আমি মানসিক রোগের চিকিৎসক নই। তবু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, এই দুঃসময়েও যারা বাধ্য হয়ে ডাক্তার দেখাতে আসছেন, তাঁরা অনেকেই আতংক, হতাশা ইত্যাদি নানারকম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
দু’দিনের সামান্য সর্দি-জ্বর। একটু গরম জলের ভাপ নিলে আর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলে দু-তিনদিন বাদে কমে যায়, তাই নিয়েও লোকে আতংকে ডাক্তার দেখাচ্ছেন।।
আরেকদল রোগী আসছেন প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয়ে। বুক ধড়ফড়, বুকে চাপ চাপ ব্যথা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এই রোগীদের মধ্যে অনেকই ফুটপাতের বস্ত্র ব্যবসায়ী। এনারা সারা বছরে চৈত্র সেলের সময়ই দুটো পয়সার মুখ দেখেন। সেই আশায় ধার দেনা করে অনেক মাল তুলেছিলেন।
আরও একরকম রোগী পাচ্ছি। এলকোহল উইথড্রয়াল সিন্ড্রোমের। এনারা সাধারণত নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। লকডাউনের সময় অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে মদ জোগাড় করতে পারছেন না। হাত-পা কাঁপছে, ঘুম হচ্ছে না, বমি হচ্ছে, ভুল বকছেন। দু-এক জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে বললাম। লকডাউনের চক্করে দু-চারজন মাতাল যদি মদ্যপান ছেড়ে দেন, সেটুকুই লাভ।
তবে মহামারীর মধ্যেও অন্যান্য এমারজেন্সি কিন্তু থেমে নেই। এনারাই পড়েছেন সবচেয়ে সমস্যায়। আজকে একজন বয়স্ক মহিলা এসেছিলেন তার স্বামীর কোলোনোস্কোপি রিপোর্ট নিয়ে। রিপোর্টে ক্যন্সারাস গ্রোথ ধরা পড়েছে। বায়োপ্সি রিপোর্ট এখনো পেন্ডিং। রেক্টাম থেকে ব্লিডিং হয়েই যাচ্ছে। যাকে দেখাচ্ছিলেন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। নার্সিংহোমে ফোন করেছিলেন, তারা লকডাউনের পরে যোগাযোগ করতে বলেছেন। ওই মহিলা আব্দালপুর থেকে চার কিলোমিটার হেঁটে আমার বাড়িতে এসেছেন। কোনো ভ্যান, রিকশা পাননি। ওনার একমাত্র ছেলে পুনেতে আটকে আছেন, আসতে পারছেন না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘ডাক্তারবাবু, আপনি শুধু ওষুধ দিয়ে এই লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্লিডিংটা বন্ধ করে দিন।’
হার্ট এটাক, স্ট্রোক এসব রোগও অন্যান্য সময়ে যেরকম হয়, লক ডাউনের সময়ও তেমনই হচ্ছে। যানবাহনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাড়ির লোকের নাভিশ্বাস উঠছে। অনেক ছোটো নার্সিং হোম আর রোগী ভর্তি করতে চাইছে না। সরকারি হাসপাতালেও অনেক সময় ভোগান্তি হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া, এপ্লাস্টিক এনিমিয়া, লিউকেমিয়ার রোগী যাদের বেঁচে থাকার জন্য ঘন ঘন রক্ত লাগে, রক্তের অভাবে তাঁরা প্রায় মরতে বসেছেন।
যাইহোক, মহামারীকে ঠেকানোর স্বার্থে এটুকু অসুবিধা আমাদের মেনে নিতেই হবে। এমনিতেই ভারতে বাজেটে সব খাতে ব্যায় ট্যায় হয়ে যাওয়ার পরে যে টুকু খুঁদ কুড়ো পড়ে থাকে, স্বাস্থ্য খাতে সেটুকু বরাদ্দ করা হয়। সেই ভিক্ষার টাকায় সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনো যে মহামারীকে একটা পাল্টা লড়াই দিয়ে যাচ্ছে তাই যথেষ্ট।
নিচে এন আর এস হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসকের ছবিটা দেখুন। কি কিউট না!! PPE এর নামে রেনকোট দেওয়া হচ্ছে। ওই রেনকোট পরে ভ্যাপসা গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিড়ে ভিড়াক্কার সরকারি হাসপাতালে কাজ করতে হবে। কপালে ঘাম গড়ালেও হাত দিয়ে মোছা যাবেনা। N 95 মাস্ক এখনো কারো জোটেনি। কতজন ভাইবোনের মৃত্যুর পর সেটা এসে পৌঁছাবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
দু-চারটে কমিশন খোর, কশাই, গণশত্রু ডাক্তার মরলে ভালই হয়! কিন্তু মুশকিল হল মরার আগে তাঁরা অন্তত কয়েকশো রোগীর মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে মরবেন। সেই অসহায় রোগীদের কথা ভেবে অন্তত এই তরুণ হতভাগ্য চিকিৎসকদের জন্য উপযুক্ত PPE দেওয়ার দাবী উঠুক।
তবে এর মধ্যেই আশার আলো, অনেকেই দরিদ্র, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আজ মধ্যমগ্রাম তোমার আমার নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের দুই যুবক আমার বাড়ির চেম্বারে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে গেলেন, দরিদ্র রোগীদের দেওয়ার জন্য। বলে গেলেন, আরও ওষুধ জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। দু-একদিনের মধ্যেই পৌঁছে দেবেন। গৌড় সেখান থেকে ওষুধ বেছে আজই দোহাড়িয়ায় দু’জন দুস্থ রোগীকে কিছু ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে।
I have a query. Since soap destroys the lipid layer and kills covid 19 .Can we gargle with sodi bi carb solution and take alkali mixture, which was prescribed by doctors for flu in earlier days as alkali destoys lipids too ?