সেদিন এই অনলাইন পোর্টালে এই গল্পটা দেখা গেল — https://www.anandabazar.com/…/do-you…/cid/1454350… না, ভয় নেই, আবার অন্য কোথাও গিয়ে গল্পের এই অংশ (যার জন্য আমি কোনও ভাবেই দায়ী নই) পড়তে হবে না, আমি এখানেই কপি করে পেস্ট করে দিচ্ছি (বানান ভুল সহ)।
গল্পটা এমত —
“Poop on the Moon
“চাঁদের মাটিতে কারও পা পড়েছিল কি, প্রমাণ দিচ্ছে মানুষের মল ভর্তি ৯৬টি ব্যাগ
“চাঁদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে মানুষের ব্যবহার করা বর্জ্য, মল-সহ ৯৬টি ব্যাগ। চাঁদের পৃষ্ঠে যে হেতু হাওয়া চলাচল করে না, তাই ওই বর্জ্য পদার্থ-সহ ব্যাগগুলি ৫০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে একই অবস্থায়।”
এর পরে সেই ব্যাগের একটা ছবিও রয়েছে। সে ছবি দিচ্ছি না, কারণ ছবিটা ঠিক এখানে দিলে ফেসবুক তো এখানে দেবে না, আলাদা করে ছবি দেবে, লোকে বুঝতে পারবে না। ছবি দেখতে চাইলে লিঙ্ক follow করুন, আমি গল্পে ফিরি…
এর পরে সেই ওয়েব পেজেই লেখা — “ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটি ছুঁতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে এই ল্যান্ডারের চাঁদে অবতরণের কথা। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-র বিজ্ঞানীরাও চন্দ্রযান-৩ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এরই মধ্যে আবারও উঠে এল ৫০ বছর আগের সেই বিতর্ক। চাঁদের মাটিতে আদৌ মানুষের পা পড়েছিল কি না। যদিও অ্যাপোলো-১১ চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফিরে আসার সময়ে প্রমাণস্বরূপ চাঁদে যাওয়ার সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য, সেখানকার মাটি, টিলার অংশও নিয়ে ফিরে এসেছিল পৃথিবীর মাটিতে। ফেরার সময়ে চাঁদের মাটিতে আমেরিকার পতাকা-সহ মহাকাশচারী নিল আমস্ট্রংয়ের ছবিও সঙ্গে তুলে নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও নিন্দকদের মনে দ্বন্দ্ব ছিলই।
“চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসার আগেই প্রমাণস্বরূপ ৫০ বছর আগের আরও একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। চাঁদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে মানুষের ব্যবহার করা বর্জ্য, মল-সহ ৯৬টি ব্যাগ। চাঁদের পৃষ্ঠে যে হেতু হাওয়া চলাচল করে না, তাই ওই বর্জ্য পদার্থ-সহ ব্যাগগুলি ৫০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে একই অবস্থায়।
“চাঁদে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ছ’ভাগের এক ভাগ। তাই তরল থেকে শুরু করে কঠিন— সব কিছুই প্রায় ভাসমান। তাই বর্জ্য মল-মূত্র ত্যাগ করা নিয়ে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। বেশির ভাগ সময়েই মহাকাশচারীদের তাই ডায়াপার পরে কাটাতে হয়। ব্যবহার করা সেই সব ব্যাগ অভ্যাসবশত চাঁদের মাটিতে ছুড়ে ফেলেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদিও মহাকাশ গবেষণা সংস্থার দাবি, ফেরার সময়ে মহাকাশচারীরা মল ভর্তি সেই ব্যাগগুলি পৃথিবীর মাটিতে ফেরত আনলেও সঙ্গে আনতে পারেননি তাঁদের ব্যবহার করা ডায়াপার এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ। সেগুলির ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।”
পাঠক, পড়ে কী মনে হচ্ছে? আমি যার সঙ্গেই এই গল্পটা শেয়ার করেছি, সে-ই দেখছি মনে করেছে, চন্দ্রযান-৩এর “বিক্রম” বা তার ল্যান্ডার থেকেই ছবি তোলা হয়েছে। ভালো করে পড়লে বোঝা যাবে আনন্দবাজার অনলাইন মোটেই সে কথা বলেনি। আমিও বুঝতে পারিনি। খেয়াল করাল সঞ্জয় মজুমদার। লিখল, কিন্তু আমরা তো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছি। সেখানে তো কই আগে কেউ যায়নি!
আমি তো যাকে হিন্দিতে বলে “থত্মত্ খা গিয়া”, তাই আবার খবরটা পড়লাম। দেখি, তাই তো, কোত্থাও বলা নেই যে এই ছবি আমাদের চন্দ্রযান-৩ থেকে তোলা! কিন্তু এমনভাবে চন্দ্রযানের খবরের সঙ্গে মিশিয়ে তাতে মিষ্টি, মধু, কিশমিশ, জাফরান দিয়ে চমৎকার হালুয়া বানানো, যে খেয়াল না করলে সবাই ভাববে চন্দ্রযানই…
যাকগে, যাঁরা জানতে চান তাঁরা যদি ইচ্ছুক হন, তাহলে এই লিঙ্কটা ফলো করতে পারেন, জানতে পারবেন যে খবরটা ২০১৯-এর। যেটা আজকের সংবাদমাধ্যম করল, সেটা হল এই, যে চন্দ্রযানের সঙ্গে প্রশ্নটাকে তুলে এনে কিসে কিসে এক করে দিল তা আর বলছি না… https://www.vox.com/…/182…/apollo-moon-poop-mars-science
তখন মনে পড়ল এই গল্পটা (এতক্ষণ যা পড়লেন, তা হল খবর। গল্পের ইন্ট্রোডাকশন এখন আরম্ভ। তারপরে আসল গল্প)
আমরা তখন খুবই ছোটো, তখনও ১৯৬০-এর দশক (ব্যাকরণ অনুযায়ী বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশক) বোধহয় শেষ হয়নি, এমন সময় একদিন রাতে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোতে আগুন লেগে বেশ কটা ট্রামগাড়ি ভস্মীভূত হয়ে গেছিল। পরদিন রবিবার, সকালে কাগজে প্রথম পাতাতেই তার ছবিটবি সহ বিস্তারিত সংবাদ দেখেছি, সেদিনই বাঁশদ্রোণীতে মেজোমাসির বাড়ি যাবার কথা, রাসবিহারীর মোড় থেকে ৬ নং বাসে চড়ে যাচ্ছি, বাসটা যখন টালিগঞ্জ ট্রাম-ডিপোর পাশ দিয়ে বাঁ-দিকে মোড় নিচ্ছে, বাসসুদ্ধ (তখন বাসে এখনকার মতো ভিড় হত না, আর তাছাড়া সেদিন আবার রবিবার সকাল) লোক উঁকি মেরে দেখছে আর আহা-উহু করছে, আমিও দেখছি, রাস্তা থেকেই গুমটির ভেতরে পোড়া পোড়া ট্রাম দেখা যাচ্ছে… বাবা বলছে, দেখেছিস, আজ সকালেই যে কাগজে ছবি দেখলি… এ সেই পোড়া ট্রাম!
এমন সময় আমার ভাই (যে কি না আমার চেয়েও ছোটো) শিশুসুলভ সারল্যে বলে উঠল, বাবা, তাহলে কাগজে সত্যি কথা লেখে?
ওই বয়সের বাচ্চা, ছাপার অক্ষরে যে কেবল রূপকথা দেখেছে, তার পক্ষে প্রশ্নটা খুবই বিচক্ষণের মতো ছিল, কিন্তু বড়োরা বাচ্চাদের বিচক্ষণতা বোঝে না, সবাই খুব হাসল (আমিও তো ওর চেয়ে বড়ো ছিলাম, আমিও হেসেছিলাম বোধহয়)।
দেখতে দেখতে এই বার্তা রটি গেল ক্রমে… এবং সে শুনে আমাদের এক আত্মীয় আমাদের গল্পটা বলেছিলেন। তিনি পরে আবাপ-র খুব উচ্চপদে গিয়েছিলেন, তাই তাঁর নাম উহ্য রইল। তিনি আমার ফেসবুক পোস্ট পড়েন বলে জানি না, পড়লে আমাকে নির্ঘাত বকবেন, কারণ তিনি বলে থাকেন যে গল্পটা আমি নাকি তাঁকে বলেছি। এহ বাহ্য, এই রইল সেই কালজয়ী গল্প, হলপ করে বলতে পারি, টালিগঞ্জের ট্রাম ডিপো থেকে চাঁদের মল সবেতেই এই গল্প সত্যি…
স্বর্গীয় ঘণ্টা
একবার বিষ্ণু বৈকুণ্ঠে ডেকে পাঠালেন নারদমুনিকে। নারদ গিয়ে দেখেন, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর সামিট মিটিং করছেন। ওঁরা বললেন, এ কী শুনছি? পৃথিবী নাকি মিথ্যায় ভরে গেছে, মানুষ সারাক্ষণ মিথ্যে বলছে এবং পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ? তুমি আমাদের এসব কিছুই জানাওনি?
নারদ অবাক হয়ে বললেন, নারায়ণ, নারায়ণ! পৃথিবীতে সবাই সারাক্ষণ মিথ্যে বলছে? কই আমি তো জানি না?
ত্রিমূর্তি বললেন, তাহলে হয় তুমি মিথ্যে বলছ, নয়ত তুমি কাজে ফাঁকি দিচ্ছ। আমরা নিজেরা পরীক্ষা করে দেখব।
তাঁরা ডাকলেন বিশ্বকর্মাকে, বললেন, পারবে এমন যন্ত্র বানাতে, যাতে আমরা বুঝতে পারব, পৃথিবীতে মানুষ মিথ্যে বলছে কি না?
বিশ্বকর্মা বললেন, এ তো সামান্য কাজ।
পরদিন সকালে বিশ্বকর্মা বৈকুণ্ঠে একটা মস্তোবড়ো ঘণ্টা লাগিয়ে দিলেন, বললেন, পৃথিবীতে যেই কেউ মিথ্যে বলবে, ওমনি এই ঘণ্টা বাজবে।
মহা উৎসাহে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর নারদকে ধরে নিয়ে বসলেন। সঙ্গে পিকনিক লাঞ্চ — লুচি দিয়ে লাউ-চিংড়ি পাকিয়ে পাশবালিশ করা, স্বয়ং মা-লক্ষ্মী বানিয়েছেন। বসেই আছেন, বসেই আছেন… ঘণ্টা আর বাজে না। না, বাজে, কিন্তু কখনও সখনও, টিং-টুং করে। অর্থাৎ স্বর্গে দেবতারা যতটা মিথ্যে বলেন, তার চেয়েও অনেক কম। আস্তে আস্তে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর রিল্যাক্স করতে আরম্ভ করলেন, নারদ বলতে লাগলেন, দেখেছেন, আমার ইনফরমেশনে ভুল নেই। জনসংখ্যার তুলনায় মিথ্যে তেমন বাড়েনি, নারায়ণ, নারায়ণ!
দেখতে দেখতে রাত হল, ক্লান্ত ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ঘুমোতে গেলেন। একটু দূরে নারদও চোখ বুজলেন।
রাত বাড়ে, ঘণ্টা এখন প্রায় সাইলেন্ট।
হঠাৎ, তখন অনেক রাত, প্রবল ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং ঘণ্টাধ্বনিতে হাউমাউ করে উঠে বসলেন ত্রিমূর্তি! নারদ, নারদ? কোথায় নারদ?
নারদও একটু দূরে উঠে বসছেন। বললেন, এই তো? নারায়ণ, নারায়ণ! কী হয়েছে?
শিব, ব্রহ্মা আর নারায়ণ কোনও রকমে ঘণ্টা জড়িয়ে ধরে তার বাজনা থামিয়ে বললেন, হয়েছে তোমার মাথা আর মুণ্ডু! এই যে প্রলয়ের মতো ঘণ্টা বাজছে, এর কী অর্থ?
নারদ বললেন, নারায়ণ, নারায়ণ! ও কিছু না। এখন রাত তিনটে। আনন্দবাজার ছাপছে।
অসাধারন।