ইমারজেন্সি কর্পোরেট রুগী, নূন্যতম intrastructure মেডিক্যাল ইউনিট, mortality rate শূন্য, (হাসপাতাল কর্মীদের মাথায় ঘোরে সারাদিন মিডিয়া জুড়ে চলতে থাকা ডাক্তারের মার খাওয়া, হাসপাতালে গুন্ডামি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পানিশমেন্ট)
সাধারণ রুগীকে রেফার করে দিলে “এরা আছে কি করতে?”
এক বৃহৎ অংশের মানুষ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় বাইরে দেখাবো।
আর পরে থাকে কিছু সত্যিকারের emergency রুগী যাদের হয়তো দেখে মনে হচ্ছে না সেই ভাবে এটা মারাত্মক কিছু ঘটতে চলেছে, কিন্তু ডাক্তারিটা ওখানেই।
যতই আধুনিক ইনভেস্টিগেশন, আধুনিক ওষুধপত্র রোজ রোজ আবিষ্কার হোক, দিনের শেষে
পালস, প্রেসার, টেম্পারেচার, রেসপিরেটরি রেট সঙ্গে ক্লিনিক্যাল এক্সাম আপনাকে ক্লু দেবেই।
এবার শুধু রেফার করলেই তো হবে না।
রুগী কোথায় ভর্তি হলে তার ঠিক মতো চিকিৎসা সেই রোগে হবে, চেনা পরিচিত লোকজন থাকলে একটু যোগাযোগ করা, রুগীর সঙ্গে বলিয়ে কইয়ে কিছু বন্ধু পাঠানো, রুগীর ফিড ব্যাক নেওয়া সবটা নিয়ে একটা অধ্যায় শেষ হয়।
যদি আপনি বার বার এই কাজটা করে যান এবং রুগী বেঁচে যায় তখন লোকের কাছে জিনিসটা অতি সরল হয়ে যায়।
ঈশ্বর হয়তো ভারসাম্য বজায় রাখতে চান।
সব ক্ষেত্রে এত সহজে এটা হবে না, উচিতও নয়।
দু তিনটে ঘটনা উল্লেখ করতে চাই এই প্রসঙ্গে।
অনুরাধার ফোন– স্যার, ছেলেটার অসহ্য মাথা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছে, একটু disoriented লাগছে, প্রেসার এদিক ওদিক করছে। বহরমপুরে পাঠাচ্ছি। আপনি একটু দেখুন।
বহরমপুরে MRI হয়।
সাব arachnoid hemorrhage। বয়স আনুমানিক ৩০.
রুগীকে নূন্যতম সাপোর্ট দিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে বলি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে। সাথে লোক পাঠাই।
শিয়ালদা চত্বরের নামকরা ইনস্টিটিউটে ফোন করি।
বলি–প্লীজ, অ্যাডমিশন নিন। অপারেশন করতে হবে। বাঁচবে না ও না হলে।
বেড নেই বস।
আরো উপরে ফোন করি
বলেন একটা বেড আছে। ভিআইপি আসবে। বুক করা।
বললাম–ও সোজা ইমারজেন্সি থেকে OT ঢুকবে।এটা ডাক্তার হয়ে বলছি। বেড লাগবে না আপাতত। তারপর পোস্ট-অপ কেয়ারে থাকবে যদি বাঁচে। এটুকু করে দিন।
রাত দুটোতে রুগী হাসপাতালে ঢোকে।
বলে দেওয়া হয় অন্য কোথাও নিয়ে যান, বেড নেই।
আবার সেই উপরে ফোন করি।
রুগী emergency ডাক্তার থেকে সরাসরি অপারেশন থিয়েটার।ot হয়।
দিন পাঁচেক পর সেই উপরের ভদ্রলোকের ফোন–কে হয় আপনার?
কেন?
বেঁচে গেল ছেলেটা।
লাস্ট আপডেট বলুন দেখি।
বললাম কেউ জানায় নি।
অবাক হলেন ! বললেন কেন করেন এদের জন্য।
ওর আজ ছুটি হয়ে গেল। সেটাও জানায় নি আপনাকে কেউ!!!!!
এক মাস আগে সাগরদীঘির এক ইঞ্জিনিয়ারের ফোন। দাদা ফোন কেটে দিও না। বউকে নিয়ে বহরমপুরের দিকে।অসহ্য পেটে ব্যাথা। ও তোমাদের রুগী ছিল। কোথায় যাবো, কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। বলে কাঁদতে শুরু করলো।
বহরমপুরে এক নার্সিং হোমের অমুক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। ওকে ভরসা করি। ও নিজে আর দেখতে চায় না।নিজে চালায় নার্সিং হোম। অপেক্ষা করতে হতে পারে মুখোমুখি হলে আমার কথা বলো। দেখে দেবে।
ঘণ্টা তিনেক পরে একটা ফোন–তোমাকে কি কোনো প্রাইজ দিচ্ছে নাকি আজকাল! তাড়িয়ে দেবার পরেও এত দরদ!
ধুর, গুরু দেখে দাও।
দেখেছি। USG হলো। Ruptured একটোপিক প্রেগন্যান্সি। আমার এখানে কোনো গাইনী নেই আজ। পাঠিয়ে দেবো অন্য কোথাও। তবে দেরি করলে মরেও যেতে পারে।
আরে ওখানে তো অমুক সার্জেন থাকে, ওর তো DGO করা।
সে তো জানি। কিন্তু কর্পোরেট রুগী ও করবে না। এদিক ওদিক হলে কেস খাবে। তোমাদের ভাই হাই ফাই ব্যাপার।
আরে গুরু প্লীজ করে দিতে বলো। তুমি বললে ও করে দেবে।
দেখছি। তবে রক্ত লাগবে। আর সেটা পাবে না, ডোনার লাগবে। মনে রেখো এক বছর আগে ২০ ইউনিট প্লেটলেট বহরমপুরে দিয়ে রুগী বাঁচানোর (আইসিসিউ-তে ছিল) সাত দিনের মধ্যে সে খেলার মাঠে খেলছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছিল। সেটা আমরা জানি।
ওটায় কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না বস।
ঠিক আছে। ওটা পার্টি ডোনার এনে ব্যবস্থা করবে। আমিও ওটায় ঢুকবো না। চরম অপমানিত হয়েছিলাম সেই বার।
মেয়েটি বেঁচে যায়।
তবে এইভাবে সবাই সব সময় বাঁচবে না। তাহলে emergency বলে কিছু থাকতো না।
তাই নয় কি?