২০১৪-তে ক্ষমতাসীন হয়ে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার নোট বন্দী (Demonetization) সহ যে কটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন তার একটি নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)। সাংবিধানিক নিয়মাবলী এবং তদানীন্তন রিজার্ভ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে ২০১৭-র বাজেটে পেশ করে ২০১৮-র ২ জানুয়ারি থেকে চালু করা হয় নির্বাচনী বন্ড। এর সাথে আয়কর আইন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ও কোম্পানি আইন কে সংশোধন করে ব্যাংক ও রাজনৈতিক দল গুলিকে তথ্য প্রকাশের থেকে ছাড় এবং ডোনেশনের ঊর্ধ্ব সীমাও তুলে দেওয়া হয়।
এর ফলে জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বহুজাতিক কর্পোরেট এবং বৃহৎ ভারতীয় পারিবারিক শিল্প-বাণিজ্য সংস্থাগুলির থেকে (তাদের বিশেষ ও প্রভুত সুবিধা পাইয়ে দিয়ে) তাদের পাহাড় প্রতিম মুনাফার একাংশ লাভ করে রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ করে কেন্দ্রের ও রাজ্যের শাসক দলগুলি। এই বিপুল অর্থবলে এবং শাসন ক্ষমতায় থাকার ফলে ও পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে অন্য ও ছোট দলগুলির তুলনা অসম, চোখ ধাঁধানো ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল নির্বাচনী প্রচার, বিরোধী দলগুলিকে ভাঙ্গা ও তাদের সাংসদ-বিধায়কদের ভাঙ্গিয়ে আনা, নির্বাচিত সরকারগুলিকে ফেলে দেওয়া, পিছন দিয়ে ক্ষমতা দখল ইত্যাদি অনাবশ্যক, অবৈধ ও গা জোয়ারি কাজগুলি দাপিয়ে করে বেড়াতে থাকে।
এর বিরুদ্ধে ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্ম’, ‘কমন কজ’, ‘সি পি আই এম’ এবং জাতীয় কংগ্রেসের জয়া ঠাকুর মামলা করেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০১৮ থেকে ২০২৩ অবধি ১৬,৫১৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে যার থেকে ১২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। তার থেকে বিজেপি, জাতীয় কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস তিনটি বড় দল সবচাইতে বেশি টাকা পেয়েছে। বিজেপি একাই পেয়েছে ৬,৫৬৪ কোটি (৫৫ শতাংশ), কংগ্রেস ১১৩৫ কোটি (৯.৫ শতাংশ) এবং তৃণমূল ১০৯৬ কোটি টাকা (৯.১৩ শতাংশ)।
সমস্ত কিছু পর্যালোচনা করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এক ঐতিহাসিক রায়ে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই, জে বি পর্দিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রর সম্মিলিত বেঞ্চ নির্বাচনী বন্ড কে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেন।
এর কারণ হিসেবে তারা বিস্তারিত যে যুক্তি দেন তার সংক্ষিপ্তসার:
(১) Violation of the right to information under Article 19 (1) (a) of the Constitution.
(২) Not proportionately justified to curb black money in electoral financing.
(৩) Right to donor privacy does not extend to contributions made as a quid pro quo measure.
(৪) Unlimited corporate donations violate free and fair elections.
(৫) Amendment to section 29 C of Representation of the People Act quashed.
শীর্ষ আদালতের এই রায়ের ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে গত এক দশক ধরে নরেন্দ্র মোদীর বিশাল ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে আর এস এস-বিজেপির সাজানো বাগানে (যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ভেঙ্গেই চলে বিজেপি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, বিরোধী নেত্রী অসুস্থ সোনিয়া গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের লড়াই থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন, বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এমন ন্যায় যাত্রায় বেড়িয়েছেন যার খবর পর্যন্ত সংবাদপত্রে বেরোচ্ছে না, বিরোধী মঞ্চ ‘ ইণ্ডিয়া ‘ ছত্রভঙ্গ, মায়াবতী মমতা নীতিশ খেজরিয়াল জয়ন্ত চৌধুরীর বিরোধী দলগুলি কংগ্রেসের থেকে দূরে, কাশ্মীর ও মনিপুর censored, চাঁদে ‘ভগবান শিবের’ পদার্পণ থেকে অযোধ্যায় ‘ভগবান রামের’ মন্দির উদ্বোধন থেকে আরব দেশে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা ধর্মীয় রাজনীতির প্লাবনে দেশ ময়ময় ……, কৃষক আন্দোলনের মত কিছুটা হলেও কাঁটা পাওয়া গেল। এবার দেখার শাসক বিজেপি দল এটি কিভাবে সামলায়? আর অন্য রাজনৈতিক দলগুলিই বা কি পদক্ষেপ নেন? সব শেষে ভোট দাতাদের মধ্যে এর কিরকম প্রভাব পড়ে?
১৬.০২.২০২৪