‘মানুষ তার কাজের মধ্যে বাঁচে’। বেঁচে থাকে। মনে থেকে যায় আজীবন। ‘চেষ্টা কখনো বিফলে যায়না’। আর বিফলে গেলেই বা, কুছ পরোয়া নেহি, আবার চেষ্টা করব। এসব জানতাম! আপনাকে দেখেই প্রথম উপলদ্ধি, তারপর বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। হয়তো একদিন এই জীবদ্দশায় শিখেও যাব এগুলো।
অনেককে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা, দ্রোহকাল পেরিয়ে বিকল্পের রাজনীতি, অনেক লড়াই, চেষ্টা, আবেগ -অপমান সামলে। দেশের প্রথম পেইন ইনস্টিটিউট তৈরীর মতো অসাধারণ একটি কাজ! এমন জীবনীশক্তি!! এত সাধারণ কিভাবে থাকেন আপনি? পরের সাক্ষাৎকারের জন্য প্রশ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছিলাম, প্রশ্নটা করা হলো না!!
শেখার জন্য খুব কম সময় পেয়েছিলাম। আগে, সাংবাদিকতা করার সময় টুকটাক দু-একবার কথা হয়েছে। ডক্টরস ডায়লগে বেশ কয়েকবার অনলাইন ইন্টারভিউ এ অনেকটা সময়। কিন্তু কাছ থেকে দেখেছি ‘ব্যথার পাহাড় ডিঙিয়ে’ বই করার পরিকল্পনার পর। মোটr নিউরন ডিজিস এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থতার কারণে ডাক্তার সুব্রত গোস্বামীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে তা থেকে বইটি লেখা হয়েছিল। আমাদের হাতে সময় কম ছিল – কারণ সুব্রতদার সময় আরো দ্রুত কমছিল। হাঁটতে চলতে পারছিলেন না, স্বয়ংক্রিয় হুইল চেয়ারের ওপর নির্ভর করে অফিসের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, যদিও তা ভীষণ সাবলীল ভাবে। খাবার খেতে, কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল। প্রতিবার আমার মনে হতো কি সাংঘাতিক কঠিন জীবন! আর প্রতিবারই আপনি আমার সামনে আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিতেন। আপনাকে দেখে মনে হতো সবকিছু ঠিক আছে, কিছু হয়নি। কোথাও কিচ্ছুটি হয়নি তো! এত অসাধারণ হয়েও কিভাবে এত সাধারণ থাকতেন সুব্রতদা আপনি? প্রশ্নটা করা হয়নি। ধন্যবাদ ডাক্তার রাহুল মুখার্জিকে। যিনি আমাকে ডাক্তার গোস্বামীর বক্তব্যের অনুলিখন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ আমার ফ্রেন্ড ফিলোসফার গাইড পুণ্যব্রত গুণকেও, যার সংস্পর্শে এসে আমি জনসাস্থ্যের কাজে আগ্রহ পাই। আপনার মত চিকিৎসকদের সংস্পর্শে আসি।
যাই হোক, ‘ব্যথার পাহাড় ডিঙিয়ে’ বইয়ের জন্য ইন্টারভিউ করার সময় প্রতিবার অবাক হয়ে ফিরতাম, টেবিলের ওপারের মানুষটাকে ধরতে চাইতাম – বুঝতে চাইতাম। অল্প কথায়, কখনো দীর্ঘ আলোচনায় কাজ গড়াতো। আমাদের বইয়ের বিষয়বস্তু ছিল ওনার পেন ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট তৈরি করার লড়াইএর সময় টুকু। তবুও বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর আভাস দিতে খুটিয়ে জানতে চেয়েছি ওনাকে। সেই চেষ্টায় ওপারের মানুষটা প্রতিবারই একরাশ বিস্ময়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতেন আমায়। কাছ থেকে অনেক সংগঠক দেখেছি, প্রতিবাদী নেতা দেখেছি, জনদরদি চিকিৎসক দেখেছি, দুঁদে এডমিনিস্ট্রেটর দেখেছি, কিন্তু সুব্রত গোস্বামী আর দেখিনি। আমার বারবার মনে হতো, খুব সহজে কঠিনকেও খুব সহজ করে দিতে পারতেন আপনি। নৈলে মৃত্যুও এত সহজ হয়ে গিয়েছিল!! প্রশ্নটা ওটাই, এতসব হয়েও এত সাধারণ থাকতেন কিভাবে আপনি?