আজ থেকে ৪০বছরেরও বেশী সময় আগে হাতি কমিটি বলেছিল—১১৭টা ওষুধ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ মানুষের অধিকাংশ রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। সেটাই এদেশের প্রথম অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা।
১৯৭৮-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা—Health For All by 2000 A.D.—২০০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য অর্থাৎ পৃথিবীর সব দেশের সরকার নিজ নিজ সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নেবে। সরকার তো সব ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব নিতে পারে না। কোন কোন ওষুধ সরবরাহ করা হবে তা ঠিক করা দরকার। তাই দরকার অত্যাবশ্যক ওষুধের এক তালিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম তালিকায় ওষুধের সংখ্যা ছিল ২০৮টি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী essential medicines বা অত্যাবশ্যক ওষুধ হচ্ছে সেই ওষুধগুলো যা জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তাগুলো মেটায়(satisfy the priority health care needs of the population)। এই ওষুধগুলো সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাওয়ার কথা। ওষুধগুলোর দামও হওয়া চাই মানুষের নাগালের মধ্যে।
কয়েক বছর ছাড়া ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অত্যাবশ্যক ওষুধের আদর্শ তালিকা (model list of essential medicines) প্রকাশ করে। এমন শেষ তালিকা তারা বার করেছে ২০১৫-এ, তাতে ওষুধের সংখ্যা ৪০৮, অর্থাৎ ১৯৭৭-এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতিটি দেশকে উৎসাহ দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী জাতীয় অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা ঠিক করে। পৃথিবীর ১৫৫টিরও বেশী দেশ জাতীয় অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী সরকারগুলো তাদের সীমিত সাধন কোন কোন ওষুধের জন্য লাগাবে তা ঠিক করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় একটা মূল অংশ বা core list থাকে। তাতে এক বুনিয়াদী চিকিৎসা পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ওষুধগুলো থাকে। গুরুত্বপূর্ণ অসুস্থতাগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সবচেয়ে কার্যকরী, নিরাপদ এবং cost-effective ওষুধগুলোকে এই তালিকায় রাখা হয়।
আরেকটা পরিপূরক অংশ বা complementary list থাকে। যে গুরুত্বপূর্ণ রোগগুলোর জন্য বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা নজরদারি দরকার, সেইসব রোগের ওষুধ থাকে এই অংশে। বেশী দামী বা কম cost-effective ওষুধগুলোকেও অনেক সময় রাখা হয় এই অংশে।
জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রনয়ণের সময়ও অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকার গুরুত্ব অনেক। ২০১১-এ সবার জন্য স্বাস্থ্যের লক্ষ্যে গঠিত উচ্চস্তরীয় বিশেষজ্ঞ দল যেমন সুপারিশ করেছিল—ভারত সরকার সমস্ত নাগরিককে তাদের প্রয়োজন মতো ২০১১-র অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকার ওষুধগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করুক।
২০১১-র জাতীয় অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকায় ওষুধের সংখ্যা ছিল ৩৪৮। ২০১৫-র তালিকায় আছে ৩৭৬টা ওষুধ।
সরকার এই অত্যাবশ্যক ওষুধগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদনে ওষুধ কোম্পানীগুলোকে বাধ্য করুক এবং নাগরিকদের বিনামূল্যে সরবরাহ করুক এইটাই আমরা চাই।