শুনছি সততাকে মানসিক বিকার বলে ঘোষণা করা হবে।
সেই যে কোনো এক অফলাইন যুগে,
মদের দোকান আর মুদির দোকানে যখন তফাৎ ছিলো,
তখন মধ্যবিত্ত পাড়ায় এক বা দুইজন মাতাল থাকতো।
পাড়ার সকলেই জানতো,
সদানন্দ রোজ রাতে টলতে টলতে ফিরে বৌয়ের গালি খাবে,
অথবা বিশ্বনাথবাবুর সাথে রাত আটটার পরে কথা বলা বারণ।
আজ এই বিশ্বময় ছড়ানো পেয়ালার দেয়ালায়,
বিশ্ববাবু ও সদা’কে আলাদা করা মুশকিল।
কিন্তু সেরকমই দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে এখন একটা সৎ মানুষ,
অমুক পুলিশ ঘুষ খায় না,
অমুক ডাক্তার কমিশনহীন,
অমুক পুরকর্তাটির বাঁ হাত অচল,
এগুলো এখন কাগজের হেডলাইন।
বিশেষণগুলোও ক্রমশ ব্যক্তির অভাবে
অব্যবহৃত আর অযৌক্তিক হয়ে উঠেছে।
অসাধুতা এখন সর্বব্যাপী, মসৃণ আর শাস্তিবিহীন,
ঘুষ নেওয়া হয়তো বা সাংবিধানিক অধিকারও হতে পারে,
এতটা সার্বজনীন সেই অভ্যাস।
এই সুচারু মডেলে সৎলোক পলেস্তরা খসা দেওয়ালের মতো, ভেতরের কঙ্কাল দেখা যায় অনুপম রঙ ভেদ করে।
সকলে অসৎ হলে দেশ ঠিক তত ভালো চলে,
যতটা সকলে সৎ হলে হতো,
সেই তত্ত্বের প্রমাণে যথেষ্ট তথ্য আছে,
আশেপাশে তাকালেই পাবে।
ক্ষমতায় থাকলেই কোন প্রদীপের জিন
প্রাসাদ ও মার্সিডিজে সাজায় নেতাকে,
সে কথা সকলেই জানে,
তবু পরের নির্বাচনে আরো বেশি ভোটে জেতা প্রায় নিশ্চিত।
মোটেই নড়ে না এতে গণতন্ত্রের ভিত,
তা নইলে কবে হেলে পড়ে যেতো,
লজ্জায় মিশে যেতো স্বদেশী মাটিতে!
বরঞ্চ ঘুষ আর কমিশন দেওয়া লোক জোড়হাতে থাকে,
যিনি নেন, কম হলে তিনি ধমকান।
বখরার ভাগটুকু পৌঁছতে হয় নাকি ওপরওয়ালাকে।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে,
এই সততার অনাচার বন্ধ করতে
খুব শিগগিরই সৎলোকদের মানসিক প্রতিবন্ধী ঘোষণা করা হবে।
কোনোরকম দায়িত্বের চাকরি ও ক্ষমতা থাকা পদে
এঁদের নিয়োগ করা বেআইনি ঘোষণা করা হতে পারে,
এককমও কথাবার্তা এগোচ্ছে।
তবে বিরোধীদলের কেউ কেউ এর বিনিময়ে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ারও কথা বলেছেন নাকি।
সেই ভাতার কয় শতাংশ কমিশন দিতে হবে,
সে হিসেব শুধু করা বাকি।
যাঁরা এখনো সৎ এইবারে দেখবেন মজা।
আইনে ঘোচাবে ওই ওপরচালাকি।