মহিষাসুরের অত্যাচার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কখনো সে যজ্ঞরত ঋষিদের অত্যাচার করছে, কখনো দেবরাজ ইন্দ্রের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে, কখনো বা নারী নির্যাতন করছে, কখনো লোকের খাবার লোপাট করে দিচ্ছে, কারো গরু বাজেয়াপ্ত করছে- ইত্যাদি নানাবিধ অনাচার সে করেই চলেছে। এখন বিধির বিধান হলো পাপের ঘড়া পূর্ণ না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়ার উপায় নেই। এই নিয়মের মাধ্যমে আসলে বিধাতা যার যা খুচরো পাপ আছে, সেগুলোর শোধ তুলে নেন। এই যেমন কেউ হয়তো বউ পেটায়, এখন ঈশ্বর কি নিজে নেমে আসবেন তাকে শাস্তি দিতে! তার চেয়ে বরং মহিষাসুর তার সাধের প্রাপ্য চাকরিটা খেয়ে নিল, বা হয়তো তার থেকে মোটা টাকা কাটমানি নিয়ে নিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে লোকের পাপের একটু প্রায়শ্চিত্ত হয়, আবার মহিষাসুরের পাপের ঘড়াও ভরতে থাকে। সেই ঘড়া ভড়লে তবেই না মা দুগ্গার আবির্ভাব হবে, তবেই না বুর্জ খলিফার প্যান্ডেল হবে, তবেই না ক্লাবের ছেলেরা একটু সোমরসের ভাগ পাবে- এসব ঘটনাই ওতপ্রোতভাবে অঙ্গাঙ্গিভাবে পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।
তো এরকম ভাবেই মহিষাসুরের পাপের ঘড়া ভরে এলো, মা দুগ্গা এলেন- যুদ্ধ হলো, অসুর হেরেও গেলো। ত্রিশূলটা বুকে ঢোকানো হবে, এমতাবস্থায় সে বলে উঠলো, “চক্রান্ত হচ্ছে, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে”
দুর্গা বলে, “সে আবার কী!”
“আমার উকিলকে ডাকা হোক, তারপর না হয় আমায় বধ করবেন”
একটা প্রজাপতি উড়তে উড়তে এসে বসলো, “কী হয়েছে?”
মহিষাসুর বলে, “কে তুই? যা ওদিকে গিয়ে নকুলদানা খা”
প্রজাপতি বলে, “আমি ব্রহ্মা, প্রজাপতি ব্রহ্মা”, বলেই স্বরূপ ধারণ করলেন, “আমাকেই চিনতে পারিসনি!”
“আটটা চোখ চারদিকে ছিল, একসাথে পুঞ্জাক্ষি হয়ে যাবে কী করে জানবো! দেখুন আমার উপর কী অন্যায় হচ্ছে!”
“আহা রে, আমার মোষ ছানাটার এই হালত কে করলো?”
মা দুগ্গা বললেন, “আপনার মোষ লাগামছাড়া হয়ে সবাইকে গুঁতিয়ে বেড়াচ্ছে সে খোঁজ রাখেন?”
“তাই বলে একজন অসুস্থ মানুষকে বধ করা হবে! ওর মাথায় ঠিকঠাক অক্সিজেন যায়না।”
“অসুস্থ!”
“হ্যাঁ, ওর বুকে ব্যথা তো! বলেনি?”
“এই মাত্র তো আকাশ ফাটিয়ে দাঁত ক্যালাচ্ছিলো, ওর বুকে ব্যথা?”
“হ্যাঁ, ওরে তুই বলিসনি তোর বুকে ব্যথা? সেই নিয়ে যুদ্ধ করছিস কেন?”
দামড়া মহিষাসুর মাটিতে লুটিয়ে কাতরাতে শুরু করলো, “হ্যাঁ আমার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা”
অসুরবধ মাথায় উঠলো, সবাই চললো হাসপাতাল।
হাসপাতালের বাইরে ত্রিদেব অপেক্ষায়, সাথে দেবরাজ ইন্দ্র। মা দুর্গা অস্ত্রত্যাগ করেছেন, এমনি মেল ওয়ার্ডে ওনার ঢোকার অনুমতি নেই, উপরন্তু অসুস্থ অসুরকে বধ করলে অনেক জলঘোলা হবে। অশ্বিনীকুমারেরা পরীক্ষানিরীক্ষা সেরে বেরিয়ে এলেন।
“বুকে ব্যথা বলছে বটে, সেরকম কিছু পেলাম না…”
ব্রহ্মা বলেন, “বুকে ব্যথা আছে তো..”
“হ্যাঁ, কিন্তু ইসিজি নরমাল, ইকো নরমাল”
“বুকে ব্যথা আছে তো..”
“হ্যাঁ, কিন্তু ট্রপ টি নেগেটিভ, অ্যাঞ্জিও নরম্যাল”
বুকে ব্যথা আছে তো..”
“কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হয়নি কিছু আর কি…”
“বুকে ব্যথা আছে তো..”
“হ্যাঁ, কিন্তু….”
“চ্যবন পত্নী সুকন্যার দিকে তাকিয়েছিলে না তোমরা? স্নানরতা অবস্থায়? তোমাদের কিছুদিন কি মর্ত্যে পাপখণ্ডনের জন্য পাঠানো দরকার?
“না না, মহিষাসুর মহাশয়ের বুকে ব্যথার চিকিৎসার জন্য আমরা বলিপ্রদত্ত। হে ভগবন, আমাদের এই কর্তব্য থেকে বঞ্চিত করবেন না“
মহাদেব বললেন, “হে প্রজাপতি ব্রহ্মা, মহিষাসুরের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, ওকে এভাবে শাস্তির হাত থেকে বাঁচানো কি উচিত কাজ?”
ব্রহ্মা বললেন, “আমাদের মানবিক হতে হবে”