নমস্কার আমি কালাচ। সকলকে নতুন ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা। বিগত বছরে যে সকল মানুষেরা আমার সহ আমার স্বজাতি বন্ধুদের কামড়ে শেষমেশ আপনাদেরই ভুল বিশ্বাসের কারণে এই পৃথিবীর ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের প্রতিবারের প্রতি রইলো আমাদের সমবেদনা। বিশ্বাস করুন আমি স্বেচ্ছায় কাউকে কামড়াতে চাইনি। সত্যি কথা বলতে কামড়ানোর ইচ্ছেও ছিলো না। আমি শান্ত হয়ে কারও ঘরের চৌকির নিচে, বিছানায়,বালিস কিংবা তোষকের নিচে চুপটি করেই থাকতে ভালোবাসি। কি করবো বলুন, আমারও তো মাঝে মধ্যে একটু ইচ্ছে হয় মনুষ্যজাতির আরামদায়ক বিছানায় একটু ঘুমিয়ে থাকতে। আমি স্বভাবে নিশাচর হলেও রাত দুপুরে মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ার অভ্যাস কিছুতেই বদলাতে পারিনি। সারাদিন তো ইটের স্তুপ, পরিত্যক্ত বাড়ি, উইঢিবি, ইঁদুরের গর্তে থেকেই কাটিয়ে দিই। রাতে শিকার ধরার জন্যই এদিক ওদিক ছুটে বেড়াই। মাঝে মধ্যে মানুষের আরামদায়ক নরম বিছানা দেখে একটু লোভ হয়। জঙ্গলের জীব বলেই এমন ইচ্ছে জাগে কিনা জানি না। আপনাদেরও তো বড় লোভ আমাদের জঙ্গলের প্রতি। দেখছি তো সবই কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। বললে পড়ে আপনারা মানে মনুষ্য প্রভুরা রে রে করে উঠবেন। তাই চুপি চুপি রাত-বিরেতে বের হই। কারও নজড়ে পড়লে জানি এক ঘায়েই আমার জীবন শেষ। তবুও বড্ড লোভ হয় মানুষের বসত ঘরে ঢুকে পড়ার। তবে এটুকু দাবি জানাছি মনুষ্য কুলের কাছে আমাদের বাসস্থান, জঙ্গল ফিরিয়ে দিন তাহলে আমরাও কথা দিচ্ছি সর্পকুল জগত শহরের মানুষের ধারেকাছে আর আসবে না।
এই প্রকৃতি, এই জঙ্গল, আরও কত কিছুই না ভেবে ঘরের বিছানায় চুপিসারে গুটিয়ে থেকে মানুষের ঘামের গন্ধ খানিকটা অনুভব করে অতীত দিনের কতই না প্রকৃতির স্বপ্ন দেখি। আর ঠিক তখনই হঠাৎ কেমন জানি মানুষের ছোঁয়ায় আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে যায়। আর তখন ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার ছোট্ট দাঁত দুটি মানুষের শরীরের চামড়ায় ফুটে যায়। বিশ্বাস করুন কামড়ানোর ইচ্ছে থেকে নয় হঠাৎই ভয় পেয়ে আমি কামড়ে দিই। কি করবো বলুন মনুষ্যজাতির মতো আমার তো অত বুদ্ধিশুদ্ধি নেই। যদি সত্যিই আমার বা সর্প কুলদের মানুষের মত বুদ্ধিশুদ্ধি থাকতো তবে কি আর এভাবে অঘোরে প্রাণ দিতাম, না মানুষের ঘরে গিয়ে ঢুকতাম ? মানুষের নজড়ে আমি পড়ে গেলে এক বাঁশের বাড়িতে আমাদের প্রজাতির কি দফারফা হয় এবং কি যন্ত্রণা দায়ক মৃত্যু বিনা প্রতিবাদে আমাদের সকলকে মেনে নিতে তা সেই বেদনার দুঃখ একমাত্র সর্প বন্ধুরাই অনুভব করতে পারেন অবশ্য আপনারা সবাই নন।
আমাদের প্রজাতির মধ্যেও যে শত্রু নেই এমনটি নয়। আমাকে দেখলেই শাঁখামুটির জিভে জল চলে আসে।আমিও মাঝে মধ্যে আমার স্বজাতিকে ধরে খেয়ে ফেলি। এগুলো সবটাই নিজেদের খিদে মেটানোর জন্য। আর যদি এই প্রকৃতির কথা ভাবেন তবে বলবো প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যই আমাদের এই খাদ্য খাদক সম্পর্ক ৷ হে মনুষ্যজাতি আপনাদের বলছি ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নিশ্চই মনে আছে মানুষের মাংস মানুষ খেয়েছিল। খিদের আগুন বড়ই যন্ত্রণাময়। আমাদের সর্পকুলেরও একইভাবে খিদে পায়। তবে তা খুবই সামান্য ,মানুষের মতো অত নয়। আমার স্বজাতিরা আমাকে গিলে খায় এটা ঘটনা তবে তা কিন্তু বিদ্বেষ থেকে নয়। আপনারা তো ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে নিত্যদিন মারামারি কাটাকাটি করেন তার বেলা! খাদ্য খাদক সম্পর্কে আমাদের সর্পকুলদের মধ্যে তো দাঙ্গা লাগে না। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ্যাঁ মনুষ্যকূল আপনাদের বলছি, কৃষিকাজে এত কীটনাশক ব্যবহার করছেন পাশাপাশি আমাদের নিরাপদ থাকার জায়গাগুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যেভাবে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে তুলছেন তাতে করে আমাদের সর্পকুলদের খাদ্য সহ নিরাপদ বাসস্থানের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এমত পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই আমাদের লোকালয়ে চলে আসতে হচ্ছে। উদ্বাস্তুদের মতোই খুঁজে বেড়াই একটু আশ্রয়স্থল।
যাইহোক শেষ করবো আর দুই একটি কথা বলে, বছরকে বিদায় জানাতে এত বাজি পটকা কোন আনন্দের ধারা বহন করে আনে জানি না বাপু। এখনো সবার জন্য স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করে তুলতে পারেন নি যারা তাদের দিকে একটু আঙ্গুল তুলে বলুন না আর কতদিন আমাদের কামড়ে এই মনুষ্যকুল মারা যাবেন ? ক্যালেন্ডারের সাল তারিখটা শুধু বদলে গেছে বাকি কিন্তু সব কিন্তু একই আছে। বছরের শেষ দিনকে যতই ঝেঁটাপেটা করুন না কেন বছরের শেষ বলে কিন্তু কিছু নেই আবার তা ফিরে আসবে এবছরই। নতুন বছরের নতুন দিনের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে নিশ্চয়ই সকালের খবরের কাগজটিতে চোখ বুলালেন। কি পড়েছেন তো? কি দেখলেন এই অভাগা দেশে বা আমাদের রাজ্যের কোনও এক গ্রামে মশারী বিহীন বিছানায় ঘুমিয়ে থাকার কারণে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের অজানা মৃত্যু! ওটা অজানা মৃত্যু নয় আমি ভুল করে রাতের বেলা ঘরে ঢুকে কামড়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর আপনারা যা করলেন, ওঝা গুনিন,ঝাড়ফুঁক তুকতাক, দীর্ঘ সময় নষ্ট করার পর অবশেষে হাসপাতাল। তারপর সব শেষ -এটাই আমাদের চিত্র। যাইহোক ভালো থাকবেন, শীত শেষে হয়তো আবার দেখা হবে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।