গতকাল রমরমিয়ে ঘোষণা হয়ে গেল ২০২০ সালের জাতীয় বাজেট। এ বছরের স্বাস্থ্য বাজেটের দিকে চোখ রাখা যাক-
এ বছর স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ হয়েছে ৬৯ হাজার কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় (৬২,৬৫৯ কোটি) খানিকটা বেশি। যদিও তা নিয়ে এখনই বিশেষ উৎফুল্ল হওয়ার কারণ দেখছি না। একটু আলোচনা করা যাক..
১.
এই মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্য-খরচের সিংহভাগই খরচ হয় ব্যক্তিগত পকেট থেকে। একটি সূত্রের মতে বছরে দেশের মোট স্বাস্থ্য খরচ ৫,২৮,৪৮৪ কোটি। সেখানে সরকারি খরচ মাত্র ৬৯০০০ কোটি।
২.
শুধুমাত্র ওষুধ কিনতে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান প্রতি বছর। যেখানে যে কোনও সভ্য দেশে জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের নেওয়ার কথা, সেখানে আমাদের দেশের সরকার নামমাত্র খরচ করে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেছে বলাই বাহুল্য।
৩.
স্বাস্থ্যখাতে মোট ৬৯০০০ কোটির মধ্যে ৬৪০০ কোটি খরচ হবে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের জন্য। স্বাস্থ্যবীমা দিয়ে যে জনগণের স্বাস্থ্যের প্রকৃত উন্নতি করা যায় না এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। অবশ্য, রাজনৈতিক নেতার হাসিমুখ আর স্বাস্থ্যবীমার ঢক্কানিনাদ যে ভোট বৈতরণী পার করার সুচারু কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হবে সেটা না বললেও চলে।
৪.
টায়ার টু, টায়ার থ্রি শহরের কুড়ি হাজার হাসপাতাল আয়ুস্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আসবে। অথচ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকেন। আর এই ৭০ শতাংশ মানুষের চিকিৎসার জন্য ২৮ শতাংশ ডাক্তার কাজ করেন। তাহলে এই প্রকল্পে দেশের বৃহত্তর জনগণ কতখানি লাভবান হবেন? প্রাথমিক চিকিৎসার উন্নতিই যে কোনও দেশের স্বাস্থ্যোন্নতির মূল কথা এটাতেও বোধহয় নতুন করে কিছু বলার নেই।
৫.
পিপিপি মডেলে রাতারাতি জেলা হাসপাতাল গুলোকে মেডিক্যাল কলেজে বদলে দিয়ে ডাক্তার ‘চাষ’ আরম্ভ হলে ডাক্তারের ‘মান’ কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশে বিপুল সংখ্যক ডাক্তারের ঘাটতি আছে বলাই বাহুল্য। তার জন্য সঠিক পরিকাঠামোয়, উপযুক্ত পরিবেশে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর দরকার। নইলে শুধুই সংখ্যা বাড়িয়ে আসলে জনগণের স্বাস্থ্য নিয়েই ছিনিমিনি খেলা হবে না তো? বর্তমান মেডিক্যাল কলেজগুলোতেই শিক্ষকের অভাব প্রকট। নতুন এইসব শিক্ষাকেন্দ্রে তাহলে কারা পড়াবেন? উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই ডাক্তার ‘উৎপাদন’ কিন্তু বেশ বিপজ্জনক।
৬.
ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ব্যবসা হয়। যার ৮০-৯০ শতাংশই আসে বাইরে থেকে। দেশে যন্ত্র বানানো হবে এই যুক্তিতে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির ওপর পাঁচ শতাংশ স্বাস্থ্য-উপকর বসলে স্বাস্থ্য-খরচ এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়বে। আর দেশে বানানো স্বাস্থ্য-যন্ত্রপাতির মান নিয়ে অগুনতি অভিযোগ হাসপাতালের আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যায়।
৭.
আমাদের রাজ্য যেহেতু আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় নেই তাই এই বাজেটে এ রাজ্যের প্রাপ্তির ভাঁড়ার কতখানি পূর্ণ হবে সে প্রশ্নও উঠছে।
৮.
একমাত্র আশার কথা জেলায় জেলায় জেনেরিক ওষুধ কেন্দ্র গড়ে তোলা। যদিও তার সংখ্যা পর্যাপ্ত না হওয়া অব্দি এবং তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া অব্দি এ ব্যাপারে এখনই উৎসাহিত হওয়া মুশকিল। ‘নায্য মূল্যের ওষুধের দোকান’ও বেশ প্রচারের আলোয় এসেছিল। তারপর, সে সম্পর্কে সচেতন জনগণের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়।
অর্থাৎ, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’র ধারণা সেই তিমিরেই থেকে গেলো। এর সাথে আরও একটা তথ্য দিয়ে রাখা যাক। এ বছরের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট ৩.৩৭ লক্ষ কোটি – স্বাস্থ্য খরচের পাঁচগুণ!! নতুন ক্ষেপণাস্ত্র আর যুদ্ধ-বিমান কিনলেই আপনার শারীরিক কষ্ট ভ্যানিশ!! সঙ্গে খানকতক ধর্মস্থান আর আকাশঝাড়ু মূর্তি বানাতে পারলেই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত!!
‘রাজা আসে, রাজা যায়’.. খগেন মন্ডল আর সাগেন মুর্মুর কুঁড়েঘরে এখনও অপুষ্টি, অশিক্ষা, টিবির মৌরসীপাট্টা। খিদেপেট দেশপ্রেমের বানানো গল্পে ভরে না।
ও হ্যাঁ, এসবের সাথে একটি ছোট্ট তথ্য..প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার খরচ বেড়ে হ’ল ৬০০ কোটি।
. 2no.point percentage of poverty level (statistics needed). Sharp and good writings.