ডাক্তারবাবু আপনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে। শুনেই কুল কুল করে ঘামছি।এই বুঝি দু’ঘা পড়লো,বা কমিশনে যাবে, নয়তো কোর্টে অথবা পাড়ার দাদার কাছে। গলা মোলায়েম করে শুধালাম, কী অভিযোগ মা?
আপনি ফোন ধরেন না।
কথাটা অর্ধসত্য। এবার অন্য দিকের গল্পটা শোনাই।
ভোরবেলা।
৫.১২: ডাক্তারবাবু কাল রাত্রি ১১.৫৬-য় আমার মাসিক শুরু হয়েছে। আপনি পিরিয়ডের সেকেন্ড দিন যেতে বলেছিলেন। তাহলে আজ যাবো না কাল?
৫.১৫: থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ। পজেটিভ। একদম ভোরের ইউরিন স্যার। দুটো দাগ। আপনাকেই প্রথম নিউজটা দিলাম স্যার। ও তো ঘুমোচ্ছে। তাই জাগালাম না।
৫.৩০: আপনি কী আজ চেম্বারের বসবেন? তাহলে বেরোব। অনেকটা পথ যাবো তো,তাই কনফার্ম করে নিচ্ছি।
৫.৩২: আপনি কী ঘুমোচ্ছিলেন? আসলে ইমার্জেন্সী ছিল। কাল রাত্রে বেবি একদম নড়েনি। সরি ডাক্তারবাবু। এক্ষুনি দুবার নড়লো।
৫.৪৫: ডাক্তারবাবু আপনাকে বাবুর দুটো ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করলাম। দেখে দেবেন। ম্যাডামের ফোনটা অফ।
কী ছবি?
পায়খানাটা কেমন ছানা কাটা ছানা কাটা হলো। দুধে কী বেশি জল মিশিয়ে পাতলা করে দেবো।
৭.০০- ৮.০০: আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোন ধরছে না, আপনি ঠিক সময় চেম্বারে আসবেন তো x ২০ কল
এরপর সারা দিন অপারেশানের সময়, ক্লিনিকে রোগী দেখার সময় ফোন, এর মাত্র ১০ পার্সেন্ট জরুরি। তার মধ্যে আছে ডাক্তারদের জন্য কম ইন্টারেস্ট লোন, গাড়ি, বাড়ী কেনা, বিদেশ যাত্রা। নতুন উৎপাত মার্কেটিং কোম্পানি। আপনাকে গুগল সার্চে শহরের এক নম্বর ডাক্তার করে দেবো। মিনিটে মিনিটে হিট। বিরক্ত হয়ে ফোন সাইলেন্ট। আর ঠিক তখনি বউয়ের ফোন। ৫ টা মিসড কলের পর যখন ফোন ধরলাম, সাইলেন্ট হয়ে ঝাড় খাও। মুখের এক্সপ্রেশন দেখে উল্টো দিকে বসে থাকা পেশেন্টের স্বামীর এক্সপ্রেশন, টেবিলের এদিক ওদিক সব সমান।
চেম্বার শেষে সংসারে কিছু কাজ থাকে। বাজারে নতুন ইলিশ। কিনবো বলে পেট টিপছি। ফোন। মাছঅলা আমার কথা শুনছে, বয়েস হয়েছে তাই মনে হয় ডিম কমছে। ভাবছে, কেমন পাগল, মাছের বয়েস দেখে!
শাশুড়ির মার সাথে চা খাচ্ছি। ফোন। মন খারাপ করা রোগীকে ভোকাল টনিক দিচ্ছি, শাশুড়ি কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দে। ফল? এবারের জামাই ষষ্ঠীতে নো কল।
এই করতে করতে রাত্রি হলো। এবার me time। কিন্তু যেই অনলাইন হলাম, পিং পিং পিং পিং পিং… রিপোর্ট ঢুকতে শুরু হলো। দিয়েছি দুটো টেস্ট, কিন্তু প্যাকেজে করলে কম পড়বে বলে করলো ২০টা টেস্ট। সব দেখতে হবে। কেউ আবার হুমকি করা কড়া মেসেজ পাঠালো, অনলাইন আছেন দেখছি তবু উত্তর দিচ্ছেন না। এই করতে করতে সত্যি সত্যি ইমার্জেন্সী কল, ডাক্তারবাবু জল ভাঙলো, আর মনে হচ্ছে লেবার পেন। চলো, গাড়ী বের করি।
এবার বুঝছেন, দোষ করো নয় গো মা।