Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

মানুষটি বড্ডো ফুল ভালোবাসতেন

FB_IMG_1626827431858
Dr. Bishan Basu

Dr. Bishan Basu

Cancer specialist
My Other Posts
  • July 22, 2021
  • 8:33 am
  • One Comment

গ্রেগর যোহান মেন্ডেল। আধুনিক জিনশাস্ত্রের জনক। দুশো বছরে পা দিলেন।

আধুনিক জীবনবিজ্ঞানের ধারায় তাঁর গবেষণার গুরুত্ব বা অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর সেই আশ্চর্য কাজ ফিরে দেখার চেষ্টা করলাম।

লেখাটা বড়। মস্ত লম্বা। এটুকু সাবধানবার্তা দিয়ে রাখলাম।

.
বংশগতির মূলসূত্র লুকিয়ে আছে ডিএনএ-র গভীরে, এই বিষয়টি জানা গিয়েছে হালে – মানে, একশ বছরও পেরোয় নি। তার আগেও পারিবারিক সূত্রে মানুষ বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা বহিরঙ্গের ধর্ম কীভাবে পেয়ে থাকে, সে নিয়ে চিন্তাভাবনার অভাব ছিল না। পশ্চিমদেশে পিথাগোরাস যেমন ভেবেছিলেন, বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যের পুরোটাই মানুষ পেয়ে থাকে বাবা, তথা শুক্রাণুর কাছ থেকে – মায়ের ভূমিকা সেখানে বিশেষ কিছু নেই। হ্যাঁ, ইনি জ্যামিতির উপপাদ্যের সেই পিথাগোরাসই বটেন – সেসময়ে তো অত স্পেশালাইজেশনের কড়াকড়ি ছিল না, অঙ্কের হিসেব সামলানোর ফাঁকে বংশগতি নিয়েও দুচারটে কথা কইলে কেউই সেটাকে খারাপ চোখে দেখতেন না। পরবর্তীতে অবশ্য অ্যারিস্টটল বলেন, না, বংশগতি শুধুই বাবার ব্যাপার নয় – মানুষ যদি বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যের আদ্ধেক পায় বাবার কাছ থেকে, বাকি আদ্ধেক, অবশ্যই, মায়ের অবদান। জেনেটিক্সের সার্বিক ইতিহাস বুঝতে গেলে – এমন সব ধ্যানধারণাকে সেই সাপেক্ষে প্রাগইতিহাস হিসেবে দেখা যেতে পারে – সেই প্রাগইতিহাস কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু, মেন্ডেল নিয়ে জানতে গেলে অত কথা বিশদে না বুঝলেও চলবে। আমরা সটান চলে আসতে পারি উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি – বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত ক্রিশ্চান সন্ন্যাসীদের এক মঠে। বিজ্ঞানের অনেক ধারার ক্ষেত্রেই সেই বিশেষ ধারার জনক কে, সে নিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে – এককথায় কোনো একজনকে জনক বলে দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব কিনা, সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু, আধুনিক জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে তেমন বিতর্ক কিছু নেই – জীববিদ্যায় প্রথাগত কোনো ডিগ্রি ছাড়াই একজন লাজুক সন্ন্যাসী একার হাতে আধুনিক জেনেটিক্সের উদ্ভাবক – এবং, শুধু জনকই নন, আশ্রমের নিভৃতে বসে, কোনো বড়সড় উপকরণ বা উপাদান ছাড়াই, স্রেফ পর্যবেক্ষণ শক্তির প্রয়োগে, একার হাতে জেনেটিক্সের মূল সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন – বংশগতি বিষয়ে যে সাধারণ সূত্রসমূহ আজও সমান মান্য।

১৮৫০ সাল নাগাদ সেই অস্ট্রিয়ান সন্ন্যাসী বাগান করতে করতে, কীভাবে শারীরিক বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সংবাহিত হয়, সে নিয়ে গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করেন। তাঁর নাম, গ্রেগর জোহান মেন্ডেল। তিনি ক্রিশ্চান মঠে সন্ন্যাসী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আসল ভালোবাসার জায়গাটা ছিল বাগান। স্থানীয় ইশকুলে পড়িয়ে সন্ন্যাসজীবনের খরচা চালানোর চেষ্টাও করেছিলেন একাধিকবার – সেদিকে বিশেষ সুবিধে হয়নি। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতামান পার হওয়ার পরীক্ষায় ফেল করেন তিনি – এবং আশ্চর্য, দুবার অকৃতকার্য হন বায়োলজিতে। তাঁর মটরগাছ নিয়ে পরীক্ষার কথা অল্পবয়সে জীবনবিজ্ঞান বইয়ে সবাই নিশ্চয়ই পড়েছেন, কাজেই সে বিষয়ে বিশদে আলোচনা করছি না। মোদ্দা কথা এই, মেন্ডেল খুব গভীরে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, কিছু মটরগাছ লম্বা এবং কিছু বেঁটে, কয়েকটির বীজ সবুজ তো কয়েকটির হরিদ্রাভ। মটরগাছের চারিত্রিক কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে তিনি গোড়াতেই বেছে নেন –

১. বীজ সুন্দর গোল, নাকি কুঞ্চিত
২. বীজ হলুদ, নাকি সবুজ
৩. ফুল সাদা, নাকি বেগুনি
৪. ফুল গাছের ডগায়, নাকি কোনো শাখায় অবস্থিত
৫. মটরের খোলাটির রঙ সবুজ, নাকি হরিদ্রাভ
৬. খোলাটি মসৃণ, নাকি কোঁচকানো
৭. গাছটি লম্বা, নাকি বেঁটে

এই পর্যবেক্ষণযোগ্য বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে গাছগুলোকে কয়েকটি বিভাগে সাজান। পরবর্তী মূল গবেষণার প্রস্তুতি হিসেবে, একই বৈশিষ্ট্যের গাছগুলির মধ্যে বারংবার প্রজনন ঘটিয়ে তিনি শুদ্ধ বৈশিষ্ট্যযুক্ত গাছ তৈরী করেন। এরপর একটি শুদ্ধ বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটরগাছের সাথে অন্য বা বিপরীত শুদ্ধ বৈশিষ্ট্যের গাছের প্রজনন ঘটান – যাকে বলা হয় ক্রসিং (crossing)। এই ক্রসিং-এর ফলে উৎপন্ন মটরগাছের বৈশিষ্ট্য মেন্ডেল খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতে গিয়ে দেখেন, পরবর্তী প্রজন্মের গাছগুলি পূর্ববর্তী দুই বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের নয়, আগের প্রজন্মের দুটি বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যের যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। অর্থাৎ, একটি লম্বা ও একটি বেঁটে মটরগাছের সঙ্করজাত মটরগাছটি উচ্চতায় পূর্ব প্রজন্মের লম্বা মটরগাছের মতোই লম্বা – লম্বা ও বেঁটে মটরগাছের মাঝামাঝি উচ্চতার নয়। আপাতত কথাটা খুবই সাধারণ শোনালেও, তৎকালীন বিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে এই ফলাফল খুবই অপ্রত্যাশিত – কেননা, বংশগতির যে বীজ এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তীতে প্রবাহিত হয়, সেই সময়ের বিজ্ঞানভাবনা অনুসারে, তাকে ভাবা হত এমন কোনো উপাদান, যা কিনা সহজেই মিশে লঘু হয়ে যেতে পারে – অর্থাৎ তদানীন্তন বিজ্ঞানভাবনা অনুসারে, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উভয়পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ধর্ম মিলেমিশে একটা মাঝামাঝি গোছের ধর্ম অপত্যের মধ্যে পাওয়া যাওয়া উচিত। মেন্ডেল দেখলেন, ব্যাপারটা তেমন নয় – যেকোনো একটি ধর্মই সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মে। যে ধর্মটি প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হল ডমিন্যান্ট – যে ধর্ম ধামাচাপা পড়ে রইল, তাকে বলা হল রিসেসিভ।

শুধু এইটুকু আবিষ্কার করে থেমে থাকলেও মেন্ডেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতেন – কিন্তু, এরপরের ধাপে তিনি যে কাজ করলেন, তার অভিঘাত আশ্চর্য সুদূরপ্রসারী। তিনি পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্কর মটরগাছগুলির মধ্যে আবার প্রজনন ঘটালেন, যেগুলো কিনা দৈর্ঘ্যে লম্বা (শুদ্ধ লম্বা নয়, সঙ্কর লম্বা)। দেখা গেল, তৎপরবর্তী প্রজন্মে পুরোনো বৈশিষ্ট্য কিয়দংশে ফিরে এসেছে। মেন্ডেল সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, বংশগতির মূল উপাদানের কিছু অংশ আসে অপত্যের পিতার দিক থেকে, এবং বাকি অর্ধেক আসে মায়ের দিক থেকে। কিছু ধর্ম ডমিন্যান্ট এবং কিছু রিসেসিভ। যেকোনো তরফ থেকে ডমিন্যান্ট উপাদান পেলেই ডমিন্যান্ট বৈশিষ্ট্য বহিরঙ্গে প্রকাশ পাবে – কিন্তু, বহিরঙ্গে রিসেসিভ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়ার জন্য দুই পক্ষ থেকেই তদনুরূপ উপাদান পাওয়া জরুরী। রিসেসিভ ধর্ম প্রকাশিত না হলেও হাপিস হয়ে যায় না, পরের প্রজন্মে সংবাহিত হয় সেই জিন – আরেকটি রিসেসিভ জিন পেলেই আবার বহিরঙ্গে প্রকাশ পেতে পারে।

কোনো একটি সাধারণ ধর্মের ভিত্তিতে একটি প্রজাতির মধ্যে ভাগ করতে চাইলে, তাকে বলা হয় অ্যালিল। যেমন ধরুন, গাছের দৈর্ঘ্য এই সাধারণ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাইলে, দুধরণের অ্যালিল – লম্বা ও বেঁটে। প্রতিটি মটরগাছে দুটি অ্যালিল থাকে – একটি আসে বাবার দিক থেকে, আরেকটি মায়ের দিক থেকে। দুদিক থেকেই বেঁটে অ্যালিল পেলে তবেই মটরগাছটি বেঁটে হবে, কেননা বেঁটে অ্যালিল রিসেসিভ – যেকোনো এক তরফ থেকে লম্বা অ্যালিল পেলেই মটরগাছ দৈর্ঘ্যে লম্বা হবে, কেননা লম্বা অ্যালিল ডমিন্যান্ট। মেন্ডেল অ্যালিল শব্দটি ব্যবহার করেননি – কিন্তু, এখানে সাধারণভাবে প্রচলিত শব্দটিই ব্যবহার করলাম, সমকালীন পরিভাষা ব্যবহার করলে অনেকক্ষেত্রে বিষয়টি ধরতে সুবিধে হয়।

অনেক বছর ধরে, পরের পর প্রজন্মের মটরগাছ ও তাদের বৈশিষ্ট্যাবলী পর্যবেক্ষণ করে শেষমেশ মেন্ডেল উপনীত হলেন বংশগতি বিষয়ে কিছু সাধারণ সূত্রে, যাকে সচরাচর ল’জ অফ হেরিডিটি বা বংশগতির সূত্র বলা হয়ে থাকে। সূত্রগুলো কী, কেন, কীভাবে হয়, এসব নিয়ে আলোচনা এখুনি বাড়ালাম না।

মোদ্দা কথা, আমাদের শরীরে ঠিক কী কী অ্যালিল রয়েছে, তা সবক্ষেত্রে আমাদের বহিরঙ্গে প্রকাশিত হয় না। যেমন, সঙ্কর মটরগাছে যদি একটি বেঁটে অ্যালিল থাকে, তাহলেও তা বহিরঙ্গে শুদ্ধ লম্বা মটরগাছের মতোই লম্বা হবে – কিন্তু, দুটি সঙ্কর লম্বা মটরগাছের প্রজননে একটি বেঁটে মটরগাছ জন্মাতে পারে (দুই তরফ থেকেই একটি একটি করে বেঁটে অ্যালিল পেলে)। আমাদের শরীরের অ্যালিলের বিন্যাস, তথা জেনেটিক গঠন, তাকে বলা হয় জিনোটাইপ – আর বহিরঙ্গে প্রকাশিত বৈশিষ্ট্যাবলী, তাকে বলা হয়ে থাকে ফেনোটাইপ। আমাদের শরীরে ক্রোমোজোম থাকে জোড়ায় জোড়ায় – ক্রোমোজোম তৈরী হয় লম্বা ডিএনএ-র ফিতে দিয়ে – সেই ডিএনএ-র মধ্যে জিনের অবস্থান, যাকে বলে লোকাস, সেই লোকাসের উপর নির্ভর করে জিনের প্রকাশের প্রকারভেদ – নির্দিষ্ট লোকাস অনুসারে নির্ধারিত হয় অ্যালিল। যেহেতু ক্রোমোজোম থাকে জোড়ায় – অ্যালিলও থাকে তেমনই, জোড়ায় – ডিএনএ তন্তুতে অ্যালিলের অবস্থান হুবহু একই হলে, তাকে বলা হয় হোমোজাইগাস – না হলে, হেটেরোজাইগাস। কিন্তু, ব্যাপারটা উত্তরোত্তর জটিল হয়ে যাচ্ছে – আবারও বলি, এখুনি এত কথা না জানলেও চলবে।

মেন্ডেল জিনের ব্যাপারে জানতেন না – জেনোটাইপ বিষয়েও তাঁর জানার সুযোগ ছিল না। কিন্তু, স্রেফ দেখে এবং পরীক্ষা করেই তিনি যে কয়েকটি সূত্র দিয়েছিলেন, সেগুলো আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ডমিন্যান্স-এর তত্ত্ব – যেখানে বলা হয়, একটি জিন যদি ডমিন্যান্ট হয়, তাহলে তার বিপরীত জিনের উপস্থিতিতেও সেই জিনটি বহিরঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে (সূত্রটি মেন্ডেল এই ভাষায় বলেননি – এখানে একটু যুগোপযোগী এবং সরলীকৃত ভাষায় কথাটা বলা হলো)। যেমন, স্বাধীনভাবে আত্মপ্রকাশের সূত্র – অর্থাৎ একটি জিনগত বৈশিষ্ট্যের প্রকাশের উপর অপর জিনের প্রকাশ নির্ভরশীল নয় – যেমন, মটরগাছ লম্বা হওয়ার জিন এবং মটরশুঁটির রঙ হলুদ হওয়ার জিন পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হতে পারে। একদিক থেকে মেন্ডেল ছিলেন সৌভাগ্যবান, কেননা সবসময় অঙ্ক এত সরল থাকে না – সত্যি বলতে কি, অধিকাংশ সময়েই সরল থাকে না। ভাগ্যিশ তিনি মটরগাছ বেছেছিলেন গবেষণার জন্য!! অন্য গাছ বাছলে!! যেমন ধরুন, ক্যাপসিকামের রঙ কেমন হবে, তা একাধিক জিনের উপর নির্ভরশীল – একাধিক জিনের প্রকাশের উপরেই নির্ভর করে রঙ হয় সবুজ, লাল, হলুদ অথবা তাদের মিশ্রণ। মটরগাছের মতো সরল পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পথ ধরে ক্যাপসিকামের বংশগতির হিসেব বোঝা মুশকিল। অনেকক্ষেত্রে একটি জিনের উপস্থিতি সমপর্যায়ের বিবিধ জিনকে দমিয়ে দিতে পারে (যার নাম এপিস্ট্যাসিস)। ঘোড়ার রঙ বিভিন্ন হতে পারে বিভিন্ন জিনের ক্রিয়ায় – গায়ের রঙ থেকে কেশরের রঙ, বিভিন্ন কম্বিনেশন সম্ভব। কিন্তু, একটি বিশেষ সাদা জিনের প্রভাব বাকি সব জিনের প্রকাশ দমিয়ে দিতে পারে – সে ঘোড়া একেবারে শ্বেতশুভ্র। অনেকসময় একাধিক জিন গায়ে গায়ে থাকে – পরবর্তী প্রজন্মে সংবাহিত হওয়ার সময় হয় একত্রে সংবাহিত হয়, নচেৎ একেবারেই নয়। সেক্ষেত্রে, প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জিন স্বাধীনভাবে সংবাহিত ও প্রকাশিত হবে, এমন নয়। এরকম আরো রকমভেদ সম্ভব – বিশদে যাচ্ছি না। কিন্তু, মূল কথাটা হলো, মটরগাছের পরিবর্তে অন্য গাছ বাছলে মেন্ডেলের পক্ষে অত সহজে বংশগতির মূল সূত্রগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো না।

আবার একটিই জিন একাধিক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণ হতে পারে। অর্থাৎ একটি জিন একাধিক ফেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্যের জন্ম দিতে পারে। (এক্ষেত্রে জিনটিকে বলা হয় প্লিওট্রপিক।) বংশানুক্রমে প্রাপ্ত বিবিধ জটিল অসুখের ক্ষেত্রেই দায়ী জিনটি এরকম প্লিওট্রপিক হয়ে থাকে – যেকারণে, সাধারণত, অসুখটি কেবলমাত্র একটি অসুবিধে বা একটি অঙ্গের সমস্যায় সীমাবদ্ধ থাকে না। মানুষের অনেক বংশগত অসুখের মূলেই জিনের গোলমাল – অনেকক্ষেত্রেই মাত্র একটি জিনেরই গোলমাল – কিন্তু, যেহেতু আমাদের শরীরের প্রায় সব কোষেই সব জিন থাকে, সেই একটিই গণ্ডগোলের জিন অনেকক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উপসর্গের জন্ম দিতে পারে। হ্যাঁ, এই ব্যাপারটাও খুবই ইন্টারেস্টিং – শরীরের সব কোষেই সব জিনের উপস্থিতি। অর্থাৎ, ভেবে দেখুন একবার, খাবার হজম করার উৎসেচক তৈরীর জিন পেটের সাথে সাথে থাকে মস্তিষ্ক কিম্বা হাতে-পায়ের কোষেও!! কিন্তু, খাবার হজমের সেই উৎসেচক ওই পাকস্থলী বা অন্ত্রেই তৈরী হবে, অন্যত্র নয়, এমনকি জিন বা অন্য কাঁচামাল উপস্থিত থাকলেও নয় – ঠিক কেন একই জিন সর্বত্র উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র কাজ করে না – বা অনেকসময় একেক জায়গায় একেকরকম কাজ করে – সে বিষয়ে আমাদের ধ্যানধারণা এখনও খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। জিনের উপরেও যে মানবজীবনের রহস্য, সেই বিজ্ঞান, অর্থাৎ এপিজেনেটিক্স (শব্দার্থ অনুসারে, জিনের উপরে, বা জিনের অধিক), আরো না এগোনো অব্দি জিন-এর টেকনোলজি ও তার কার্যকারিতা, অনেকদূর অব্দি এগোলেও, বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে। সব মিলিয়ে দেখলে, মটরগাছ এবং পরীক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য, দুটি বাছার ক্ষেত্রেই মেন্ডেলের ভাগ্য সদয় ছিল।

কিন্তু, কথায় কথায় অনেকদূর এগিয়ে এসেছি। আমরা বরং ফিরে যাই ১৮৬৫ সালের শীতের দুপুরে – ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের আট তারিখে, দুই ভাগে, মেন্ডেল পড়ে শোনালেন তাঁর গবেষণার কথা – ব্রুনো ন্যাচারাল সায়েন্স সোসাইটির সভায়। শ্রোতা জনাচল্লিশেক – কয়েকজন বটানিস্ট, বা জীববিদ্যায় উৎসুক, বাকি অনেকেই স্থানীয় কৃষক। মেন্ডেলের গবেষণা, জটিল করে সাজানো তথ্যের সমষ্টি বিরক্তির বেশী কিছু আগ্রহ সৃষ্টি করল না। সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হলো তাঁর গবেষণার কথা, কিন্তু সেও আর পড়ে দেখলেন কজন!! মেন্ডেল বিভিন্ন বিজ্ঞানীকে নিজের হাতে পাঠালেন তাঁর গবেষণাপত্রটি – যদি তাঁরা একটু পড়ে দেখেন – কিন্তু, প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত এক সন্ন্যাসীর জীববিদ্যা বিষয়ক গবেষণা, যে গবেষণার ফলাফল সমকালীন বিজ্ঞানের তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ, তাকে সিরিয়াসলি নেবেন কোন বিজ্ঞানী!! গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের আবিষ্কার অনাবিষ্কৃত রয়ে গেল সেই সময়ের বিজ্ঞানমহলে।

মটরগাছ নিয়ে গবেষণা করতে থাকলেও, মেন্ডেল বুঝেছিলেন তাঁর গবেষণার তাৎপর্য কেবল মটরগাছে সীমাবদ্ধ থাকবে না। লিখেছিলেন, জীবজগতের বিবর্তনের ধারাকে বুঝতে চাইলে বংশগতির ধরণটি বোঝা জরুরী এবং তাঁর গবেষণা সেই উদেশেই। সেই সময়ের নামজাদা উদ্ভিদবিজ্ঞানী কার্ল ভন নাগেলি-কে নিজের গবেষণাপত্র পাঠিয়ে পড়ে দেখতে অনুনয় করে বলেছিলেন, আমি জানি, আমার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার ফলাফল এখনকার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে সহজে মেলানো যাবে না। তবুও, পড়ে মতামত জানান। নাহ, নাগেলি খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আস্তে আস্তে মঠে কাজকর্মের দায়িত্ব বাড়তে থাকলে মেন্ডেলও গবেষণা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। যুগান্তকারী গবেষণা প্রকাশের প্রায় দুই দশক পরে মারা যান তিনি। ১৮৮৫ সালে। এতখানিই অনাবিষ্কৃত ছিলেন তিনি ও তাঁর গবেষণা, যে, মৃত্যু-পরবর্তী শোকসংবাদে গবেষক মেন্ডেলের সামান্য উল্লেখটুকুও ছিল না। কোনো বিজ্ঞানপত্রিকা বা বিজ্ঞানীদের কোনো সংগঠন তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেননি। মঠ থেকে প্রকাশিত শোকবার্তায় শুধু বলা ছিল, নরম মনের মানুষটি বড্ডো ফুল ভালোবাসতেন।

PrevPreviousপ্রত্যেকের জন্য স্বাস্থ্যের তথা মুখের স্বাস্থ্যের অধিকার চাই
Nextহারাধনের পাঁচটি মেয়েNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Partha Das
Partha Das
2 years ago

দারুন লেখা।

0
Reply

সম্পর্কিত পোস্ট

রিটায়ার্ড

September 21, 2023 No Comments

সব কোলাহল থেমে গেল। যাকে বলে পিন পতন স্তব্ধতা! নিউটাউনের ফ্ল্যাটে এসে দেখি ওরা নেই। সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করতে বলল, – “দাদা, ইলাহি কারবার। কমিউনিটি হলে আছে

খুপরির গল্প ১৪: অভিনয়

September 21, 2023 No Comments

রোজ কত কিছু ঘটে যায়, লেখা হয় না। আসলে লেখার ইচ্ছেও হয় না। খুপরি জীবন ভয়ানক একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। বিচিত্র কত অসুখ, মানুষের কত অসহায়তা,

এমবিবিএস পরীক্ষায় পাস করার জন্য ঘুষ

September 21, 2023 No Comments

অনেকে অনেক কথা বলেন বটে, কিন্তু কথার দাম বা মূল্যবোধ যদি এই বাজারেও কোনও একটা ফিল্ডে, সাধারণভাবে, অটুট থেকে থাকে, তাহলে সেটা যাকে বলে দু-নম্বরির

রূপ

September 20, 2023 No Comments

এক সময় এই গানটা মাইকে হেব্বি বাজতো, ‘চেহেরা কেয়া দেখতে হো, দিল মে উতর কর দেখো না।’ কুমার শানু, আশা ভোঁসলে। কিন্তু ভালো কথা কানে

The Crazy Pavement: A Cocktail Journey to Poet-Hood

September 20, 2023 No Comments

A Non-sense Novelette Chapter 11 A Dizzy Conquest With Paharida’s patronage Srirup’s ascendancy in the literary world was now fairly rapid. Would-be poets in book

সাম্প্রতিক পোস্ট

রিটায়ার্ড

Dr. Arunachal Datta Choudhury September 21, 2023

খুপরির গল্প ১৪: অভিনয়

Dr. Aindril Bhowmik September 21, 2023

এমবিবিএস পরীক্ষায় পাস করার জন্য ঘুষ

Dr. Bishan Basu September 21, 2023

রূপ

Dr. Indranil Saha September 20, 2023

The Crazy Pavement: A Cocktail Journey to Poet-Hood

Dr. Asish Kumar Kundu September 20, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

451212
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]