এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পরপরই খবর ঘোরাফেরা করছিল, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নাকি নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হচ্ছিল, বছর পঞ্চাশেক আগে। কিন্তু তারাশঙ্কর নোবেল পাননি। যেমন পাননি বিভূতিভূষণ মাণিক জীবনানন্দ সতীনাথ আল মাহমুদ ওয়ালিউল্লাহ বা ইলিয়াস।
আসলে পুরস্কার ইত্যাদির জন্য যে বিচার, সে কিছু স্থান-কাল-পাত্র নিরপেক্ষ নয়।
আমরা বিশ্বাস করতে পছন্দ করি, শিল্প-সাহিত্যের গুণাগুণ বিচার যতোই সাব্জেক্টিভ হোক না কেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এসব ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বা প্রাতিষ্ঠানিক পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নেই। বিজ্ঞানের গুণাগুণ ভালোমন্দ উৎকর্ষ বিচারের প্রক্রিয়াটি এক্কেবারে নৈর্ব্যক্তিক।
কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?
তাহলে কি ছবির এই মানুষটা নোবেল প্রাইজ পেতেন না?
চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর অবদান বিষয়ে বলা হয়ে থাকে, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে এমন একটি আবিষ্কারকে যদি বেছে নিতে হয়, তাহলে তাঁর কাজটি একেবারে প্রথমের দিকেই থাকবে, সম্ভবত প্রথম হিসেবেই।
তিনি ওআরএস-এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছিলেন। ওআরএস, অর্থাৎ ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট পাউডার। ইলেকট্রাল পাউডার ইত্যাদি নামে সবাই চেনেন। ডায়ারিয়ায় মৃত্যুহার চমকপ্রদভাবে কমিয়ে এনেছিল এই মানুষটির গবেষণা।
কিন্তু মৃত্যু কমিয়ে আনা-ই কি শেষ কথা? তাঁর গবেষণায় হাই-টেক ল্যাব নেই, গবেষণার মুখ্য উপপাদ্যে তেমন দুরূহতা নেই, গবেষণার ফাইনাল প্রোডাক্ট থেকে তেমন বাণিজ্যের সম্ভাবনা নেই। তদুপরি, গবেষণার ফলে প্রাণ বাঁচল যাদের – হোক না সংখ্যায় কোটি কোটি – তারা মূলত তৃতীয় বিশ্বের অপুষ্টিতে ভোগা শিশু।
অতএব, নোবেল পুরস্কার তাঁর বরাতে জোটেনি। নোবেল তো দূর, দেশের মানুষই বা তাঁকে চিনল কতটুকু!!
মানুষটার নাম, ডা দিলীপ মহলানবিশ।
মারা গেলেন আজই।
যথেষ্ট বয়স হয়েছিল, তাই মৃত্যুটা হয়ত তত বড় কিছু খবর নয়, কিন্তু বড় কথাটা হলো, এই মানুষটা গতকাল অবধি বেঁচে ছিলেন আমাদের এই শহরেই। জানতেন?