উত্তরবঙ্গের অখ্যাত শহরের ভাড়া বাড়ির টিনের ছাদে টপটপ করে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি পড়ছে। সেই ছাদের নিচে ঢলঢলে হাফপ্যান্ট খালি গায়ে তিন বছরের এক অবোধ বালক তার ট্রাইসাইকেলটা উল্টিয়ে প্যাডেলের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে। তার মাথায় মায়ের রান্নাঘর থেকে সংগ্রহ করা বড় একটা হাঁড়ি উল্টে লাগানো। ওটাই তার স্পেস স্যুট। আর ওই ওল্টানো ট্রাইসাইকেলটা লুনার মডিউল।
সেই ১৯৬৯ সালে ২০শে জুলাই বাবার সাত ব্যান্ডের ফিলিপস রেডিওতে ধারাবিবরণীর রেকর্ড শোনার পরে তার কাছে রূপকথার জগতের নতুন নায়ক নীল আমস্ট্রং। চাঁদের মাটিতে পা রাখা মানুষ। সামান্য মাইনের কলেজ শিক্ষক নিউক্লিয়ার ফিজিক্স পড়ানো বাবার মুখে প্রশ্রয়ের হাসি। চোখের সামনে ভবিষ্যৎ পরিণত হচ্ছে ঠাকুরমার ঝুলি থেকে এস্ট্রোফিজিক্সে।
পঞ্চাশ বছর বাদে চন্দ্রায়ন টু আংশিক ব্যর্থ হল। ০.০০০৬% সুযোগের অভাবে। ৭ ব্যান্ডের ফিলিপস রেডিওটা কবেই বাতিল হয়ে গেছে। সেদিনের সেই বালকের মাথার চুল অর্ধেক সাদা হয়ে এসেছে। ইসরো অধিকর্তা কে. শিবম-এর চোখে জল। সেই জল মিশে যাচ্ছে টিনের ছাদের ওপর পড়া অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জলের ফোঁটায়। কেবল ফিজিক্স বেঁচে আছে। বেঁচে থাকবে। ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী, পরীর দেশ ছেড়ে চাঁদের মাটিতে মডিউল নামবেই একদিন।
শিবম স্যার আপনি কাঁদবেন না প্লিজ। তিরূপতি ব্যর্থ হতে পারে। নারকেল ফাটানো ব্যর্থ হতে পারে, ফিজিক্স সফল হবেই।
আপনি শিবম স্যার ফিজিক্সে কেবল ভরসা হারাবেন না। নইলে আর কোনো অবোধ বালক মায়ের রান্নাঘর থেকে হাঁড়ি চেয়ে নিয়ে ট্রাই সাইকেল উল্টিয়ে ….
২০শে জুলাই চাঁদে যাওয়ার দিন।
কি সুন্দর ভাষা। আপনারা ডাক্তার না হয়ে লেখক হলে এত দিনে আমরা আবার সুনীল গাঙ্গুলি, সমরেশ বসু পেতাম।