টাটকা একটি সার্ভে-রিপোর্টে প্রকাশ – নিজেদের ওষুধ প্রেসক্রাইব করানোর জন্যে ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারবাবুদের বিভিন্ন রকম টোপ দিচ্ছেন – দামী উপহার – স্মার্টফোন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে নিখরচায় বিদেশ সফর, দামী হোটেলে থাকা, এমনকি সঙ্গিনী পর্যন্ত – এবং, এই উপঢৌকন, মতান্তরে উৎকোচ, বেশ কার্যকরী স্ট্র্যাটেজি নিঃসন্দেহে – কেননা, উত্তরোত্তর এধরণের প্রলোভনের ব্যবহার বাড়ছে।
সার্ভে-রিপোর্টের খবরটি সংবাদপত্রে রীতিমতো গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলির তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও চোখে পড়েনি। এই দেশের বিপুল সংখ্যক ডাক্তারের মধ্যে সামান্য এক দশমিক অংশের মধ্যে এই সার্ভে – সার্ভের পেছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ডাক্তার বা ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ, দুই পক্ষেরই খুব নগণ্য একটি অংশের সাথে আলোচনা করেছেন – কাজেই, এই রিপোর্ট থেকে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বা চিকিৎসাবাজারের নৈতিকতার কোনো সাধারণ চিত্র পাওয়া যায় না, এই বলে রিপোর্টটিকে উড়িয়ে দেওয়াই যায় – ইন ফ্যাক্ট, রিপোর্টের বিপক্ষে এধরণের যুক্তি অন্যায্যও নয় – কিন্তু, রিপোর্টে যেদিকটা ধরা পড়েছে, তার তাৎপর্য পুরোপুরি অস্বীকার করতে চাইলে, সেটা বড় ভুল হয়ে যাবে, কেননা, রিপোর্টে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে, সেগুলো সর্বাংশে মিথ্যা নয় – বরং, চিকিৎসাবাজারের একটা বড়ো অংশের ক্ষেত্রে এই কথাগুলো প্রযোজ্য। সুতরাং, আলোচনা প্রয়োজন – এবং খুবই জরুরী এই প্রসঙ্গে কথোপকথন।
চিকিৎসকদের উপর মানুষের ভরসার ক্ষেত্রে ইদানীং ভাটার টান – কারণে-অকারণে ডাক্তারদের ওপর লোক চড়াও হচ্ছে, কিন্তু সে হিমশৈলের চূড়ার মতো – সেইসব আক্রমণ যাঁরা করে থাকেন, তার চাইতে বহুগুণ বেশীসংখ্যক মানুষ বাসে-ট্রামে-সামাজিক অনুষ্ঠানে ডাক্তারদের গুষ্টির শ্রাদ্ধ করে থাকেন।
ভরসা কমে আসার কারণ বহুবিধ – সেসব নিয়ে আগে বহুবার আলোচনা করেছি – যেমন, চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে দেখার যে সাম্প্রতিক প্রবণতা, চিকিৎসাকে সংগঠিত মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে দেখার নব্যউদারবাদী ভাবনা – এতে চিকিৎসা উত্তরোত্তর ব্যয়বহুল হচ্ছে, যে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের মতোই এতে পণ্যকে ঘিরে অযৌক্তিক প্রত্যাশা তৈরী করা হচ্ছে – পরিণাম, চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ পথে বসছেন, হতাশ হচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
আরেকদিকে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান উৎপত্তিগতভাবেই পশ্চিমানুসারী, দর্শনগতভাবেও তা-ই – নৈর্ব্যক্তিক ভাবনা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে – অসুস্থ মানুষ চিকিৎসকের হাত ধরে যেভাবে আশ্বস্ত হতে চান, মডার্ণ মেডিসিন আমজনতার সেই আকাঙ্ক্ষার কথা মুখে স্বীকার করলেও, সে নিছকই কথার কথা। এই নৈর্ব্যক্তিক চিকিৎসাদর্শন ও বাণিজ্যমুখী চিকিৎসাকাঠামো – দুইয়ের প্রতিভূ হয়ে রোগীর সামনে উপস্থিত হন যিনি – তিনি চিকিৎসক। রোগীপরিজনের সেই অসহায় আক্রোশের শিকার হতে হয় তাঁকেই। সকলের সামর্থ্যের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য স্বাস্থ্যপরিষেবার বন্দোবস্তের দায় কল্যাণকামী রাষ্ট্রের – আর কার্যক্ষেত্রে যা-ই করে থাকুন, নেতারা ভোট চাইতে যান কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থার, বা ওয়েলফেয়ার স্টেটের মুখ হয়েই – রাষ্ট্রকে সেই দায় মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নাগরিকের – হ্যাঁ, ডাক্তার বা রোগীপরিজন, দুপক্ষই নাগরিক, সেই দায়িত্ব কোনোপক্ষই বিস্মৃত হতে পারেন না।
তবু, এইসব কথার পরেও কিছু কথা থাকে। যে বিষয়টি উঠে এসেছে যে সার্ভেটির কথা বলে এই লেখা শুরু করেছি, সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলে ভাবের ঘরে ছলনা করা হবে।
দুটো দিক থেকে বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আসুন, এক এক করে দেখা যাক।
প্রথমত, যেদেশে একই ওষুধ প্রায় একই মানের পাঁচরকম কোম্পানি পঁচিশরকম দামে বিক্রি করেন, সেইখানে নিজের মাল বিক্রির জন্যে প্রতিযোগিতা থাকবে, থাকবেই। এই প্রতিযোগিতার হাত ধরেই আসে বিপণন, অসাধু বিপণন এবং অনৈতিক প্রলোভন। একই কথা প্রযোজ্য বিভিন্ন ল্যাব বা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে হওয়া বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রেও।
বিষয়টা শুধুমাত্র উপহার-উৎকোচে থেমে থাকে না – সমস্যার শিকড় আরো গভীরে। ঢালাও উপঢৌকন আর উৎকোচের ঠেলায় লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেয়ে যায়। শেষমেশ ওষুধ বা পরীক্ষানিরীক্ষা যা-ই বলুন, সেটিরই গুণমান অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয় না। ওষুধের দাম লাগামছাড়া কেন, এই প্রশ্নের উত্তরে ওষুধকোম্পানির সাথে জড়িত লোকজন একবাক্যে উত্তর দেন, আসল খরচ আর-অ্যান্ড-ডি অর্থাৎ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট খাতে, কিন্তু অনেকবার দাবী ওঠার পরেও, কোনো কোম্পানিই ঠিক সেই খাতে কত খরচ, সেই ব্যাপারটা স্পষ্ট করে জানাননি। হিসেব যেটা দেন, সেইটা আনুষঙ্গিক অনেক খরচা জুড়ে। ঠিক একইভাবে, কোনো কোম্পানিই তাঁদের ওষুধের বিপণন খাতে কত খরচ হয়, সেইটা জানান না। মোটামুটি অনুমান করা হয়, কোম্পানির বার্ষিক বাজেটের অর্ধেকই যায় এই বিপণন খাতে। অর্থাৎ, এই মার্কেটিং বাজেট না থাকলে, ওষুধের দাম কমানো যেতে পারত অনেকখানিই কিম্বা অনেক বেশী অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হত গবেষণা ইত্যাদি খাতে – উভয়ক্ষেত্রেই লাভবান হতেন রোগীপরিজন।
এই প্রশ্ন ওঠা আশ্চর্য নয়, যে, ওষুধের আবার বিজ্ঞাপন কীসের? ডাক্তারবাবুরা এমনিতেই ওষুধ বিষয়ে জানবেন, প্রয়োজন মনে হলে লিখবেন – এর জন্যে বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন আসছে কোত্থেকে!! কিন্তু, বিষয়টা অত সরলরৈখিক নয়। বাজারে নিত্যনতুন যেসব ওষুধ আসছে, তার নব্বই শতাংশই পুরোনো ওষুধের চাইতে ঊনিশবিশ – পরিভাষায় যাকে বলে মি-টু ড্রাগ, অর্থাৎ বলা চলে আমিও-আছি গোত্রের ওষুধ – বেশ ঝলমলে মোড়ক বিনা, থুড়ি মোটা বিজ্ঞাপনী ব্যয় বাদে সে ওষুধের বাজার পাওয়া মুশকিল। কাজেই, বিজ্ঞাপন – অর্থাৎ উপঢৌকন আর উৎকোচ। এবং মাথায় রাখুন, এই বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তারের চাইতেও অনেক বেশী করে হাতুড়ে চিকিৎসক, আয়ুষ ডাক্তার এবং ওষুধের দোকানদার – হ্যাঁ, শেষটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা সরকার জেনেরিক নামে ওষুধ প্রেসক্রাইব করার হুলিয়া জারি করলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জেনেরিক ওষুধ পাওয়া যায় না, ব্র্যান্ডেড ওঢুধই বিক্রি হয় – আর, ডাক্তার জেনেরিক নামে ওষুধ প্রেসক্রাইব করলে, সেই ব্র্যান্ড বাছেন ওষুধের দোকানদার – কাজেই, তিনি যে কোম্পানির বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য হবেন, সে নিয়ে, বোধকরি, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। লক্ষ্য করুন, এই পুরো সমস্যাই কেটে যায়, যদি সরকার সব কোম্পানিকেই কোম্পানির নাম ছাড়া কেবলমাত্র জেনেরিক ওষুধ বিক্রির নির্দেশ দেন – অথচ, সরকার তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া দূরে থাক, সেরকম কিছু ভাবছেন বলেও জানা যায় না।
কিন্তু, আবারও বলা যাক, সমস্যার এইদিকটাতেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখলে ভাবের ঘরে চুরি হয়ে যাবে। দুর্নীতির সুযোগ থাকা আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকা – দ্বিতীয়টির জন্যে প্রথমটিকে দায়ী করার মানে হয় না – হ্যাঁ, প্রথমটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দ্বিতীয়টির সম্ভাবনা কিছুটা কমে, কিন্তু দুর্নীতির পেছনে একমাত্র যুক্তি হিসেবে দুর্নীতির সুযোগ থাকাকে দায়ী করাটা, একেবারেই অজুহাতের বেশী কিছু নয়।
মেনে নেওয়া যাক, চিকিৎসকদের একটা বড়সড় অংশের মধ্যে নৈতিকতা বোধের অভাব বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে (বলা যেতে পারে, এই ব্যাপারেচিকিৎসকরা সমাজের বাকিদের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছেন)। না, পানের দোকানে বা লোকাল ট্রেনের কামরায় ঠিক যেমন করে হোলসেল রেটে ডাক্তারের আদ্যশ্রাদ্ধ করা হয়, অনৈতিকতার ব্যাপ্তি ঠিক অতখানি না হলেও, খুব নগণ্য নয় নিশ্চয়ই।
এইবার দেখুন, সমাজের বাকি অংশের মধ্যে নৈতিকতার বোধ লোপ পেয়ে যাবে, নৈতিকতা সম্মানের আসন থেকে নেমে প্রায় মূর্খতা বলে বিবেচিত হবে – ন্যায়নীতির ঠিকে নিয়ে বসে থাকেন যাঁরা, সেই সাংবাদিক থেকে আদালতের বিচারক, ঘুষ বা চুরি বা স্বার্থের সংঘাতের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যাবে সবারই (রাজনীতিকদের কথা না হয় তুললামই না) – উচ্চপদস্থ কর্পোরেট চাকুরে অব্দি মেনে নেবেন, যে, কন্ট্র্যাক্ট পেতে বা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে একটু-আধটু কমিশন দিতেই হয় – আর এই ব্যবস্থা থেকে উঠে আসা চিকিৎসক থাকবেন নিষ্পাপ, একেবারে অপাপবিদ্ধ – একটু বাড়াবাড়ি আশা হয়ে যাচ্ছে না!!!
না, এইসব মেনে নিয়েও বলছি, আশাটা বাড়াবাড়ি নয় একেবারেই – সমাজের আর বাকি পেশার মানুষের কাছে যতখানি, তার চাইতে চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রত্যাশা বেশীই থাকার কথা – ঠিক এইটাই আশা হওয়া উচিত – কেননা, মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, নিজের সবচাইতে অসহায় মুহূর্তে – এবং চিকিৎসকের হাতে থাকে মানুষের প্রাণ, যার চেয়ে প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না – চিকিৎসাকে আর পাঁচটা পেশার ভালোমন্দের সাথে মিলিয়ে দেখলে হবে না (ঠিক একইভাবে, চিকিৎসাকে ক্রেতা-সুরক্ষার আওতায় রাখা একটি মারাত্মক ভ্রান্তি – যে ভ্রান্তির উৎস একটি বিশেষ অর্থনীতির দর্শন – যে দর্শন মানলে, মেডিকেল এথিক্স, যে এথিক্সের কথা যেভাবে আমি বলতে চাইছি, সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায় – কিন্তু, সে আলোচনা আজ করতে চাইছি না) – কাজেই, মেনে নিতে অসুবিধে নেই, চিকিৎসকের ভাবনা এবং কার্যপ্রণালীর মধ্যে, রোগীর ভালো বাদ দিয়ে আর কোনো উদ্দেশ্য মিশে থাকা অনুচিত (অবশ্য, এইখানে বলে রাখা জরুরী, নিতান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত চিকিৎসকও রোগীর খারাপ চান না – তাঁর চাহিদা, রোগীর সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ায় ঘুরপথে কিছু বাড়তি আয় – যেমন, যে পরীক্ষা প্রয়োজন, সেটাই সেরকম ল্যাব থেকে করিয়ে কিছু বাড়তি আয় বা আগের ওষুধটির বদলে একইরকম অন্য ওষুধ লেখা, যার কোম্পানি আগামী কনফারেন্সে যাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করবেন – আরোগ্য বা উপশমের সাথে আপস করার মানসিকতা যাঁদের থাকে, তাঁদের, আর যা-ই হোক, চিকিৎসক হিসেবে না দেখা-ই ভালো)। আর ঠিক এইজন্যেই, সব পেশায় লিখিত বা অলিখিত কিছু নীতি বা এথিক্স-জাতীয় বিষয় থাকলেও, মেডিকেল এথিক্সের কথাটা সবারই মনে থাকে।
সমস্যাটা এইখানেই।
কেননা, মেডিকেল এথিক্স নিয়ে আমজনতার যা ধ্যানধারণা এবং যে মেডিকেল এথিক্স চিকিৎসকেরা পাঠক্রমে পড়ে আসেন, দুইয়ের মধ্যে মিল সামান্যই। না, ঘুষ নেওয়া, কমিশন গ্রহণ করা ইত্যকার বিষয় যে নিন্দনীয়, এসবের জন্যে আলাদা করে মেডিকেল এথিক্স পড়তে হয়না – চিকিৎসকই হোন বা অন্য কোনো পেশার মানুষ – যেকোনো সভ্য দেশের আইনেই এগুলো দণ্ডনীয় অপরাধ।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
হালে মেডিকেল এথিক্স বিষয়টি নীতিশাস্ত্র, মর্যালিটি বা চিকিৎসাদর্শনের আওতা ছাড়িয়ে আইনের আওতায় এসে পড়েছে। আর সিনেমায় দেখা আদালতের সেট মনে করুন – চোখে কালো কাপড়, হাতে দাড়িপাল্লা – আইনের চোখ ঘোষিতভাবেই অন্ধ – সেখানে আবেগের জায়গা নেই – আর, চিকিৎসা এমনই এক বিষয়, যাকে মানবিক হয়ে উঠতেই হয়, মানুষের হাত ধরে এগোতেই হয় – আইনের নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের চলে না।
তাহলে? একটু অন্যভাবে যদি দেখতে চাই?
চিকিৎসাবিদ্যা কি শুধুই বিজ্ঞান? অনেকে চিকিৎসাবিদ্যাকে অসম্পূর্ণ বিজ্ঞান বলে থাকেন – আমি কথাটা ঠিক সেই অর্থে বলছি না – কেননা, অসম্পূর্ণ বিজ্ঞানও শেষমেশ বিজ্ঞান-ই – নতুন আলো নতুন গবেষণার শেষে অবশেষে সে অসম্পূর্ণতা কাটিয়ে উঠবে। আমার প্রশ্ন, চিকিৎসাবিদ্যা কি মূলগতভাবেই বিজ্ঞান? বা কেবলমাত্র বিজ্ঞান?
চিকিৎসাকে ঘিরে মানুষের ক্ষোভ, চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস – এইসবের পেছনে একদিকে যদি থাকে চিকিৎসাব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ, ঠিক তার সাথেই রয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রের উত্তরোত্তর “বিজ্ঞান” হয়ে ওঠার প্রবণতা (যার পেছনেও আবার বাণিজ্যের যুক্তি প্রবল – কিন্তু, এই লেখায় সে প্রসঙ্গে যেতে চাইলে লেখাখানা উপন্যাস হয়ে যাবে)। রোগীপরিজন- চিকিৎসক সম্পর্কের এই অবনতি কেবলমাত্র এদেশের বিষয় নয় – এ প্রায় গ্লোবাল ফেনোমেনন – কিন্তু, এদেশে সমস্যাটি যেভাবে ডালপালা মেলেছে, অন্যত্র তা খুব একটা সুলভ নয়।
তাহলে চিকিৎসাশাস্ত্র ঠিক কী?
আমার মনে হয়, চিকিৎসাবিদ্যার একটা বড় অংশ বিজ্ঞান তো অবশ্যই – কিন্তু, প্রায় ততোখানিই হিউম্যানিটিজ – অর্থাৎ, সমাজবিদ্যা ও দর্শনও। এই দ্বিতীয় অংশকে অগ্রাহ্য করে যত বেশী শুধুই বিজ্ঞান অংশের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, সমস্যা ততোই বাড়ছে। না, আমি কোনোভাবেই বিজ্ঞানবিরোধী নই – শুধু বলি, বিজ্ঞানের সাথে সমাজভাবনা-দর্শন-মানবিক বোধ ইত্যকার ভাবনার উপযুক্ত মিশেল না হলে চিকিৎসকের দায়িত্ব কদ্দূর উপযুক্তভাবে পালন করা সম্ভব, সেই নিয়ে আমার সংশয় আছে – আর, ডাক্তারী পড়তে আসেন যাঁরা, তাঁদের শিক্ষাপ্রক্রিয়ার মধ্যে এই বিষয়গুলোকে জানানোর বা ভাবানোর প্রয়াস, সেরকমভাবে, হয় না।
দ্বিতীয়ত, দেশের সমাজজীবন ও সামাজিক বাস্তবতার সাথে ওতপ্রোত মিশে থাকে চিকিৎসা – অন্তত তেমনটাই ছিল দস্তুর। প্রতিটি দেশের নিজস্ব চিকিৎসাভাবনা ছিল – সেসব দেশে পটাপট লোকজন মরে যেত আর কেবলমাত্র ইউরোপে মানুষ অমর থাকতেন, এমন তো নয় – কিন্তু, উপনিবেশের কল্যাণে ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যাকে একমাত্র সত্যি বলে মেনে নেওয়া হল – যে চিকিৎসাবিদ্যা একান্তভাবেই পশ্চিমা দর্শনানুসারী। এবং, এই চিকিৎসাবিদ্যার সাথে জড়িয়ে থাকা যে এথিক্সের ধারণা, তারও অনিবার্য উৎস পশ্চিমা দর্শন। সেই দর্শন এদেশের জলহাওয়ায় কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে, সে কথা ভেবে দেখার অবকাশ কারোরই হয়নি – আজ যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে, তখনও না ভাবতে চাইলে মুশকিল। দেশের বৃহৎ অংশের মানুষ ঠিক কেন আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি হাতুড়ে ও আয়ুষ চিকিৎসকদের উপর আস্থা রাখছেন – তার পেছনের যুক্তিগুলো, সম্ভবত, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয় – না, একবারও বলতে চাইছি না, যে, হাতুড়ে চিকিৎসা এদেশের ঐতিহ্যানুসারী – শুধু বুঝতে চাইছি, আধুনিক চিকিৎসার শিক্ষা একজন মানুষকে তার দেশের মানুষের বৃহত্তর প্রেক্ষিত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে না তো!!!!
গ্রীক দর্শন-পরবর্তী পশ্চিমা দর্শনের সাথে এদেশের দর্শনের ফারাক একেবারে মূলগত – পশ্চিমা দর্শন সমস্যা-পরিস্থিতির প্রায় নিরাসক্ত বিশ্লেষণ করে – অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, তার সাথে বিশ্লেষকের ব্যক্তিগত যাপন সম্পর্কহীন – দশটা-পাঁচটার আপিস করার মতোই, সেই দর্শনচর্চার শেষে আপনি থাকতেই পারেন নিজের খেয়ালখুশীমতো। সেই দর্শন থেকে উঠে আসা মেডিকেল এথিক্স, স্বাভাবিকভাবেই, তদনুসারী – যে এথিক্স সীমাবদ্ধ শুধুমাত্র রোগী দেখার মুহূর্তটিতেই – বাকি সময়ে চিকিৎসক কী করছেন বা কেমন জীবনযাপন করছেন, সেইটা বিবেচ্য নয় – চিকিৎসাবিদ্যা আর পাঁচটা পেশার মতো আরেকটা পেশামাত্র।
অপরদিকে, সাংখ্য-ন্যায়-যোগ-বৈশেষিক-বেদান্ত ইত্যকার হিন্দু দর্শন বা আরো বেশী করে জৈন বা বৌদ্ধ দর্শন – ভারতীয় দর্শন গভীরভাবে যাপন-নির্ভর – বা বলা যেতে পারে, অধিকাংশ ভারতীয় দর্শন মূলত একটি নির্দিষ্ট যাপনপ্রণালী, যার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে থাকে তদনুসারী চিন্তাপদ্ধতি। এদেশের প্রাচীনতম যে চিকিৎসার ধারা, অর্থাৎ, আয়ুর্বেদের চিকিৎসাসংক্রান্ত ভাবনা বা তজ্জনিত এথিক্সের ধারণা এই বৃহত্তর দর্শনেরই অন্তর্গত। আর সব কিছু ফেলে,আয়ুর্বেদকেই মান্য করার কথা বলতে চাইছি না – কিন্তু, চিকিৎসাদর্শনের ক্ষেত্রে আমরা ঠিক কোন পথ বেছে নেব? অন্তত, এই সঙ্কটের মুহূর্তে? আজ যখন চিকিৎসকের পেশাটিও আর পাঁচটা পেশার সাথে একই করে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে (সেইটা অন্যায় কিনা বলতে পারব না) – এদিকে চিকিৎসকের কাছে প্রত্যাশাটি আর পাঁচটা পেশার থেকে আলাদা (এও অন্যায় নয় – কিন্তু, দুটো একইসাথে সত্য হতে পারে না) – আবার, সবকিছু ফেলে একমাত্র অর্থনৈতিক সাফল্যকেই মোক্ষ হিসেবে ভাবার প্রচলন হয়েছে – চিকিৎসক একা নন, রোগী-পরিজন চিকিৎসককে মাপতে চান প্রায় সেই মাপকাঠিতেই – এবং, এই ভাবনার বিষবৃক্ষের ফল চারপাশেই – সেইসময়, অন্তত, এই নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরী।
পুরো সমাজের খোলনলচে বদলাতে পারলে, চিকিৎসাকে মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতার আওতার বাইরে আনতে পারলে, অর্থোপার্জন ও ব্যাঙ্ক ব্যালান্সকেই জীবনের মোক্ষ বলে ভাবার প্রবণতার বাইরে আসতে পারলে ভালো হত – কিন্তু, সে কাজ সহজ নয়। বৃহত্তর প্রেক্ষিতের বাইরে শুধুমাত্র চিকিৎসকের দৃষ্টিকোণে কী বদল আনা সম্ভব? আনা সম্ভব কি?
হিপোক্রেটিসের ভাবনার পরে পশ্চিমা মেডিকেল এথিক্সের ধারণায় বদল এসেছে বিস্তর – কোন অসতর্ক মুহূর্তে মেডিকেল এথিক্স চিকিৎসা-সংক্রান্ত আইনের অন্তর্গত হয়ে গিয়েছে, আগেই বলেছি – কিন্তু, আইনের মূলেই থাকে না-মানলে-উপর-থেকে-জোর-করে-চাপিয়ে-দেব মনোবৃত্তি – তার সাথে ভেতর থেকে তাড়না অনুভব করে নীতি মেনে চলার যোজন ব্যবধান। অপরদিকে, এদেশের দর্শনভাবনা শেখায়, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয়, বা জোর করে গিলে নেওয়া নয় – অনুভব আর উপলন্ধিই শেষ কথা – ধর্ম (রিলিজিয়ান অর্থে নয়) অর্থাৎ নির্দিষ্ট আদর্শ অনুসারী জীবনযাপন – মেডিকেল এথিক্স-কে দর্শনের মূলস্রোতের বাইরে ব্যতিক্রম ভাবার কারণ দেখি না। যন্ত্রসভ্যতার অন্ধ অনুসরণ আমাদের দেশের বাস্তবতা থেকে দূরেই নিয়ে যায়, একথা গান্ধীজি বা রবীন্দ্রনাথ বারবার বলেছেন – অন্তত, যন্ত্রানুসারী সভ্যতা থেকে উঠে আসা চিকিৎসাভাবনার যন্ত্রবৎ অনুসরণ দিনকে দিন আমাদের খাদের আরো কিনারায় নিয়ে চলেছে, সে কথা চারপাশে তাকিয়ে দেখলে বোঝা কঠিন নয়।
পশ্চিমা জীবনদর্শন অনুসারী চিকিৎসাবিদ্যা ও চিকিৎসা-এথিক্স-কে দেশের জলহাওয়া অনুসারে মানানসই করার চেষ্টা কখনই হয়নি, আজ সেই প্রয়াস শুরু করাও দুঃসাধ্য – কিন্তু, অসম্ভব নয়। চিকিৎসার দর্শনকে দেশের জলহাওয়ার উপযুক্ত না করার অবশ্যম্ভাবী ফল – যে মানুষটিকে নিতান্ত আপনার জন বলে বোধ করা উচিত ছিল – সেই চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন অপর। আবার, সেই দূরত্বের কারণেই, অপর হিসেবে ভেবে ফেলার সুবাদে, সহমর্মিতার বোধ-হারানো চিকিৎসকও সামনে বসা অসহায় মানুষটিকে কেবলমাত্র অর্থোপার্জনের সুযোগ হিসেবে দেখে নিতে পারছেন।
তাহলে, পরিস্থিতির বদল ঘটানো যায় কীভাবে?
একথা যদি মেনে নিই, দেশের জলহাওয়া আর সাধারণ প্রবণতা থেকে গড়ে ওঠে সেদেশের দর্শন – তাহলে, ভারতীয় দর্শনভাবনার শিকড় ভারতবর্ষের মাটির গভীরে – আগেই যেমন বললাম, যে দর্শন শেখায় এক বিশেষ যাপন। চিকিৎসাশাস্ত্রের মূলটি পশ্চিমে থাকলেও আমাদের দেশের মেডিকেল এথিক্স হোক দেশজ দর্শনানুসারী। অর্থাৎ, একজন চিকিৎসকের এথিক্স, বা মেডিকেল এথিক্স, শুধুমাত্র রোগী দেখার মুহূর্তটুকুতে সীমাবদ্ধ না থেকে হয়ে উঠুক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত যাপনের অংশ। শুনতে আকাশকুসুম কল্পনা মনে হলেও, কাজটা কিন্তু অসম্ভব নয়। ডাক্তারি পড়ার পাঁচ- সাতবছর তো খুব কম সময় নয় – শিক্ষাক্রমের অঙ্গ হিসেবেই যদি মেডিকেল এথিক্স জড়িয়ে নেওয়া যায় এমন করে, তাহলে ব্যাপারটা কঠিন নয়।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাকি পেশার লোকজন করেকম্মে খাবে – আর্থিক সাফল্যের সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলবেন হইহই করে – আর চিকিৎসক বসে থাকবেন ন্যায়নীতির ঠিকে নিয়ে – শেষমেশ তিনি পাবেনটা কী? চিকিৎসকও মানুষ – বাজারের অগ্নিমূল্য তাঁকেও ভাবায়, তাঁর সন্তানকেও বেসরকারি ইস্কুলে চড়া কড়ির বিনিময়ে শিক্ষালাভ করতে হয়, বাজারের কোনো ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনো সুবিধে তিনি পেয়ে থাকেন, এমন নয় – আদর্শ ধুয়ে জল খাওয়ার ঠিকে নিয়ে বসে থাকার দায় কি চিকিৎসকের একার? এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। তবু মনে হয়, চিকিৎসক বলতে শুধুমাত্র একটি বিশেষ পেশার পেশাদারকে বোঝায় না – চিকিৎসকের জীবন একটি বিশেষ যাপন – চিকিৎসকের কাছে সমাজের প্রত্যাশাও তাই – সেই প্রত্যাশা মেটানোর দায় শুধু চিকিৎসকের একার, সম্ভবত, নয় – তবু, আমি সৌভাগ্যবান, তেমন যাপনে অভ্যস্ত বেশ কিছু মানুষকে আশেপাশে দেখি – তার পরেও বলি, চিকিৎসকের কাছে সমাজের বৃহত্তর অংশের প্রত্যাশা তেমন হলেও – প্রশ্ন একটাই, চিকিৎসকেরও সমাজের কাছে কিছু প্রত্যাশা থাকে – চিকিৎসক যদি প্রত্যাশা পূরণের জন্যে অনেকদূর হাঁটতে রাজি থাকেন, বৃহত্তর সমাজ এগিয়ে আসতে রাজি হবেন কি?
চিকিৎসক ও অচিকিৎসকের কথোপকথনের উদ্দেশেই এই পোর্টাল – অবশ্য, অচিকিৎসক কে-ই বা, যন্ত্রণাকাতর বা শোকগ্রস্তের পিঠে আপনি যখন রাখেন পাশে থাকার হাত, সেই শুশ্রূষার মুহূর্তে প্রতিটি মানুষই চিকিৎসক – এই বন্ধুত্বের পোর্টালে মতামত ও আলোচনার জন্যে এই ভাবনার খসড়াটুকু রাখলাম – আপনাদের কথা শোনার জন্যে কান পেতে থাকছি।
চমৎকার লেখা। মূলে গিয়ে ভাবার চেষ্টা আছে। অনেকগুলি মৌলিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সামাজিক প্রেক্ষিতটি, সত্যিই, অস্বীকার করার জায়গাই নেই। এই প্রশ্নে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের হাসপাতালের বাইরেও মাঝেমধ্যে পরস্পরের সঙ্গে মতের আদানপ্রদান প্রয়োজন।
এই প্রশ্নে কিউবা বা সমতুল্য দেশের উদাহরণ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখককে এই সমস্যা নিয়েই ভবিষ্যতে আলোকপাত করতে অনুরোধ জানালাম।
I have read a few articles written by Dr. Basu. He focuses and highlights the very critical issues to a common man and in a lucid manner. This is another nice piece from him.
The common man are the victims of the business driven healthcare system and they have diverse experience, obviously unfavourable, which they are unable to channel through their reachable avenues. There is another class of people who would react in excess and in many cases resort to arson and violence without even knowing what actually has happened. The healthcare fraternity has multiple facets ranging from pathlabs to clinics and manufacturer of spurious API and drugs.
The word spurious has a definition in the Drugs and Cosmetics Act and it also covers drugs which are not fully compliant in terms of law. although they may not be spurious as an English language dictionary would define. They may not be bio equivalent or in most case would have lower amounts of the API in a formulation. The generic medicines are granted approval by regulators upon demonstrating bioequivance ( Me-too products as the author mentions) but their products in the market are far from the desired efficacy. These are regarded as spurious drugs under law.
The world knows about this nefarious trade but somehow they thrive holding hands of a brand of practitioners. This is however the scenario in the outer suburbs to the small towns and villages. In the cities the money making activity has a different pattern. The quality of treatment is better though but the cost the healthcare is disproportionately high and inflated.
The corruption in healthcare including its allied fields has a direct adverse effect on patients in several cases which could result in loss of lives. Here is a sample of a sms I received
“Last Chance!
Get FULL BODY checkup at HOME, only @Rs.499 for 41 tests like Diabetes, Kidney, Lipid, Liver etc. Book now @ http://1kx.in/0QP4G0”
Tell me with the cost of reagents and equipment establishment cost is this a fair deal? Can you expect a proper report at this cost? Is there any watchdog?
Medical research centres are spread out like tadpoles and this is a tax cheating mechanism. What does good research produce? Of course new drugs. But there is not one of these research units that have capability of creating anything close to a new drug. What does the future hold for the people?
Is there any hope of reforms in a corrupt system where most people in and relating to the healthcare businesses are stakeholders? Can india become a 5 trillion economy with these and other corrupt practices all over.
Respected Bishan Babu
At the outset I express thanks to you for your article which I have gone through very attentively .
I would like to opine my views as I have gathered from experiences while working for NGOs which are working in the field of health.
1. The relationship of patients &Doctors are very fast deteriorating because of a large number of Doctors have forgotten how to behave with patients.
2.Patience of a section of Doctors are on the wane.They do not want to understand the plight of the patients and don’t want to listen the details of patients suffering attentively.
3. A large number of so called self made renowned doctors do not care for the time of patients. Giving appointment at 6 pm but coming in to chamber at 8 PM . They don’t want to give value of time of Patients.
4.Some Doctors Prescribing costly medicines indiscriminately which many patients can not afford .
5. Unnecessary investigation are being prescribed and sometimes compelling the patients to do the same from a particular and specified Lab or centre. If patients somehow do it from his preferred Lab then it is refused to see.
6. In some cases Doctors do not know how the Hospital is drawing its Bill.Fabricatedand manipulated Bill is being prepared by Nursing Home/Corporate Hospital. A Lion’s share of Private Hospital Bill is being taken out by Hospital but patients think it is being taken by Doctors
7.Very often Pvt Hospitals are in any way try to get additional amount beyond the package . Details of facilities availabke in package are not clearly expressed before admission causing the patients ascertain Doctors are culprits they are in hand and gloves with the Pvt. Hospital.
8. Sometimes Government Doctors who are violating their service rules are being attached with the Private Hospital refuse to give money receipt of their professional charges.
I think amicable and friendly behaviour with a qualification of patience hearing may develop the relationship of patient and Doctor.
ডাঃ বাসু সমস্যার গভীরে গিয়ে প্রায় পুরো বিষয়টি ব্যাখা করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে আমি গত তিন দশক কাজ করছি। আমি ওনার সাথে একমত যে চিকিৎসকদের একটা অংশের মধ্যে উপহার নেওয়ার প্রবণতা আছে। সেই প্রবণতা অনেক সময় শুধু ওষুধের স্যাম্পল নেওয়া দিয়ে শুরু হয়। বেশিরভাগ চিকিৎসক সেই স্যাম্পল দুঃস্থ রোগীদের দেন। একসময় মেডিকেল এসোসিয়েশন এই রকম ক্ষেত্রে কটা ট্যাবলেট নিতে পারেন তার একটা নির্দেশিকা দিয়েছিল। একটা বা একশোটা এই উপহার নেওয়া যে অনায্য সেটা স্বীকার না করলে এই আলোচনা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, রোগীকে দুপাঁচটা ট্যাবলেট দিয়ে উপকার করলে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সুনাম বৃদ্ধি হয়, সামগ্রিক ভাবে রোগীর কোন লাভ হয় না।
এরপর আসে সত্যিকারের উৎকোচের প্রসঙ্গ। চিকিৎসককে অনেক টাকা খরচ করে উপহার দিয়ে কোম্পানির কি কোন লাভ আছে? তাহলে তারা খরচ করেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেলেই উপহার আর উৎকোচের মধ্যে যে চুলচেরা ব্যবধান অনেক চিকিৎসক রচনা করেন তার সঠিক মূল্যায়ন হবে। নামকরা কোম্পানি কেবলমাত্র নামকরা চিকিৎসকদের এই ধরনের উৎকোচ এই জন্যে প্রদান করেন যে তার বিনিময়ে কোম্পানির মুনাফা বাড়বে। অর্থাৎ, চিকিৎসক সুলভ নীতিকথার প্রাথমিক শর্ত তাতে পুরোপুরি লঙ্ঘিত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কোম্পানি গুলো তো আর ধোয়া তুলসিপাতা নয়। তাদের দরকার বাজার। সেই বাজার দখল করতে নিত্য নতুন পণ্য নিয়ে আসে। আজ যদি কোলেষ্টেরল মানে খারাপ সুতরাং ওষুধের ককটেল দিয়ে তার গুষ্টিনাশ করতে হয়, বাজার কমতে শুরু করলেই শুরু হয় উল্টোপ্রচার। ব্যাড কোলেষ্টেরল বলে কিছু হয় না, ইত্যাদি। একজন প্রখ্যাত চিকিৎসককে জানি যিনি আজ থেকে বহু বছর আগে আমাকে বলেছিলেন যে, কোলেষ্টেরল ব্যবসা বৃহত পুঁজির ব্যবসা বই কিছু নয়।
চিকিৎসক এথিকস মানবেন কিনা তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার এই ধারনার সাথে আমি একমত নই। আমি জানি এদেশের সরকার, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য সমাজকে বিষাক্ত করে তুলেছেন। তার প্রভাব যে চিকিৎসকদের উপর ভয়ানক ভাবে পড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্ম অনেক চিকিৎসকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে খুনের সপক্ষে কথা বলছেন। মানুষে মানুষে বিভেদ করছেন। অথচ, আমাদের শেখানো হয়েছিল চিকিৎসকদের কোন বর্ডার নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই। এইরকম পরিস্থিতিতে উৎকোচ নেওয়া যে অনেকে কোন অপরাধ বলে গণ্য করবেন না তা বলাই বাহুল্য। মাছের পচন যেমন মাথা দিয়ে শুরু হয়, সমাজের পচন তেমনি উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিতদের দিয়ে শুরু হয়েছে। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে বেশি পচনশীল। দরিদ্র দেশে বুভুক্ষু জনগনের মাঝে কুৎসিত সম্পদের মালিক কুসীদজীবি ব্যবসায়ীদের অনেকে দখল করছেন। সস্তায় বড়লোক হওয়ার সে প্রতিযোগিতা যে অচিরে বহুগুণ বর্ধিত কুফল হিসেবে নিজের কাছে ফিরে আসবে সে হিসেব হয়তো নেই, কিন্তু মহাকাল সে বিচার করবে নিশ্চয়ই। সেই ভয়ঙ্কর সময় আসার আগে সচেতন হওয়া দরকার। সব অন্যায়, অবিচার আর কুৎসিত বিভৎসা পরে যদি ধিক্কার হানতে পারে যায় তাহলে যে উচ্চ নীতি ও আদর্শের কথা ডাঃ বাসুর লেখার ছত্রে ছত্রে একটু বিষাদমাখা স্বগতোক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তার প্রতিকার হবে। আমার তিমির বিনাশি হবো, না তিমির আমাদের বিলাসের নৈবেদ্যের আচ্ছাদন হবে তার বিচার আমাদের চিকিৎসকদের ই করতে হবে।
বিষাণ বসুকে আমি পছন্দ করি এই কারণে নয় যে তিনি একজন ডাক্তার। ডাক্তাররা অবশ্যই আমাদের জীবনে সবচাইতে প্রয়োজনীয় মানুষ, আমি সচেতন ভাবে বলছি, সবচাইতে প্রয়োজনীয়, (একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে তাঁদের প্রয়োজন আমার কাছে কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ) সুতরাং আপন স্বার্থেই ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত মানুষের প্রতি আমাদের আলাদা দুর্বলতা থাকবে, সেটা জনান্তিকে উল্লেখ করতে হবে।
তবে সে জন্য নয়, বিষাণ, প্রকৃত অর্থে একজন সমাজ সচেতন, সাধারণ মানুষের সুখ অসুখের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মী মানুষ।
তাঁর বিশ্লেষণ, ডাক্তারি এথিক্স (যা আমি ইতিপূর্বে আমার অন্য একটি লেখায় উল্লেখ করেছি) ইত্যাদি বিষয়ের অকপট উল্লেখ, আমাকে মুগ্ধ করেছে।
তাঁর লেখার মুন্সিয়ানা এবং বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে আমার ইতিমধ্যেই পরিচিত।
অসাধারণ লেখা। কেবল অসাধারণ বললে ভুল হবে, অসাধারণ তথ্যপূর্ণ লেখা, আমাদের অনেক ভাসাভাসা জানাকে পূর্ণতা পেতে সাহায্য করেছে।
বিষাণ বসুকে ধন্যবাদ।
পড়লাম, কমেন্ট বক্সের পোস্ট ও পড়লাম। আজকাল কিছু ওষুধ এমন পাচ্ছি একজন সাধারণ মানুষ আর বয়স্ক বাপ মা সামলাতে গিয়ে, সেগুলো ওই ডাক্তার বাবুর পাশের দোকানটিতেই পাবেন, নইলে মাথা খুঁড়েও পাই, আবার দেখি নেটে লোড করলে পাই। আমার শাশুড়ি মা ডিমেন্সিয়ার পেশেন্ট, ডাক্তার দেখাই বৈদ্যবাটীতে আর ধানবাদে থাকেন, তাই এখানেও কিছু ওষুধ কিনতেই হয়, একসাথে দু তিন মাসের ওষুধ কেনা যায় কি? কিন্তু এই সব সমস্যা দেখে আজকাল স্টক করতে হয়। আবার আমার মা কিছু স্কিনের মলম ইত্যাদি কলকাতার দোকান খুঁজে পাচ্ছেন না, আমি অনলাইন আনিয়ে দিই।
আমজনতা হিসেবে এটুকু জানালাম।
প্রচুর ডাক্তার বন্ধু কোল ইন্ডিয়া ফ্যামিলির, তাই ওই ট্যুর হেন তেন আমরাও জানি। একই সাথে দেখি একজন ডাক্তারের সরকারি আর প্রাইভেট করে যে পসার একজন ইঞ্জিনিয়ার সেটা এচিভ করতে প্রায় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যাচ্ছে, ?। জীবনের মূল্যবোধ সবার নিবু নিবু তাই প্রবলেম অনেক। গরীবদের কি করুণ হাল সেও দেখি। সবচেয়ে মনে হয় সবার মধ্যে অনেক অশিক্ষা, সে আমাদের মত পরিবারের মানুষের মধ্যেও আর ওই দুঃস্থদের মধ্যেও। কিছু কিছু জিনিস শুনে সত্যি চমকে উঠি। প্রচন্ড সচেতনতা বাড়ানো উচিত।