শিশুর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি বা তড়কা হলে স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকদের মাথার ঠিক থাকে না। ভয় পেয়ে যান। তখন এর ওর পরামর্শ মতো নানা ভুল কাজ করে ফেলেন, যা শিশুর আরো বেশি ক্ষতি করে। কাজেই জেনে নিন তড়কা কেন হয়, হলে কী করবেন, প্রতিরোধের কোনো উপায় আছে কিনা।
জ্বরের সঙ্গে তড়কা বা খিঁচুনি বলতে ঠিক কী বোঝায়?
শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০. ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে গেলে সাধারণত খিঁচুনি বা তড়কা হয়। ৬ মাস থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের এই সমস্যা হতে পারে। তবে বেশি হয় ১২-১৮ মাস বয়সে। তড়কা বা খিঁচুনি ১৫ মিনিটের কম সময় স্থায়ী হয় আর পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় আর হয় না। যদিও নানা কারণে আবার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এপিলেপসি বা মৃগীর আগাম উপসর্গ হতে পারে এই খিঁচুনি। বাচ্চাকে এমন সমস্যায় পড়তে দেখলে অভিভাবকরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না কী করবেন। যদিও বেশিরভাগ সময় এই খিঁচুনি কোনো জটিলতা ডেকে আনে না আর তা পুরোপুরি সেরেও যায়।
তড়কার উপসর্গ কী?
আচমকা জ্বর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অল্পস্বল্প তড়কা হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আর তা স্থায়ী হয় ১ কী ২ মিনিট। কিছু ক্ষেত্রে ৫-১৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এ সময় শিশু খুব শক্ত হয়ে যায়, হাত ও পায়ে ঝাঁকুনি হতে থাকে, চোখগুলো ঘুরতে থাকে আর নিজের কোনো জ্ঞান থাকে না। এ সময়ে শিশু কাঁদতেও পারে, তবে তাকে শান্ত করতে গেলে সে সাড়া দিতে পারে না। সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পর বেশ কিছু সময় ঘুমিয়ে থাকে।
খিঁচুনি বা তড়কার সময় অভিভাবকদের কোনদিকে খেয়াল রাখা দরকার?
বাবা মায়ের এ সময় ঠাণ্ডা মাথায় শিশুদের লক্ষ রাখা দরকার। কারণ তড়কা চলাকালীন তাঁদের বিশেষ কিছু করারও থাকে না। কিন্তু শিশুদের যাতে খিঁচুনির কারণে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে তারজন্য বাবা মায়ের যা যা করণীয় তাহল-
• অস্থির না হিয়ে শান্তভাবে শিশুকে লক্ষ রাখা
• শিশু যাতে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া
• কোনো নরম বিছানায় পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দেওয়া
• শিশুকে জোর করে চেপে না ধরা
• মুখে চামচ বা কোনো কিছু দেওয়ার চেষ্টা না করা
• শিশুকে স্নান না করানো
• কখন শুরু হল আর আর কখন তা ছেড়ে গেল, সেই সময়টা দেখে রাখা
• আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর সোজা করে শুইয়ে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে দেওয়া
• খিঁচুনি কমে গেলে কাছাকাছি ডাক্তারখানায় নিয়ে গিয়ে ভালো করে চেক-আপ করাতে হবে। জ্বরের কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে শিশুর রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করাতে হবে।
• ৫ মিনিটের বেশি খিঁচুনি চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার
তড়কা কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?
দুর্ভাগ্যবশত, এই সমস্যা প্রতিরোধ করার কোনো উপায় নেই। যদিও কিছু ক্ষেত্রে পরিবারে কারো এই সমস্যা থাকলে তাঁদের এই সমস্যা হতে পারে। কাজেই বাবা, মায়ের এই সমস্যা হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কাছ থেকে আগেভাগেই জেনে নেওয়া। জ্বর হলে কী করা দরকার সে সম্পর্কে জানা থাকলে জটিলতা অনেক এড়ানো যাবে।
এর কি কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আছে?
প্রতি ৩ জনে একজন শিশুর যে কোনো অসুস্থতার কারণে গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এমন সমস্যা হতে পারে। তবে সুখবর হল, শিশুর ৫ বছর বয়সের মধ্যে এই সমস্যা আপনাআপনি কেটে যায়। অনেক সময়েই এর কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকে না। ছোটোবেলায় এমন সমস্যা হলেও শিশু সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। যদিও খুব কম ক্ষেত্রে অর্থাৎ ১০০ জনে ১ বা ২ জনের পরবর্তীকালে মৃগী দেখা দিতেও পারে।
আমার ভাগ্নের এই প্রব্লেম আছে। ডাঃ বলেছেন স্নান করিয়ে দিতে। কি করবো?