করোনা বিশ্বমহামারীর কারণে এখন সকলেই কমবেশি উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি, মনমেজাজ কারোরই খুব একটা ভালো নেই। তা বলে সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে গুমরে থেকে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ব, সেটাও কোনো কাজের কথা নয়। বাড়িতে থাকলেও পরিবারের সঙ্গে গল্পগুজব, ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা… এসমস্তই বজায় রাখা চাই। মোদ্দা কথা, মনটাকে ফুরফুরে রাখতে হবে। সুস্থ মনই হল সুস্থ দেহের রহস্য। তাই আজ আমিও এক লঘু মেজাজের গল্প নিয়ে পাঠকের দরবারে হাজির হলাম। গল্প নয় যদিও, একেবারে জলজ্যান্ত ঘটনা। শুনুন তাহলে।
‘…….ওই যে ওই ওই, দেখুন না ডাক্তারবাবু !’
বাচ্চাটির ডান কানে উঁকি মেরে দেখি সত্যিই সাদা সাদা কি এক বস্তু ভিতর থেকে উঁকি মারছে। কর্ণকুহরেই রয়ে গেছে সে ‘ফরেন বডি’, মরমে প্রবেশ করতে পারেনি এখনও। সদ্য পাশ করে আমার তখন ইন্টার্নশিপ চলছে। ইএনটি বিভাগে ডিউটি পড়েছে। এর আগে দু তিনটি বাচ্চার নাক-কান থেকে গুলি,পুঁতি এসব বের করার অভিজ্ঞতা থাকলেও – তারা ছিল একটু বড় বাচ্চা, বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের শান্ত করে বসিয়ে রাখা গিয়েছিল। কিন্তু ইনি অপেক্ষাকৃত অনেকটাই ছোট, বছর তিনেকের হবেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অতীব বিচ্ছুও বটে! কানের কাছে একটু হাত দিতেই প্রবল অনীহায় মুখ ঘুরিয়ে এমন চিলচিৎকার জুড়লেন… বুঝলুম এ আমার কম্মো নয়! পিজিটি দাদাকে খবর পাঠালাম।
দাদা এল। মাকে সঙ্গে নিয়ে বাচ্চাটিকে ভিতরের ঘরে এনে শোওয়ানো হল। বুদ্ধিমান বাচ্চাটি ততক্ষণে আঁচ পেয়ে গেছে অদূর ভবিষ্যতে তার সঙ্গে কি ঘটতে চলেছে। তিনি স্বীয় প্রতিভাবলে বহুকষ্টে পুঁতিটি কানের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন, খামোখা সেটিকে এখন বের করতে দেবেনই কেন? অতএব সেই নিষ্পাপ দেবশিশু বীরবিক্রমে আমাদের সঙ্গে প্রবল লড়াই চালিয়ে যেতে থাকলেন। আমরা দুই মক্কেল পুরোপুরি ব্যাকফুটে। পিজিটি দাদা জানাল একবার চেষ্টা করে দেখবে, না হলে বাচ্চাটিকে ওটিতে নিয়ে গিয়ে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। মা’র কোলে বাচ্চাটিকে পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে আমি কোনোমতে তার হাঁটু আর কনুইদুটি ধরে রাখলাম, দাদা আশ্চর্য্য নিপুণতায় তিন সেকেন্ডের মধ্যে পুঁতিটা তার কান থেকে বের করে আনল।
সবাই নিশ্চিন্ত। মা তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাচ্চাটাও তৎক্ষণাৎ উঠে বসে চটপট কপালে দু’বার আঙুল ঠেকিয়ে প্রনাম করে নিল। তার সেই প্রণামের ভঙ্গি দেখে আমরা তো হেসে কুটোপাটি। বোঝা গেল, পুঁতিটি নিয়ে দেবশিশু নিজেও ভিতরে ভিতরে কম উদ্বিগ্ন ছিলেন না!
বাইরে এসে প্রেসক্রিপশনে পিজিটি দাদা পরবর্তী ওষুধপত্র ও নির্দেশ লিখে মা বাবাকে বুঝিয়ে দিল। তাঁরাও বারবার ধন্যবাদ জানালেন আমাদের।
-‘নাও বাবু, ডক্টর আঙ্কেলদের টাটা করে দাও সোনা।’
নিষ্পাপ একটি হাসি হেসে ভুরু নাচিয়ে কাঁধ বাঁকিয়ে বাবার কোল থেকে আধোআধো গলায় বাচ্চাটি নিজের অপর কানের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে এতক্ষনে এই প্রথম কথা বলল, ‘হুঁ হুঁ, আমার এই কানেও কিন্তু এরম আরেকটা পুঁতি আছে!’
দারুণ।??
khub mojar to!