বছর চল্লিশের রবীনের ছোট্টবেলায় ছিল ঠাকুর দেখার নাছোড়বান্দা শখ। এমনকী বিশ্বকর্মা ঠাকুরও সে ছাড়বে না। বাড়ির কাছে জলিবয় ইন্ডাস্ট্রিজের বিরাট কারখানা, আর মিনিট কুড়ি হাঁটলে ভারতমাতা কটনমিল। এই দুটোয় পাল্লা দিয়ে জাঁকজমকের পূজা। বিশ্বকর্মা ঠাকুরের হাতিগুলোই বাবার থেকেও উঁচু, পিছনে আকাশ-পাহাড়ের সিনসিনারি, ঝাড়বাতি, সন্ধ্যায় ফাংশান। জলিবয়ের পুজোয় রবীনের ফোরম্যান বাবা আর তার আলাদা খাতির – ‘আরে, সাহাদা, আসুন, আসুন। খোকা যে বড়ো হয়ে গেল।’
তবু রবীনের মন ভরে না। বায়না করে বাবার কাঁধে চেপে ওই দুটো ঠাকুরই দুদিনে ছয়-আটবার ঘুরে আসত সে।
রবীনের ছেলেও বাপ কা বেটা। এ-ত্ত-গুনো ঠাকুর দেখা চাই তার। তবে ইদানীং আর তত অসুবিধা নেই। জলিবয় মোড় আর ভারতমাতা মোড় মিলিয়ে গোটা আটেক অটো, টোটো, রিক্সা স্ট্যান্ডের নানা রংয়ের ইউনিয়নের বারো-তেরোটা বিস্সোকম্মার আরাধনা। উপরি পাওনা তৈরি হতে থাকা ফ্ল্যাটবাড়ির লোহালক্করের মাঝেও এককোণে গজারূঢ় দেবতা। ছেলে আহ্লাদে আটখানা -‘মা কে গিয়ে বলব, আঠেরোটা ঠাকুর দেখেছি।’
জলিবয় হাইটস্ এর সিকিউরিটি রবীনও কত কি দেখে। ছেলেকে নিয়ে ফেরার পথে ভারতমাতা কটনের ধূলিসাৎ পাঁচিল, মিল চত্বরে ঘন জঙ্গলের মাঝে বেজি আর সাপের ফ্যাঁসফোঁস, পাতাখোরদের চলাচল। কন্ডোভিলের বেসমেন্টে নিজেদের খুপরিতে ঢোকার আগে আবার সুইমিং পুলটার দিকে চোখ পড়ে যায়। ঠিক ওখানেই জলিবয় ইন্ডাস্ট্রিজের বিশ্বকর্মার মণ্ডপটা হত কিনা।