নাম’টা প্রথম শুনেছিলাম বেশ কিছু বছর আগে। আমি তখন উলুবেড়িয়া ই এস আই এর ডেপুটি সুপার। খুব সম্ভবত উৎপলদা (উৎপল চ্যাটার্জী) শিয়ালদহ হাসপাতালের সুপার ফোন করে বলল, আমরা ‘পেইন ক্লিনিক’ খুলেছি। একটা খুব ভালো ছেলে আছে সুব্রত, সুব্রত গোস্বামী একদিন দেখে যাস।
বলা বাহুল্য আমরা যারা প্রান্তিক হাসপাতালের ডাক্তার, তারা এসব কোলকাতার হাসপাতালের বাগাড়াম্বার ভাবতাম। কিন্তু মজার ব্যাপার তথাকথিত ‘পেইন ক্লিনিক ‘ তরতরিয়ে এগিয়ে চলল। কাগজে খবর হলো আর ই এস আই-এ একটা নাম ঘুরতে শুরু করলো সুব্রত গোস্বামী।
প্রথম পরিচয় হলো এক পরিচিত ডাক্তারের পারিবারিক অনুষ্ঠানে।ও দেখলাম আমাকে চেনে, বলল খুব শিগগিরই আবার দেখা হবে। তখন ও ব্যস্ত ‘পেইন ইনস্টিটিউট ‘ নিয়ে।
ঘটনাক্রমে কিছুদিন বাদেই আমি চলে আসি ডিরেক্টরেটে। প্রথমে ‘এ এম ও’ ও পরে ডেপুটি ডিরেক্টর। কাছ থেকে দেখলাম ওর যুদ্ধ। গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে প্রায় একক প্রচেষ্টায় একটা গোটা ইনস্টিটিউট বানিয়ে ফেলল। প্রতিকূলতা প্রতি নিয়ত কিন্তু কখনো হতোদ্যম দেখি নি।
দিল্লী’তে ‘ই এস আই’ কর্পোরেশন এর মিটিং। দু-দিন আগে ‘ডাইরেক্টর’ (আই এ এস) বললেন আমি যেতে পারছি না আপনি চলে যান। ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছি,সব ব্যাবস্থা করা আছে।
ফাইল দেখে অবাক। পেইন ইনস্টিটিউট-এর কথাই নেই। অথচ দিল্লীর অনুমোদন তখন বিশেষ দরকার।
সুব্রতকে ডাকলাম। একঘন্টা সময়। তোমার পেইন ইনস্টিটিউট বিষয়ে রাইট আপ আর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন চাই।
আধঘন্টা হয়নি, আমার টেবিলের উল্টোদিকে সুব্রত। সবকিছু আমার হাতে তুলে দিল।
সুব্রত কিন্তু অনেক এগিয়ে। দিল্লী তে পেইন ইনস্টিটিউট+এর কথা তুলতেই ওনারা বললেন, ইয়েস ইয়েস উই নো ডক্টর গোস্বামী ইজ ওয়ার্কিং দেয়ার। বুঝলাম সুব্রত কাগজ পত্র আগেই মেল করে দিয়েছে।
সুব্রতর একটা মনভালো করা হাসি ছিল।
কিছু দিন আগে ফোন পেলাম, –দাদা, আমি এখন ডেপুটি ডিরেক্টর । তোমার সাথে দরকার আছে।
এবার টেবিলের উল্টোদিকে আমি।চেয়ারে সুব্রত। ভুল বললাম হুইলচেয়ারে সুব্রত। মুখে সেই অমলিন হাসি। প্রাক্তনের থেকে জানতে চায়, কিভাবে কাজ করলে সুবিধে হবে।
বললাম, এতোদিনে যোগ্য লোক যোগ্য জায়গায়।
বলল, দাদা সময় বেশি নেই। আমি ঠিক করেছি, যতদিন আমার ‘সই’ ( সিগনেচার) আমি চিনতে পারব, কাজটা করে যাব।
কত সহজে হাসতে হাসতে বলল কথাটা।
বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে।
সুব্রতর দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়া অনেকটা ভালো সেন্টার ফরোয়ার্ডের প্রতিপক্ষকে ড্রিবল করে যাওয়ার মতো। না পেরে উঠে ল্যাং মেরে থামাতে হয়।
শেষ ল্যাংটা ওপরওলাই মারল। না হলে ও ছিল অপ্রতিরোধ্য।
এটা কিন্তু অবশ্যই ফাউল প্লে।
সুব্রতকে আমরা সু-ব্রত হিসেবেই মনে রাখব।