এই অতিমারীর কালে শরীরের যত্ন সম্বন্ধে অনেক কথা আমরা জানতে পারছি। আজ আমি মনের যত্ন সম্বন্ধে দু চার কথা আপনাদের জানাতে চাই।
প্রথমত: মন সম্বন্ধে সাধারণ ধারণায় অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে। যেমন এমন একটা ধারণা বহুল প্রচলিত যে মন আসলে আমাদের হৃদয়। সেই হৃদয় কবির কল্পনায় আর কবিয়ালের গানেই সত্যি হয়ে থাক। আসলে মনের শরীরবৃত্তীয় কাজ কারবার নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিষ্কের মাধ্যমে। তাই মস্তিষ্ক বা ব্রেনের যত্ন নেওয়াটা মনের যত্নের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মাথা ঠান্ডা রাখতে তাই পর্যাপ্ত ঘুম ভীষণ জরুরী। দিনে 6-7 ঘন্টা বিশ্রাম নিন।
এরপরে যেটা খুব দরকারী তা হলো মনকে যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত করে রাখা। চিন্তা ভাবনার ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে তা করা চলতে পারে। অর্থাৎ অযথা দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস বদলাতে হবে। তার জন্য দুশ্চিন্তা মাথায় এলে নিজেকে প্রশ্ন করুন সেই দুশ্চিন্তার বাস্তব ভিত্তি কিছু আছে কিনা। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টাকে ভালভাবে বোঝা যেতে পারে। যেমন মনে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে যে “আমার বোধহয় করোনা হয়ে যেতে পারে”, অথচ আপনি বাড়িতে থাকছেন, বারেবারে হাত ধুচ্ছেন, মাস্ক ব্যবহার করছেন তাও মনে হচ্ছে আপনি অসুস্থ হতে পারেন। এই চিন্তা ক্রমে দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়েছে কারণ আপনি এই চিন্তাটাকে কখনোই চ্যালেঞ্জ করেন নি। যতবার এটা মাথায় এসেছে তাকে সাপোর্ট করেছেন। বিভিন্ন উদাহরণ খাড়া করবার চেষ্টা করেছেন যেমন ওই তো সমরবাবু বাড়িতেই ছিলেন তাও ওনার অসুখটা হলো। কিন্তু এ কথা ভাবেন নি যে সমরবাবু সব নিয়ম ঠিক করে মেনেছেন কিনা তা আপনার জানা নেই।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো চলার কাজটা আপনি করলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব, আর সেটা আপনি করছেন। দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিবেশীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে দেখবেন মনে আত্মপ্রত্যয় অনুভব করবেন।
এটা একটা উদাহরণমাত্র। যেটা বলার সেটা হলো কোন দুশ্চিন্তা মাথায় আসছে মানেই সেটা ঠিক এইটা বিশ্বাস করা চলবে না। তাকে যাচাই করা প্রয়োজন যে তার বাস্তব ভিত্তি কতটা আছে।
এতো গেল দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস বদলানো।
তাছাড়া নিয়মিত রুটিনের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে বাজে চিন্তার অভ্যাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন কিছু কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করলে ব্রেনে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় ফলে মন চাপমুক্ত থাকে ঘুম ভাল হয়।
এরপর যেটা দরকার সেটা হলো বিনোদন। শত কাজের মধ্যেও করতে ভাল লাগে এমন কিছু কাজ করুন। যেমন বই পড়ুন বা ছবি আঁকুন বা গান শুনুন। এতে মন চাপমুক্ত হবে কারণ ভাল লাগার অনুভূতি আপনার জীবনে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন।