মেয়েদের শরীর ও মন মানেই হরমোনের খেলা। খিদে থেকে শুরু করে হজম ক্ষমতা, যৌন চাহিদা, এনার্জি, ভাল লাগা, মন্দ লাগা সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ওই হরমোন। আর মেনোপজের পর তো কথাই নেই। তখন ওই হরমোনের অভাবেই একগুচ্ছ সমস্যা এসে বাসা বাধে শরীরে। যদিও এসব সমস্যা দূর করার হাতিয়ার হল হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটি।
প্রশ্নঃ মেনোপজ হয়েছে কী করে বুঝবো?
উত্তরঃ যদি একটানা এক বছর পিরিয়ড বন্ধ থাকে তাহলে বুঝতে হবে মেনোপোজ হয়েছে। যদিও একবারে বন্ধ হওয়ার আগে বেশ কিছুদিন অনিয়মিতভাবে পিরিয়ড হতে থাকে।
ওভারি বা ডিম্বাশয় যখন ডিম্বাণু নিঃসরণে ব্যর্থ হয়, ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে তখন ধরে নেওয়া হয় স্বাভাবিকভাবে মেনোপজ হয়েছে। এছাড়াও অনেক সময়ে কম বয়সে(৩০-৩৫) কোনো মহিলার কোনো অসুখজনিত কারণে ওভারি বাদ দেওয়া হলে, পেলভিক এরিয়ার ক্যানসারের জন্য কেমো বা রেডিওথেরাপির দরকার হলে কিংবা হিস্টেরেকটমির জন্যও অসময়ে মেনোপজ দেখা দিতে পারে। একে বলে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ।
প্রশ্নঃ মেনোপজের পর কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ার ফলে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, হট ফ্ল্যাশ অর্থাৎ হঠাৎ করে কোনো কায়িক শ্রম না করেও প্রচণ্ড গরম লাগা। মুখ থেকে শুরু করে এই অনুভূতি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ঘাম হয়। দিনে বা রাতে যে কোনো সময়ে এই সমস্যা হতে পারে।
প্রস্রাবের সমস্যা- বারবার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, কমতে পারে ইউরিন চেপে রাখার ক্ষমতাও। প্রস্রাবের বা যোনি সংক্রমণ ঘুরেফিরে আসতে পারে। দেখা দিতে পারে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেসের সমস্যাও।
অস্টিওপোরোসিস- ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত সমস্যা। ইস্ট্রোজেনের অভাবে বোন মাসের ক্ষয় হওয়ায় হাড় তখন আর ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে না। ফলে হাড় ফাঁপা হয়ে যায়। এই কারণেই বয়স বাড়লে কোমর, হাতের কবজি, মেরুদণ্ডের হাড় সামান্য কারণেই ভেঙে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে। মেনোপজের আগে থেকেই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নেওয়া শুরু করলে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
হৃদরোগ- ইস্ট্রোজেন হরমোন লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন সংক্ষেপে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল দমন করে হার্ট সুরক্ষিত রাখে। এই কারণেই অল্প বয়সে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হৃদরোগের আশঙ্কা কম থাকে। আর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ার ফলে মেনোপজের পর পুরুষ ও মহিলাদের এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় সমান।
মানসিক সমস্যা- মেনোপজের পর অনেক সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, ভুলে যাওয়া, ঘন ঘন মুড পরিবর্তন, অ্যাংক্সাইটি ও ডিপ্রেশন সহ নানারকম মানসিক সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্নঃ মেনোপজের পর কেন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটি করা হয়?
উত্তরঃ মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর ইউটেরাইন লাইনিং নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বয়ঃসন্ধিতে স্তনের আকৃতির পরিবর্তন, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো ছাড়াও শরীরের লিভার, রক্ত, মস্তিষ্ক ও হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন। ওভারি থেকে নিঃসৃত ইস্ট্রোজেন হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। মেনোপজের পর যখন আর ইস্ট্রোজেন বেরয় না তখন স্বাভাবিকভাবেই নানারকম সমস্যা শুরু হয়। আর সেই অভাব দূর করার জন্য এইচআরটি-র মাধ্যমে ইস্ট্রোজেন হরমোন দেওয়া হয়। যদিও কখনো কখনো প্রোজেস্টেরন হরমোনও দিতে হয়।
প্রশ্নঃ মেনোপজের পর সব মহিলারই কি এইচআরটি-র প্রয়োজন হয়?
উত্তরঃ কখনোই নয়। যাঁদের কোনো সমস্যা হয় না তাঁদের এইচআরটির দরকার হয় না। তবে প্রিম্যাচিওর মেনোপজের ক্ষেত্রে এইচআরটি নেওয়া উচিত।
প্রশ্নঃ এই থেরাপি শুরুর আগে কি কোনো মেডিক্যাল টেস্ট-এর দরকার হয়?
উত্তরঃ কোনো মহিলার বয়স ৪০ এর ওপরে হলে বিভিন্ন উপসর্গের বর্ণনা শুনে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসক বুঝে যান সেসব মেনোপজের জন্যই হচ্ছে। তবে নিশ্চিত হতে এফ এস এইচ টেস্ট করেন অনেক সময়ে। এছাড়াও থেরাপি শুরুর আগে দেখে নেন সেই মহিলার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, লিভার ফাংশন ঠিক আছে কিনা, আগে কখনো জন্ডিস হয়েছিল কিনা ইত্যাদি বিষয়। প্রয়োজনে ইসিজি, স্তনের পরীক্ষা বা ম্যামোগ্রামও করা হয়।
প্রশ্নঃ কীভাবে এইচআরটি করা হয়?
উত্তরঃ নানাভাবে করা যেতে পারে। যেমন, ট্যাবলেট, মলম, স্কিন প্যাচ বা ভ্যাজাইনাল রিং। এই চিকিৎসায় মূলত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন দেওয়া হয়। কোনোটায় থাকে শুধু ইস্ট্রোজেন আবার কোনোটায় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মিশ্রণ। ইউটেরাস থাকলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন মিশ্রিত হরমোন দেওয়া হয়। এতে করে জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়। আবার এর ফলে একটু হলেও বাড়ে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা। কাজেই কোনো মহিলার পরিবারে মা, মাসি, দিদিমা কারো স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে এই থেরাপির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ কাদের জন্য এইচআরটি একেবারেই উপযুক্ত নয়?
উত্তরঃ স্তন, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার থাকলে এইচআরটি একেবারেই করা চলবে না। এছাড়াও গলব্লাডারে স্টোন, মাইগ্রেন, থ্রম্বোসিস, লিভারের অসুখ বা হাই ব্লাড প্রেসার থাকলেও এই চিকিৎসা করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
প্রশ্নঃ যাঁদের এইচআরটি উপযুক্ত নয়, তাঁরা কীভাবে সমস্যা এড়াবেন?
উত্তরঃ সুস্থ থাকার জন্য তাঁদের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ভাজাভুজি ও তেলমশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, মদ, সিগারেটের মতো নেশার থেকে দূরে থাকা। নিয়মিত কিছু শরীরচর্চা করলে মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদ কমে। এছাড়াও খাবারের মধ্যে ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, রসুন, ডেয়ারি প্রোডাক্ট, পার্সলে, সয়া ফুড রাখলে অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।
প্রশ্নঃ কখন শুরু করতে হবে এই চিকিৎসা?
উত্তরঃ প্রি মেনোপজাল পিরিয়ড থেকেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে ব্যক্তিবিশেষের জন্য কী ধরনের চিকিৎসা দরকার।
খুব সুন্দর, সহজ ভাষায় একটি মেদহীন লেখা।
Thank you sir,….
অনেক কিছু জানতে পারলাম। খুব informative লেখা
Thanks Sir for your valuable & informative write-up…
অনেক সমাধান পেলাম
Thanks ….re
Ektu Shanti pelam …
Kichu kichhu uttor pelam
Ashadharon post sir..onek kichhu jante parlam..thank u?