হবে। তুই নিয়োগীজিকে একটা চিঠি লিখিস। এদিকে কুমুড়কট্টা সেন্টার ভালোই চলছে। কখনো কখনো দিনে ৩০টা রুগী হচ্ছে। তবে বেশীরভাগ দিনই ১৫-১৬ জন রুগী হয়। খিউলাল আর মদন কুমুড়কট্টার দেখাশোনা করে। গ্রামের একটা ছেলে ও মেয়েকে নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতলের দোতলার কাজ শুরু হয়েছে। বয়েলস অ্যাপারেটস-এর জন্য ১৫ হাজার টাকা জোগাড় হয়েছে। তুই দীপুর সাথে কথা বলে air ether machine ও Boyle’s-এর মধ্যে কোনটা কেনা উচিত ঠিক করে রাখবি। এছাড়া O.T. Care (মুখার্জীতে পাওয়া যায়) ও O.T. table-এর ব্যপারে খোঁজ নিবি। Table-টা কাটি’পাড়া থেকে কিনে নিলে সস্তা হবে। তুই সব খবর নিয়ে তাড়াতাড়ি জানাস। প্রদীপ সেপ্টেম্বরে গিয়ে জিনিষগুলো কিনে আনবে। যদি সম্ভব হয় তবে আগেও কিনতে পারি। B.N.C. (রাজনাদ্গাঁও) ভালই চলছে। দানীটোলা দেওয়ালীর আগে চালু হবে। দল্লীর সমান মজদুরী পাবে।
২৫/৮/১৯৮৮
শৈবাল আমাকে
তোদের একটা খবর দিই। ছোটী (তোদের পোষা হরিণ) চার পাঁচদিন কিছুই খাচ্ছে না। একটু পাতলা পায়খানা হচ্ছে বলে মনে হয়। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু কিছুই খাচ্ছে না। এদিকে মাঝে দুটো হরিণ এসেছিল—মারা গেছে। সুরেশদের বাড়ী আমাদের মধ্যে একটা fencing হয়েছে। ছোটীর জন্য সুরেশরা fencing-টা করেছে। ছোটী মারা গেলে হয়ত এ সমস্যাটা থাকবে না।
হাসপাতালে বেশ ভীড় হচ্ছে। উপরে রুগী রাখা বন্ধ হয়েছে। নীচে চারদিকে রুগী ভর্তি থাকে। কাজকর্মের বেশ অসুবিধা হয়। উপরের কাজের মধ্যে O.T.-র মেঝেটা বাকী রয়েছে। কুমুড়কট্টাতে কি ধরনের কাজ করা উচিত, তার suggestion-গুলো পাঠাবি। বাগানে প্রচুর ফুল হয়েছে। প্রদীপ গেলে তোর সাথে কোথায় দেখা করবে জানাবি।
রাজনাদ্গাঁও-এর ইউনিয়ন অফিসের চৌকিদার আজ মারা গেল। Myocardial infarction হয়েছিলো। এদিকে বারাদ্বারে খাদান আবার চালু হবে। ঠেকেদাররা চালাবে।
২১/১০/১৯৮৮
শৈবাল চঞ্চলাকে
মাঝে দুর্গা মারাই গেল, প্রতিবারের মত এবারেও প্রদর্শনী লাগানো হয়েছিলো। মূলতঃ blood donation-এর উপরে জোর দেওয়া হয়। তবে এবারে পুজোতে electricity-র বেশ গন্ডোগোল হয়। শেষের চারদিন কোন অসুবিধা হয়নি।
এদিকে আমরা খুব বাঁচান বেঁচে গেলাম। পুণ্যর মা বাবা 15th এসেছেন। ওনারা কোলকাতা থেকে বানানো চিংড়ি এনেছিলেন। ঐ রাতে মেসোমশাই ছাড়া আমরা সবাই চিংড়ি খাই। সবার একসাথে food poisoning হয়। পনির রাত বারোটা থেকে। সকাল আটটার মধ্যে সবাইকে I.V. fluid Start করতে হয়। জ্বর মোটামুটি ১০৪ F. তবে সন্ধ্যে থেকে অবস্থাটা আরো খারাপ হয়। সবাই drowsy state-এ চলে যাই। পনি উলটোপাল্টা বকতে থাকে। ওর temperature ১০৬ F। Fluid চানানোর লোক নেই। Direction দেওয়ার লোক নেই। নিয়োগীজি রাজনাদ্গাঁও-এ ছিলেন। এদিকে ডাঃ তিয়ারীকে (পুষ্পা হাসপাতাল) খবর দেওয়া হয়। ডাঃ তিয়ারী আবার B.S.P. hospital থেকে এক ডাক্তারকে ধরে আনেন। নিয়োগীজি রাত ১১.৩০ নাগাদ আসেন। সারারাত যুদ্ধস্তরে সবকিছু চলতে থাকে। অন্য রোগীদের (মূলতঃ যারা খারাপ) অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজনের volvulus operation করা হয়েছিলো। তাকে B.S.P. হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরের দিন অনেকটা পরিস্থিতি কাবুতে আসে। অবশ্য দুদিন পরে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আমরা জগদলপুরে যাই। রাস্তাতে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু জগদলপুরে ভীড়ে খুবই খারাপ লাগে।
আমরা 2nd November কোলকাতা পৌঁছাচ্ছি। তবে দেওয়ালীর আগেই ফিরে আসব। আশীষকে বলবি কয়েকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যেতে চাই। মনটা একদম ভালো নেই। জীবনটায় বড় একঘেঁয়েমি লাগছে। কাজে খুব একটা উৎসাহ পাচ্ছিনা।
পনি এখন ভালো আছে, কিন্তু খুবই দুর্বল। এদিকে পুণ্য, প্রদীপ, নিয়োগীজি, জনক, সবাই ভালো আছেন।
চলবে…