(চঞ্চলাকে লেখা আমার চিঠির নির্বাচিত অংশ। অপরিবর্তিত। আজকের সংযোজন বন্ধনীর মধ্যে)
৬.১.১৯৮২
এর মধ্যে রবীন এসেছিল (আমার বন্ধু ধানবাদে স্কুল টিচার। নকশাল আন্দোলনের সময় জেলে ছিল)। রবিবার চলে গেল। কলকাতা দিল্লীর আর যারা এসেছিল তারাও সবাই চলে গেল।
ফেব্রুয়ারী মাসে কলকাতা যাবার ইচ্ছা। যাওয়া হবে কিনা জানি না-কারণ এখানে বিভিন্ন রকম কাজ চলছে। Garage strike নিয়ে tension শুরু হয়েছে।
(দল্লী রাজহরার খাদান থেকে লৌহ আকরিক নিয়ে শয়ে শয়ে ট্রাক সারাদিন ধরে একশ কিলোমিটার দূরে ভিলাই স্টীল প্লান্টে যায়। এই ট্রাকগুলোর maintenance আর repair-এর জন্য দল্লী রাজহরাতে শ’খানেক গ্যারেজ আছে। সব গ্যারেজের মালিকরাই পাঞ্জাবী। আর কর্মীরা বেশীরভাগ ছত্তিশগড়ী, কিছু বিহার, UP-র। এই কর্মীরা সবাই আমাদের ইউনিয়নের সদস্য। এই কর্মীরা বিভিন্ন দাবীতে আন্দোলন শুরু করে এবং সবাই একসাথে স্ট্রাইক করে।) সর্দারজীরা কিছু গুন্ডামি করার চেষ্টা করছে। আজকেই একটা মিটিং এবং মিছিল আছে। মিছিল এবং জমায়েত। মূল issue departmentalization-এর demand. মাঝে মাঝে খবর আসছে। কিছু সর্দার গুন্ডা মিছিল attack করবে। তাই একটু tension.
গ্যারেজের মালিকরা সর্দার গুন্ডাদের নিয়ে গুরু গোবিন্দ সিং-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মিছিল বার করেছিল। খোলা তলোয়ার নিয়ে সেই মিছিলে ওরা লাল হরা ঝান্ডা পোড়ায়। সেই থেকেই tension. ওদের পেছনে আছে ঝুমুকলাল ভেড়িয়া-ঠেকাদার, কংগ্রেস নেতা। মিছিল নিয়ে তাই একটু চিন্তা আছে। নিয়োগীও আজ নেই। ভিলাই এ কাজে গেছে। জানিনা ও মিছিলের আগে আসতে পারবে কিনা। আজ মিছিলে থাকতেই হবে।
রাত সোয়া ন’টা
আজকের মিছিলে বেশ tension হয়েছিল। মাঝে মাঝেই খবর আসছিল সর্দাররা হাজার খানেক জড়ো হয়েছে তলোয়ার বন্দুক নিয়ে। পরে জানা গেল গুন্ডারা সর্দারদের মনে ধারণা ঢুকিয়েছে যে CMSS ওদের গুরদোয়ারা জ্বালিয়ে দেবে। শেষকালে মিছিল গুরদোয়ারার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল না। তাই কোন confrontation হয় নি। আজ প্রায় সাত হাজার মজদুর—সবাই লাঠি নিয়ে মিছিলে এসেছিল। (মিছিল সেদিন শ্রমিক বস্তি থেকে বেরিয়ে township-এর দিকে রওনা হয়। মিছিলের সামনে সহদেব আর আমি, আমরা জানতাম ওরা একটা বাড়ীর ছাদে ইঁট পাটকেল আর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছে। ভয়ে আমার বুক ধড়াস ধড়াস করে কাঁপছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বাড়ীর সামনে পৌছানোর আগেই সহদেব মিছিলের মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল। পরে জেনেছিলাম, নিয়োগীর এটাই আগে থেকে প্ল্যান করা ছিল—মার দাঙ্গা এড়াতে। সর্দারজীরা এই লড়াইকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করে। ইউনিয়নের চেষ্টায় সেটা ব্যর্থ হয়। নিয়োগীর চেষ্টায় অমৃতসর থেকে কিছু গণ্যমান্য সর্দারজী আসেন এবং সাম্প্রদায়িক ব্যাপারটা রুখে দেন। এই সময়ই ইউনিয়ন ঠিক করে নিজেদের কোঅপারেটিভ গ্যারেজ বানাবে।)
মিতানের জন্য একটা article লেখা হয়ে গেছে এবং approvedও হয়েছে।। গতকাল পাহাড়ীতে গিয়েছিলাম মিটিং নিতে। দুশো মজদুর ছিল।
Departmentalisation নিয়ে আন্দোলনও শুরু হবে। শৈবালকে যে কোনদিন expect করছি।
এখন পুষ্পা হাসপাতালে একজন রুগী আছে, যাকে রোজ দেখতে যেতে হয়। এখন চান করে পুষ্পা হয়ে ইউনিয়ন অফিস যাব।
২.২.১৯৮২
এখানে tension অনেক কমে গেছে। Garage strike চলছে। ট্রাক মালিকরা স্ট্রাইক করেছে। ইউনিয়ন থেকে co-operative society বানিয়ে ট্রাক কেনা হচ্ছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই কিছু ফয়সলা হবে। মধ্যে ভেড়িয়া—মধ্যপ্রদেশের উদ্যোগমন্ত্রী -এখানে আসায় একটু tension হয়েছিল। সে আবার ভাষণে বলে গেল এখানে C.I.A.-এর agent-রা ডাক্তারের বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গতকাল ট্রাক মালিকেরা একটা leaflet বার করেছে—তাতে দু-এক জায়গায় আছে—নক্সালাইট নিয়োগী ডাক্তারী আর নেতাগিরী করাতে কলকাতা থেকে ডাক্তার মাস্টার আনিয়েছে। রাজহরার politics বেশ complicated হয়ে উঠেছে। অবশ্য মূলত problem হয়েছে ট্রাক মালিকদের আর কনট্রাকটরদের। ইউনিয়নের problem কম।
আমাদের কাজ একই রকম। সারাদিনে এত কম কাজ যে bore লাগে মাঝে মাঝে। Creche চলছে। লাইব্রেরী মোটামুটি চলছে। চারটে থেকে সাতটা রুগী দেখছি। Dispensary উদ্ঘাটন হয়েছে কিন্তু কাজ চালু হয়নি। আশা করছি পরশু থেকে হবে।
শৈবালের কাজ ভালই চলছে। পরশুদিন শৈবালের জন্য কিছু জিনিষপত্র কিনলাম-(চা ইত্যাদি বানানোর জন্য)। ওর খাওয়ারও একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটু পরে শৈবালের ওখানে যাবো ভাবছি।
লাইব্রেরীর ছেলেরা এসেছে। Meeting নিতে যাবার জন্য ডাকছে।
৩.২.১৯৮২
ইউনিয়ন অফিসে বসে লিখছি। কাল রাত্রে শৈবালের ওখানে ছিলাম। রোজকার মত সকাল ন’টায় চলে এসেছি আর bore হচ্ছি। Creche-এ গিয়েছিলাম। ওখানে দুজন স্কুলের ছেলে ডিউটি দিচ্ছে—বাচ্চাদের শেখাচ্ছে। খানিকক্ষণ মিস্ত্রিদের কাজ দেখলাম—dispensary-র দরজা লাগাচ্ছে।
রাত সাড়ে ন’টা
এইমাত্র অফিস থেকে ফিরলাম। লাইট নিভে গেল। রাতে কয়েকদিন load shedding হচ্ছে খুব। শৈবাল আজ অফিসে গেছিল। সাইকেলটা punctured হয়ে গেছে। তাই দুজন হেঁটে ফিরলাম। শৈবাল ওর কোয়ার্টারে চলে গেল। এবার মোমবাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।
৪.২.১৯৮২
আমাদের dispensary পাঁচ তারিখে চালু হয়ে গেছে। ভালই পেসেন্ট হচ্ছে। গতকাল বিনায়কদা ফিরেছে। সাথে scooter নিয়ে এসেছে। Papillon বইটা পড়ছিলাম। আজ দুপুরে শেষ হল।
৮.১০.১৯৮২
দুপুর সাড়ে তিনটে
সেদিন ঠিক সময়েই দুর্গ পৌছেছি। ইউনিয়নের জীপ অপেক্ষা করছিল। রাজহরা পৌছে দেখলাম বিনায়কদা এখনও ফেরেনি। নিয়োগী আর আনসারের সাথে দেখা হল। বিনায়কদা যাবার আগে একটা স্বাস্থ্য কমিটি তৈরী করে দিয়ে গেছে। সেটার নিয়মিত মিটিং হচ্ছে। হাসপাতালের construction দিন পনেরো আগে শুরু হয়ে গেছে।
এখানে ইউনিয়নের একটা financial crisis চলছে। কবে থেকে আমি পয়সা পাবো জানি না, দেখা যাক কি হয়।
১৩.১০.১৯৮২
বিনায়কদা ন’য় তারিখে এসেছে। Health committee হয়েছে। তার portfolio-holder ২৬ জন। এই executive committee র কয়েকদিন ধরে মিটিং করার চেষ্টা চলছে—হচ্ছে না।
আমি না থাকাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য আন্দোলনের তরফে খুব সুন্দর একটা সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। কলেজের স্টুডেন্টদের সাথে যাদের মারপিট হয়েছিল—তাদের সবাইকে এক জায়গায় করে এবং মজদুরদের নিয়ে ইউনিয়ন শহর এবং শ্রমিক বস্তী পরিষ্কারের movement নেয়। সেটা authority-র against-এ movement-এর চেহেরা নিয়েছে। প্রথমদিন বারো ট্রাক আবর্জনা নিয়ে authority-র কাছে demonstration এবং warning দেওয়া হয়েছে। এর পরে চেহেরাটা কি হবে দেখা যাক।
এখানকার ম্যাগাজিনটা তোকে এবং আরো অনেককে নিয়মিত পাঠানো হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই একটা issue পাবি।
গতকাল আমি আর বিনায়কদা hospital site-এ পাহারা দেবার জন্য ঘুমিয়েছিলাম। hospital construction শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁবুর ভেতরে ভাল ঘুম হয়নি।
২.১২.১৯৮২
সকালবেলা মুখ ধুয়ে ইউনিয়ন অফিসে বসে লিখছি। গতকাল রাত দুটোয় এখান থেকে গেছি। এখন এখানে রাত্রে থেকে যাবার ফলে প্রায় রাতেই “call” আসে। কালও এসেছিল। ইউনিয়ন অফিসে বসিয়ে রুগী দেখছিলাম।
(বলা হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে শৈবাল পুষ্পা হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেয়। নিয়োগী চেয়েছিলেন শৈবাল শহীদ হাসপাতাল চালু হওয়া পর্যন্ত পুষ্পাতেই কাজ করুক। কিন্তু বিভিন্ন জটিল কারণে শৈবাল চাকরি ছেড়ে দেয়। শৈবালের কোয়ার্টারও চলে গেল, মাইনেও চলে গেল। আমাদের আরামের দিন শেষ। ততদিনে চারিদিকে পরিচিতি হয়ে গেছে।
সকালবেলায় প্রহ্লাদের দোকানে পকোড়া আর চা ধারে। সুলতানা বেগমের দোকান থেকে বিড়ি সিগারেট—ধারে। বীর সিং এর দোকানে চুল দাড়ি কাটা—ধারে। মাঝে মাঝে ইউনিয়ন থেকে টাকা পেলে ধার শোধ। দুপুরে রাতে ইউনিয়ন মেসে ডাল ভাতের কোন চিন্তা ছিল না।
শৈবাল কচ্চে দফাই-এ আমার ঘরে এসে আস্তানা গাড়লো।)
তাছাড়া একটা ছবিও আঁকছিলাম। দেয়ালে বীর নারায়ণ সিং এর যে ছবি আছে কুশলের আঁকা—সেটাই ছোট করে সাদা কালোয় আঁকতে হবে—নতুন একটা বই-booklet-এর block-এর জন্য। গতকাল রাতে উট পেনে বানিয়েছি। ঠিক হয়নি। আজ রাতে আবার রং এ আঁকব ভাবছি।