সরকারী হাসপাতাল। খুব ভিড়। ডেলিভারির পর মায়েদের এই ওয়ার্ডেই রাখা হয়। দুটো বেড এক করে তিনজনে শোয়। “ছেলে হয়েছে ২০০০ টাকা দিতি হবে”। আয়ামাসি সদ্য মা হওয়া সুমনাকে শুনিয়ে গেল। তার পাশেই শুয়ে আছে অজন্তা। আজ সকালেই ওর মেয়ে হয়েছে। আয়ামাসি ওর বাচ্চার কাঁথা পালটাতে পালটাতে জানাল, “পেরথম মেয়ে হল গে নক্ষী। এই মাসিকে ৫০০ টাকা না দিলি হাসপাতাল থে ছাড়ছি নে।” জন্ম থেকেই মেয়েদের দাম কম!
ছেলে হলেও সুমনার মনে সুখ নেই। নার্স দিদিদের মুখে ওই খবরটা শুনে অবধি মনটা কেমন করছে। ছেলেটাকে ঠিক মানুষ করতে পারবে তো!
অজন্তা ওর মেয়ের মুখের দিকে একপানে চেয়ে আছে। ওতো মনপ্রাণ দিয়ে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছিল ওর যেন মেয়ে হয়। কিন্তু সকালের খবরটা শুনে কেমন একটা ভয় ওকে পেয়ে বসেছে। ওকে তো এখন সারা জীবন প্রার্থনা করে যেতে হবে- মেয়ে যেন নিরাপদে থাকে।
ওদের পায়ের কাছে শুয়েছিল রূপা, দেওয়ালের দিকে মুখ করে। ওর পাঁচ মাসের বাচ্চাটা কাল নষ্ট হয়ে গেছে। সারা রাত ফুপিয়ে কেঁদেছে। ওটা নাকি মেয়ে ছিল। আজ সকালের খবরটা শুনে রূপা কেমন পেটে হাত রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল।