জুলাই মাসে প্রকাশিত হলেও ২০০ পাতার বইটি হাতে পেলাম আগস্টের মাঝামাঝি। বইটির নাম ও কভারের একটা আকর্ষণ রয়েছে। দেখলেই হাতে তুলে নিতে ইচ্ছা হলেও তার উপায় হয়তো বা নেই। কারণ, প্রতিকূল যানবাহন আর বাজার খোলা-বন্ধের খেলায় পাঠকের হাতে পৌঁছানোর উপায় কম। তবে এই অতিমারীর সময়ে চারিদিকে যত রকমের অদ্ভুত কথাবার্তা চলছে তার ধন্ধ থেকে মুক্তির প্রয়াসে এই বিষয়ের বইয়ের প্রয়োজন ছিল। অন্তত এক জায়গায় অনেক তথ্য পাবার সুবিধার কথা মনে রেখে।
সেটা খুঁজতেই চোখ বোলাতে হল বইয়ের পাতায় পাতায়। লেখিকা সহ আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ভূমিকায় শুধুমাত্র বইটি নয় বর্তমান পরিস্থিতি ও তার উত্তরণের সূত্র ব্যক্ত হয়েছে। জনা পঁচিশ বিশেষজ্ঞের নাম দেওয়া হয়েছে বইয়ের উপদেষ্টা হিসাবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন লেখায় মাঝে মাঝেই তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যাতে পাঠক লেখার উৎস সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে পারেন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরও বহু বই যিনি এর আগেই লিখে জনপ্রিয় হয়েছেন তিনি করোনার হাল হকিকত যথাযথ বিশ্লেষণ করবেন এটা প্রত্যাশিত ছিল।
নোভেল করোনার উৎস উহান থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পৃথিবীতে তার বিচরণের নানা দিক নিয়ে আলোচনায় সমৃদ্ধ এই বই। যাঁরা ইতিমধ্যেই টিভির পর্দায় করোনা সংক্রান্ত টকশোগুলো দেখেছেন সেই বিতর্ক, বিশ্লেষণের ছোঁয়াও এখানে পাওয়া যাবে।
ভূমিকায় বিশেষজ্ঞগণ যতই বিজ্ঞানের জয়গান করুন না কেন, বইতে সবরকম চর্চা বিদ্যমান। এমনিতে সরকারীভাবেই চিকিৎসার জগতকে হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করে রাখা হয়েছে। ধর্মীয় অবৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণার মতো চিকিৎসার জগতেও যেন বিভেদের রাজনীতি! তার রেশ যদি বইয়ে থাকে তা হয়তো আশ্চর্যের কিছু না। বাজার ধরতে অথবা সব ধরণের পাবলিককে খুশি করার হয়তো এটা একটা ভালো পন্থা। এই বই পড়তে পড়তেও মস্তিকের ওই বিশেষ অংশটিকে সজাগ রাখতে হবে যা পাঠককে আবর্জনা থেকে দূরে রাখবে। নইলে একনাগাড়ে সাড়ে বারো পাতার ভেষজ পরামর্শ কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ আপনার বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণার বারোটা বাজাতে পারে।
এযাবত মানুষের হাতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিতান্ত কম। সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই অন্য চিকিৎসার জন্য লাইন পড়ে। সেখানে কোভিড পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা সামাল দেবার মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা অসম্ভব। তাই হয়তো সরকার থেকে অন্যরকমের ঘোষণা হয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব দলের ছোটো বড়ো নেতার মুখে রোগ নির্ণয় কিংবা চিকিৎসার বদলে ইমিউনিটি বাড়ানোর পরামর্শ শোনা যাচ্ছে। কাজ করুক বা না করুক হোমিওপ্যাথি ওষুধ, ভিটামিন কিংবা ভেষজ ক্কাথ বা কাড়া সেবন করার আবেদন সর্বত্র। এই বইও তার বাইরে নেই।
মগজের আলো জ্বালিয়ে রেখে পড়ুন আর জীবনে প্রয়োগ করুন। শুধুমাত্র করোনা নয়, জীবনযাপনের অনেক ব্যবহারিক দিক থেকে সতর্ক হবার সুযোগ পাবেন।