Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

এক আশ্চর্য আবিষ্কারের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাঙালী চিকিৎসক

IMG_20221016_194623
Dr. Aindril Bhowmik

Dr. Aindril Bhowmik

Medicine specialist
My Other Posts
  • October 18, 2022
  • 7:44 am
  • No Comments

আজ নীরবে চলে গেলেন ডা. দিলীপ মহলানবীশ। তাঁর নাম চিকিৎসকরা ছাড়া খুব বেশি মানুষ জানেন না। অথচ তাঁর আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশেষত শিশুদের জীবন বাঁচিয়েছে। ভীষণ ইচ্ছে ছিল একবার তাঁর সাথে দেখা করার। ডা. পুণ্যব্রত গুণ তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গেছিলেন ২০১৯ সালে। তখন আরেকবার তাঁর সাথে ডা. মহলানবীশকে দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। তারপর করোনা ও অন্যান্য ঝামেলায় মনের হাজারটা অপূর্ণ স্বপ্নের মতো এই এই স্বপ্নটাও অপূর্ণ রয়ে গেছে।😥

ও আর এসের আবিস্কারের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিশেষত আপতকালীন পরিস্থিতিতে কীভাবে ও আর এস ব্যাবহার করে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচানো যায়, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন। তাঁকে আমার শেষ শ্রদ্ধা জানাই। 🙏

এক আশ্চর্য আবিষ্কারের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাঙালী চিকিৎসক

১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি। ঢাকার রাস্তা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। কি ব্যপার? কিসের জন্য এই নিরাপত্তার কড়াকড়ি? বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানেরা ঢাকায় এসেছেন। এসেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিরা। আর এসেছেন সারা বিশ্বের নামকরা বৈজ্ঞানিক আর চিকিৎসকেরা। সকলেই এসেছেন এক বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে।

কিসের জন্য এই সম্মেলন? পঁচিশ বছর আগে ঢাকা এবং কলকাতার একঝাঁক বাঙালী এবং আমেরিকানদের যৌথ প্রচেষ্টায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়েছিল। সভ্যতার ইতিহাসে এর সমতুল্য মানবিক আবিষ্কার খুব কমই হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা নব জীবন ফিরে পেয়েছে এই আবিষ্কারের ফলে। সেই মহান আবিষ্কারের রজত জয়ন্তী পালনের উপলক্ষে এই সম্মেলন।

আজও দেশ বিদেশের বৈজ্ঞানিকেরা এবং চিকিৎসকেরা এই আবিষ্কারের কথা উঠলেই শ্রদ্ধার সাথে বাঙালীদের অবদানের কথা স্মরণ করে। এর সাথে যুক্ত অনেকেই এখনও জীবিত। কলকাতায়, ঢাকায় অথবা বাংলারই কোনো গ্রামে বা শহরে অবহেলাতে দিন কাটাচ্ছেন। এখনও নামকরা নানা বিজ্ঞান পত্রিকায় তাঁদের কাজ রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাঙালীরা তাঁদের ভুলে গেছে।

এই আবিষ্কারটি হলো ‘ওরাল রিহাইড্রেশান সল্ট’ বা সংক্ষেপে ওআরএস। অসংখ্য কলেরা এবং অন্যান্য ডাইরিয়া রোগীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে এই অসাধারণ পানীয়।

আবিষ্কারটি অসাধারণ হলেও এই পানীয় তৈরি করা কিন্তু অত্যন্ত সহজ। এক লিটার জলে ছয় চামচ চিনি আর অর্ধেক চামচ লবণ মেশালেই তৈরি ‘হোম মেড ওআরএস’। হাসপাতালে যে ওআরএস পাওয়া যায়, তার ফর্মূলা প্রায় একই। এতে শুধু অতিরিক্ত মেশানো হয় পটাশিয়াম ক্লোরাইড আর সোডিয়াম সাইট্রেট।

ওআরএস –এর ফর্মুলা এত সহজ হলেও এর আবিষ্কারের ইতিহাস কিন্তু মোটেই সহজ সরল নয়। এই ইতিহাস ঘাঁটলে চোখে পরে কিভাবে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির হিসাব তুচ্ছ করে, অর্থ অথবা খ্যতির মোহ ত্যাগ করে মানুষের ভালোর জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেন। আবার কয়েকজন বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ঈর্ষা, একগুঁয়েমি আর খ্যাতির মোহে এই জীবনদায়ী আবিস্কারকে কয়েক বছর পিছিয়ে দেন।

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই কলেরা এবং অন্যান্য ডাইরিয়া রোগ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। গবেষণা চলে প্রধানত দুটি রাস্তা ধরে। তখন রোগের জার্ম থিয়োরি জাঁকিয়ে বসেছে। নিত্য নতুন রোগের জীবাণু আবিষ্কার হচ্ছে। নানা রকম এন্টিবায়োটিক বার হচ্ছে। প্রথম রাস্তার বৈজ্ঞানিকেরা বিভিন্ন ডাইরিয়ার কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল রোগের জীবাণু খুঁজে পেলে এবং তাকে ধ্বংসকারী এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে পারলেই রোগকে নির্মূল করা যাবে। দ্বিতীয় রাস্তার বৈজ্ঞানিকরা লক্ষ করেছিলেন ডাইরিয়ার রোগীদের মৃত্যুর মূল কারণ শরীরের জলশূন্যতা। তাঁরা চেষ্টা করছিলেন এমন কোনো তরল আবিষ্কার করতে যা শিরায় প্রবেশ করিয়ে রোগীর দেহে জলের অভাব পূরণ করা যায়। তখনো পর্যন্ত চিকিৎসকদের ধারণা ছিল কলেরা অথবা অন্যান্য ডাইরিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্য নালীর সাম্য অবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এসময় মুখে কিছু খাওয়ানো রোগীর পক্ষে ক্ষতিকারক।

১৯২০ সাল নাগাদ ডাইরিয়ার চিকিৎসা হিসাবে শিরায় তরল চালানো প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে শুরু হয়ে গেল। সে সময় ডাইরিয়া না কমা পর্যন্ত রোগীদের স্যালাইন চালিয়ে সম্পূর্ণ উপোস করিয়ে রাখা হত। এর ফলে মৃত্যু হার কিছুটা কমলেও সন্তোষজনক ভাবে কমছিল না। কারণ অধিকাংশ ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল পাঁচ বছরের নিচে। তাদের পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত উপোস করিয়ে রাখার ফলে তারা ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার হত। ডাইরিয়া থেকে প্রাণে বাঁচলেও পরবর্তী কালে তারা বিভিন্ন রকম অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে মারা যেত। তাছাড়া হাসপাতালে থেকে এই চিকিৎসা ছিল অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ্য। তা ছিল কেবল মাত্র উচ্চ বিত্তের নাগালের মধ্যে। শিরায় যে তরল চালানো হত, তাও বিশেষ বিজ্ঞান সম্মত ছিল না। একেক হাসপাতালে একেক রকম তরল চালানো হত। কয়েক জায়গায় ডাইরিয়া রোগীদের রক্ত পর্যন্ত চালানো হত। যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ।

১৯৪০ সালে ডাক্তার ড্যানিয়েল ডারো (Daniel Darrow) বিভিন্ন ডাইরিয়া রোগীদের পায়খানায় জল ও নানা রকম ইলেক্ট্রোলাইটের পরিমাপ করে এক বিশেষ স্যালাইন প্রস্তুত করলেন। এই তরলে ছিল গ্লুকোজ, পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড। ডারো সাহেবের এই আবিষ্কারের পর হাসপাতালে ডাইরিয়ায় মৃত্যু হার অনেকটাই কমানো গেল। তিনি প্রথম ডাইরিয়ার ফলে দেহ অভ্যন্তরে জল ও অন্যান্য ইলেক্ট্রোলাইটের যে পরিবর্তন হয়, তা পরিমাপ করলেন। ফলে ডাইরিয়ার চিকিৎসাও অনেকটা বিজ্ঞান সম্মত হয়ে উঠল। কিন্তু তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পরেও সারা বিশ্বে ডাইরিয়ায় মৃত্যু হারের বিশেষ পরিবর্তন হলো না। কারণ ডাইরিয়ার মহামারী মুলত হত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয়। সেখানে না ছিল ডারো সাহেবের স্যালাইন চালানোর উপযুক্ত হাসপাতাল, না ছিল এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে সামলানোর মত প্রচুর চিকিৎসক অথবা দক্ষ স্বাস্থ কর্মী।

এই সমস্যা ডারো সাহেবকেও ভাবিয়েছিল। তাঁর আবিষ্কৃত স্যালাইন ব্যবহারের ফলে হাসপাতালে ভর্তি ডাইরিয়া রোগীদের মৃত্যু হার এক ধাক্কায় প্রায় পাঁচ শতাংশে নেমে এল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এই চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ ছিলনা। তিনিই তখন চিন্তা করেছিলে মুখে খাওয়া যায় এমন এক তরলের, যা দিয়ে হাসপাতালের বাইরেও রোগিদের খুব কম খরচে সারিয়ে তোলা যাবে। তিনি এই তরল আবিষ্কার করতে পারেননি। কারণ তিনিও মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন ডাইরিয়ায় পরিপাক নালীর কার্য ক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এসময় মুখে কিছু খাওয়ালে দেহে তার শোষণ প্রায় হবেই না।

১৯৫৩ সালে ফিসার ও পার্সন সাহেব (R. B. Fisher ও D. S. Parsons) ইঁদুরের অন্ত্রে গ্লুকোজের উপর নির্ভরশীল সোডিয়াম ও জল শোষণের পদ্ধতি (Glucose, Sodium and Water Transport) আবিষ্কার করলেন। কিন্তু তাঁরা চিকিৎসক ছিলেন না এবং ডাইরিয়ার চিকিৎসায় এই আবিষ্কারের যে বিশেষ ভূমিকা আছে সেটা তাঁরা বুঝতে পারেননি। এরপরে বিভিন্ন ব্যক্তি গ্লুকোজের উপর নির্ভরশীল সোডিয়াম পাম্প নিয়ে কাজ করতে লাগলেন। বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসকেরা বুঝতে পারলেন ডাইরিয়ায় শরীরে জলের অভাব পূরণ করতে হলে পানীয়ে উপযুক্ত পরিমাণে গ্লুকোজ ও লবণ মেশাতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসক তখনও বিশ্বাস করতেন ডাইরিয়ায়, বিশেষ করে কলেরায় পরিপাক নালীর এই সোডিয়াম পাম্প সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শুধুমাত্র পানীয়ের মাধ্যমে ডাইরিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। এর একমাত্র চিকিৎসা শিরার মাধ্যমে সরাসরি শরীরে উপযুক্ত তরল ঢোকানো।

১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিপিন্সে কলেরা মহামারীর আকার নিল। ডাক্তার ফিলিপ্‌স (Robert A. Phillips) ম্যানিলা হাসপাতালে Naval Medical Research Unit এর প্রধান হিসাবে যোগ দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মুখে খাওয়া বিশেষ পানীয়ের মাধ্যমে কলেরার প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি গ্লুকোজ ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের মিশ্রণ পান করিয়ে কয়েক জন কলেরা রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তিনি দেখান পানীয়ে গ্লুকোজ মেশানোর ফলে দেহে সোডিয়াম ও জল শোষণের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে।

এরপরে আরো বড় মাত্রায় তিনি এই পরীক্ষা করতে উদ্যত হন। কিন্তু এবারে ভাগ্য তাঁর সহায় হলো না। বেশ কয়েকজন কলেরা রোগীর মৃত্যুর পরে তিনি পরীক্ষা বন্ধ করতে বাধ্য হন। পানীয়ে গ্লুকোজ ও লবণের মাত্রা সঠিক না হওয়ার জন্য এই বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু ডাক্তার ফিলিপ্‌স তাঁর ব্যর্থতার মূল কারণ বুঝতে পারেননি। তিনি অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। নিজের মতামত থেকে একশ আশি ডিগ্রী ঘুরে একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকায় কলেরার সময় খাদ্যনালীর ক্ষমতা কমে এই মর্মে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। এই প্রবন্ধে তিনি লেখেন কলেরা রোগীদের একমাত্র চিকিৎসা শিরার মাধ্যমে দেহে সরাসরি স্যালাইন দেওয়া। মুখে পানীয় খাওয়ানোর চেষ্টা করা উচিৎ অন্তত দিন তিনেক পরে, যখন খাদ্যনালী অনেকটা সাম্য অবস্থায় ফিরে আসে। তার আগে খাওয়ানোর চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

ওদিকে তখন বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান) এবং পশ্চিমবঙ্গের ভয়াবহ অবস্থা। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে কলেরায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা মারা পড়ছে। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা তো দূরের কথা কারো কলেরা হলে অন্যরা তার ধারে কাছে ঘেঁষত না। কলেরা রোগী মারা যাওয়ার পরে তার অন্ত্যেষ্টি কাজের জন্য লোক পাওয়া যেত না।

১৯৬০ সালে ঢাকায় Pakistan-SEATO Cholera Research Laboratory প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশ থেকে অনেক বিখ্যাত চিকিৎসক এখানে কাজ করতে আসেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার গ্রিনাউ (Greenough), ডাক্তার হির্সকর্ন (Hirschhorn), ডাক্তার ডেভিড সাচার (David B. Sachar) প্রমুখ।

প্রায় একই সময়ে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় The Johns Hopkins Center for Medical Research and Training। সেখানেও জোরকদমে চলছিল কলেরা নিয়ে গবেষণার কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই দু জায়গার চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন শুধু মাত্র হাসপাতালে ভর্তি করে স্যলাইন চালিয়ে কলেরা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ পদ্ধতিটি যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। এবং লক্ষ লক্ষ কলেরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করার পরিকাঠামো অনুন্নত দেশগুলিতে নেই। অতএব বিকল্প কোনো সহজ চিকিৎসা ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে কলেরা রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

এই সময় সাচার সাহেব এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তিনি এবং তাঁর বাঙালী সহযোগী চিকিৎসকেরা হাতে কলমে প্রমাণ করেন কলেরা রোগীদের খাদ্যনালীর গ্লুকোজ সোডিয়াম পাম্প নষ্ট হয় না এবং কলেরা রোগীদের মুখে খাইয়ে তাদের জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ঠিক করা সম্ভব। কলকাতার চিকিৎসকেরাও একই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। ফলে এতদিনের চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠা মিথ ভাঙার উপক্রম হয়। চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন মুখে খাইয়েও কলেরা রোগীর চিকিৎসা সম্ভব।

কিন্তু বিদেশী চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিকেরা এই সত্য হজম করতে পারছিলেন না। তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন দুই দেশের বাঙালীরা এই অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী হবে সেটা তাঁদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। ফলে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি কলকাতায় বা ঢাকায় পাওয়া গেল না।

চট্টগ্রামে সেসময় কলেরার মহামারী চলছে। নলিন এবং ক্যাশ (Richard Cash and David Nalin) নামে দুজন তরুণ আমেরিকান বৈজ্ঞানিক সে সময় চট্টগ্রামে যান। রফিকুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় ডাক্তার ‘ইসলাম প্রোটোকল’ নামে ওআরএস এর সাহায্যে কলেরা রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য একটি প্রটোকল তৈরী করেন। নলিন এবং ক্যাশ চট্টগ্রামে গিয়ে রফিকুল ইসলামের সাথে যোগ দেন। তাঁরাও বহু মানুষকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু ‘ইসলাম প্রটোকল’-কে পশ্চিমি চিকিৎসকেরা মান্যতা দেয় না। কারণ হিসাবে দেখানো হয় ‘পুওর ডকুমেন্টশন’। একথা খুবই সহজে বোঝা যায় আসলে তাঁরা এক অখ্যাত অচেনা বাঙালী তরুণ চিকিৎসককে এতবড় আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিতে চাননি।

চট্টগ্রামের চাঁদপুর জেলার ‘মতলব’ হাসপাতালে মিজনুর রহমান নামে এক বাঙালী ডাক্তার ওআরএস দিয়ে কলেরা রোগীদের চিকিৎসার অনুমতি চান। কারণ সেই হাসপাতালের পরিকাঠামো ছিল খুবই দূর্বল। বিদ্যুৎ ছিল না। দক্ষ কর্মীর সংখ্যাও ছিল কম। ফলে লক্ষ লক্ষ রোগীকে ভর্তি করে স্যালাইন চালানো ছিল সাধ্যের বাইরে।

যথারীতি এই ফিল্ড ট্রায়ালের অনুমতি দিতে বিদেশি বৈজ্ঞানিকেরা গড়িমসি করছিলেন। মিজানুর তখন অনুমতি ছাড়াই ওআরএস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। অসংখ্য মৃতপ্রায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

বাঙালী এই দেশপ্রেমিক চিকিৎসকদের খ্যাতির মোহও ছিল না। অর্থের লোভও ছিল না। মিজানুরকে একবার নলিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ফিল্ড ট্রায়ালের অনুমতি ছাড়া ওআরএস ব্যবহার করে আপনি কি অনৈতিক কাজ করছেন না?’

মিজানুর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘কোনটা অনৈতিক? অমৃত হাতে পেয়েও তা ব্যবহারের অনুমতি নেই বলে চুপচাপ বসে শিশুদের মৃত্যু মিছিল দেখা, নাকি অনুমতির তোয়াক্কা না করে সেই অমৃত দিয়ে শিশুদের বাঁচিয়ে তোলা!?’

‘কিন্তু আপনার এই অসাধারণ কাজ কোনোদিনও স্বীকৃতি পাবে না ডাক্তার!’

‘প্রতি মুহূর্তে আমার কাজ স্বীকৃতি পাচ্ছে নলিন। সন্তান ফেরত পাওয়া মায়ের হাসি, স্বামী ফিরে পাওয়া বধূ আনন্দ অশ্রু, বন্ধুকে ফিরে পেয়ে বন্ধুর উল্লাস আমার কাজের স্বীকৃতি। এর চেয়ে বড় পুরস্কারের প্রত্যাশা আমি করি না।’

নলিন ও ক্যাশ বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালীদের তৈরী প্রোটোকল সহজে ছাড়পত্র পাবে না। সেজন্য তাঁরা বাঙালী চিকিৎসকদের নাম বাদ দিয়েই আর একটি প্রটোকল তৈরী করেন। কিন্তু এবার বাদ সাধলেন ডাক্তার ফিলিপ্‌স, সেই যিনি ফিলিপিন্সে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সেসময় এথিকাল কমিটিতে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা কলেরা রিসার্চ ল্যাবোরেটরির প্রধান ডাক্তার হেনরি মসলে (Henry Mosley) এর সহযোগিতায় তাঁদের প্রোটোকল ছাড়পত্র পায়।

তাঁদের এই ফিল্ড ট্রায়াল সফল হয়। ল্যান্সেট বিজ্ঞান পত্রিকায় তাঁদের কাজ প্রকাশিত হয়। প্রমাণিত হয় শুধু মাত্র ওআরএস এর সাহায্যে শিরায় স্যালাইন না চালিয়েও এবং রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করেও কলেরার মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয়েক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে পশ্চিম বঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে চলে এসেছিল। তারা খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করত। কলেরা এই শিবিরগুলিতে মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ কলেরায় মারা যাচ্ছিল। তখন এই ওআরএস এর সাহায্যেই অনেক মূল্যবান প্রাণ রক্ষা পায়। সেই সময় কলকাতার এক ডাক্তার দিলীপ মহলানবিশ বনগাঁ উদ্বাস্তু শিবিরে কলেরা রোগীদের মধ্যে কাজ করেছিলেন। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছিল। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন চালানোর মত পরিকাঠামো সেই উদ্বাস্তু শিবিরে ছিল না। ডাক্তার মহলানবিশ এবং তাঁর সহযোগীরা ঘরে তৈরি ওআরএস এর সাহায্যে বেশীরভাগ রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। ডাক্তার মহলানবিশ ওআরএস এর ফর্মুলায় কিছু পরিবর্তন করেন। যার ফলে এটি আরও কার্যকারী হয়ে ওঠে। পরবর্তী কালে তিনি এজন্য আন্তর্জাতিক মহল থেকে অনেক পুরস্কারও পান। তার মধ্যে ২০০২ সালের পলিন (Pollin prize) পুরস্কার অন্যতম।

নলিন ও ক্যাশের কাজের সাথে ডাক্তার মহলানবিশের কাজের মূল পার্থক্য ছিল, নলিন ও ক্যাশ দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে ওআরএস রোগীদের খাইয়েছেন এবং প্রতিটি কেস সুন্দর ভাবে নথিভুক্ত করেছেন। অন্যদিকে ডাক্তার মহলানবিশ দক্ষ কর্মচারীদের সাহায্য পাননি। তিনি রোগীর বাড়ির লোককেই ওআরএস এর ব্যবহার শিখিয়েছেন। তিনি অনেক কম সংখ্যক কর্মীর মাধ্যমে প্রচুর রোগীর চিকিৎসা করে তাঁদের সুস্থ করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন এমারজেন্সির সময়ে ওআরএস কলেরা ও অন্যান্য ডাইরিয়া থেকে মৃত্যু হার অনেক কমিয়ে দিতে পারে।

ডাঃ মহলানবিশ বর্তমানে কলকাতায় তার স্ত্রী ডাঃ জয়ন্তী মহলানবিশের সাথে বসবাস করেন।

১৯৭০ সাল থেকে ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচও ওআরএস তৈরী করে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে নিখরচায় সরবরাহ করতে শুরু করে। যার ফলে আস্তে আস্তে কলেরা ও অন্যন্য ডাইরিয়া রোগে মৃত্যু হার কমে আসে।

ইতিহাস ঘাটতে বসে আরো অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে। যেমন ১৯৫৩ সালে ল্যান্সেট পত্রিকায় কলকাতার এক ডাক্তার হেমেন্দ্র নাথ চ্যটার্জী-র একটি লেখা প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে জানা যায় তিনি নিজের তৈরী ওআরএস ব্যবহার করে ১৮৬ জন কলেরা রোগীর চিকিৎসা করেন এবং সকলকেই সুস্থ করে তোলেন। তাঁর তৈরী ওআরএস এর ফর্মূলা এবং পনেরো বছর বাদে নলিন ও ক্যাশের তৈরী ওআরএস এর ফর্মূলা প্রায় একই। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই চ্যাটার্জীর কাজ স্বীকৃতি পায়নি। পশ্চিমি চিকিৎসকেরা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের নিয়ম কানুন মানা হয়নি এই অজুহাতে তাঁর কাজকে স্বীকৃতি দেননি।

কেজানে ওআরএস আবিষ্কারের পেছনে এরকম আরো কত ইতিহাস অন্ধকারে চাপা পড়ে আছে?

তথ্য সূত্রঃ MAGIC BULLET: THE HISTORY OF ORAL REHYDRATION THERAPY by JOSHUA NALIBOW RUXIN

PrevPreviousএই মানুষটা গতকাল অবধি বেঁচে ছিলেন আমাদের এই শহরেই। জানতেন?
NextDr. Dilip Mahalanabis and ORSNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

ডাক্তারির কথকতা: ৮ একুশে আইন

March 23, 2023 No Comments

ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতীয় চিকিৎসক ও বিজ্ঞান সাধক। তিনি অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ, জ্ঞানী অথচ কাঠখোট্টা মানুষ। শোনা যায়, তিনি এমনকি যুগপুরুষ

দীপ জ্বেলে যাও ২

March 22, 2023 No Comments

আত্মারাম ও তার সঙ্গীরা রওনা দিল দানীটোলার উদ্দেশ্যে। দল্লিরাজহরা থেকে দানীটোলা বাইশ কিলোমিটার হবে। বিশ না বাইশ, ওরা অত গ্রাহ্য করে না। ওরা জানে এই

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

March 21, 2023 1 Comment

পশ্চিমবাংলা এই মুহূর্তে অ্যাডেনভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিপর্যস্ত। আইসিএমআর-নাইসেড-এর সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ সমীক্ষা  জানাচ্ছে, ভারতের ৩৮% অ্যাডেনোভাইরাস রোগী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। এমনকি সুপরিচিত ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান-এ একটি

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

March 20, 2023 No Comments

৪/৩/১৯৯০ শৈবাল–আমাকে প্রথমে নির্বাচনের খবর। আমরা একটাও জিততে পারিনি। জনকও হেরেছে। ভেড়িয়া ৭০০০ ভোটে জিতেছে। আমরা গ্রামে ১২ হাজার ভোট পেয়েছি। বি. জে. পি. ২১

গ্রামের বাড়ি

March 19, 2023 No Comments

১৪ দিন দশেক পরে দেবাঙ্কন এসে হাজির। বলল, “তোদের কফি ধ্বংস করতে এলাম। বাপরে বাপ, যা গেল! যাক, চার্জশিট হয়ে গেছে। সাংঘাতিক কনস্পিরেসি। সোমেশ্বর নাথ

সাম্প্রতিক পোস্ট

ডাক্তারির কথকতা: ৮ একুশে আইন

Dr. Chinmay Nath March 23, 2023

দীপ জ্বেলে যাও ২

Rumjhum Bhattacharya March 22, 2023

ভাইরাস সংক্রমণ শুধুই বায়োলজিকাল? – উত্তর ভাসে বাতাসে

Dr. Jayanta Bhattacharya March 21, 2023

দল্লী রাজহরার ডায়েরী পর্ব-১৬

Dr. Asish Kumar Kundu March 20, 2023

গ্রামের বাড়ি

Dr. Aniruddha Deb March 19, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

428594
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]