পড়ন্ত বিকেলের আলোয় নামছি খাটি গ্রাম থেকে জয়কুন গ্রামে। আজ শনিবার ১৯.১০.২০১৯.। আমাদের পিন্ডারি ট্রেক শেষ। পা যেন আর চলছে না। ক্লান্তিতে নয়। মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। রাস্তায় ফুটে থাকা নাম না জানা নানা রঙের জংলি ফুল, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, বড় বড় গাছের গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা। পাহাড়ি ঝোরা।পারাপারের ছোটো সাঁকো। সারি সারি পাহাড়ের শ্রেণী পার হয়ে সবার ওপরে সাদা বরফ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গর্বিত মাইকতোলি (৬৮০৩মিটার) শৃঙ্গ। একটু দূরে সরু ফিঁতের মত নেমে যাওয়া সুন্দরডুংহা যাবার রাস্তা। ছোট্ট ছোট্ট ছবির মত রং চঙে বাড়ি। সব কিছুই যেন মনকে বিবশ করে তুলছে। এই দেড় কিলোমিটার রাস্তায় যা দেখছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্যামেরা ‘মন ক্যামেরার’ পাশাপাশি হাতের ক্যামেরাতেও বন্দী করে নিচ্ছি আমরা দুই বন্ধু আমি আর কৌশিক।
ভাবছি। যাবার দিন তো এই একই রাস্তায় গেছি। কিন্তু এই বিশাল বিশাল পাইন, দেওদার গাছের নীচেই ফুটে থাকা নানা রঙের ফুল, বিচিত্র নকশার ছত্রাক, শ্যাওলার মনকাড়া রূপ আমাদের চোখে পড়েনি কেন! নাকি হিমালয় তার রূপ ঐশ্বর্য প্রকাশ করে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে। আর হয়ত তার প্রভাবেই কেউ কেউ হয়ে যায় সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসী।আর আমাদের মত যারা একটা ট্রেকিং এর কষ্টের পর মনে মনে বলি আর নয় অনেক হয়েছে, আবার নতুন শক্তি পেয়ে বলি, না কিছুই হয়নি আবার ফিরে আসব হিমালয়ে।
আমাদের তিন জনের দলের সবথেকে সিনিয়ার শিশিরদা এর মধ্যেই দ্রুতগতিতে পৌঁছে গেছে জয়কুন গ্রামে, আমাদের যাবার দিনের হোম স্টেতে। নামে মেয়েটির বাড়ি। মেয়েটি আবার আমাদের গাইড দেবেন্দারের শালী।ছোট্ট খাট্ট বছর চব্বিশ পঁচিশ বছরের মেয়েটির ‘দম’ আছে। একাই চালাচ্ছে হোম স্টেটি। এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। আন্তরিকতা দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে অন্যান্য সমস্যাগুলি। আজ এখানে রাতে দেবেন্দার নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াবে মুর্গীর মাংস ভাত। তারপর কাল আমরা জয়কুন থেকে ৪ কিলোমিটার হেঁটে যাবো খারকিয়া। যেখানে আমাদের এবারকার মত যাত্রা শেষ।
ক্রমশ…