লকডাউনে ফাঁকা সোদপুর রোড প্রায় বাপের রাস্তা হয়ে গেছিল। আজ সেই বাপের রাস্তায় বাপ বাপ বলে চোখে সর্ষেফুল দেখলাম। বাপের রাস্তায় বাপকে কেন স্মরণ করতে হলো জানতে হলে খুপরিজীবি চিকিৎসকের আজকের অভিজ্ঞতা পড়তে হবে।
সাত সকালে সোদপুরের খুপরিতে রোগী দেখতে যাচ্ছিলাম। আকাশে জম্পেশ মেঘ রোদ্দুরের খেলা চলছে। অনেকটা কোলাইটিসের ব্যাথার মত। এই পেট টেট কামড়ে বেগ আসছে, আবার পর মুহূর্তেই পরিষ্কার।
দিব্যি স্কুটার চালাচ্ছিলাম। হুঁ হা ফাঁকা রাস্তা। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, উল্টো দিক থেকে একটা বাইক মাতালের মত টাল খেয়ে ঘাড়ে এসে পড়ল।
স্কুটার সমেত ভূমি শয্যা নিলাম। অন্য সময় হলে লোকজন ছুটে আসতো। জল ঢেলে চুপচুপে করে দিত। করোনার কল্যাণে দুটো কুকুর ছাড়া কেউ এগিয়ে এল না। কুকুর হয়তো গায়ে জল দেয় না, কিন্তু জলাতঙ্ক দেয়।
অতএব উঠে পড়লাম। বাঁ পাটা মচকেছে, বাঁ হাঁটুর কাছে জ্বালা করছে, বাঁ হাত একটু ছুলেছে।
বাইকের আরোহীও উঠে দাঁড়িয়েছে। পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের ছোকরা। বললাম, ‘এটা কি হল?’
‘ইয়ে দাদা, হিক… অত্যন্ত ছোট ঘটনা। হিক… ভুলে যাও। ডান-বাম গুলিয়ে গেছিল। আসলে অনেকদিন পর পেটে পড়েছে তো। হিক…. এই দেখো আমারও কেটে গেছে। শোধবোধ।’
বললাম, ‘বড় কিছুও তো হতে পারতো। এই অবস্থায় কেউ বাইক চালায়?’
‘দাদা গো, বাইক চালাচ্ছিলাম কে বলল। আমি তো হেলিকপ্টারে উড়ছিলুম। আর ওই ওড়াটুকুর জন্যই তো কালকে চার ঘন্টা লাইন দিয়েছিলুম। তোমার পায়ে লেগেছে? কেটে গেছে? দাঁড়াও, একটু রাম ঢেলে দি।’
বললাম, ‘থাক থাক, পায়ে আর রাম ঢালতে হবে না। এমনিতেই পাপী তাপী মানুষ, পাপ আর বাড়িও না।’
ছেলেটি অবাক ভাবে বলল, ‘পায়ে কেন রাম ঢালব?পায়ে কেউ রাম ঢালে? ছি ছি… মুখ হাঁ কর, গলায় ঢেলে দি।’
বললাম, ‘রাম আমি খাই না।’
‘বাঁচালে, তাহলে নষ্ট করে লাভ নেই। আমিই খাই।’
সে জামার ভিতর থেকে একটা প্লাস্টিকের বোতল বার করল। তার মধ্যের কালো তরল দু ঢোঁক খেল। বোতল আবার জামার মধ্যে ঢুকিয়ে আমার স্কুটার ধরে টানাটানি শুরু করল।
বললাম, ‘এটা আমার স্কুটার। তোমারটা ওখানে উল্টে আছে।’
‘ওহ সরি, ভেরি মাচ সরি, এক্সট্রিমলি সরি।’
আমি স্কুটার সোজা করে স্টার্ট দিলাম। এবার থেকে খুব সতর্ক হয়ে চালাতে হবে। গতকাল থেকে লক ডাউন উঠে গেছে। ভুল বলে ফেললাম! লক ডাউন ওঠেনি, মদের দোকান খুলে গেছে।