চারদিকে এখন করোনাতঙ্ক। সঙ্গে আছে দাঙ্গাতঙ্ক, নাগরিকত্ব প্রমাণের আতঙ্ক আর সংস্কৃতি হারানোর আতঙ্ক। আতঙ্ক মানুষের মধ্যে ছড়ায় কখন? যখন মানুষ মনে করে বিপদ একদম ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে। যে বিপদ খুব ঢাক ঢোল পিটিয়ে আসে তাকে তো আমরা ভীষণ ভয় পাই। যেমন কোন মারণ রোগ। অথচ এমন অনেক মারণ রোগ আছে যা তিল তিল করে আমাদের চারপাশ ঘিরে ঘনিয়ে উঠছে আমরা সে সম্বন্ধে কতটা সচেতন? নি:শব্দে আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া তেমনি এক মারণ রোগ হল ডিপ্রেশন।
গতকাল বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা আবার প্রমাণ করল ডিপ্রেশনের বাংলা নিম্ন চাপ তো নয়ই এমন কি শুধু মন খারাপ বলেও তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন বলছে 2030-এর মধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে একমাত্র ডিপ্রেশনই অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হবে। কোভিড-19 যদি প্যানডেমিক হয় তবে ডিপ্রেশনই কি কিছু কম যায়! পরিসংখ্যানগত কিছু সত্য জানলে বুঝতে পারা যায় আসলে ডিপ্রেশন কতটা ভয়ংকর।
* সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় 26 কোটি 40 লক্ষ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডিপ্রশনে ভুগছেন।
* সারা পৃথিবীর যত রোগ আছে তার মধ্যে ডিপ্রেশন অন্যতম প্রধান রোগ এবং এই রোগে মানুষ অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়।
* নারীরা পুরুষদের থেকে বেশি আক্রান্ত।
* আত্মহত্যার প্রধান কারণ ডিপ্রেশন।
* WHO -এর মতে ভারত পৃথিবীর সব থেকে বেশি ডিপ্রেসড দেশ। তারপর আছে চীন তারপর আমেরিকা।
* ভারতে প্রতি এক লাখে দশ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন যাঁদের অধিকাংশের বয়স 44 বছরের নীচে।
* National Institute of Mental Health & Neurosciences (NIMHANS) এর সার্ভে অনুযায়ী ভারতে প্রায় 98 লক্ষ 13-17 বছর বয়সী কিশোর কিশোরী ডিপ্রেশনের শিকার।
* WHO আরও বলেছে আগামী দশ বছরে মানসিক রোগের কারণে ভারতের অর্থনীতিতে প্রায় বাহাত্তর লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেবে।
এত কথার প্রেক্ষিত একটাই আতঙ্কের যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও বিপদটা ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে বলে আমরা ভয় পাচ্ছি না, প্রশাসন ভয় পাচ্ছে না।
ডিপ্রেশনের উপসর্গগুলি কেমন?
ঘুমের পরিবর্তন, আক্রান্ত মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশি বা কম ঘুমাতে শুরু করে।
সাধারণভাবে যেসব কাজে আগে মন বসতো বা ভাল লাগত সেই কাজে আগ্রহ হারাতে থাকে। মন মেজাজ খারাপ হতে হাকে। মন খারাপ না হয়ে অনেক সময় একটা বিচ্ছিন্নতাবোধ কাজ করে। কোন কিছুই ভাল লাগে না। নিজের সম্বন্ধে ধারণা ছোট হতে থাকে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় কাজ করে।আত্মহত্যার ভাবনা সে মুখে বলতে পারে বা লিখতে পারে।
এমন ধরণের সমস্যা বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শুধু ওষুধ নয়, সাইকোথেরাপি বিশেষত: কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি ডিপ্রেশনে
খুব ভাল কাজ করে।
তাই তৎপরতা নিয়ে ডিপ্রেশনের মোকাবিলা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। নীরব এই শত্রুকে অবজ্ঞা না করে যথাযথ চিকিৎসায় সুস্থতা লাভ হোক আমাদের আগামীর অঙ্গীকার।
Khub bhalo ebong upokari lekhas