অ্যাডমিশন ডে চলছিল, সারাদিন রুগী দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে রাতের দিকে ঝিমুনি আসছিল। আমার এক্সপার্ট হাউস স্টাফকে দায়িত্ব দিয়ে অন কল রুমে একটু জিরোতে গেলাম। চোখটা লাগতেই চারিদিক কেমন আলোয় আলো হয়ে উঠলো। দেখি অন কল রুমে একটা ইউ এফ ও। সেখান থেকে বেরিয়ে এলো একজন।
ঘাবড়ে গিয়ে দাঁত কপাটি লেগে গেল আমার, নাকটা গেল ঘেমে। স্বগতোক্তির মতো মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, “কে তুমি বাছা? জাদু না পিকে?”
ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে সে বললো, “শালা মাতৃভাষাবিরোধী বাঙালি, আমি হলাম অ্যাং, বঙ্কুবাবুর বন্ধু”।
বললাম, “স্যরি দাদা, ভুল হয়ে গেছে। তা এখন কী দরকারে?”
“রেফার আছে”
চোখ কপালে তুলে বললাম, “এত রাতে?”
“হ্যাঁ, আর্জেন্ট ইকো করতে হবে, ক্রেনিয়াস গ্রহে কেউ ইকো করতে পারে না।”
“আর্জেন্ট ইকো কেন লাগবে হঠাৎ?”
“মেয়ের কানে ফুটো করানো হবে, ইএনটি ডাক্তার বলেছে ইকো করিয়ে নিয়ে যেতে”
“কানে ফুটোর জন্য ইকো?”
“কেন চোখের অপারেশনের জন্য কার্ডিওলজিকাল ইনভেস্টিগেশন ঠিকঠাক হয়নি বলে রোগিমৃত্যুর জন্য কত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তো তোমাদের গ্রহেই হলো। শোনো নি?”
“তা অবিশ্যি ঠিক। তা পেশেন্ট কোথায়?”
“এখানে নেই, যেতে হবে। বেড সাইড ইকো”
“এখন তোমার গ্রহে যাবো? এখানে রুগী কে দেখবে?”
“আর দেখে কী হবে? বেড তো শেষ হয়ে গেছে, এখন তো সব রিগ্রেট, তোমার হাউস স্টাফ করবে, দেখছো না আমি সত্যজিৎ রায়ের ক্যাচ! এখনই চলো”
“যাচ্ছি যাচ্ছি, কিন্তু তোমাদের গ্রহে ইকো মেশিন আছে?”
“একটা ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে, মোটামুটি দেখা যায়”
“কালার ডপলার, পালস ওয়েভ ডপলার দেখা যায়?”
“ওসব লাগবে না”
“তাহলে দেখবো কী?”
“মোটামুটি দেখে একটা রিপোর্ট দেবে, এত কথা দরকার নেই”
“ঠিক করে না দেখেই রিপোর্ট দিয়ে দেব?”
এসব তর্কাতর্কির মাঝেই সে আমাকে সেই ম্যাজিকাল থ্রি ওয়ার্ডস বললো, “সুপারকে কমপ্লেন করবো”
শুনে আমার এমন পালপিটেশন হলো আর এমন ঘাম দিলো যে ঘুমটুম গেল ছুটে, দেখি হাউসস্টাফ আমাকে সিপিআর দিচ্ছে, হাতে ইটি টিউব নিয়ে রেডি- আমার জ্ঞান ফিরতে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।।