দ্রুত চক্ষু সঞ্চালন পর্বে (REM phase) মানুষ স্বপ্ন দ্যাখে।
দিবাস্বপ্ন রোজই দেখি কিন্তু ঘুমের ভেতর স্বপ্ন আমি খুব কম দেখি। যা দেখেছি তার ভেতর খুব কম স্বপ্নই মনে আছে।
সকাল নটায় আউটডোর শুরু, শেষ হতে হতে সেই সাড়ে চারটে…
শেষ দিকটাতে আজ বেশ অদ্ভুত কান্ড ঘটতে শুরু করলো। রোগীরা নিজেরাই সব রোগ নির্ণয় করে আমাকে ওষুধ লিখে দিতে বলছে। যেমন একজন রোগীর তিনদিন ধরে চোখ লাল। আমি খুঁটিয়ে দেখছি কর্নিয়াতে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা! সাথে সাথেই রোগী বলে উঠলো ‘এত দেখার কী আছে? পরশু খাওয়া দাওয়ার একটু গন্ডগোল হয়েছিল, গ্যাস হয়েছিল, তারপর থেকে চোখ লাল, ভালো একটা গ্যাসের ওষুধ লিখে দিন’।
এরপর এলেন একজন রোগিনী, অনেকদিন ধরে মাথাব্যথা। পাওয়ার দেখলাম, ঠিক আছে। ব্যথার গতিপ্রকৃতি দেখে মাইগ্রেন মনে হলো, ওষুধ লিখলাম। বেরিয়ে যাওয়ার আগে উনি বললেন ‘ডাক্তারবাবু গ্যাসের ওষুধ লিখেছেন তো? আমার কিন্তু টোটাল গ্যাস’।
এরপর শেষ রোগী, গুটিগুটি পায়ে উনি ঢুকে এলেন এবং বললেন ‘গ্যাস থেকে দুচোখে ছানি পড়েছে, অপারেশান করে চোখ থেকে গ্যাসটুকু বার করে দিন’।
হাসবো না কাঁদবো! মনে পড়ে গেল ছোটোবেলার কথা। বাঘাস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট্ট একটি গ্রাম, সর্বসাকুল্যে একজন কোয়াক ডাক্তার, তিনি সব কিছুতেই গ্যাস দেখতেন। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ম্যালেরিয়া থেকে টিবি। সব মৃত্যুর কিন্তু একটিই কারণ— ‘গ্যাস’।
এরকম গ্যাসীয় পরিমণ্ডলে আমার বেড়ে ওঠা এবং পরে ডাক্তার হওয়া, তাই রোগীদের মুখ থেকে এরকম ‘গ্যাস-তত্ত্ব’ শুনে রাগ হল না।
আউটডোর শেষ করে হিমশীতল ভাত তরকারি খেয়ে কোয়ার্টারে এসে বিছানা নিলাম। দূর থেকে ভেসে আসছে মাইকের আওয়াজ, কিছু একটা জরুরি ঘোষনা করা হচ্ছে। মাইকিং-এর শব্দটা নিকট থেকে নিকটতর… কিছু একটা আসন্ন বিপদের কথা মাইক দিয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে, ঠিক শুনতে পাচ্ছিনা। হঠাৎ করে আশপাশের দৃশ্যপট কেমন পরিবর্তিত হয়ে গেল, শুনশান দ্বীপের মতো একটা জায়গা। দু একটা মানুষ দেখা যাচ্ছে। মানুষ গুলোর আকৃতি বড়ো অদ্ভুত। সাইজে ছোটো, পেটের গড়ন খানিকটা গণেশ ঠাকুরের মতো।
একটু দূরে কতগুলো চঞ্চল বাঁদর, হাতে কাঠি। নিশ্চল স্ফীত অথচ জীবন্ত কিছু জিনিসকে ওরা অবিরত পেটাচ্ছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম ঢোল আর মানুষ এই দুই জিনিসকে পিটুনির মধ্যে রাখতে হয়। তাহলে কী ওগুলো…? বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। একটি বানরের হাতে লাটাই, শক্ত নাইলনের দড়ি উঠে গেছে শূন্যে। ওপরে তাকালাম।একটা দুটো নয় অসংখ্য…
গোটা আকাশ জুড়ে গ্যাসভর্তি মানব-বেলুন। ঝটকা দিয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল…