ডাবল ব্লাইন্ড রেন্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের “রেন্ডমাইজড” শব্দটার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে লিওন গরডিস একটি চমৎকার গল্প শুনিয়েছিলেন। আমরা প্রায় সবাই জানি যে জাহাজে চড়লে অনেকেরই গা-বমি বমি করে যাকে বলে “সি সিকনেস”। জাহাজের একটা ডাক্তার এই সি সিকনেসের একটা ওষুধ বের করলেন তার পরে সেটা নিয়ে ট্রায়াল করলেন। এবার ওপরওয়ালার কাছে এসে বললেন, “স্যার দারুন ওষুধ বের করে ফেলেছি, খুব ভালো কাজ দিচ্ছে”। ওপরওয়ালা জানতে চাইলেন যে ট্রায়ালটা বিজ্ঞান সম্মত স্টাডি ডিজাইন মেনে হয়েছে কিনা। ডাক্তার এতে একটু আহত বোধ করলেন, “স্যার ওসব ডিজাইন আমিও জানি। এই তো দুটো গ্রুপে ভাগ করলাম। একটা গ্রুপে জাহাজের সব নাবিকরা। তাদের দিলাম আসল ওষুধ। আর আরেকটা গ্রুপে জাহাজের যাত্রীরা। তাদের দিলাম মিছামিছি ওষুধ বা প্লেসিবো। কাকে কোন ওষুধ দিয়েছি কেউ জানতো না।” উপরওয়ালা এই শুনে একটু থমকে গিয়ে ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলেন যে তারপরে রেজাল্ট কি হল। ডাক্তারের সহাস্য উত্তর, “কেন স্যার, যারা ওষুধ খেয়েছিল তারা সবাই চমৎকার ছিল, কারুর সী সিকনেস হয় নি, আর প্লেসিবো গ্রুপে্র বেশির ভাগ অসুস্থ।”
হয়তো সেই ডাক্তারের ওষুধটা সত্যিই কার্যকর ছিল কিন্তু সেটা প্রমাণ করা অসম্ভব কারণ তিনি স্যাম্পল বেছে নেওয়ার সময় ওই স্টাডি সাবজেক্টদের পেশার বায়াসটা নেগেট করেন নি, রেন্ডমাইজড করেন নি। কেউ বলতেই পারে যে নাবিকরা পোড়খাওয়া, সমুদ্র যাত্রায় অভিজ্ঞ, তাদের আদৌ সী সিকনেস হওয়ার কথাই নয়। ভুল স্টাডি ডিজাইনের জন্যই ওই ডাক্তারের তথাকথিত আবিষ্কারের আর কোনও মূল্য থাকে না। তাঁর উচিত ছিল যাত্রী নাবিক মিশিয়ে তাদের মধ্যে থেকে রেন্ডম বা এলোপাথারি লোক বেছে (এই এলোপাথারি বেছে নেওয়ার একাধিক রাশিবিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি আছে, সেগুলো আরেকদিন হবে) দুটো গ্রুপ বানানো। তাহলে দুটো গ্রুপে কিছু নাবিক কিছু যাত্রী থাকতো। এর পরে একটা গ্রুপকে ওষুধ আর আরেকটা গ্রুপ্কে প্লেসিবো।
এত কথা বলার একটাই কারণ। অনেকেই নানান টোটকা বা জড়িবুটির উপকারিতা নিয়ে নানান দাবি করেন যে ওটা করে তার বিরাট উপকার হয়েছে, খালি পেটে গরম জলে লেবু দিয়ে খেয়ে তার আলসার সেরে গেছে ইত্যাদি। সত্যিই সারে কিনা সেটা বুঝতে গেলে ওই ডাবল ব্লাইন্ড রেন্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল – এই স্টাডি ডিজাইনের কোনও বিকল্প নেই।