প্রাককথন
রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ এক নয়। উপসর্গ রোগীর নিজের মুখে নিজের সমস্যার কথা। আর লক্ষণ শনাক্ত করতে হয়। এবং লক্ষণ শনাক্ত করা মূলত একজন চিকিৎসকের কাজ। তবে অনেক সময় রোগী নিজেও পারে তার রোগ লক্ষণ শনাক্ত করতে। অন্যদিকে ব্যথা আর যন্ত্রণা ইংরেজি অভিধানে এক হলেও, কোনো কোনো সময়, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলাদা অর্থে ব্যবহার হয়। “যন্ত্রণা” পুরোপুরি উপসর্গ। “ব্যথা” একদিকে উপসর্গ, অন্যদিকে রোগের লক্ষণ।
পেটে ব্যথার কারণগুলো তালিকাভুক্ত করতে গেলে কয়েক পাতা লাগবে। পেটের রোগের উপসর্গের তালিকাও কম নয়। বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতি, নানা রকম উন্নত পরীক্ষা, ইউএসজি, সিটি, এমআরআই এসবের সুবিধা প্রায় সর্বত্র পাওয়া গেলেও, পেটের রোগ নির্ণয় করা চিকিৎসকদের কাছে এখনও আতঙ্কের বিষয়। হাজারো পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরও অনেক সময় পেটের রোগের সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয় না। এক রকম ডায়াগনোসিস করে অপারেশন করতে গিয়ে অন্য রোগের মুখোমুখি হওয়া, প্রযুক্তির বিপুল উন্নতির সময়েও বিরল নয়। সেই কারণেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে পেটের অন্য নাম “ম্যাজিক বক্স”।
পেটের রোগের সাধারণ কিছু উপসর্গ
গলা বুক জ্বালা, বমি, বমি ভাব, জন্ডিস, রক্ত বমি, পায়খানা, প্রস্রাবের নানা অসুবিধা খুব কমন উপসর্গ হলেও, যন্ত্রণা বা ব্যথাই পেটের রোগের প্রধান উপসর্গ। আবার অন্য উপসর্গের চেয়ে পেটের ব্যথা যন্ত্রণা নিয়ে রোগী এলে, রোগ নির্ণয়ে, চিকিৎসকদের বিশেষ সুবিধা হয়। ব্যথার ধরন ও পেটের কোন অংশে ব্যথা, যন্ত্রণা হচ্ছে সেটা জানতে পারলে, কোন অঙ্গ গোলমাল পাকাচ্ছে বুঝতে যেমন সুবিধা হয়, তেমনই যন্ত্রণা মানুষকে সাধারণভাবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বাধ্য করে। ফলে রোগের শুরুতেই চিকিৎসার আঙিনায় আসেন। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে, রোগের জটিলতা বাড়ার আগেই চিকিৎসকরা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পান। গোড়াতেই চিকিৎসা পাওয়া অনেকাংশে সুনিশ্চিত হয়। তবে অন্য উপসর্গগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময়, অনেক মানুষ নিজের বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে নিজের বিপদ ডেকে আনেন। পেটের উপরের দিকে সব ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা বলে মুড়ি মুড়কির মতো দোকান থেকে অ্যান্টাসিড কিনে খাওয়া একটা স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই গর্ব করে তাঁর চিকিৎসক বলেন যে তিনি এসব কিনে খাচ্ছেন কিন্তু ব্যথা কমছে না। আবার প্যানক্রিয়াসের মতো অনেক অর্গান আছে, যার টিউমার গোকুলে বাড়তে থাকে উপসর্গহীন ভাবে। যখন প্রকাশ্যে আসে, দেখা যায় সে তখন চিকিৎসার বাইরে।
তবে ব্যথা বা যন্ত্রণা সব সময় একই রকম হয় না। তার নানারকম চরিত্র বা প্রকারভেদ আছে। রোগের কারণ অনেকাংশে নির্ভর করে ব্যথার চরিত্রের উপর। দপদপ করা ব্যথা মানে বুঝতে হবে কোথাও পুঁজ জমেছে। আবার কোলিকি বা কামড়ে ধরা ব্যথা হলে, খাদ্যনালি, মূত্রনালি বা পিত্তনালিতে কোথাও অবস্ট্রাকসন বা বাধার সৃষ্টি হয়েছে বোঝা যায়। চিনচিনে ব্যথা জানান দেয় মৃদু প্রদাহ চলছে। আবার যদি এরকম অনুভূতি হয় যে, কেউ পেটে কেউ ছুরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তার মানে প্যানক্রিয়াটাইটিসের সম্ভাবনা বেশি। গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যথা খাওয়ার পর বেড়ে যায়, অন্যদিকে ডুয়োডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে ঠিক উলটো হয়। খাওয়ার পর ব্যথা কমে যায়। পেটের কোন অর্গান রোগগ্রস্ত বুঝতে গেলে জানতে হবে ব্যথাটা, পেটের কোথায় হচ্ছে। আবার ব্যথা সব সময় একই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে এমন নয়। শুরু এক জায়গায় হলেও, অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। খুব কমন অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে ব্যথা শুরু হয় নাভির চারিদিকে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই শিফট করে চলে যায় পেটের ডান দিকের নীচে। অন্যদিকে পিত্তথলির পাথরের কারণে ব্যথা পেটের ডান দিকের উপরের অংশে শুরু হলেও, ডান দিকের ঘাড়ে, পিঠের মাঝ বরাবর অনুভূত হতে পারে।
গলব্লাডারের স্টোন বা পিত্তথলির পাথর
যাই হোক ব্যথা যন্ত্রণা নিয়ে প্রাককথন ছেড়ে আসা যাক গলব্লাডার বা পিত্তথলির পাথরের কথায়। গলব্লাডার একটি নাশপাতি আকৃতির একটা অঙ্গ। পেটের ডান দিকে লিভারের তলায়, লিভারের সঙ্গে আটকে থাকে। পিত্তনালি ও তার নানা নামের শাখা প্রশাখা গলব্লাডারকে লিভার ও খাদ্যনালির ডুয়োডেনামের সঙ্গে যুক্ত করেছে। পিত্ত তৈরি হয় লিভারে। দৈনিক পরিমাণ প্রায় এক লিটার। তৈরি হওয়ার পর এইসব নালি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রথমে গলব্লাডারে জমা হয়। গলব্লাডার সেই পিত্তর ঘনত্ব বাড়ায়। নিজেও কিছু মিউকাস যুক্ত করে। যখন প্রয়োজন, বিশেষ করে খাওয়ার পর, কিছু লোকাল বা স্থানীয় হরমোনের প্রভাবে পিত্তথলির সংকোচন হয়। পিত্ত তখন পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে পিত্তনালি বা বাইল ডাক্টের মাধ্যমে খাদ্যানালিতে এসে, খাবারের সঙ্গে মিশ্রিত হয় এবং বিশেষ করে চর্বি/ফ্যাট জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। পিত্তর নানা উপাদানের মধ্যে যেমন রঞ্জক বিলিরুবিন আছে, তেমনিই আছে কোলেস্টেরল ও বাইল সল্ট। এই বাইল সল্টই মূলত ফ্যাট জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে ও পিত্তের উপাদান কোলেস্টেরলকে দ্রবীভূত রাখতে সাহায্য করে। পিত্তে কোনো কারণে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে বা বাইল সল্ট কমে গেলে গলব্লাডার স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। বাইল সল্ট অবশ্য খাদ্যনালিতে আসার পর, নির্দিষ্ট কাজ করার পর, পুরোপুরি শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এরকম না। বেশ কিছুটা খাদ্যনালি থেকে আবার রক্তে শোষিত হয়ে পুনরায় লিভারে পৌঁছায়। এই ঘটনাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান “এন্টেরো হেপাটিক সার্কুলেশন” বলে। খাদ্যনালির যে অংশে ( টার্মিনাল ইলিয়াম ) এই পুনঃশোষনের ঘটনা ঘটে, সেই অংশ রোগগ্রস্ত হলে বা কোনো অপারেশনে বাদ চলে গেলে পিত্তে বাইল সল্টের পরিমাণ কমে গিয়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
গলব্লাডারে পাথর কেন হয়, কাদের বেশি হয়?
বর্তমান সময়ে গলস্টোন বা পিত্তথলির পাথর প্রায় ঘরে ঘরে। ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের ৮ শতাংশ এবং যাদের বয়স ৬০ এর ঊর্ধ্বে, তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের গলস্টোনের প্রকোপ দেখতে পাওয়া যায়। সৌদি আরবে ৫০ বছর আগে গলস্টোনের রুগী পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন পশ্চিমি দেশগুলোর মতোই প্রাদুর্ভাব। খাদ্যাভ্যাসের পশ্চিমিকরণ একটা বড়ো কারণ। হাই ফ্যাট, হাই কোলেস্টেরল, লো ফাইবার, ফাস্ট ফুডে যারা বেশি অভ্যস্ত, চল্লিশের বেশি বয়স্ক মহিলা, যাদের গায়ের রং পরিষ্কার, যাদের ওজন বেশি, যারা “ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল” খায়, যাদের সন্তানের সংখ্যা বেশি তাদের গলস্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এগুলোকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলি “রিস্ক ফ্যাক্টরস”।
আবার পিত্তের উপাদান রঞ্জক বিলিরুবিন ও কোলেস্টেরল বাড়লে, এমনকী সেই বৃদ্ধি আপেক্ষিক হলেও, গলস্টোন হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে নানা রকম হিমোলাইটিক ডিসঅর্ডার যেমন থ্যালাসেমিয়া, হেরিডিটারি স্ফেরোসাইটসিসের নানা রোগে রক্তের লোহিত কণিকা দ্রুত ভেঙে যায়। রক্তে ও পিত্তে বিলিরুবিনের অ্যাবসলিউট বৃদ্ধি হয়। পিগমেন্ট স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যদিকে রক্তে বা পিত্তে যাদের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদেরও স্টোন, বিশেষত কোলেস্টেরল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। “ক্রোনস ডিজিজ” সমেত স্মল ইন্টেস্টাইনের ইলিয়ামে অন্য কোনো রোগ হলে অথবা কোনো অপারেশনে ওই অংশ বাদ গেলে, পিত্তে বাইল সল্টের পরিমাণ কমে যায়। ফলে কোলেস্টেরলের আপেক্ষিক বৃদ্ধি ঘটে এবং স্টোন হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। পিত্ত প্রবাহে কোথাও বাধার সৃষ্টি হলেও স্টোন তৈরি হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। যাই হোক মূলত দু-রকমের গলস্টোন দেখা যায়। বিলিরুবিন বেশি থাকলে হয় পিগমেন্ট স্টোন। অন্যক্ষেত্রে হয় কোলেস্টেরল স্টোন।
কীভাবে বোঝা যাবে গলস্টোন হয়েছে?
গলব্লাডারে পাথর হলেই সমস্যা হবে এরকম নয়। বরঞ্চ অনেকেরই কোনো উপসর্গ হয় না। এই ধরনের গলস্টোনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “অ্যাসিম্পটমেটিক গলস্টোন”। অন্য কোনো সমস্যায় পেটের ইউএসজি বা অন্য পরীক্ষা করতে গিয়ে যদি ধরা পড়ে তাঁর পিত্তথলিতে পাথর আছে, তাহলে তাকে বলা হয় “ইনসিডেন্টাল গলস্টোন”।
তবে যে সমস্ত উপসর্গ থাকলে গলস্টোন সন্দেহ করা হয়, তার মধ্যে প্রথমেই আসবে পেটে তীব্র যন্ত্রণা। যা পেটের উপরের দিকে মাঝামাঝি বা ডান দিকে অনুভূত হয় এবং একই সঙ্গে ডান কাঁধ ও পিঠেও অনুভূত হতে পারে। বমি, জ্বরও হতে পারে। জন্ডিস হলে বুঝতে হবে সমস্যা বাড়ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিনচিনে ব্যথা ও পেট ফুটফাট করছে এরকম উপসর্গ নিয়েই বেশি রোগী চিকিৎসকের কাছে আসেন। ইনফেকশনের কারণে পিত্তথলির মধ্যে পুঁজ জমে গেলে ( অ্যাকিউট কোলিসিস্টাইটিস বা এম্পায়েমা ) ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়, চরিত্র পালটে দপদপে হয়ে যায়, শরীরে ঘাম হতে থাকে, পালস রেট বেড়ে যায়। রোগীর কষ্ট বাড়তে থাকে। এই সময় বুঝতে হবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার দরকার। এমনকী প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি অপারেশনও করতে হতে পারে।
তবে উপসর্গ যাই থাক, বর্তমান “এভিডেন্স বেসড মেডিসিনের” যুগে পরীক্ষা করে গলস্টোনের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করা জরুরি। খুব সহজলভ্য, সস্তা, নন ইনভাসিভ আল্ট্রাসোনোগ্রাফি তার জন্যে যথেষ্ট। তবে ব্যথার সঙ্গে জ্বর থাকেলে গলব্লাডারের ইনফেকশন হয়েছে কিনা বুঝতে, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করে নিতে হয়। আবার জন্ডিস থাকলে, তার কারণ পিত্তনালির পাথর না অন্যকিছু বুঝতে, লিভার ফাংশন টেস্ট, সিটি স্ক্যান ও এমআরসিপি পরীক্ষার প্রয়োজন পড়তে পারে। গলব্লাডার থেকে পাথর পিত্তনালিতে চলে এলে বিপদের সম্ভবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। ছোটো পাথরের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বেশি ঘটে। এর ফলে যেমন জন্ডিস হতে পারে, পিত্তনালির ইনফেকশন বা কোলানজাইটিস হতে পারে। তেমনই আবার প্যানক্রিয়াসের ডাক্টে বাধার সৃষ্টি করে প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো মারণ রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এরকম পরিস্থিতি হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
কোথায় লুকিয়ে বিপদ?
বহু মানুষের একটা প্রবণতা আছে, পেটের সব ব্যথাকেই গ্যাসের ব্যথা ভেবে নিয়ে মুড়ি মুড়কির মতো গ্যাসের ওষুধ কিনে খাওয়া। চিকিৎসক হিসাবে ভয় না দেখালেও, স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, কোনো কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাও, পেটের উপরিভাগে অনুভূত হয়। ফলে সব ব্যথাকেই গ্যাসের ব্যথা ভেবে নিলে, চিকিৎসার মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে, জীবন সংশয় হতে পারে। আরও মনে রাখার দরকার ব্যথার সঙ্গে পেট ফুলে গেলে,পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে, খুব বমি শুরু হলে, প্রস্রাবের সমস্যা হলে, খুব ঘাম হলে বা নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়লে, বুঝতে হবে অন্য কোনো গুরুতর অসুখ হয়েছে।
গলব্লাডারে পাথর হলে কী করা উচিত?
গলস্টোন মানেই অপারেশন নয়। বরঞ্চ “অ্যাসিম্পটমেটিক স্টোন” বা ইনসিডেন্টাল স্টোনের অপারেশন না করে অপেক্ষা করাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষা। তবে উপসর্গ থাকলে অপারেশন করতে হবে। আগে ওপেন সার্জারি, মানে কনভেনশনাল পেট কেটে অপারেশনই ছিল একমাত্র পথ। এখন ল্যাপরোস্কোপির যুগে, পেটে ছোটো কয়েকটা ছিদ্র করে পাথর সমেত গলব্লাডার বাদ দেওয়াই “গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড” প্রসিডিয়োর বলা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপরোস্কোপিক অপারেশন না করে, ট্রাডিশনাল ওপেন সার্জারি অনেক নিরাপদ। যেমন হার্ট বা ফুসফুসের গুরুতর রোগ, রক্ত জমাট বাধার গুরুতর সমস্যা থাকলে বা খুব বেশি বয়সের রোগী হলে। অনেকেই প্রশ্ন করেন ওষুধে পাথর গলবে না? উত্তরে এটাই বলা যায় কিছু মেডিসিন আছে যেগুলো গলব্লাডারের পাথর গলায় বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তার রেজাল্ট এতই অনিশ্চিত, যে কাউকে গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। আবার অনেকেই জানতে চান পাথরের সাইজ বড়ো না ছোটো। আসলে সাধারণের একটা ধারণা আছে, ছোটো স্টোন মানে বিপদ নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু উলটো কথাই বলে। পিত্তথলির পাথর যেমন বালির দানার মতো ছোটো হতে পারে, তেমনই গলফ বলের মতো বড়ো হতে পারে। বড়ো স্টোনের পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে, পিত্তনালিতে গিয়ে, জন্ডিস, কোলানজাইটিস বা প্যানক্রিয়াটাইটিসের মতো বিপর্যয় ঘটানোর সুযোগ কম। বিপদ কম। অন্যদিকে ছোটো স্টোন, বিশেষ করে ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোটো হলে, যেমন স্পনটেনিয়াস বেরিয়ে যেতে পারে, তেমনি পিত্তনালিতে আটকে গিয়ে নানা বিপদও ঘটাতে পারে। তাই ছোটো স্টোনকে উপেক্ষা নয়, বরঞ্চ বেশি নজর দেওয়ার দরকার, উপসর্গ থাকলে দ্রুত অপারেশন করিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
কিছু জরুরি কথা
একটা বিষয় মনে রাখা ভালো। একদিকে গলব্লাডারের স্টোন যেমন উপসর্গহীন অ্যাসিম্পটমেটিক বা ইনসিডেন্টাল হয়। তেমনই ক্রনিক বা অ্যাকিউট কোলিসিস্টাইটিস, মিউকোসিল, এমপায়েমা থেকে শুরু করে, অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস এমনকী ক্যান্সারের মতো কম্পলিকেশন বা জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই উপসর্গ না থাকলে অপারেশন যেমন জরুরি নয়, তেমনই উপসর্গ যুক্ত গলস্টোনের চিকিৎসা অহেতুক ফেলে না রাখাই ভালো। তবে অবশ্যই তার জন্যে পাগলামো, অতি তাড়াহুড়োর কোনো মানে হয় না । তবে গলস্টোন পিত্তনালিতে চলে গেলে ইআরসিপি বা কনভেনশনাল সার্জারি করে দ্রুত বের করে দিতে হবে। গলস্টোন এক-শো শতাংশ প্রতিরোধ করা না গেলেও,খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নিয়মিত শরীর চর্চা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে, খাবার মিস না করে নির্দিষ্ট সময়ে খেলে প্রাদুর্ভাব অবশ্যই কমানো যায়। অন্যদিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে হঠাৎ অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেললে বা প্রায়ই উপোস করলে গলস্টোন হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে।