গোবরে টেস্টোস্টেরন Fool!
ভয়ঙ্কর রকমের বুদ্ধিমান বলে গুবরে পোকার তেমন নামডাক শোনা যায় না। সব গুবরে ভারি বুদ্ধিমান, এমন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। কিন্তু বড় বিদ্যাতে অতি দড় গুবরেদের পোকা সম্পর্কে সাবধান থাকাই ভাল। (চিত্র ১)
এই সব গুবরে পোকা প্রজাতির স্ত্রীরা সুড়ঙ্গের মত গর্তে সুরক্ষিত থাকে। শক্তিশালী পুরুষ পোকারা সেই গর্তের মুখ দখল করার জন্য মারামারি করে। সবথেকে শক্তিশালী পুরুষটি অন্যদের হারিয়ে গর্তের মুখ আটকে বসে থাকে ও যথাসময়ে স্ত্রী-গুবরের সঙ্গে মিলিত হয়। কিন্তু কিছু ছোট ছোট পুরুষ গুবরে পোকা আছে যারা ভারি শান্তিপ্রিয়, লড়াইতে যায় না, অবশ্য গেলে যে হেরে যেত সন্দেহ নেই। তারা সুড়ঙ্গের পাশের দেয়াল ফুঁড়ে এসে স্ত্রী পোকার সঙ্গে মিলিত হয়ে পালিয়ে যায়।
(চিত্র ২)
গোবরের গুণেই বোধ হয় এই ছোট পোকাদের অণ্ডকোষ দেহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য রকমের বড়, গায়ের জোরে ঘাটতি হলেও তাদের শুক্রাণুর ঘাটতি হয় না। যারা গোবরের শক্তিকে এতকাল তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এসেছেন তারা এইবেলা সতর্ক হোন ও সকাল বিকেল নিয়ম করে কাউডাং কেক খাবার কথা খুব সিরিয়াসলি ভাবতে থাকুন।
ক্যাটলফিশ নামে ফিশ হলেও আসলে মাছ নয়। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র উপকূলে তারা থাকে।
(চিত্র ৩)
বলশালী পুরুষ ক্যাটলফিশ অন্য পুরুষদের মেরেধরে এলাকা ছাড়া করে। কিন্তু তাদের ওপর টেক্কা দেয় ‘স্নিকার’ পুরুষ ক্যাটলফিশ। দুই কুস্তিগীর মস্তান পুরুষের মারামারির ফাঁকে তারা স্ত্রীদের ঝাঁকের মধ্যে মিশে যায়। একে তো তাদের রং স্ত্রী ক্যাটলফিশের মত ছোপ ছোপ, তার ওপর তারা শরীরের এমন ভঙ্গী করে যে তাদের পুরুষত্বের চিহ্ন ‘চতুর্থ বাহু’ আড়াল হয়ে যায়। মস্তান পুরুষ ভাবে, এটা আরেকটা স্ত্রী ক্যাটলফিশ, সবে সঙ্গম করে (হুঁ হুঁ বাওয়া, আমি ছাড়া আর কার সঙ্গে করবে এ-দিগরে!) ডিম পাড়ার তাল করছে। স্নিকার পুরুষ সুযোগমত স্ত্রী ক্যাটলফিশদের ডিম্বাণুগুলো নিষিক্ত করে চলে যায়।
ব্লুগিল সানফিশ সত্যিকারের মাছ। মাছেদের স্নিকার পুরুষেরা স্ত্রী মাছের মত রঙের হয় এবং তারাও চুপিচুপি নিষেক করে পালিয়ে যায়।
(চিত্র ৪)
এক ধরনের টিকটিকির মধ্যেও কিছু পুরুষ মেয়ে সেজে যৌন চৌর্যবৃত্তি করে।
চুরির কায়দা এইরকম অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে মূলত এক। একচেটিয়া দখলের জন্য সর্বদা নিখুঁত নজরদারী চালাতে হয়, সেটা প্রায়ই সম্ভব হয় না। ফলে চৌর্যবৃত্তির কৌশল সফল হবার সম্ভাবনা থাকে। একবার কোনও পুরুষ চৌর্যবৃত্তিতে সফলতা লাভ করলে তার আচরণগত ও দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো জিনের মাধ্যমে পরের প্রজন্মে যায়। একের পর এক প্রজন্মে স্নিকার কৌশলের সাফল্য ক্রমশ দক্ষতর চোরের জন্ম দেয়। এ হল যৌন নির্বাচনের একটি উদাহরণ।
তথ্যসূত্র
১) https://evolution.berkeley.edu/evolibrary/news/080501_octopusmating#
২) Marlene Zuk, Leigh W Simmons. Sexual Selection a very Short Introduction. Oxford University Press, 2018