১। মশা কি ভাবে রোগ ছড়ায় ?
উঃ মশা কিন্তু এমনিতে ভেজিটারিয়ান। গাছপালা, ফলের রস এসব খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু গর্ভবতী স্ত্রী মশা তার ডিমগুলোকে বড় করার জন্য রক্ত খেতে বাধ্য হয়, পশু অথবা মানুষের রক্ত। এক্ষেত্রে স্ত্রী মশা ডেঙ্গু আক্রান্তর রক্তপান করে নিজে সংক্রমিত হয় ও পেটে ভাইরাস বহন করে। প্রায় ৮-১০ দিন পর ভাইরাস মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে আছে মশার লালাগ্রন্থি এবং শেষে এর লালায় চলে আসে। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশা যখন আরেকজন সু্স্থ্ মানুষকে কামড় দেয় তখন সে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়। মজাটা এখানেই যে ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও মশার কিন্তু ডেঙ্গু হয় না।
এই ভাইরাস ডিমের মধ্যে চলে যেতে পারে। ওই ডিম ফুটে তৈরি হওয়া সব এডিস এর শরীরেই ভাইরাস পাওয়া যাবে। ডিমগুলো চটচটে আঠালো হয়। জল ছাড়া বছর খানেক বেঁচে থাকতে পারে। তাই জল ভরা বড়সড় পাত্র, যেমন চৌবাচ্চা এর শুধু জল খালি করলেই হবে না, গা গুলো ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
২। ডেঙ্গু রোগের বাহক মশার স্বভাব চরিত্র কেমন?
উঃ ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে বাহক মশার কিছু স্বভাব চরিত্র জেনে রাখা দরকার। Aedes Aegyptie হল অন্যতম বাহক সেই মশা যারা ডেঙ্গু ছড়ায়। হাজার দুয়েক বছর আগে এডিস ইজিপ্টি মিশরের সংলগ্ন বনভূমির মশা ছিল (সিলভ্যাটিক)। স্বভাবে জুফিলিক মানে পশুর রক্তখেকো। এর পর দাবানলে জঙ্গল পুড়ে যায়। মরুভূমি হয়। তাই তখন মানুষের রক্ত খাওয়া শুরু করে ও অতি অল্প জলে ডিম পাড়ার অভ্যেস হয় (ম্যান মেড কন্টেনার)। ওই একই কারণে এই মশা ঘরকুনো, বেশি দূরে উড়ে যায় না। এই মশার ফ্লাইট রেঞ্জ ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। কারণ দু একবার উড়ে দেখেছে যে মরুভূমি তে অতদুরে গিয়ে কামড়ানোর মতো মানুষ পায়নি। তাই এই মশা পেরিডোমেস্টিক। তাই সাগর বা নদীর জল নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বাড়ির ভেতরে বা আশেপাশে জমা পরিষ্কার জল এর। আধার বা পাত্র নিয়ে মাথা ঘামান।
এই ইজিপ্টি ফ্রন্টাল এট্যাক পছন্দ করে না। এবং অতি নার্ভাস প্রকৃতির। মানুষকে মশা কামড়ালে স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়াতে আমাদের হাত চলে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তো বটেই, এমন কি বসে থাকা অবস্থায়ও বেশিরভাগ মানুষেরই হাত এত লম্বা হয় না যে গোড়ালির কাছাকাছি পায়ের অংশে হাত যাবে। তাই ওই তলার দিকের অংশে এরা বেশি কামড়াতে পছন্দ করে। তাই পুরো হাতা জামা প্যান্ট পরে শরীর ঢাকলে মশার কামড় থেকে কিছুটা বাঁচা যাবে।
মরুভূমিতে সেই সময়ে মানুষ বেশি চলাচল করতো সেই সময় যখন রোদের তেজ যখন কম থাকতো। মানুষ বেরোত সকাল আর সন্ধ্যে। তাই এডিসও ভোরে সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে কামড়ায় সবচেয়ে বেশি। মোটামুটি দিনের বেলায়। দিনের বেলায় যারা ঘুমোয় যেমন শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মা, এদের সব্বাইকে তাই দিনের বেলাতেও মশারি খাটিয়ে ঘুমোতে হবে।
এই এডিস নার্ভাস বাইটার। এজন্য সামান্য নাড়াচাড়া হলেই রক্ত খাওয়া অর্ধ সমাপ্ত রেখে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতিতে উড়ে গিয়ে অন্য মানুষের গায়ে বসে। ওর পেট ভরার জন্য তাই একাধিক মানুষকে এক সিটিং-এ কামড়ায়। এবং সব্বার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস দান করে। তাই একজন ডেঙ্গুরুগীর বাড়িতে বা আশেপাশের বাড়ি গুলোতেই একাধিক ডেঙ্গু রুগী পাওয়া যায়। এদের তুলনায় এনফিলিস অনেক এফিসিয়েন্ট বাইটার। একজনের শরীর থেকেই পেট ভরে রক্ত খায়। এইজন্য জ্বরের রুগীকে সবসময় মশারির তলায় শোয়াবেন। এতে ওর আর কিছু উপকার হবে না। উপকারটা হবে আমার, আপনার। ওই রুগীর শরীর থেকে মশার মাধ্যমে আর ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ছড়াবে না।
এই মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের মশার সমস্ত শরীরে আছে সাদাসাদা ডোরাকাটা দাগ, ডাকনাম টাইগার মশা। হ্যাঁ টাইগারই বটে। ঘরের অন্ধকারময় কোনা গুলোতে, আসবাবপত্র এর তলায়, পর্দার পেছনে এই মশা লুকিয়ে থাকতে ভালোবাসেন।
৩। এই মশার জীবন চক্রটি কেমন ?
উঃ প্রাপ্তবয়স্ক মশা বাঁচে দেড় থেকে দুই মাস।
স্ত্রী মশা তার ডিম বড় করার জন্য রক্তপান করে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। লার্ভা থেকে ৭ দিনের মধ্যে পিউপা তৈরি হয়। পিউপা থেকে ১-৪ দিনের মধ্যে মশা তৈরি হয়। তাই জমা জল রোজ জল পরিষ্কার করতে হবে না। ডিম ফুটে পুরো মশা হয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য দিন দশেক সময় লাগে। তাই সপ্তাহে এক দিন অন্ততঃ জল পরিষ্কার অভিযান চালালেই হবে।
৪। মশার বংশ বৃদ্ধি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
উঃ এই রোগের বিরুদ্ধে যেহেতু যুতসই ভ্যাকসিন নেই সেহেতু মশার বংশ ধ্বংস না করে নিস্তার নেই।
ডানাওয়ালা মশা মানে এডাল্ট মশা মারা মুস্কিল। চাঁদনীর ফুটপাত থেকে সবাই একটা করে মশা মারার ব্যাট কিনবো আর সকাল সন্ধে মশার পিছনে ছোটাছুটি করবো এটা সম্ভব নয়। মাঝে মধ্যে মশা মারতে কামান দাগা হয়। মশা মারার তেল দিয়ে ঘন কুয়াশার মত ধোঁয়াতে চারদিক ঢেকে যায়। কিন্তু এটি খুব কার্যকরী পদ্ধতি নয়। দারুন দেখতে লাগে।কয়েকটা মশা মারা যায়, কিছু পালিয়ে যায় বেপাড়ায়। তাই ওর চেয়ে ঢের ভালো হল মশা মারার তেল স্প্রে করা। আর তার চেয়েও ভালো জমা জল নষ্ট করা।
প্রথম ও প্রধান কাজ হল মশা ডিম পাড়তে পারে এমন জলাধার পাত্র “ধ্বংস” করতে হবে যেমন:
(১) পরিত্যক্ত মাটির পাত্র, ডাবের খোল – ভেঙ্গে ফেলুন/ টুকরো করে দিন;
(২) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা পাত্র – উল্টে দিন যাতে জল জমতে না পারে;
(৩) ফেলে দেওয়া খালি থার্মোকল/প্লাস্টিকের পাত্র – সরিয়ে ফেলে পুঁতে ফেলুন;
(৪) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা টায়ার – ঢেকে রাখুন, ফুটো করে দিন যাতে জমা জল বেরিয়ে যায়;
(৫) জল জমিয়ে রাখার চৌবাচ্চা, ড্রাম, ফ্রিজ, AC, কুলারের তলা, ফুলদানি, টব – জল ফেলে দিন, পরিস্কার করুন;
(৬) Overhead Tank – ঢেকে রাখুন;
(৭) বন্ধ নর্দমা – পরিস্কার করুন/ তেল ছড়িয়ে দিন;
(৮) সেচখাল – আগাছা পরিস্কার করুন;
(৯) ব্যবহার না করে ফেলে রাখা পাতকুয়া – সাতদিন অন্তর তেল ছড়িয়ে দিন।
ভাবছেন সবই যদি আমি করবো তাহলে প্রশাসন কি করবে। মশার বাচ্চা (লার্ভা) যেগুলি জলে থাকে, সেগুলি মারতে মশা মারার তেল স্প্রে করবে সরকার। ওই লার্ভাগুলো জলের মধ্যে থাকে খায়। আর নিঃশ্বাস নেবার নলটাকে জলতলের ওপরে বের করে দেয়। জলে তেলে মিশ খায় না। ভারী কোনো তেল যেমন ডিজেল ইত্যাদি যদি জলের ওপর ঢেলে দেওয়া যায়, তাহলে ঐ লার্ভা গুলো দম আটকিয়ে মারা যাবে।
৫। কেন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষায় কাজটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনসাধারণ কেন এই সমীক্ষা দলের সাথে সর্বতো সহযোগিতা করবেন?
উঃ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমীক্ষা দল নিয়োগ করা হয়েছে। এই সমীক্ষা হল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ। সমীক্ষা করে মশার লার্ভা খুঁজে তার উৎস হ্রাস করা সম্ভব। বাড়ি বাড়ি প্রচারের সাহায্যে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোও খুবই কার্যকরী।।সমীক্ষার সময় এলাকায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সমীক্ষাকারী দলের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যায়
৬। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার সময় দলের সদস্যের কাছে কী কী রাখা প্রয়োজন ও তাঁরা কি ভাবে কাজ করেন ?
উঃ সমীক্ষা দলের সাথে যেসব উপকরণ থাকবে:
(১) পরিচয়পত্র ও ডায়েরি;।
(২) হাতা ও টর্চ – লার্ভা সংগ্রহের কাজে লাগবে
(৩) নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে লিপিবন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট নিদর্শ; (৪) মাইক্রো প্ল্যান যা অনুযায়ী গৃহ সমীক্ষা হবে।
এই সমীক্ষা দল যা যা করবেন: তাঁরা মাইক্রো প্ল্যান অনুযয়ী একটির পর একটি বাড়িতে যাবেন। নিজের পরিচয় পত্র দেখিয়ে পরিচয় দেবেন এবং সমীক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গৃহকর্তা/কর্ত্রী কে জানাবেন। তাঁর সাহায্য চাইবেন। জ্বর সম্পর্কে ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করবেন। ও সংক্ষিপ্ত ভাবে মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে বাড়ির সদস্যদের জানাবেন। দলের একজন সদস্য তথ্য সংগ্রহ ও নিদর্শন পূরণের কাজ করবেন। অন্য সদস্য বাড়ির ভেতরে ও আশেপাশে “জলাধার পাত্র” অনুসন্ধান করবেন ও তাতে লার্ভা আছে কিনা খুঁজে দেখবেন।
৭। সমীক্ষা দল কি রকম জলাধার পাত্র খুঁজে দেখবেন এবং খুঁজে পেলে তাঁদের করণীয় কি?
উঃ পাত্রগুলি যেমন হয়:
(১) ফুলের টব, ফুলের টবের নীচে রাখা প্লেট, ফ্রিজের তলা, ছাদের ট্যাংক;
(২) পুরোনো ব্যাটারির খোল, টায়ার, মাটির পাত্র, থার্মকলের বাটি/ থালা, প্লাস্টিকের ঢাকা, সিমেন্টের পাত্র, বালতি, চৌবাচ্চা; (৩) ডাবের খোলা, বাঁশের গাঁট, কচু বা কলা জাতীয় গাছের পাতার গোড়া;
(৪) বন্ধ ড্রেন, পাতকুয়া ইত্যাদি
সমীক্ষা দল:
(১) খুঁজে দেখবেন – কোনো পাত্রে বা কোনো জায়গায় জল জমে আছে কি না;
(২) হাতা ও টর্চের সাহায্যে দেখতে হবে সেই জমা জলে মশার লার্ভা আছে কি না;
(৩) নর্দমা ও সোকপিট দেখতে ভুলে গেলে চলবে না।;
(৪) বাড়ির ছাদে বা পেছন দিকে ও জলাধার পাত্র সহ মশার লার্ভা থাকতে পারে;
সমীক্ষা দল:
(১).বাড়ির সদস্যদের লার্ভা চেনাবেন ও চিনোট সাহায্য করবেন এবং জমা জলের বিপদ সম্পর্কে তাদের সতর্ক করবেন;
(২) ক’টি পাত্র ও নর্দমা পরীক্ষা করলেন সেটি নিদর্শ-এর নির্দিষ্ট খোপে লিপিবদ্ধ করবেন;
(৩) যে সব জলাধার পাত্রের জল ফেলে দেয়া সম্ভব, সেগুলি বাড়ির সদস্যকে দেখিয়ে খালি করে উল্টে দিতে হবে। ওদের বলতে হবে – পাত্রের ভিতরটা ঘষে ধুয়ে নিতে;
(৪) শুকনো পাত্র পেলেও উল্টে রেখে দিতে হবে যাতে জল না জমে;
(৫) বাড়ির সদস্যদের বলতে হবে – ব্যবহারের জন্য কোনো পাত্রে জল ধরে জমিয়ে রাখার যদি অভ্যাস থাকে তাহলে সাতদিন অন্তর সেই পাত্র খালি করতে হবে এবং পাত্রের ভিতরটা ঘষে মেজে ধুয়ে নিতে হবে;
(৬) টায়ার সারাই/ বাতিল জিনিসের ব্যবসা/ গ্যারেজ/ বন্ধ নর্দমা / নিচু জায়গা যেখানে জল জমে আছে / অসুরক্ষিত নির্মাণ কাজের জায়গা/ প্রচুর আবর্জনা জমে আছে – এমন যা যা দেখবেন সেগুলি নিদর্শ-এর নির্দিষ্ট খোপে লিপিবদ্ধ করবেন।
৮। সমীক্ষা দলের কোন কোন বিষয়গুলির ওপর নজর দেওয়া দরকার ?
উঃ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল: (১) মশার লার্ভা চিনতে পারা এবং নিদর্শ সঠিক ভাবে পূরণ করতে পারা;
(২) বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার সময় অফিস বাড়ি, স্কুল বাড়ি, বাজার, পড়ে থাকা খোলা জায়গা – এগুলি যেন সমীক্ষা থেকে বাদ না যায়। দুটি বাড়ির মাঝখানের জায়গাটিতে ও নজর দিতে হবে; (৩) বাড়ি পরিদর্শনের পরে নিদর্শ-এর নির্দিষ্ট খোপে বাড়ির একজন সদস্যের সই নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে
(১) সমীক্ষা দলের প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি এলাকার অবস্থা ও তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা নির্ধারণ হবে। সেই জন্য সঠিক প্রতিবেদন খুবই জরুরি। (২) রাউন্ড শেষের মিটিং এ ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলির কথা আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে।
(৩) কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা ঘেরা জায়গায় ঢুকতে বাধা পেলে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি বা নির্বাচিত জন প্রতিনিধির সাহায্য নিতে হবে।
৯। বছরভর ডেঙ্গু নিয়ে কেন কাজ করতে হবে ? শীত ও গ্রীষ্ম কালে যখন বৃষ্টিপাত কম তখন কোন বিষয়গুলি নজর রাখতে হবে ?
উঃ এইসময় সাধারণত বৃষ্টি কম তাই জলভরা পাত্র বেশি পাওয়া যায় না। ডেঙ্গু মশারা ডিম পাড়ে মূলতঃ বন্ধ নর্দমা, চৌবাচ্চা, খোলা মুখ জলের ট্যাংক, বাড়ির জল ধরে রাখার পাত্র এবং জল জমে থাকা নিচু জায়গাগুলোতে। এই সব জায়গাগুলি খুঁজে বার করতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে মশার জন্ম প্রতিরোধ করা যায়। সেটা না হলে বৃষ্টি শুরু হতেই এই মশারা বিপুল সংখ্যায় বংশ বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়বে। যেখান থেকে জমা জল সরানো যাবে না, সেখানে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বাড়ির উঠানে, আশেপাশে বা ছাদে যেসব ফেলে দেওয়া পাত্র পড়ে থাকবে, বাড়ির লোকদের বলতে হবে সেগুলি সাফ করতে, নয়তো বৃষ্টি পড়লে সেগুলির মধ্যেও জল জমবে। প্রতি সপ্তাহের শ্লোগানটি মনে করিয়ে দিন – “দেখে নিন দশ দিক/ প্রতি রবিবার দশ মিনিট”
১০। গৃহ সমীক্ষা দলের সুপারভাইজার বা তত্ত্বাবধায়কদের কী কী লক্ষ্য রাখতে হবে ?
উঃ তত্ত্বাবধয়কদের কাজ:
(১) মাইক্রো প্ল্যান অনুযায়ী সব বাড়িতে সমীক্ষা হল কিনা বা কোনো বাড়ি বাদ পড়ল কিনা। কোথাও যদি কিছু বাড়ি প্ল্যান থেকে বাদ পড়ে গিয়ে থাকে তবে সেগুলিকে কোনো দলের সাথে যুক্ত করতে হবে।
(২) সমীক্ষা কর্মীরা মশার লার্ভা দেখতে ও চিনতে পারছে কি না এবং বাড়ির মধ্যে ও আশেপাশে বিভিন্ন রকম পাত্র ও নর্দমা ঠিক ভাবে পরীক্ষা করছে কিনা।
(৩) পরিবেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান অর্থাৎ মশার সম্ভাব্য জন্ম স্থল যেমন টায়ার সারাই/ বাতিল জিনিসের ব্যবসা/ গ্যারেজ/ বন্ধ নর্দমা/ নিচু জায়গা যেখানে জল জমে আছে/ অসুরক্ষিত নির্মাণ কাজের জায়গা/ প্রচুর আবর্জনা জমে আছে – সেগুলি সমীক্ষা কর্মীর দল তাদের নিদর্শ এর নির্দিষ্ট খোপে ঠিকমতো লিপিবদ্ধ করছেন কিনা।
(৪) সমীক্ষা দলের কাছে থাকা নথিপত্র যেমন হাউস কার্ড, ডায়েরি ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে তত্ত্বাবধায়কদের। (৫) পরিবেশের যে বিষয়গুলি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেমন জমে থাকা প্রচুর আবর্জনা, বন্ধ নর্দমা ইত্যাদি – সেগুলির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া না হলে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বা ওই জাতীয় কর্তার সাথে কথা বলতে হবে।
(৬) সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও নির্দিষ্ট কর্মসূচীর সময় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখক বাড়ি তাকে সমীক্ষা করতে হবে। তার মধ্যে অন্ততঃ দুটি বাড়ি এমন হবে যেখানে সমীক্ষা দল লার্ভা খুঁজে পেয়েছে আর চারটি বাড়ি এমন যেখানে সমীক্ষা দল লার্ভা খুঁজে পায় নি।
(৭) প্রতিদিন প্রতিটি সমীক্ষা দলের জমা করা প্রতিবেদন খুঁটিয়ে ভালোভাবে দেখতে হবে ও প্রয়োজন মতো তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে।
(৮) প্রতিবেদনে কোনো ভুল থাকলে শুধরে নিতে হবে। সমস্যা থাকলে প্রয়োজনীয় সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৯) কোথায় কোথায় পাত্রের মধ্যে, নর্দমায়, নিচু জায়গায় লার্ভা পাওয়া গেছে সেটা সমীক্ষা দলের থেকে ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে প্রতিবেদনগুলো ভেক্টর কন্ট্রোল টিমের হাতে তুলে দিতে হবে যাতে পরের দিনই সেই জায়গাগুলোতে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। (১০) প্রতিদিন সমীক্ষা দলের প্রতিবেদনগুলো একত্রিত করে সুপারভাইজার এর রিপোর্ট তৈরি করতে হবে এবং আপলোড করতে হবে।