রাজস্থানের গোল্ড মেডেলিস্ট ডাঃ অর্চনা শর্মার অকাল মৃত্যু আমাদের ডাক্তারদের আবার একবার আয়নার সামনে যেন দাঁড় করিয়ে দিল। একজন মহিলা ডাক্তার, যিনি কারও মা, কারও স্ত্রী, সর্বোপরি কোনও পরিবারের স্তম্ভ, তিনি কী কোনো সন্তানসম্ভবা মাকে প্রাণে মারতে পারেন?
তিনি কেন বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে প্রমাণ করতে চাইলেন? তাঁর একমাত্র ভুল ছিল তিনি একজন হাই রিস্ক প্রেগন্যান্ট মহিলার চিকিৎসা করছিলেন।
স্ত্রী রোগ চিকিৎসক হিসেবে জানি, প্রেগন্যান্সির যে কোনও সময় জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে পারে। ভারতে প্রতি ১০০,০০০ জীবিতজন্মে প্রায় ১১৩ জন মহিলার মৃত্যু হয়, যার ২/৩ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য।
কোনও ডাক্তার ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও রোগীর ক্ষতির চেষ্টা করেন না। সে কথা কোভিডের সময় যখন ঢেউয়ের ওপর ঢেউয়ে রোগীরা কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তখন আরেকবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কত ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন। নিজেদের পরিবারের কথা না ভেবে তাঁরা রোগীর পাশে থেকেছেন। ভাইরাল হেপাটাইটিস, টিবি, এডস-এর মতো সংক্রামক অসুখের চিকিৎসা করতে গিয়েও অনেকে সংক্রমিত হন। তাঁর বিনিময়ে কী পান? রোগীর আত্মীয়ের কাছে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা।
বিচারক যখন ভুল রায় দেন, উকিল যখন মামলা হারেন, নেতারা যখন প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন না, তাঁদের কী জেল হয়? কিন্তু ডাক্তার সবরকমভাবে চেষ্টা করেও যখন একজন রোগীকে হারান তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়ার লোকের অভাব হয় না। সহজেই ডাক্তারকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়, মারধর করা যায়, এমনকী জেলেও পোরা যায়।
তাহলে কী আমরা জটিল রোগীদের চিকিৎসা করবো না! কারণ এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেকে ও পরিবারকে বিপদে ফেলার কোনও মানে হয় না। যে সমাজে আমাদের কোনও সম্মান নেই, সুরক্ষা নেই, সেখানে কিছু করার দরকার নেই। আগে নিজে বাঁচি, পরিবারকে বাঁচাই।
অর্চনার শেষ চিঠি দিয়ে শেষ করি, ‘ DON’T HARASS INNOCENT DOCTORS’