স্বর্গের দ্বাররক্ষক অসিত ডাক্তারের পথ রুদ্ধ করিল। অবশ্য তাহা অনাদিকালের অভ্যাসবশে। চিত্রগুপ্তের কম্পিউটার হইতে সিগন্যাল না আসিলে আধুনিক স্বর্গের স্বয়ংক্রিয় দ্বার উন্মুক্ত হয় না।
মান্ধাতার আমলে চিত্রগুপ্ত লাল চামড়ায় বাঁধানো মোটা খাতায় হিসেব রাখিতেন। তাঁহার বিরাট অফিসে বহু কর্মচারী রাখিতে হইত। তথাপি অনেক ভুলচুক হইত। অকারনে বিধাতাকে অনেক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হইতে হইত। যেমন যমদূতগণ বাগবাজারের অনাদিনাথ গাঙ্গুলীর বদলে বাঁকুড়ার অনাদিনাথ গাঙ্গুলী কে লইয়া আসিত।
পরলোকের পরিসর লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ হইলেও স্বর্গের পরিসর সীমিত। সেখানে কেবল সীমিত সংখ্যক আত্মার স্থান সংকুলান হয়। একজন অতিরিক্ত ব্যক্তি হঠাৎ করিয়া স্বর্গে আসিয়া পড়িলে চরম সমস্যা।
এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ। উহার সফল প্রয়োগে সেইসব সমস্যা মিটিয়াছে। শুধু তাহাই নহে, চিত্রগুপ্তের প্রাসাদোপম অফিস একখানি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে পরিণত হুইয়াছে। তাহাতে শত শত কর্মচারীর আর প্রয়োজন নাই। আজকাল তাহারা কর্মহীন হইয়া কেহ পরলোকে নানান দুষ্কর্মে লিপ্ত আছে, কেহ বা পরিযায়ী শ্রমিক হইয়া অন্য মহাবিশ্বে জন খাটিতে চলিয়া গিয়াছে।
চিত্রগুপ্তের অফিসে আসিয়া ডাক্তার অসিত বরণ বসু-র হাবভাব এবং গরিমা মুহূর্তে অন্তর্হিত হইল। কাউন্টারের সম্মুখে লম্বা লাইন। অন্য সকল সাধারণের সহিত তাঁহাকেও লাইনে দাঁড়াইতে হইল। এখানে প্রক্সি দেওয়ার ব্যবস্থা নাই। আপনার এন্ট্রি আপনাকেই করাইতে হইবে।
অফিসে যে কয়েকজন কর্মচারী ছিল, ডাক্তার দেখিয়াই তাহাদের হাঁটুর ব্যথা, গলা বুক জ্বালা, মাথার যন্ত্রণা, সাইনাসের সমস্যা ইত্যাদি হঠাৎ বাড়িয়া উঠিল। বিনা পারিশ্রমিকে ডাক্তার দেখাইতে পারিলে কে না খুশী হয়। কেহ এমনকি তাহার মাসতুতো শালীর ঋতুস্রাবের সমস্যার প্রেসক্রিপশন অবধি করাইয়া লইল।
লাইনে দাঁড়ানো কোনোদিন অসিত ডাক্তারের অভ্যাস নাই। গৃহের প্রাত্যহিক বাজারঘাট হয় গৃহিণী, নতুবা পরিচারক বা ড্রাইভার করিয়া থাকে। পেট্রলের দাম ব্যতিরেকে অন্য কোনো ভোগ্যবস্তুর দাম তাহার জ্ঞানের সীমানার বাইরে।
গাড়ী হইতে নামিয়া তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন। রাত্রে কর্ম অবসানে গাড়ীর পিছনের আসনে নিদ্রামগ্ন হইয়া বাড়ীতে ফেরেন। ছাত্রাবস্থায় লোকাল ট্রেনে ঝুলিতে ঝুলিতে কলেজে যাতায়াত করিতে হইত ঠিকই- কিন্তু সে সমস্ত প্রায় গতজন্মের গল্পকথা।
সকলকে খুশী করিয়া নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট পরে অসিত ডাক্তার বিধাতার সম্মুখে উপস্থিত হইল। বিধাতা প্রশ্ন করিলেন ‘তোমার এত দেরী কেন?’
(ক্রমশঃ)