(এই লেখা ছ’মাস বা তদুর্ধ্ব শিশুদের জন্য লেখা)
হাতুড়ে শস, পেঁয়াজ, চানাচুর দিয়ে মৌরি খাচ্ছিলেন। এবং বিশকুট দিয়ে চা পান করার স্মৃতি রোমন্থন (জাবর) করছিলেন। বিশকুট দিয়ে চা পান করা কিন্তু বেশ কঠিন কাজ। একবারও চুমুক না দিয়ে, কেবল বিশকুট ডুবিয়ে, ডুবিয়ে, ভিজিয়ে ভিজিয়ে পুরো চা’টা শেষ করতে হবে।সেই জন্য মাতৃদেবী হাতুড়েকে অত্যল্প, দুধ বেশী চা কম, চা দিতেন, নচেৎ একবেলাতেই সকল বিশকুট ঔদরিক হাতুড়ে হজম করে দিতেন।
এমন সময় কন্যার ফোন এলো “বাঁবাঁ, দাশুর (হাতুড়ের নাতি, অবশ্যই এটা ওর মাতামহ প্রদত্ত নাম) জ্বঁর হঁয়েছে”
তৎক্ষণাৎ চা, মুড়ি ছেড়ে প্রশ্ন করলেন “তুই কী করছিস?”
“আঁমি সবার উপদেশে কনফিউশিয়াস (জনৈক চৈনিক দার্শনিক) হয়ে গেছি”
[নাতিবাবুর বয়স ছ’মাস]
হাতুড়ে বুঝলেন
স্টেপ ওয়ান:- হাত পা ছড়িয়ে হাহাহাকার
স্টেপ ট্যু:- বাড়ির সবাইকে জানানো
স্টেপ থ্রি:- পাড়ার সবাইকে জানানো
স্টেপ ফৌর:- কনফিউশিয়াস
সুতরাং হাতুড়ে কিছুক্ষণ নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে থিতিয়ে পড়া স্মৃতি ভাসিয়ে তুললেন।
প্রথম জানতে হবে জ্বর কাকে বলে (লিখতে লিখতে হঠাৎ নিজেকে হযবরল’র কাকেশ্বর কুচকুচের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেন)।
“জ্বর হলো যে কোনও অসুখ বা আঘাতজনিত (ঘিলুতে আঘাত) কারণে শরীরের কোর (core) টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়া।
শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বর মাপার ঠিক জায়গা হচ্ছে পায়ুদ্বার।
অথবা টিম্প্যানিক (কানের ভেতরে….বাবা গো জম্মে শুনিনি)।
বগল বা অন্যান্য জায়গায় মাপার অসুবিধে কি কি?
সারফেস টেম্পারেচার অনেক কারণে বাড়ে:- মদ্যপান, প্রেগন্যান্সি, ওভ্যুলেশান, রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করা, হীট স্ট্রোক, ইত্যাদি।
(আরে মশয় ছ’মাসের বাচ্চা মদ খায় নাকি?)
না না, আমি বলতে চাইছি, এই সারফেস টেম্পারেচার ব্যাপারটা নির্ভরযোগ্য নয়। ছ’মাসের শিশুদের দাঁত ওঠার কারণেও শরীরের বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে (সেই সঙ্গে পৈটিক গোলযোগ হতে পারে), সেটা জ্বর নয়।
তাহলে কি করবো?
জ্বর একশো দশমিক চার হয়ে গেলে, শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন।
যদি হঠাৎ করে’ খুব বেশী হয়ে যায়?
প্যারাসিটামল দেবেন, ভেজা তোয়ালে দিয়ে গা মুছিয়ে দেবেন, প্রয়োজনে ঈষদুষ্ণ জলে ভালো করে’ চান করাবেন। এবং শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
আর হ্যাঁ, আপনি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে চাইছেন, বাড়াতে নয়। ঢেকেঢুকে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়বে- যেমন শীতকালে গরম জামা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা হতে দেয় না, তাতে আরও ক্ষতি।
অনেক সময় বেশী কাপড় চোপড় পরিয়ে রাখলেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। নিজে নিজে ভেবে নেবেন না- আহা রে বাছার আমার ঠান্ডা লাগছে!
কখন ভয় পাবেন?
যখন দেখবেন শিশু খাচ্ছে না, খেলছে না, বমি করছে, সব সময় বিরক্ত- ঘ্যানঘ্যান করছে, তখনই ডাক্তার দেখান। অথবা ওষুধের প্রভাব কেটে গেলেই আবার জ্বর আসছে, এভাবে চব্বিশ ঘন্টা বা আটচল্লিশ ঘন্টা দেখুন, তারপরই ডাক্তারের কাছে যান। অবশ্যই ইতিমধ্যে আপনার শিশু ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।
আর কি কর্তব্য?
শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে’ একটা রক্ত পরীক্ষা করে’ ডাক্তারের কাছে যান। আপনার শিশু তো কথা বলতে পারে না। অসুবিধে, কষ্ট কিছুই বলতে পারবে না।এই পরীক্ষাটা করে’ গেলে হয়তো আপনার ডাক্তার বাবুর সুবিধে হবে।
কি কি করবেন না?
নিজের থেকে কোনও ওষুধ খাওয়াবেন না। গতবার তো এই ওষুধটা দিয়েছিলো রে- দে কিনে দে ঐ মেডিসিন, আবার খাওয়াই- কিছুতেই চলবে না।
প্রয়োজনে আগে আগে দেখাতে নিয়ে যান, কিন্তু ফেলে রাখবেন না।
[বিধিসম্মত সতর্কীকরণ:-এই সমস্ত উপদেশাবলী আপনার এবং অন্যান্য মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের জন্য প্রযোজ্য। গরীবের নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর পয়সা নেই। তারা ভ্যাক্সিনগুলোই সময়মতো দিতে পারে না।
ওদের কথা ভেবে সময় নষ্ট করবেন না। নিজেকে নিয়েই সুখী থাকুন]