আমরা আগের অংশে নেটিভ হাসপাতালে চিকিৎসিত হওয়া রোগীদের কেসগুলোর পর্যালোচনা করে বলেছিলাম – যারা ভর্তি হবার জন্য এসেছে এবং যে ডাক্তারেরা চিকিৎসা করছে তারা উভয়েই শরীরের উপরিতলকে দেখছে। শরীরের অভ্যন্তরে টিস্যু অব্দি মেডিক্যাল/ক্লিনিক্যাল গেজ পৌঁছচ্ছেনা। সে অবধি মেডিক্যাল জ্ঞানকে বিস্তৃত করার জন্য আরও কয়েক বছর লাগবে – মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত। তার আগে আরও কতকগুলো ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে মেডিক্যাল শিক্ষাদানের পদ্ধতি।
এ বক্তব্যের মাঝে আরও দু-একটি স্তর আছে। এর একদিকে যেমন আছে গ্যালেন পরবর্তী প্রায় ১৫০০ বছর ধরে চিকিৎসার জ্ঞানতত্ত্বের জগতের এবং রোগের স্বরূপ বোঝার ক্ষেত্রে নির্ধারক ধারণা “হিউমোরাল” তত্ত্বের রেশ থেকে যাওয়া, অন্যদিকে তেমনি আছে ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটি অংশের মাঝে ইংরেজের প্রায় সবকিছুকে সাদর আলিঙ্গন করার স্পৃহা।
জন ভি পিকস্টোন এন ডি জিউসনের অধুনা ক্ল্যাসিক গবেষণাপত্র (পূর্বে আলোচিত হয়েছে – “The Disappearance of the Sick-Man from Medical Cosmology, 1770-1870”) নিয়ে মন্তব্য করেছেন (Commentary: From history of medicine to a general history of ‘working knowledge’) – মেডিসিনের ইতিহাসের একটি যুগ শেষ হয়ে নতুন একটি যুগের সূচনা হয় এমনভাবে না দেখাই ভালো (“from series-model of successive types of medicine to a model of co-existence and inter-penetration of types; from replacement to more complex displacements, where novel forms complex displacements, where novel forms co-exist with the old in contested cumulations.”) – বরঞ্চ বোঝা দরকার নতুন যুগের মাঝেও পুরনো জমানার রেশ থেকে যায় এবং এক জটিল রসায়ন তৈরি হয়। আমরা এর বাস্তব প্রতিফলন ভারতের ক্ষেত্রেও দেখব।
এ বিষয়ে যাবার আগে Owsei Temkin (চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের ভিন্নধর্মী মান্য ব্যক্তিত্ব)-এর একটি পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা যাক। টেমকিন তাঁর “The Role of Surgery in the Rise of Medical Thought” প্রবন্ধে বলেছেন – “Surgery, for many centuries, had relied on an objective anatomical diagnosis. In turning to a localized pathology, medicine adopted a point of view prevalent among surgeons. In part at least, the reorientation of medicine was due to an increasing approximation between medicine and surgery during the 18th century, with pathological and experimental physiology as a common ground cultivated by both disciplines.” এই প্রেক্ষিতে আরেক নামী গবেষক রাসেল মলিজ যা বলেছেন তা বিশেষ প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে – “Surgeons, used to extirpating the lesions of the disease, and physicians, used to administering systemic medicaments, all suddenly now needed a blanket system that could unite heretofore disparate perspectives on the ‘seats and causes of disease’.” (Russel C. Maulitz, “The pathological tradition,” in Companion Encyclopaedia of the History of Medicine, W. F. Bynum and Roy Porter (ed.), vol. I (London: Routledge, 1993), p. 178)
এরকম নতুন প্রজাতির ডাক্তারের প্রথম প্রতিনিধি ছিলেন ফ্রান্সের জেভিয়ার বিখাট (Francois Xavier Bichat)। তিনি ক্লিনিক্যাল ওয়ার্ডে দিনরাত পরিশ্রম করতেন। তার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করতেন মৃত রোগীর পোস্টমর্টেম পরীক্ষায় রোগের কারণ অনুসন্ধানের জন্য। মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৮০২ সালে তিনি মারা যান। ছাত্রদের জন্য তাঁর বিখ্যাত উপদেশ ছিল – “Dissect in anatomy, experiment in physiology, and make necropsy in medicine; this is the threefold path without which there can be no anatomist, no pathologist, no physician.”
ভারতে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ তৈরির আগে ফিজিসিয়ান বলে আলাদা কোন বর্গ ছিলনা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে মেডিক্যাল সার্ভিস চালাতো সেখানে সবার পরিচিতি সার্জন হিসেবে ছিল। এজন্য এদের উপাধি হিসেবে সচরাচর মি. শব্দটি ব্যবহার করা হত, ডঃ নয়। ডঃ ব্যবহার করা হত ফিজিসিয়ানদের জন্য। যাহোক প্যারিস মেডিসিন বা “হসপিটাল মেডিসিন”-এর প্রভাব এদেশে অভিঘাতের জন্ম দেবার আগে থেকেই এসমস্ত সার্জনরা চিকিৎসক হিসেবেই সর্বস্তরে কাজ করেছেন। ফলে এদের লেখা পড়লে অ্যানাটমি এবং মেডিসিনের বিভিন্ন বিপরীতমুখী ঝোঁক খোলা চোখে ধরা পড়ে।
এখানে বলে নিই যারা ৩০০-৪০০ বছর আগেকার প্রাচীন গ্রন্থের নামকরণের সাথে পরিচিত তারা জানেন যে সেসময়ে এক একটি গ্রন্থের প্রায় একপাতা জোড়া নাম হত। উদাহরণ হিসেবে ১৮০৯ সালে প্রকাশিত A Treatise on the Structure, Economy, and Diseases of the Liver: with an Inquiry into the Properties and Component Parts of Bile and Biliary Calculi (The Fourth Edition). To which is now added A more particular Account of the Hepatitis of India, with Observations on the Prevalent Use of Mercury in the Diseases of this Country গ্রন্থটির কথা ধরা যাক। এরকম বৃহদাকৃতি একটি নাম কি কারও মনে থাকে নাকি উদ্ধৃতিযোগ্য? ফলে যে বইগুলোর কথা উল্লেখ করবো সেগুলো সবই সংক্ষিপ্তাকারে উদ্ধৃত হবে।
উইলিয়াম সন্ডার্সের পূর্বোক্ত গ্রন্থে (A Treatise on the Structure, Economy, and Diseases of the Liver) সন্ডার্স বলছেন – “But these disorders, with many others of the putrid bilious kind, originate in the liver … all acrimonious and putrid accumulations, arising from diseased secretion.” (পৃঃ ৬৩) এভাবে রোগের উৎস বোঝার মধ্যে গ্যালেনিয় হিউমারের ধারণা যে প্রবল সে বিষয়টি সমস্ত পাঠক এবং চিকিৎসকেরই নজরে পড়বে। এবং সালটা খেলা করি – ১৮০৯। সেসময়ে ইংল্যান্ডে হান্টারের অ্যানাটমিক্যাল সার্জারির যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। মলিজ তাঁর অন্য একটি গবেষণাগ্রন্থে জানাচ্ছেন – “By the end of the eighteenth century, then, in the Edinburgh of the Munros and William Cullen, as well as in the London of their compatriots John and William Hunter, there were “perfect conditions for the potential interchange of medical and surgical ideas.” (Russel C. Maulitz, Morbid Appearances, ২০০২, পৃঃ ১১৭) ফলে সেসময়ে মেডিক্যাল শিক্ষার জগতে হিউমারের ধারণা মুছে যেতে থাকলেও শিক্ষার মানসিক জগতে এর রেশ রয়ে গেছে। এর প্রমাণ ১৮০৯ সালে লেখা সন্ডার্সের এই পর্যবেক্ষণ।
১৭৭৫ সালে জন ক্লার্ক তাঁর Observation on the Diseases in Long Voyages to Hot Countries পুস্তকে জানাচ্ছেন – “Dissections throw no light into the proximate cause of the disease, as they only show its effects.” ডিসেকশন আলাদা কোন গুরুত্ব নিয়ে ১৭৭৫ সালের লেখায় হাজির হয়নি।
১৭৮১ সালে উইলিয়াম ফ্যালকোনার তাঁর Remarks on the Influence…. গ্রন্থে লিখছেন – “The bile however must be excepted, which is considerably increased in quantity, and as some think rendered more acrimonious in quality.” (পৃঃ ৪) হিউমারের তত্ত্বের নির্ভুল প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ফ্যালকোনানের ধারণায়।
আবার ১৮০৭ সালে চার্লস কার্টিস তাঁর An Account of the Diseases of India-তে লিখছেন – “Much experience indeed does it require, and many dissections of similar cases, to enable us to judge and distinguish accurately between the causes and effects of the disease; and even between the effect of disease, and the effect of death.” তাহলে দেখতে পাচ্ছি, প্রায় একই সময়ে কার্টিসের লেখায় ডিসেকশনের সাহায্যে ডায়াগনোসিসের গুরুত্ব।
অর্থাৎ, একটি সময়কালের মধ্যে অন্য সময়কালও অনুপ্রবেশ করে থাকে। কোন এক সরলরৈখিক নিয়মে ইতিহাসের চলমানতা ঘটেনা। একাধিক ধারণা, চিন্তা এবং ভিন্নতরভাবে বোঝার দৃষ্টিকোণ এমনকি বিজ্ঞানের মতো “নৈর্ব্যক্তিক” শাস্ত্রেও প্রবেশ করে। সাধারণ ইতিহাসে তো কথাই নেই। সেখানে অন্য সমস্ত স্বর স্তব্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র স্বর ও ভাষ্যকে একমাত্র মান্যতা দেওয়া সমগ্র সমজজীবনের পক্ষেই অতি বিপজ্জনক।
যাহোক, চার্লস ম্যাকলিন সম্ভবত প্রথম নতুন ওষুধ মনুষ্য দেহে প্রয়োগের ফলাফল নিয়ে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল লিপিবদ্ধ করেন তাঁর ১৮১৭ ও ১৮১৮ সালে দু খণ্ডে প্রকাশিত পুস্তক Results of An Investigation…-এ। ১৭৯৭ সালে খোদ কলকাতায় ক্যালকাটা জেনারেল হাসপাতালের মেরিনার্স ওয়ার্ডে, ম্যাকলিনের ভাষায় ভারতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট তো বটেই এমনকি পৃথিবীর মধ্যেও সবচেয়ে নিকৃষ্ট হতে পারে, ভর্তি ইউরোপীয় নাবিকদের ওপরে মার্কারি তথা পারদের ফলাফল বোঝার জন্য ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেন। নীচে ম্যাকলিনের নিজের লেখার স্ক্যানড কপি দেওয়া হয়েছে। তিনি অন্যান্য ওষুধের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে এই পরীক্ষাগুলো চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে আফিমও ছিল। একই হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে উইলিয়াম ইয়েটস এবং জেমস রবার্টস এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
যাহোক এদেশের সর্বাগ্রগণ্য যুগপুরুষেরা কিভাবে ইংরেজি শিক্ষা এবং মেডিক্যাল শিক্ষাকে কিভাবে প্রায় নির্বিচারে আলিঙ্গন করেছিলেন তার দুয়েকটি নমুনা দেখা যাক।
ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে “খুলিবিদ্যা” বা phrenology ইউরোপীয় চিকিৎসক এবং দার্শনিক মহলের একাংশে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন জাতির মানুষের খুলির বিভিন্ন মাপজোক করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি, মেধা এবং সভ্যতার সিঁড়িতে অবস্থান কোথায় এসব নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছিল। এরকম একজন খুলি বিশেষজ্ঞ ছিলেন ডঃ জর্জ মারে প্যাটারসন। লন্ডনে ফ্রেনোলজিক্যাল সোসাইটিও তৈরি হয়েছিল ১৮২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এদের প্রকাশিত জার্নাল ছিল ট্র্যানজ্যাকশনস অফ দ্য ফ্রেনোলজিক্যাল সোসাইটি। এই জার্নালের ১৮২৪ সালের সংখ্যায় প্যাটারসনের “On the Phrenology of Hindostan” নামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, কলকাতা থেকে রামমোহন রায় ১০টি হিন্দু খুলি পাঠিয়েছেন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য। এর জন্য সোসাইটির তরফে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল – “They all appear to have belonged to adults, and were selected by RAM MOHAN ROY, a native of distinguished talents, and extensive information, as affording, as nearly as possible, an average specimen of Hindu skull.” নীচে ডঃ প্যাটারসনকে লেখা রামমোহনের চিঠি হুবহু তুলে দিচ্ছি।
আরেকজন বিশেষ অগ্রণী মানুষ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১ জানুয়ারি, সাহারানপুরের কালেক্টর জে এন ব্যাটেন সাহবকে একটি চিঠিতে জানান, তিনি পূত জল আনিয়ে তিনি ২০০ ভালো হিন্দু যুবককে খ্রিশ্চিয়ান করেছেন, যারা কোন একদিন তাঁর সাথে সমস্বরে কোন চ্যাপেলে খ্রিস্টীয় সঙ্গীত গাইবে।
My dear Batten,
Well done, The Padre was pleased with my singing, though I did not give him a psalm at all। As for my morale, no fear for thee. I have converted at least 200 hundred good Hindu college boys by giving them the holy water that comes from Corbonell & Co., so that by and by they will all sing a chorus with me at some of chappels.
Yours sincerely
Dwarakanath Tagore
(সূত্রঃ দ্বারকানাথ ঠাকুর ফাইল, DTF (GF) 01/38. রবীন্দ্রভবন আর্কাইভস, শানিতিনিকেতন)
এতসব প্রসঙ্গ এবং বিভিন্নতার আলোচনা কয়েকটি কারণে প্রয়োজনীয়।
(১) যে কোন ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে উপনিবেশকালের যে সময় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সেসব সময়ে, সরকার বা রাষ্ট্রের তরফে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয় সেগুলোর পেছনে এক বা একাধিক উদ্দেশ্য কাজ করে। ভারতে নিতান্ত সামরিক প্রয়োজনে এবং বেনিয়া ইংরেজের অর্থনীতিতে যাতে চাপ না পড়ে এরকম এক মিশ্র অবস্থান থেকে কিছু আধুনিক মেডিক্যাল ট্রেনিং দিয়ে কম খরচে নেটিভ ডাক্তার তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আমরা এতক্ষণের আলোচনার মধ্য দিয়ে সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছি। এবং সমগ্র পরিকল্পনার প্রধানতম চালিকাশক্তি ছিল “economy of education”।
উইলিয়াম ডালরিম্পল তাঁর The Anarchy গ্রন্থে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপদার্থতা এবং এদের সাথে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের সংঘাতের চিত্রটি দেখিয়েছেন – “১৮১৩ সালে পার্লামেন্ট প্রাচ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার রদ করে। একই সাথে বোম্বে এবং কলকাতায় অন্যান্য বাণিজ্য সংস্থাকে তাদের বাণিজ্যের অধিকার দেয়। “By 1825 there was growing opposition in Parliament to the continuing existence of the East India Company at all.” (পৃঃ ৩৯০)
(২) সমস্যার একটি দিক যদি এগুলো হয়, তাহলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আমজনতা এই চিকিৎসাপদ্ধতিকে কিভাবে গ্রহণ করছে কিংবা বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আদৌ আগ্রহ দেখাচ্ছে কিনা। রামমোহন রায় বা দ্বারকানাথ ঠাকুরের তরফে ব্রিটিশের প্রায় সবকিছুকে নির্বিচারে আলিঙ্গন করে নেওয়া সাধারণ মানুষের অবস্থান ছিলনা। মেডিক্যাল কলেজের প্রথম যুগের অল্পদিনের শিক্ষক জন ম্যাককোশ তাঁর Medical Advice to the Indian Stranger (১৮৪১)-এ বলছেন – “Generally speaking, the Natives prefer their own countrymen as their medical attendants on ordinary occasions, and take the advice of the European in extreme cases. To one not initiated in the customs of the East, the manner of attendance on Native ladies of rank must appear very absurd. The doctor is rarely indeed allowed to see his fair patient face to face.” (পৃঃ ১১)
(৩) একটি দ্বিমুখী দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল। একদিকে, রাষ্ট্র তথা সরকার চাইছে রাষ্ট্রের উৎপাদিত জ্ঞান এবং কৃৎ-কৌশল জনতা তথা নাগরিক internalize করুক অন্যদিকে, ইউরোপীয় মেডিসিনের প্রয়োগকেও এদেশের জনতার আচার-আচরণ, সংস্কার, বিশ্বাস, এবং চিন্তন পদ্ধতিকে internalize করতে হবে। তা নাহলে মেডিসিনের সফল প্রয়োগ সম্ভব হতনা, হবেনা।
এ দ্বন্দ্বের উপস্থিতি ভিন্ন চেহারায় ও ঢংয়ে এখনও বিদ্যমান, আমরা গুরুত্ব দিই বা না দিই।
(৪) এবার দেখা যাক ১৮২০-এর দশকে নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন (NMI) তৈরি হবার সমকালীন সময়ে কলকাতার শিক্ষিত মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী অংশের মাঝে কি ধরনের প্রভাব ফেলেছিল ইউরোপীয় মেডিসিন। এশিয়াটিক জার্নাল (অক্টোবর, ১৮২২)-এ “Bengally Newspaper” শিরোনামের একটি খবর প্রকাশিত হয় (পৃঃ ৩৮৭-৩৮৮)।
খবরটির শুরুতেই জানানো হয় – “The people of this country have been relieved from a variety of diseases since it has been in the possession of the English nation.” বলা হয় – “These doctors attend to the rich families, but the poor cannot send to afford for them … we earnestly beg that some requisite measures be adopted to relieve them from the many distresses which they now experience, from want of proper medical advice and treatment.” যেসময়ে এই চিঠি লেখা হচ্ছে সেসময় NMI পুরোপুরি কাজ শুরু করেনি। এবং যিনি বা যারা এই চিঠি লিখছেন তারা রামমোহন বা দ্বারকানাথের মতো নামজাদা বা কেউকেটা কেউ নন। কলকাতার জনসমাজের একাংশের প্রতিনিধিত্বকারী বলা যেতে পারে।
এই চিঠিতে বলা হল – “The writer has therefore solicited the Government to adopt some measures, whereby poor might avail themselves of the medical treatment of European doctors.” (পৃঃ ৩৮৭) কি এই পদক্ষেপগুলো যার কথা এখানে বলা হয়েছে? প্রথমত, হিন্দু চিকিৎসকরা তাদের সন্তানদের নিজ শাস্ত্রে শিক্ষিত করবে এবং, তারপরে, ইউরোপীয় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাবে; দ্বিতীয়ত, যে শিক্ষার্থী বাংলা এবং ইউরোপীয় উভয় ধরণের চিকিৎসাপদ্ধতির সাথেই পরিচিত তার পক্ষে সম্ভব হবে কোন চিকিৎসা কার জন্য বেশি প্রযোজ্য সেটা ঠিক করা এবং সে অনুযায়ী ওষুধ ও পথ্য নির্বাচন করা; তৃতীয়ত, সমস্ত জায়গাতে এরা পৌঁছুতে পারবে এবং সমস্ত বয়সের ও লিঙ্গের মানুষের কাছে দরিদ্র ও ধনী পরিবার নিরপেক্ষভাবে চিকিৎসা পৌঁছে দিতে পারবে; চতুর্থত, ইউরোপীয়দের কাছে অগম্য স্থানেও এরা সহজে পৌঁছে যেতে পারবে; এবং পঞ্চমত, এই ধরণের মেডিক্যাল জ্ঞান এবং চিকিৎসার ধরণ এক হাত থেকে আরেক হাত ঘুরে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়বে। (পৃঃ ৩৮৮)
উপরে যে ঘটনা বিবৃত করা হল, তার বিশেষ কিছু দিক আছে – একদিকে, এ উদ্যোগ জন্ম নিচ্ছে সাধারণ ভারতীয়দের মধ্য থেকে, এবং অন্যদিকে, এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নেই। এরকম এক অবস্থা ব্রিটিশ শাসকেরা অনুমান করতে পেরেছিল, কারণ বাস্তবতায় তা বিরাজ করছে। ফলে, সামরিক চাহিদা মেটানো, কম খরচে অর্ধ-প্রশিক্ষিত ডাক্তারের জোগান স্বাভাবিক রাখা এবং মানুষের প্রয়োজন কিছুটা মেটানোর মতো বিভিন্নমুখী কারণের সমাহারে জন্ম নিল NMI। এনিয়ে বিস্তারে যাওয়ার আগে বলে নেওয়া ভালো single-copy manuscript-এর যুগ শিক্ষার জগৎ থেকে নির্বাসিত হল চিরতরে। এক নতুন যুগের উন্মেষ হল – ছাপাখানায় তৈরি হওয়া বহু ব্যবহারের উপযোগী ছাপা পুস্তক। একে স্কলাররা অভিহিত করেন print capitalism বলে।
প্রসঙ্গত, আমি এই আলোচনায় অ্যাংলিসিস্ট-ওরিয়েন্টালিস্ট (পাশ্চাত্যবাদী-প্রাচ্যবাদী) বিতর্ক বা মেকলের বিতর্কিত “মিনিটস” নিয়ে আলোচনায় প্রবেশ করবোনা।
নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন (NMI)-এর জন্মবৃত্তান্ত
৯ মে, ১৮২২, বাংলার মেডিক্যাল বোর্ড সরকারকে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে নেটিভ ডাক্তারদের ঘাটতি সম্পর্কে সরকারিভাবে অবহিত করে। এর পরিণতিতে, যদিও পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল, প্রতিষ্ঠিত হয় NMI। Appendix to the Report from the Select Committee of the House of Commons – I. Public, 16th August, 1832 (1833)-এ এই ঘোষণা সম্পর্কে বলা হয় – “On the 9th May 1822, the Medical Board communicated to the Government a memorandum, pointing out the want of native doctors for the supply of the various establishments connected with the civil and military branches of the service, and suggesting the establishment of a school for native doctors, to be maintained at the expense of the Government, as the only means by which the deficiency could be supplied. The Government highly approved of the suggestion, and called upon the Medical Board to submit more detailed arrangements of their plan, in the form of a regulation for the proposed institution. Accordingly on the 30th of May, the Board submitted their plan of a school for native doctors, which meeting with the approbation of the Government, a general order was issued on the 21st of June 1822, establishing the school on the proposed plan” (পৃঃ ২৭০)
লাশিংটন জানিয়েছিলেন, রয়্যাল এঞ্জিনিয়ার্সের কর্নেল পাসলে (Pasley) ইংল্যান্ডে এর আগে “Non-Commissioned Officers and Privates of the Royal Sappers and Miners”দের জ্যামিতি এবং অংক শেখানোর জন্য একটি স্কুল খুলেছিলেন। NMI-এর ধরণটি সেরকমের। (লাশিংটন, পূর্বোক্ত, পৃঃ ৩১৮)
যাহোক, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ২২ জুন, ১৮২২ সালে উইলিয়াম ক্যাসমেন্টের স্বাক্ষরিত NMI তৈরির সরকারি নির্দেশ প্রকাশিত হল (এশিয়াটিক জার্নাল, ভল্যুম ১৫, জানুয়ারি-জুন, ১৮২৩, পৃঃ ১৭০-১৭২)। মোট ৩৯টি ক্লজ ছিল এই নির্দেশে।প্রথম ক্লজটি হল – “That an institution be formed at the Presidency for the instruction of the natives in medicine; and that it be called the School for Native Doctors.” ৬ নম্বরে ছিল – “Hindoos and Mussalmans to be equally eligible”, কিন্তু “they be persons of respectable cast and character, and willing cheerfully to perform all duties of their caling.”
এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল যে একটি secular social hierarchy তৈরি হচ্ছে। নাহলে সম্ভ্রান্ত বংশ ও জাতে জন্মানোর বিষয় এবং হিন্দু মুসলমানের সমান সুযোগের প্রসঙ্গ আসতো না। শুধু তাই নয়, সীমা আলাভি তাঁর Islam and Healing: Loss and Recovery of an Indo-Muslim Medical Tradition 1600-1900 গ্রন্থে জানাচ্ছেন – “আর্মিতে যুক্ত যেকোন কুলিও, যদি নাগরিতে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন হয় এবং হাসপাতালের বুনিয়াদি কাজকর্মের দক্ষতা থাকে তাহলে, could rise to become a native doctor.” (পৃঃ ৭১)
কি কি বিষয় শেখানো হবে এখানে? NMI-এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট (প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন জেমস জেমিসন) প্র্যাক্টিক্যাল বিষয়, মেডিক্যাল সায়ান্সের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশগুলো দেশীয় ভাষায় (নাগরী এবং ফার্সিতে) শেখাবেন। এ সমস্ত বিষয়ে ডেমনস্ট্রেশন এবং লেকচার দেবেন। সর্বোপরি, এদেশের সবচেয়ে বেশি যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে সেগুলোর সাথে প্রত্যক্ষত পরিচিত করানোর জন্য প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল, কিং’স হাসপাতাল, নেটিভ হাসপাতাল এবং কলিঙ্গ এবং গরানহাটা ডিসপেনসারিতে নিয়ে যাওয়া হবে। এসব জায়গা থেকে ফার্মেসি, সার্জারি এবং মেডিসিনের প্র্যাক্টিক্যাল জ্ঞান আহরণ করবে। এছাড়াও মৃতদেহের ওপরে করা পোস্টমর্টেম নিজেদের চোখে দেখবে। ফলে দেহের অভ্যন্তর চোখের সামনে উন্মুক্ত হবে।
বয়ঃসীমার ব্যাপারে বলা হয়েছিল ১৮-র কম নয় বা ২৬-এর বেশি নয়। এবং শুরুতে ২০ জন ছাত্রকে ভর্তি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সংখ্যাটি বেড়ে ৫০ হয়। এবং পাশ করার পরে ছাত্ররা মিলিটারি ডিপার্টমেন্টের নিয়মকানুনের অধীন হয়ে পড়ে। আচরণে গণ্ডগোল হলে এদেরকে কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হতে হত।
পড়ার সময় এদের স্টাইপেন্ড ছিল মাসে ৮ টাকা। চাকরিতে প্রবেশ করলে যুদ্ধক্ষেত্রে মাইনে ছিল ২০ টাকা, ক্যান্টনমেন্টে থাকলে ১৫ টাকা প্রতিমাসে। পরে উভয়ক্ষেত্রেই ৫ টাকা করে মাইনে বৃদ্ধি হয়।
আমার বিচারে, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে ধারণাটি এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় তাহল “public servant”, এবং এর অনুসারী “public service”-এর ধারণা। ১৮২২-এর আগে পর্যন্ত রাষ্ট্রের তরফে “public service”-এর ধারণা কখনও আনা হয়নি। চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবৃত্তি যে সরকারি রাজপুরুষদের মতো পাবলিক সার্ভিসের মধ্যে পড়ে এই বোধ এর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাস্থ্যের জন্য কাজ “public servant” হিসেবে “public service”-এর ধারণা আওতায় চলে এল। ২৯ নম্বর ক্লজে বলা হল – “With a view of encouraging this important class of public servants … the Government have resolved, that the pay of native doctors educated at the institution shall be raised above the rates which have been hitherto ordinarily allowed to the same description of persons”।
যাহোক, প্রথম সুপারিন্টেনডেন্ট জেমিসনের মাসিক মাইনে ছিল ৮০০ টাকা, সাথে আনুষঙ্গিক একাধিক ভাতা। এছাড়া একজন মুনশিকে প্রতিমাসে ৬০ টাকায়, একজন কেরানিকে ৩০ টাকায় এবং একজন পেয়াদাকে ৫ টাকা মাইনেয় নিযুক্ত করা হয়।
কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত ধনী রামকমল সেনের অর্থাৎ পুরনো অ্যালবার্ট কলেজের বাড়িতেই প্রথমে স্কুলটি স্থাপিত হয়। জেমিসন সেখানে হিন্দী অথবা উর্দু ভাষায় অস্ত্রচিকিৎসা, শরীরের গঠন ও ভেষজবিদ্যা সম্পর্কে বক্তৃতা দিতেন। প্রথম দু-তিন বছর কোনও জীবজন্তুর দেহচ্ছেদ করে ছাত্রদের দেখানো হয়নি। এই স্কুলে ৭ মাস কাজ করার পরে ১৮২৩ সালের ২০ জানুয়ারি ৩৫ বছর বয়সে জেমিসন মারা যান। (বিনয়ভূষণ রায়, চিকিৎসাবজ্ঞানের ইতিহাসঃ উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব, ২০০৫, পৃঃ ২৭)
এ প্রসঙ্গে জালে খালিলির (Zhaleh Khaleeli) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ “Harmony or Hegemony? The Rise and Fall of the Native Medical Institution, Calcutta, 1822-35”-র পর্যবেক্ষণ দেখা যেতে পারে। নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন সম্পর্কে বলছেন – “The Indians were to watch and learn rather than contribute.” (পৃঃ ৯৫)
জেমিসনের মৃত্যুর পরে বেশ কিছু টালবাহনার পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সার্জন পিটার ব্রেটন। ১৮২৫ সালে পিটার ব্রেটন লিখেছিলেন A Vocabulary of the Names of the Various Parts of the Human Body and of Medical and Technical Terms in English, Arabic, Persian, Hindee and Sanscrit, for the Use of the Members of the Medical Department in India বইটি। এ বইয়ে তিনি বলেন – “they [i.e., the “Asiatics”] have no distinct words for nerve and therefore call it Nus, Asub, Shirra, etc. in common with Ligaments and Tendons…they know not the distinction between an Artery and a Vein and consequently the appellation of Rug and Shirra are indiscriminately applied to both. The Hindee word Rug and Shirra according to the Soosrut, a Sanskrit work on Anatomy and Pathology, means blood vessels or tubular vessels of any kind.”
এরকম “অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য” মানুষদের ও ছাত্রদের “জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া” দিয়ে আলোকপ্রাপ্তির ব্যবস্থায় হাত দিলেন ব্রেটন। তাঁর নিজের বয়ানে – “প্রতি সোমবার, বুধবার এবং শুক্রবার রাতে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ছাত্ররা তাদের জন্য তৈরি করা মেডিক্যাল টেক্সট পড়তো। সিনিয়রদের প্রত্যেককে আমার এবং আমার দুজন সহকারীর সামনে স্মৃতি থেকে মস্তিষ্ক, viscera, bowels এবং চোখের গঠন বর্ণনা করতে হত এবং যেসব মেডিক্যাল প্রশ্ন তাদের সামনে রাখা হত তার উত্তর দিতে হত। This keeps their minds constantly exercised and impresses thoroughly in their recollection of what they see and learn”। (O P Jaggi, Medicine in India: Modern Period, ২০১১, পৃঃ ৪৩)
এখানে বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় – (১) ঘড়ি ধরা সময়ের সাথে নিজেদের জীবনশৈলিকে মানিয়ে নেওয়া (acculturations), (২) একই সাথে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ও ভিন্ন বিষয়ে নিজেদের auditory, visual, verbal এবং psychic acculturations ঘটানো, এবং (৩) সংস্কৃত, ফারসি, আরবি বা উর্দু টেক্সটে শরীরের যে নান্দনিকতা ছিল সেগুলো খসে গিয়ে শুধু শুষ্ক অ্যানাটমি পড়ে থাকলো। এর সঙ্গে নিজহাতে ডিসেকশন যুক্ত হলে anatomo-clinical gaze-এর বৃত্তটি সম্পূর্ণ হয়। ফলে এই স্কুল (ফুকোকে অনুসরণ করে) proto-clinic হিসেবে কাজ করছিল বলে আমরা ধরে নিতে পারি।
নীচে জন লিজার-এর A system of anatomical plates; accompanied with descriptions, and physiological, pathological, and surgical observations (১৮২২) থেকে ছাত্রদের জন্য ব্যবহার করা অ্যানাটমিক্যাল প্লেটগুলো থেকে ওপরে বিবৃত ধারণাগুলো আরও পরিষ্কার হবে।
এই স্কুল এতটাই কার্যকরী ভূমিকা তখন পালন করেছিল যে রাধাকান্ত দেবের মতো গোঁড়া রক্ষণশীল হিন্দুও ব্রেটনকে তাঁর কলেরা সংক্রান্ত বইয়ের ব্যাপারে চিঠি লিখে জানান – “আমি মনোযোগ দিয়ে আপনার কলেরা সংক্রান্ত বইটি পড়েছি। এবং এর পর্যবেক্ষণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা অত্যন্ত সুবিবেচনাপ্রসূত, সঠিক, উপকারী এবং কার্যকরী বলে মনে করছি। I shall introduce and recommend your advice and medicine both here and in the interior, and the human lives which will thereby be saved”। (“Liberality of the Indian Government Toward the Native Medical Institution of Bengal”, Oriental Herald, vol. X, 1826, p. 21) অর্থাৎ, রাধাকান্তের মতো গোঁড়া হিন্দু বাংলার অভ্যন্তরে NMI-এর সুফল পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিচ্ছেন।
এইচ শার্পের Selections from Educational Records, Part 1, 1781-1839 থেকে জানতে পারছি – “The Court did not altogether approve and expressed a preference for the Fort St. George plan of training half-castes as dressers. The Court also thought the salary of the superintendent excessive. In 1825 the Medical Board explained their reasons for not adopting the Madras system and the supenority of their own scheme. During the prevalence of cholera in 1825 the students were most usefully employed. In 1826 the number of students was increased to 50 and the stipends to Rs. 10. The Court approved and sent out certain models.” (পৃঃ ১৮৪)
১৮২৫ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্যে এই স্কুল থেকে ১৬৬ জন “নেটিভ ডক্টরস” পাবলক সার্ভিসে যোগ দিয়েছে। যদিও এরপরেও ১৮২৫ সালে টাকা খরচ লাঘব করার জন্য এই স্কুল তুলে দেবার প্রস্তাব এসেছিল। সে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তীক্ষ্ণ ভাষায় লেখা হয় – “If the British public countenance this, instead of being any longer spoken of as an enlightened, they deserve to be ranked below the very Goths and Vandals.” (“Liberality of the Indian Government Toward the Native Medical Institution of Bengal”, p. 25)
ব্রেটনের উত্তরসূরী জন টাইটলার রবার্ট হুপারের Anatomist’s Vade-Mecum ১৮৩০ সালে আরবিতে The Anis Ul Mushaharahhin শিরোনামে অনুবাদ করেছিলেন। এ বইয়ের ভূমিকায় তিনি বলেন – “no small recommendation of Anatomy, that it has a most powerful influence in counteracting prejudices that arise from birth, or station, or cast, by demonstrating that, however mankind may differ in their externals, their internal organization is the same … Before the knife of the anatomist every artificial distinction of society disappears; and if all the individuals of the human race be equal in grave, they are still more so on the dissecting table.” (পৃঃ ১৪)
ঐতিহাসিকভাবে একথাগুলো সত্যি। কিন্তু ভারতবাসীর কাছে এ সত্য অনুদ্ঘাটিত ছিল। দেহের সত্যের এই চেহারা, যার উপরে মেডিসিনের পূর্ণ বিকাশ ও অগ্রগতি নির্ভর করেছে, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছিল উনবিংশ শতকের মেডিক্যাল ছাত্রদের কাছে। নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন এক্ষেত্রে “হসপিটাল মেডিসিন”-এর গর্ভাবস্থা বা gestation period/period of nativity হিসেবে কাজ করেছে। ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে এর পূর্ণরূপ দেখতে পাবো। তার আগে পরবর্তী অংশে জানবো নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন-এ কিভাবে ধাপে ধাপে ছাত্রদের সামরিক প্রয়োজনকে অতিক্রম করে মেডিসিনের নিজস্ব dynamics মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছিল মেডিক্যাল শিক্ষাকে।
প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্র যা চায় শিক্ষার নিজস্ব গতি হুবহু সে পথে এগোয়না। তাকে অতিক্রম করে যায়।
❤️❤️❤️
Very informative, thank you sir!
Many things came to know…?
আবারও বলি অসাধারণ! খুঁটিনাটি বিষয় তথ্যাদি একত্রে মেলবন্ধন।
পর্যায়ক্রমে লেখাটা এত সুন্দরভাবে এগোচ্ছে । অসাধারণ। একই সঙ্গে মূল্যবান ।
চমৎকার এগিয়ে চলছে কলকাতা মেডিকাল কলেজের বিকাশের ইতিহাস। একটা মজা লাগল সেযুগেও ধর্মীয় বিভেদের উর্দ্ধে উঠলেও ব্রিটিশ সরকার জাতপাত খুঁজেছিলেন। আর একটি বিস্ময়ের বিষয় নেটিভ বা য়্যাংলো খ্রীষ্টানদের জন্য রাস্তা খোলা ছিল কি না বোঝা গেল না। মেডিকাল কলেজের সোনালী অতীত মনে করিয়ে দিচ্ছেন বারে বারে। ধন্যবাদ ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য।
Dear Jayanta — your present write up has stepped into the ” Geometrical Torus Model” of the the discordant and very complex field of initial antenatal period of ” Gestational Period of shaping up off Scientific Medicine ” in Colonial India. It is a topic where Medicine in India — as we see today– was never a “Open & Shut”– sort of video game . Its rumbling is still felt today not only in the matter of –MIND-BODY- HEALTH etc. axis — but in many other distant fields of National Importance. To tell frankly the Convoluted Reactions that involved Bengal’s — or Calcutta’s BHADRALOKE SAMAJ in particular– in
those last trimester days of CMCH’s Birth — was very special — in comparison to subsequent quick appearances of its own sister institutions — in Grant M.C./J.J.H of Bombay , MMC&GH of Madras or a little later that of King Edward M.C. at Lahore. A decade earlier Ecole de Medicine de Francois in French Pondicherry had a very normal delivery. But paper is — as is your wont — is a very rare “SMORGASBORD”. It demands repeated readings and relooks from varied and often unexplored perspectives. It is a scholastic composition –demands scholastic wiring up of our way of reviewing– Loving regards — n.da
Dear Jayanta
Once again, your hard work in researching in to the history of Medicine is appreciated. You have made an unparalleled job of presenting this in your mother tongue to make them available to many lay people. Great work. ??