২৩ শে অক্টোবর ২০২২
আজ ভূত-চতুর্দশী। চারিদিকে বেশ একটা রমরমে, ছমছমে ভাব। যদিও প্রচুর আলো চারিদিকে, তবু একটা কিরম যেন শিরশিরে ভাব।
তা, আমার কথা বলি। আমি বহুদিন থেকে এইসব ভূতের ভয় থেকে যারপরনাই মুক্ত, কারণ আমি মনে করি, যারা “ভূত” তারা আমাদের কখনো অতিরিক্ত কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
তবে, বড্ড ভয় পাই মানুষ-ভূতদের। ভাবছেন তো তারা আবার কারা, কোত্থেকে আসে? আরে, আসার কি দরকার… এরা তো আমাদের মধ্যেই ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে।
যেমন, ধরুন, আপনার একটা সাইকেল চুরি গেল, একেবারে প্রায় চোখের সামনে থেকে। আপনি হয়তো অনেক খোঁজাখুঁজি করে সাইকেলটা পেলেন, কিন্তু চোরকে? পেলেন না তো! এরাই সব ছিচকে ধরনের মানুষ-ভূত।
ছিচকে না হয়ে বড়, হোমড়াচোমড়া মানুষ-ভূতও হয়। তারা আবার ছিচকেদের কাজে লাগায়।
কেমন করে জানেন? এই ধরুন, চিকিৎসকদের কাউন্সিল নির্বাচন হল। তাতেই এরা সব লেগে পড়েছিল হোমড়াদের নির্দেশে। কিভাবে?
অনেক বড় গল্প, মানে “গুল্প” হিসেবে ধরলেও ক্ষতি নেই। আমি ছোট করে বলি।
প্রথমেই, তাই চলে আসি গণনার কথায়। দেখা গেল, প্রথম দফার নির্বাচকেরা সবাই একরঙের মানে একই ধরনের গোলাপী রঙের খাম-শুদ্ধ ব্যালট পেল। সেগুলো সব খোলা হল যখন, গুনতে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু মিহি গোলাপী, কোনটা সাধারণ গোলাপী, কোনটা আবার কটকটে গোলাপী।
RO (RETAURNING OFFICER) সাহেবের কাছে যাওয়া হলে তিনি বললেন, ওগুলো সব প্রেসের কান্ড। মানে প্রেসের মানুষ-ভূতের কান্ড। অবশ্য তারসঙ্গে আরো মানুষ-ভূতদের যোগসাজশ আছে, নইলে সকলের একধরনের “গোলাপী” তিনধরণের হলো কি ভাবে?
এইবারে দ্বিতীয় অংশ, এক জগঝম্প ব্যালট বের হলো অন্য অংশে। সেখানে হলুদ রঙের খাম-টাম সব ঠিক আছে। যদিও সবাই ঠিকঠাক ব্যালটই পেয়েছিল, কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কিন্তু, সেই প্রেসের অতি বজ্জাত মানুষ-ভূতেদের ঠ্যালায় ১১ নম্বরের জলজ্যান্ত প্রার্থীর নাম হাপিশ হয়ে গিয়ে সেখানে ১ নম্বরের প্রার্থীর নাম দ্বিতীয়বারের জন্য হাজির।
যদিও প্রেসের ও অন্যান্য হোমড়া মানুষ-ভূতেদের সঙ্গে RO সাহেবের বেজায় খাতির, তিনি কিঞ্চিৎ ভয় পেয়েই এইসব ব্যালট বাতিল করলেন, এগুলো এখানে কোন মানুষ-ভূত রেখে গেল, তাদের সম্ভাব্য জানলেন ও চিনলেন, কিছু কিন্তু বললেন না।
যা হোক, গণনা চলছে। মুশকিল হল হোমড়ারা পিছিয়ে পরতে থাকলেন। আর সেই হোমড়া-ভূতেদের বেজায় অনুগত প্রায় ছেচড়া RO নামক মানুষ-ভূতটি খুব ঝামেলায় পরলেন।
তিনি তখন লম্বা-লম্বা অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন। কথা হয়েছিল, সকাল সাতটা থেকে বেলা দশটা অবধি অবসর হবে, তিনি রাতারাতি ওইসব ছ্যাচড়া মানুষ-ভূতদের (মূলত: হোমড়া মানুষ-ভূতদের) নির্বিচার সাহায্যার্থে নোটিশ দিয়ে ওটা বাড়িয়ে দিলেন বেলা দুটো অবধি। অনেক হ্যাচোর-প্যাচোরের পর শেষ অবধি বেলা চারটেতে গণনা শুরু হল।
এবারে বেশ মজার দৃশ্য দেখা গেল। ওই যারা সরকারে নেই, তাদের ব্যালটে ছেচড়া মানুষ-ভূতেরা দিব্যি কাটাকুটি খেলেছে, নানা রঙের কালি, নানা ছাদের লেখা, সব দিয়ে সাতের উপরে আট, কারো আটের উপরে নয়, কারো নয়ের উপরে দশ, এমনকি এগারো, বারোটাও কাটা দিয়ে রেখেছে। ব্যালট স্বাভাবিক নিয়মেই বাতিল হল।
এইবারে হোমড়া, ছ্যাচড়া, এবং মধ্যবর্তী ওই RO সব মিলেটিলে বিশ্রামের সময় করে দিল সন্ধ্যা সাতটা থেকে বেলা বারোটা অবধি।
আর একুশ তারিখের গণনায় আরো কাটা-যুক্ত ব্যালট, তবে একটি বা দুটি কাটা, যা ব্যালট বাতিলের পক্ষে যথেষ্ট। আর একরাশি “রঙিন জেরক্স ব্যালটের” তাড়া, যেগুলো অবশ্যই সরকারপন্থীদের একচেটিয়া। এক এক টেবিলে ২৫ শে ২৫। মানুষ-ভূতদের স্কোরিং রেট খুবই ভালো!!
প্রথম ব্রেকের আগে সরকার সমর্থক নয় (মানে সব কিছুতেই সমর্থক নয়) এমন অংশটি এগিয়ে ছিল, এমনকি প্রথম ব্রেকের পরের গণনাতেও তারাই, কিন্তু কালকের গণনায় তারা ব্যাপক ধাক্কায় পিছিয়ে পরতে শুরু করে।
আজও গণনা হয়েছে, সেখান থেকে একে একে বিরোধীরা চিঠি দিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। RO সাহেবের নামে FIR ও করেছেন কেউকেউ…. আর ছেচড়া মানুষ-ভূতেরা আবির মেখে, পুরো মানুষ-ভূত সেজে, হোমড়া-চোমড়া মানুষ-ভূতদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুলেছেন!!
এইভাবেই কিনা সত্যিকারের “ভূত চতুর্দশী উৎসব” পালিত হচ্ছে।🥸
যাহোক, হচ্ছে যখন ভূতের কথা, এই মানুষ-ভূতদের থেকে সাবধানে থাকবেন, কখন কোথা দিয়ে যে কি হয়ে যায়,বুঝতেও পারবেন না। শিক্ষাক্ষেত্রের অবস্থা দেখছেন না!?
[[ এটি একটি নিতান্তই “ভূতগ্রস্থ” গুল্প”, সমস্ত বিষয়াবলীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই!]]
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ:
ভূতে ভয় পাবেন না কখনোই, কিন্তু, মানুষ-ভূতেদের থেকে অবশ্যই অতি সাবধানে থাকুন।
________________________
প্রসঙ্গত: এবারের নির্বাচনে শেষ পর্যায়ে (ক্লজ H) ভোট পড়েছিল প্রায় ২৬ হাজারের মতো। কাটাকুটি, বাতিল ইত্যাদি খেলায় (আরো হাজার পাঁচেক বাতিল হওয়ার কথা ছিল), যেগুলো “জালি” ব্যালট ছিল বলে অনুমান! যাই হোক প্রার্থীরা (সবাই মিলে), মোট ভোট পেয়েছে, ১২ হাজারের মতো, মানে ১৪ হাজারের মতো ভোট বাতিল হয়েছে!! বিশ্বরেকর্ড কিনা জানা নেই।