“বাবা স্কুল কবে খুলবে? আমি তো কলকাতা এসে একদিনও স্কুলে গেলাম না, কাউকে সামনে থেকে দেখিনি, ম্যামকেও না।” ড্রয়িং খাতায় রঙ ঘষতে ঘষতে জিরি বলল।
মোবাইলএ খূট খুট করতে করতে অন্যমনস্ক ভাবে বললাম “কি করে বলব মা? গভর্মেন্ট ঠিক করবে, করোনা ভাইরাস কবে যাবে তার ওপর ডিপেন্ড করছে।”
রঙ ঘষতে ঘষতেই জিরি বলল “আমার মনে হয় কি বাবা, অনেক বাচ্চা তো স্কুলে যেতে চাইতো না, বলত স্কুলে যাব না, স্কুলে যাব না, তাই নেচার বাচ্চাদের পানিশমেন্ট দিচ্ছে। এখন বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার জন্য কাঁদছে, কিন্তু যেতে পারছে না।”
“হ্যাঁ, সেটাও হতে পারে মা।”
হঠাৎ জিরি প্রচন্ড সিরিয়াস হয়ে রঙ ঘষা ছেড়ে উঠে বসলো। ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝে মোবাইল হাত থেকে নামিয়ে রাখলাম।
ভুরু কুঁচকে জিরি বেশ উষ্মা নিয়ে বলা শুরু করল “কিন্তু বাচ্চারা কেন শাস্তি পাবে? বাচ্চারা তো কিছু করেনি? তাই না? তুমি তো বললে করোনা ভাইরাস এসেছে কারণ মানুষ গাছ কেটে ফেলেছে, পলিউশন করেছে, নেচারকে ধ্বংস করেছে, মানুষের ভালো করার বদলে যুদ্ধ করেছে, সব খারাপ খারাপ ওয়েপন বানিয়েছে। তাই না?”
“হ্যাঁ তাই তো, বলেছিলাম তো”
“কিন্তু বাচ্চারা, ছোটরা তো গাছ কাটে না, ছোটরা তো গাছ ভালোবাসে, নেচার ভালোবাসে, এনিম্যালদের ভালো বাসে। ছোটোরা তো পলিউশন করে না। ছোটরা কি গাড়ি চালাতে পারে? ছোটরা শুধু ছোট ছোট গাড়ি চালায় তাও ইলেক্ট্রিকে চলে, ধোঁয়া বেরোয় না, মলের ভেতরে, রাস্তায়ও চালায় না। এসব তো বড়োরা করে। তাহলে ছোটরা শান্তি পাবে কেন? ছোটদের মাস্ক পরতে বললে ছোটরা পরে, হাত স্যানিটাইজ করতে বললে হাত স্যানিটাইজ করে। কারা মাস্ক না পরে ঘোরে?”
“বড়োরা”
“কারা করোনার নিয়ম মানছে না? কারা ভিড় করছে পুজোর বাজারে?”
“বড়োরা”
“তাহলে ছোটরা শাস্তি পাবে কেন? ছোটরা কিছু না করেই কেন শাস্তি পাবে?” জিরির ভুরু কোঁচকান, নাকের পাটা রাগে ফুলছে, ঘন ঘন শ্বাস পরছে।
“তুমি ঠিক বলেছ মা। আমরা বড়রা, ছোটদের জন্য ভাবি না। আমাদের দোষে ছোটরা শাস্তি পায়, পৃথিবীটাকে আমরা ছোটদের বাসযোগ্য করতে পারছি না। দোষ আমাদের, শাস্তি পাচ্ছে ছোটরা।”