একটা গল্প শোনানোর আগে একটু তথ্য দেবো। ‘উবুন্টু’ শব্দটার মানে কি জানতে চাইলে বেশিরভাগই উত্তর দেবেন যে ওটা কম্পিউটার চালানোর জন্য লাইন্যক্স অপারেটিং সিস্টেমের একটা ভার্সন। কথাটা ঠিক। কিন্তু উবুন্টু শব্দটার তাৎপর্য তার থেকেও বেশি।
এই উবুন্টু শব্দটা ‘এনগুনি’ ভাষার। দক্ষিণ আফ্রিকা, সোয়াজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়েতে প্রচলিত পরস্পরের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত কিছু বান্টু ভাষা যেমন হোসা, জুলু, এনডেবেলে, সোয়াতি ইত্যাদি এই এনগুনি ভাষার অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের নেতা আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটু তাঁর লেখা ‘নো ফিউচার উইদাউট ফর গিভনেস’ বইটিতে এই জটিল দার্শনিক প্রাচীন আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী শব্দটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। অক্ষম ইংরেজি অনুবাদে এমনটা দাঁড়ায়, “I am because we are.”
তথ্য অনেক হল, এবার গল্পে আসা যাক। গল্পটা অনেকটা এই রকম যে এক নৃতত্ত্ববিদ একবার আফ্রিকার উপজাতিদের ছোট বাচ্চা ছেলেপুলেদের নিয়ে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। বাচ্চাগুলোকে একটা লাইনে দাঁড় করিয়ে কয়েকশ ফুট দূরে গাছের তলায় এক ঝুড়ি ভর্তি মিষ্টি রাখলেন। বেসিক্যালি একটা দৌড় প্রতিযোগিতা। যে প্রথম হবে সে ওই প্রাইজটা পাবে। ওই বিজ্ঞানী ভদ্রলোক যথারীতি ‘রেডি স্টেডি গো’ বলে দিয়ে দৌড়টা শুরু করালেন। তাঁর জন্য একটা বিরাট চমক অপেক্ষা করছিল।
তিনি হতবাক হয়ে দেখলেন, বাচ্চাগুলো দৌড় শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু ওরা একজন আরেকজনের হাত ধরে সবাই একসাথে দৌড়াচ্ছে। সবাই একসাথেই দৌড় শেষও করে।
হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে বিজ্ঞানী ওদের কাছে গিয়ে জানতে চান ওরা এমনটা করলো কেন। “উবুন্টু”, বাচ্ছাগুলো সমস্বরে বলে ওঠে, “বাকিরা সবাই দুঃখ পেলে আমাদের একজন কি করে খুশি হতে পারে স্যার।”
চারদিকের এই ইঁদুর দৌড় দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়লে খুব ইচ্ছে করে আফ্রিকার সেই তারাভরা আকাশের নিচে বাচ্ছাগুলোর কাছে ফিরে যেতে। কালো কালো মুখে ঝকঝকে আলোর হাসি নিয়ে ওরা সেই মিঠাই এর ঝুড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পরেছে। একে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছে মূল্যবান প্রাইজ। কে বলে, “এ স্বাদের ভাগ হবে না”?