এই দুবৃত্ত শহরায়নের বর্গী হানা সহ্য করে,
আনাচেকানাচে কিছু গাছ ঠিক টিঁকে আছে।
রাস্তা চওড়া করার অজুহাতে
তিরিশ পঁয়তিরিশ বছর সে মাটিতে শিকড় ছড়িয়ে দেওয়া মহীরুহদের গণহত্যা এখন রোজকার ব্যাপার,
রক্তপাতহীন সেই নিঃশব্দ এথনিক ক্লিনসিংয়ের জন্য আজ অবধি কারো বিচার হয়নি।
সেই সব রাস্তায় প্রায়শই হাঁটা বারণ,
তবু কোনো দৈব-দুর্ঘটনায় পুলিশের অগোচরে
যদি সেইখানে গিয়ে ক্ষণিক দাঁড়াও,
দেখতে পাবে, অ্যাসফাল্টের রূঢ় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এপাশে ওপাশে উঁকি মারছে গাছের চারা,
যেন গেরিলা হানার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আগামী পৃথিবীর বাহিনী।
বৃক্ষময় কোনো নিরালা দেখলেই প্রোমোটারদের লোভ সুড়সুড় করে ওঠে,
দু চারটে গ্রীনারি রেখে বাকি সবুজ বাদ দিয়ে চমৎকার রিসর্ট হবে সেখানে।
একবার দখল পেলে মানুষ আর অরণ্যকে কর্জ দেয় না,
ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে মূল বাসিন্দাদের,
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সেইসব প্রাসাদের হলঘরে
এল ই ডি স্ক্রীনময় প্রেজেন্টেশনরা জ্বলজ্বল করে,
যাদের সবার বক্তব্য প্রায় একই, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ রক্ষা।
সেখানে সন্ধেবেলা টালিস্কারের ধোঁয়াটে স্বাদে
বিভোর গণ্যমান্যরা দারুণ খেদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের আশু নিরাময় সন্ধানে।
সেই প্রবল মনুষ্য-ভিড়ে কিছু অমানুষ বট অশ্বত্থ শিশু শাল কৃষ্ণচূড়ার বাচ্চা এদিক ওদিক থেকে উঁকি মারে,
যাদের পাতায় পাতায় সেই দুরারোগ্য ব্যধির একমাত্র সমাধান লেখা।
মানুষের চোখ এড়িয়ে ওরা সূর্যের সাথে শলা করে,
চাঁদ আর তারাদের গোপনে সংকেত পাঠায়।
এই যান্ত্রিক সভ্যতাময় ছড়ানো ছেটানো
মীরজাফরের সংখ্যাও কিছু কম নয়।
ইঁট আর কংক্রিটের চৌখুপি আবাসেও তারা
পুবের রোদ্দুর খুঁজে টবে পোঁতে চারা,
নিঃসাড়ে বড় হয় জবা জুঁই বেলি ও চাঁপারা,
পাতাতে সবুজ মেখে গ্রিল বেয়ে ঝুলে নামে মানিপ্ল্যান্ট লতা,
বেড়ে ওঠে নয়নতারা আর ছোটো টগরেরা,
কংসের কারাগারে কানাইয়ের মতো।
এই বিভীষণকুল পাঁচিলের ধার ঘেঁষে
লাগায় কাঞ্চনগাছ পলাশ বকুল,
শহুরে কাজের ভিড়ে যাদের জায়গা নেই, থাকে না কখনো।
এই দুর্বৃত্ত ধর্মায়নের প্রতি ঘরে হানা দেওয়া যুগে,
এ কোণে ও কোণে মানুষ রয়েছে টিকে অনেক এখনো।
প্রবল লড়াই ঠিক হবে আগামীতে। দামামা বাজছে দূরে।
কান পাতো, শোনো..