Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

ভয়

Screenshot_2022-08-22-22-44-49-87_680d03679600f7af0b4c700c6b270fe7
Dr. Aindril Bhowmik

Dr. Aindril Bhowmik

Medicine specialist
My Other Posts
  • August 23, 2022
  • 9:26 am
  • No Comments

ডোবার জলের মাছকে সমুদ্রে ছেড়ে দিলে যা হয়, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম হাসপাতালে চাকরি করতে এসে আমার তাই হলো।

ছিলাম মেডিকেল কলেজের ডাক্তার। জীবন অত্যন্ত সহজ সরল ছিল। নামকরা চিকিৎসকের ছত্রছায়ায় হাউস-স্টাফ ছিলাম। ডিউটি করতাম, জটিল জটিল রোগী দেখে হ্যারিসনের পাতা ওলটাতাম এবং নিয়মিত স্যারের কাছে বুদ্ধিদীপ্ত গালি খেতাম। মাস শেষে ছয় হাজার আটশো টাকা স্টাইপেন্ড পেতাম। দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছিল।

খড়গ্রামে গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দুদিনেই দম-টম বন্ধ হয়ে মরতে বসলাম। আমি যখন জয়েন করেছি, তখন হাসপাতালে তিনজন মেডিকেল অফিসার। তাঁর মধ্যে একজন বিএমওএইচ ম্যাডাম। তিনি অনেকটা গেছোদাদার মতো। কোথায় কখন থাকেন অনেক হিসেব করে বলতে হয়। আরেকজনের সে সময় বহরমপুরে লাইগেশন ট্রেনিং চলছে।

অতএব হাসপাতালে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই একটানা ডিউটি শুরু করলাম। দিনের বেলা আমি গোটা হাসপাতালের একমাত্র ডাক্তার। আউটডোর, ইনডোর সব সামলাই। আর রাত নটায় ট্রেনিং চলা দাদা ফিরে আসে। রাত দশটা থেকে ভোর ছটা অবধি হাসপাতাল সামলায়। তাও নেহাত আমার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়েই সে ট্রেনিং এ গেছে। এসময় তাঁর ডিউটি করার কথা নয়।

এই দাদা আমাদের হাসপাতালে সেসময় একমাত্র প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতো। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা গলায় মাফলার জড়িয়ে রাখতো। এইটি ছিল অন্য চিকিৎসকদের থেকে আলাদা ব্রান্ড তৈরি করার প্রচেষ্টা।

একা একা আউটডোর করতে গিয়ে প্রথমদিনই থতমত খেয়ে গেলাম। নব্বই শতাংশই মুসলিম রোগী। তাঁদের রোগ বোঝা তো পরের কথা, মুখের ভাষাই ভালো করে বুঝে উঠতে পারছি না। উপরে বইছে, নিচেও বইছে মানে বমি পায়খানা। অধিকাংশ রোগীর শরীল অ্যালব্যাল করে, মুণ্ডু ঘসঘস করে, পরাণ হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় করে। হ্যারিসনের বইকে মেডিসিনের মহাভারত বলা যায়। যা নেই মহাভারতে, তা নেই ভারতে। কিন্তু এইসব রোগের বর্ণনা ঠিক কতো নম্বর চ্যাপ্টারে আছে খুঁজে পেলাম না।

মুর্শিদাবাদে রোগীর কোনো অভাব নেই। প্রথমদিনই সাড়ে পাঁচশো রোগী দেখে তিনটেয় আউটডোর শেষ করে নাকে মুখে দুটো গুঁজে ইনডোর রাউন্ড শুরু করলাম। ইনডোর পেশেন্ট মানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী।

প্রথম টিকিটের রোগীকে খুঁজে পেলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সিস্টার, এই রোগী কোথায়?’

নার্স দিদি বললেন, ‘ও তো মকিনা। ভিক্ষা করতে বেড়িয়েছে মনে হয়।’

‘মানে…’ অবাক হয়ে বললাম, ‘ওয়ার্ডে রোগী হাসপাতালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর আপনারা কিছু বলেন না।‘

আরেকজন নার্স দিদি বললেন, ‘না না মকিনা আজ বলেই গেছে। কোথায় সত্যনারায়ণ পুজো আছে। সেখানে সিন্নি প্রসাদ খেতে গেছে।‘

আমি বললাম, ‘পুজোর নেমন্তন্ন খেতে গেছে… সেকি…? ধর্মের জায়গায় তো মুসলিম লেখা আছে।‘

নার্স দিদি হাসলেন, ‘গরীব মানুষের আবার ধর্ম। তাছাড়া ঈদ আসতে দেন। তখন আপনিও সেজেগুজে ঈদের নেমন্তন্ন খেতে যাবেন। তাহলে মকিনা কী দোষ করল!’

ততক্ষণে আমি দেখেছি মকিনা গত তিন বছর ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি আছে। বললাম, ‘আমি ছুটি লিখে রাখছি। ভদ্রমহিলা ফেরত আসলেই হাতে ছুটির কাগজ ধরিয়ে দেবেন।‘

নার্স দিদি গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললেন, ‘মিথ্যে মিথ্যে কেন কষ্ট করবেন। মকিনাকে ছুটি লিখে দিলেও ও বাড়ি যাবে না। বাড়ি থাকলে তো যাবে। আপনি যার বদলি হয়ে এসেছেন, সেই বালাবাবু ওকে অনেকবার ছুটি দেওয়ার চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন।‘

গম্ভীর মুখে জানালাম, ‘আমি ডাক্তার বালা নই। বেড়াল প্রথম রাতেই মারা আমি পছন্দ করি।‘

এমন সময় লেবার রুম থেকে আয়া মাসি ছুটে এসে জানাল, ‘বাচ্চার মাথা প্রায় দেখা যাচ্ছে। শিগগিরি চলুন।‘ আমি আর এক নার্স দিদি লেবার রুমে ছুটলাম।

রাত নটায় হাসপাতাল থেকে যখন বেরলাম, ততক্ষণে গ্রামের ডাক্তার হওয়ার রোমান্টিকতা বিদায় নিয়েছে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি। ভাবছিলাম সব ছেড়ে ছুড়ে লোটা কম্বল নিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাই।

কিন্তু হাসপাতালের বাইরে পা দেওয়া মাত্রই পরিবেশটা বদলে গেল। আজ অমাবস্যা, চারদিকে অন্ধকার। আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাল। লক্ষ লক্ষ তারা ফসফরাসের গুড়োর মতো আকাশে ছড়িয়ে গেছে। আর ঐটা কী? আলোর ঝর্ণাধারার মতো আকাশের এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেছে। ওটা তাহলে আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ। আকাশের দিকে তাকিয়েই কোয়ার্টারের রাস্তায় যাচ্ছিলাম। আমার কোয়ার্টার হাসপাতাল থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে। চারপাশে ধূ ধূ ধানক্ষেত।

হঠাত হাসপাতালের এক গ্রুপ ডি স্টাফ মফিজুলদার গলা পেলাম, ‘সার, আকাশ পানে না চেয়ে টর্চ জ্বালাইয়া মাটির দিকে তাকায়ে হাঁটেন। নইলে কেউটের ঘাড়ে ঠ্যাং তুলি দেবেন।‘

সঙ্গে একখানা পেন্সিল টর্চ ছিল। তাই জ্বালালাম। মফিজুলদা বলল, ‘উইতে হবেনা সার। আমার এই পাঁচ ব্যাটারির টর্চ খানা রাখেন গো। কাল একটা কিনে নিয়েন।‘

কোয়ার্টারে এসে স্নান করতে ঢুকলাম। বাথরুমের দরজা নেই। দরজার প্রয়োজনও নেই। গোটা কোয়ার্টারের আমিই মালিক। বাথরুমের দরজা দিয়ে কি করব! সবে দুই মগ জল গায়ে ঢেলেছি, এমন সময় বারান্দায় গেটে ঘটাং ঘটাং। চিৎকার করে বললাম, ‘একটু অপেক্ষা করেন। স্নান করছি।‘

ঘটাং ঘটাং থামলই না। চলতে থাকল। অর্ধেক স্নান করেই রেগে মেগে বেরিয়ে এলাম। বারান্দায় গিয়ে ধমক দিলাম, ‘কী ব্যাপার? তখন থেকে দরজা নাড়িয়ে চলেছেন কেন? ডা. রায় চলে এসেছেন। এখন ওনার ডিউটি। ওনার কাছে যান। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।‘

একজন মাঝ বয়সী মহিলা বললেন, ‘তু আমাকে শান্তিতে থাকতে দিয়েছিস? আমার ছুটি লিখে এয়েছিস ক্যানে গো?’

এই তাহলে মকিনা। বারান্দার ম্যাটম্যাটে হলুদ বাল্বের আলোয় দেখলাম, তাঁর সারা গায়ে অজস্র আব। যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে নিউরো ফাইব্রোমেটোসিস। মহিলা একটু কুঁজো। অত্যন্ত কদাকার চেহারা।

বললাম, ’হাসপাতাল অসুস্থ রোগীদের জন্য। হাসপাতাল আর ধর্মশালা এক নয়। তুমি যেখানে খুশি যাও। হাসপাতালে ভর্তি থেকে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াবে সেটা চলবে না।’

‘তাহলে কনে যাব বলে দে। আমার ঘর নাই, সংসার নাই, বাপ মা, ভাই বোন কিছু নাই। কনে যাব বল?’

বললাম, ‘যেখানে খুশি যাও। এই হাসপাতাল তোমায় ছাড়তে হবে… ব্যাস। দিনের পর দিন হাসপাতালের একটা বেড আটকে রাখা চলবে না।’

মকিনা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হাতি ঘোড়া গেল তল, মইশা বলে কতো জল। আল্লা সাক্ষী রইল গো। দেখি কে কারে তাড়ায়।‘

মাথা এতো গরম হয়ে গেল সারা রাত্রি ঘুম হলো না। তাঁর উপর ছাদ থেকে শুধু প্লাস্টার খসে পড়ছে। মশারির ভেতর দিয়ে সারা বিছানা বালি বালি হয়ে গেছে। মশারির উপরে একটা চাদর পেতে দিলে হয়। কিন্তু তাতে পাখার হাওয়া একটুও ভেতরে ঢুকবে না। কী করি ভাবতে ভাবতে লোডশেডিং হয়ে গেল। দুত্তোর বলে উঠে পড়লাম। ভাবলাম, কোয়ার্টারের সামনের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করি। সাপের কথা ভেবে আবার মশারির ভেতরে ঢুকলাম। সারা গায়ে প্যাচপ্যাচে ঘাম। তার সাথে বিছানায় বালি ভর্তি। শুয়ে শুয়ে কান্না পাচ্ছিল। কাল আবার ভোর ছটা থেকে ডিউটি করতে হবে।

পরেরদিন ওয়ার্ডে ঢুকেই নার্স দিদিকে বললাম, ‘দিদি একটা সাদা কাগজ দেন। চিঠি লিখব।‘

এই দিদি একেবারেই কালকের নার্স দিদির মতো হাড়জ্বালানে নন। স্নেহময়ী হাসি দিয়ে বললেন, ‘কোথায় চিঠি লিখবেন? বাড়িতে না অন্য কাউকে?’

প্রায় হুংকার দিয়ে বললাম, ‘ওসব নয়। আমি এসিএমওএইচ কে চিঠি করব। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। হয় হাসপাতালে মকিনা থাকবে, নয় আমি।‘

নার্স দিদি বললেন, ‘ওসব পরে করবেন। সকালে কিছু খেয়েছেন? রেস্ট রুমে আসেন।’

দিদি নিজের জন্য আনা পরোটা আর আলুর দম আমাকে খাওয়ালেন। আমিও নির্লজ্জের মতো খেয়ে নিলাম। আপাতত একজন ভ্যান চালক কালু শেখ আমার দুপুরের আর রাতের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছে। সে খাবার মুখে তোলাই মুশকিল। ঝালের চোটে ব্রক্ষ্মতালু জ্বলে যায়। সকাল বিকাল মুড়ি বিস্কুট খেয়ে কাটাব ভাবছিলাম। সেখানে এতো প্রায় স্বর্গের খাবার।

নার্স দিদির নাম শামিমা। খাওয়া শেষ হলে শামিমাদি বললেন, ‘মকিনা থাকুক না ডাক্তারবাবু। অনেকদিন ধরে আছে। মায়া পরে গেছে।’

বললাম, ‘কালকে রাতে ও আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আমি ওকে হাসপাতাল থেকে তাড়াবই।’

‘কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে ডাক্তারবাবু। ও একেবারেই ক্ষতিকারক নয়। একটুও বিরক্ত করেনা। আমরা একা একা নাইট করি। রাতে কিছু ঝামেলা হলে মকিনা পাশে থাকে। মাতাল-দাঁতাল, নেতা-মন্ত্রী কোনো কিছু মানে না। আমাদের সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে গালি দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দেয়।‘

অতএব মকিনা থেকে গেল এবং দিদিদের কল্যাণে আমার রোজই কিছুনা কিছু সুখাদ্য জুটতে লাগল। শামিমাদি বলল, ‘সামনেই ঈদ আসছে। ঈদের দিন দেখেন কী কাণ্ড হয়।‘

‘কী কাণ্ড হবে?’

‘লোকজন এতো খাবার দিয়ে যাবে খেয়ে শেষ করতে পারবেন না। তবে আগেই বলে রাখলাম, ঈদের দিনে কিন্তু দুপুরে আমার কোয়ার্টারে খাবেন। কোনো বাহানা শুনব না।‘

রমজান মাস চলে আসল। পীযূষদা অর্থাৎ ডা. পীযূষ কান্তি পাল খড়গ্রাম হাসপাতালে যোগ দিল। আমার ধরেও প্রাণ এলো। পীযূষদা মেডিকেল কলেজে আমার তিনবছর সিনিয়র। তার মতো সিনসিয়ার কাউকে সহকর্মী হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

আস্তে আস্তে ঈদও চলে এলো। কিন্তু ঈদের দিনে একটা বিচ্ছিরি ঘটনা ঘটে গেল। খড়গ্রাম ও আশপাশের অঞ্চলে কমবয়সী মেয়েদের মধ্যে একটা মাস হিস্টিরিয়া হল মেহেন্দি পরা নিয়ে। হু হু করে গুজব ছড়িয়ে পড়ল মেহেন্দি থেকে অনেক মেয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কোথাও কোথাও নাকি একাধিক মেয়ে মারাও গেছে। ঈদের দিন সেই সব হিস্টিরিয়ার রোগী সামলাতে সামলাতে রাত্রি হয়ে গেল। কেউ দাঁতে দাঁত লেগে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কেউ মেহেন্দি লাগানো হাত চুলকাতে চুলকাতে ফুলিয়ে ফেলেছে, কেউ আবার একটানা সুর করে কাঁদছে। একটিও ঈদের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে পারলাম না। তবে কোয়ার্টারে ফিরে আমি আর পীযূষদা খাবার ভর্তি মোট বাইশটা টিফিন কেরিয়ার পেয়েছিলাম।

পরেরদিন বেশ রাতে সিরাজুল এলো। সিরাজুল গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন সদস্য। আমাদের থেকে দু’চার বছরের বড় হবে। তার সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল। সিরাজুল বলল ‘ভৌমিকবাবু, এবারের ঈদটা একেবারে লবড়ঝড়ে হইয়ে গেল। আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন গো। দুষ্ট লোকের অভাব নাই। শালাগুলা নানারকম কথা রটাইয়া বেড়াচ্ছে। মেহেন্দি কাণ্ড নাকি হিঁদুদের চক্রান্ত।’

পরিস্থিতি ক্রমশ থমথমে হয়ে উঠল। শুনলাম, পাঁচথুপিতে রাধাকৃষ্ণের মন্দিরে কারা নাকি গরুর মাংস ফেলে গেছে। আর ওখানকার ঘোষেরা দুইজন মুসলিম ছেলের মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে খুলি ফাটিয়ে দিয়েছে।

তখন হোয়াটসঅ্যাপ ছিলনা। এমনকি খড়গ্রামে বিএসএনএল ছাড়া অন্য কোনো মোবাইলের কানেকশন ছিল না। তখন খবর বাতাসে ভেসে আসত। হাসপাতালের আশেপাশে কয়েক ঘর কবিরাজ ও ঘোষ থাকেন। তারা লাঠি-সোটা, দাঁ-কুড়ুল জোগাড় করতে লাগলেন। একদিন কবিরাজদের কটি ছেলে এসে বলে গেল, ডাক্তারবাবু, ‘আপনাদের কোনো ভয় নেই। আমাদের না মেরে কেউ আপনাদের স্পর্শ করতে পারবে না।‘ তাদের অভয় বাক্য শুনে ভয়টা আরও জাঁকিয়ে বসল।

দোকানপাট সব সন্ধ্যের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে রোগী অনেক কমে এসেছে। আগে সারারাত রোগীর স্রোতে দুচোখ এক করতে পারতাম না। এখন সারা রাত অনন্ত বিশ্রাম। তবুও ঘুম আসে না। রাত্রি কাটতে চায়না।

এক রাতে পীযূষদার অনকল ডিউটি চলছে, আমি কোয়ার্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছায়াপথ দেখছি, হঠাত শুনি হই হই চিৎকার। একগাদা জ্বলন্ত মশাল বাতাসে কাঁপতে কাঁপতে হাসপাতালের দিকে ছুটে আসছে। হাসপাতালের সব কর্মচারী যে যার ঘরের বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। কোয়ার্টারে কোয়ার্টারে আলো নিভে যাচ্ছে ঝটপট।

জীবনে কোনোদিন দাঙ্গার সম্মুখীন হইনি। এই তাহলে দাঙ্গা? এতদিন যারা পাশাপাশি ছিল, এই কটা দিন আগেই ঈদে যারা টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি খাবার দিয়ে গেছে, তারা কি আজ আমাদের মারতে আসছে? যে মৃতপ্রায় নবজাতকের মুখে মুখ লাগিয়ে ‘সি পি আর’ দিয়ে তাকে মায়ের কোলে তুলে দিয়েছি, সেই সন্তানের বাবা আজ আমাদের মারতে আসছে। সবকিছু অদ্ভুত লাগছিল।

এক গ্রুপ ডি দাদা এসে ফিসফিস করে বললেন, ‘ডাক্তারবাবু, ধানক্ষেতে নেমে পরুন। ওই যে দূরে আলো দেখা যাচ্ছে ওটা গোকর্ণ লাইট হাউসের আলো। ওটা লক্ষ করে হাঁটবেন। মাত্র পনেরো কিলোমিটার।‘

পীযূষদা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বলল, ‘ধানক্ষেত সাপে ভর্তি। সাপের কামড়ে মরার চাইতে মানুষের হাতে মরা ভালো। ‘

আমি বললাম, যারা হাসপাতালে রয়েছে তাঁদের কি হবে। দুইজন সিস্টার দিদি রয়েছে। রোগীরা আছে। আজ ৮১ জন মায়ের লাইগেশন হয়েছে, তারা রয়েছে।‘

পীযূষদা বলল, ‘চল, দেখি কী ব্যাপার।‘

পাশের কোয়ার্টারের সারথিদি বললেন, ‘পাগলামি করবেন না। আপনারা আমার কোয়ার্টারে লুকিয়ে থাকেন। আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিচ্ছি।‘

পীযূষদা বলল, ‘আমি কান্দির ছেলে, আমি লুকিয়ে থাকব?’

আমার তখন চব্বিশ বছর বয়স। বললাম, ‘মধ্যমগ্রামের ছেলেরাও লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাতে শেখেনি।‘

দুজনে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু অস্বীকার করব না, বাইরে যতই সাহস দেখাই ভেতরে ভেতরে শীতল ভয় ছড়িয়ে যাচ্ছিল। পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছিল।

হাসপাতালের সামনে জনসংখ্যা আর মশালের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাঁদের পোষাক আশাক দেখে তারা যে অন্য ধর্মের বুঝতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। প্রায় প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র আছে। লাঠি, দাঁ, কোদাল, কয়েকজনের হাতে তলওয়ার দেখলাম। তারা কোনও বিষয় নিয়ে বেশ উত্তেজিত বোঝা যাচ্ছে। অনেকেই চিৎকার চেঁচামেচি করে কিছু বলছে। হাসপাতালের সামনেটা গম গম করছে।

এই সময় একটা আশ্চর্য দৃশ্য দেখলাম। শামিমাদি একা গেট আগলে দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার করে বলছেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে লাঠি- দাঁ নিয়ে কাউকে হাসপাতালে ঢুকতে দেব না। হাসপাতাল খুনোখুনির জায়গা নয়।’

নিজের প্রাণের ভয় না থাকলে নির্ঘাত হাততালি দিয়ে সাবাস বলতাম। মেয়েরা মরিয়া হয়ে গেলে অনেকসময় ছেলেদের থেকে বেশি সাহসী হয়ে যায়। এতোগুলি সশস্ত্র পুরুষ একটি মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

মকিনা দিদির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বলল, আজ অনেক মাইয়ার বাচ্চা বন্ধের অপারেশন হইচে। তারা সব বেঘোরে রয়েছে। কাপড়চোপড়ের ঠিক নাই। ওরা তুদের বাড়ির মাইয়া। নিজেদের বাড়ির মেয়েদের সম্মান টুকু অন্তত রক্ষা করস।

আমরা দুজন এগিয়ে গেলাম, ‘কী হয়েছে দিদি?’

শামিমা দি আমাদের দেখে গেট ছাড়লেন। বললেন, ভেতরে আসুন, বলছি।’

সব শুনে বুঝলাম, দাঙ্গা টাঙ্গা নয়। তবে পরিস্থিতি জটিল। বেশ জটিল।

দুইজন সশস্ত্র মানুষ এক মুসলিম বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে সেখানে গুলি করে একজনকে খুন করে ফেলেছে। তারপর পাড়ার লোকের তাড়া খেয়ে পালাতে পালাতে প্রাণ বাঁচাতে আমাদের হাসপাতালে এসে ঢুকেছে। লেবার রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাগ্য ভালো লেবার রুম সেসময় খালি ছিল। ওদিকে গ্রামের মানুষের দাবী ওই দুজন ডাকাতকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। গণধোলাই দিয়ে তাঁদের জাহান্নামে পাঠানো হবে।

খড়গ্রাম থানায় ফোন করা হল। ওসি সব শুনে টুনে বললেন, ‘উফ যত্ত ঝামেলা। আমি আসছি। আপনি ততক্ষণে হাসপাতালের সব স্টাফকে হাসপাতালে চলে আসতে বলুন। আমাদের লোকবল দরকার।‘

তারপর আর কী… যথারীতি ঘন্টাখানেক দেরি করে এক ভ্যান পুলিশ এলো। পুলিশ একবার এসে ডাকতেই দুই ডাকাত সাথে সাথে দরজা খুলে দিল। ওসি সাহেব একটা থাপ্পড় কসিয়ে বললেন, ‘সোনা-মানিক আমার… রিভালবার গুলো দাও বাপধন।‘

‘একজন আমতা আমতা করে বলতে গেল, রিভালবার? আমাদের কাছে তো কোনো বন্দুক ছিলনা। আমারা গ্রামের রাস্তায় ঘুরছিলাম। গ্রামের লোক ভুল করে…

‘চোপ শালা হারামজাদা…’ ওসির ধমক শুনে শুধু দুই ডাকাতই নয়, ওয়ার্ডের সকলেই কেঁপে গেলাম। একদম মেঘ ডাকার মতো আচমকা তীব্র আওয়াজ।

‘আজ্ঞে, সেগুলো পায়খানার প্যানের মধ্যে ফেলেছি।‘

লেবার রুমের লাগোয়া পায়খানা থেকে অস্ত্র গুলো উদ্ধার হলো। পুলিশ দুই অপরাধীকে নিয়ে চলে গেল। আশপাশের দোকানগুলো ঝটপট খুলে গেল। প্রবীরের দোকানে চায়ে চুমুক দিয়ে আতিকুল চাচা রোমহর্ষক ডাকাতির গল্প শোনালেন। কবিরাজ বাড়ির ছেলেরা বলল, ‘ঈশ, আমরা যদি একবার খবর পেতাম…’

খানিকক্ষণ বাদে ডাকাতের গুলিতে যে মারা গেছে, তাকেও হাসপাতালে আনা হলো। সারা গ্রামের লোক আরেকবার হাসপাতালে হাজির হলো। কান্না- হাহাকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠল।

হয়তো সত্যিকারের দাঙ্গা দেখিনি, কিন্তু সেই দিনের ভয়টা সত্যিকারের ছিল। বুকের মধ্যে শিরশিরে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া ভয়। চেনা মানুষেরা হঠাত অচেনা হয়ে যাওয়ার ভয়। মানুষকে বিশ্বাস না করতে পারার ভয়।

গুরুচন্ডা৯- তে প্রকাশিত।

PrevPreviousআমরা কেমন মেডিকেল কাউন্সিল চাই?
Nextআত্মবিশ্বাস আর পাবলিক প্লেসে স্তন্যপান করানোই মায়েদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!Next
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

শিষ্য তথা ছাত্রদের শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাদান – চরক- ও সুশ্রুত-সংহিতা (২য় ভাগ)

June 12, 2025 No Comments

 (সূত্রের জন্য পূর্ববর্তী অংশের লিংক – https://thedoctorsdialogue.com/indoctrination-and-teaching-of-medical-students-in-charaka-and-susutra-samhita/) শিক্ষালাভের পরে চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ আগের অধ্যায় শেষ করেছিলাম এই বলে – “উপনয়ন এবং শিক্ষালাভ করার পরে ছাত্ররা/শিষ্যরা

এই বঞ্চনার দিন পার হলেই পাবে জনসমুদ্রের ঠিকানা

June 12, 2025 No Comments

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের পাশবিক হত্যার পর কেটে গেল দশটি মাস। দুর্নীতি ষড়যন্ত্র পূর্বপরিকল্পিত ধর্ষণ ও হত্যা- কোথাও সন্দেহ বা অস্পষ্টতার জায়গা নেই।

ঊর্মিমুখর: ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

June 12, 2025 No Comments

আচার্য শীলভদ্র ত্বরাহীন শান্তকণ্ঠে কহিতেছিলেন –“ইহা সত্য যে সমগ্র উত্তরাপথে পাশুপত ধর্মই আদি শৈবধর্ম। এই সনাতন পাশুপত ধর্মের ধ্যান ও কল্পনার মধ্যেই হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠ বিকাশ

অভয়া স্মরণে

June 11, 2025 No Comments

তবু লড়ে যায় ওরা! তবু লড়ে যায় ওরা! দশ মাস হল। প্রায় তিনশত দিন। বিচারের আশা,অতি ক্ষীণ তবু লড়ে যায় ওরা! বল এমন করে কি

কাউকে অবসাদগ্রস্ত মনে হলে তাঁর পাশে থাকুন – তাঁর একাকিত্ব ও হতাশা দূর করুন – কিন্তু অবশ্যই তাঁকে ডাক্তার দেখাতে বলুন

June 11, 2025 No Comments

কোনও আত্মহত্যার খবর এলেই ফেসবুকে একধরনের বিকৃত সহমর্মিতাবোধের বন্যা বয়ে যায়। বিশেষত, আত্মহত্যার যদি কোনও রগরগে কারণ (পরকিয়া প্রেম ইত্যাদি) খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে

সাম্প্রতিক পোস্ট

শিষ্য তথা ছাত্রদের শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাদান – চরক- ও সুশ্রুত-সংহিতা (২য় ভাগ)

Dr. Jayanta Bhattacharya June 12, 2025

এই বঞ্চনার দিন পার হলেই পাবে জনসমুদ্রের ঠিকানা

Gopa Mukherjee June 12, 2025

ঊর্মিমুখর: ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

Dr. Sukanya Bandopadhyay June 12, 2025

অভয়া স্মরণে

Dr. Asfakulla Naiya June 11, 2025

কাউকে অবসাদগ্রস্ত মনে হলে তাঁর পাশে থাকুন – তাঁর একাকিত্ব ও হতাশা দূর করুন – কিন্তু অবশ্যই তাঁকে ডাক্তার দেখাতে বলুন

Dr. Bishan Basu June 11, 2025

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

559532
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]