জানুয়ারি ২, ২০২৩
প্রতি সম্পাদক,
আনন্দবাজার পত্রিকা
“অনাদর” – আমাদের প্রতিবাদ – সম্পাদক সমীপেষু, আনন্দবাজার পত্রিকা
মাননীয়,
আপনার সংবাদপত্রে ০২/০১/২০২৩ এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় “অনাদর” এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা বলার আছে। পুত্র সন্তানের প্রতি আকাঙ্খা এবং কন্যাভ্রূণ হত্যা ভারতীয় সমাজের এক দীর্ঘকালীন লজ্জা। শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার অনুপাত এর অসামঞ্জস্য যে উদ্বেগজনক, সেটাও বলাই বাহুল্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনার সম্পাদকীয় দোষারোপ এর তীরটা চিকিৎসক এবং চিকিৎসক সংগঠন এর দিকে তুলেছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ।
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে ১৯৯৪ সালের পিএনডিটি আইন এবং তার পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত রূপে ২০১৪ সালের পিসিপিএনডিটি আইন এ আল্ট্রাসাউন্ড ক্লিনিক,জেনেটিক ক্লিনিক প্রমুখ জায়গা যেখানে মেডিক্যাল আল্ট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, তার লাইসেন্সিং, ডাক্তার এবং মেশিন সংক্রান্ত তথ্য,ও অন্যান্য নথিপত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী রয়েছে। এই সংক্রান্ত যে সরকারি দপ্তর বা আধিকারিকরা আছেন, তারা আইনবলে প্রভূত ক্ষমতাশালী। এত কড়া আইন সত্ত্বেও যদি কোনো ক্লিনিকে বেআইনি ভাবে ভ্রূণের লিঙ্গনির্ধারণ হয়, তাহলে তার দায়ভার অবশ্যই সেই দপ্তর এর উপর বর্তায়। ২০১৪ এ পিসিপিএনডিটি আইন বলবৎ করা সত্ত্বেও যদি যদি লিঙ্গ অনুপাত সন্তোষজনক না হয়, তাহলে এই আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে মনে হয় মাননীয় সরকার বাহাদুরের ভেবে দেখা উচিৎ।
আপনার সম্পাদকীয় অনুযায়ী চিকিৎসক সমাজ অসাধু ক্লিনিকের নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি বার বার অভিযুক্ত চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার এই তথ্যের সূত্র কি?
অবশ্যই কোনো চিকিৎসকের উপর অন্যায় আক্রমণ নেমে এলে চিকিৎসক সংগঠনের উচিৎ সেই ব্যক্তি চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু কন্যাভ্রূণ হত্যার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকের জন্য বা অন্যায়কারী ক্লিনিকের প্রতি চিকিৎসক সমাজ বা চিকিৎসক সংগঠন সহানুভূতিশীল, এই বক্তব্য কতটা যৌক্তিক, জানতে চাই আপনাদের থেকে। নইলে আশা করবো আপনারা এই মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন। আসলে আপনাদের কাছে চিকিৎসক রা খুব ” সফট্ টার্গেট”। তাই যে কোনো সামাজিক ব্যাধি বা প্রশাসনিক অদক্ষতার দায়ভার নিশ্চিন্তে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায়। একবার সমাজের আয়না হয়ে এই প্রশ্নটা তুলে ধরতে পারবেন যে কেনো ভ্রূণের বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য অপরিহার্য যে সব পরীক্ষা সেখানে গর্ভবতী মহিলা কে সই করতে হবে যে আমি ভ্রূণের লিঙ্গ জানতে চাইনি, এবং চিকিৎসককে মুচলেকা দিতে হবে যে আমি ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করিনি; যেখানে ব্যাপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাবা মা ভাবতেই পারেন না যে ভ্রূণ টি কে হত্যা করবেন বা ব্যাপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ চিকিৎসকরা ভাবতেই পারেন না যে এইরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন। প্রশ্ন যদি করতে হয়, প্রশ্ন তুলুন, বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো সরকারি আইন নিয়ে, প্রশ্ন তুলুন নিয়ামক সংস্থার অদক্ষতা নিয়ে, প্রশ্ন তুলুন এই দু হাজার তেইশ সালে এসে আমাদের সমাজের পচাগলা মানসিকতা নিয়ে। মুষ্টিমেয় কিছু চিকিৎসকের অসাধুতার জন্য সামগ্রিকভাবে চিকিৎসক সমাজ বা চিকিৎসক সংগঠনের দিকে আঙুল তুললে হয়তো সম্পাদকীয়টি একাংশের গ্রাহকের কাছে মনোগ্রাহী এবং সুখপাঠ্য হয়, কিন্তু সেটা এইরকম একটা জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যার প্রতি আপনাদের সচেতনতা এবং সংবেদনশীলতার অভাবকে প্রকট করে , যেটা আপনাদের বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র থেকে প্রত্যাশিত নয়।
আশা করি, আমাদের এই প্রতিবাদ পত্রটি আপনাদের সংবাদপত্রের সম্পাদক সমীপেষু পাতায় জায়গা পাবে।
ধন্যবাদান্তে,
ডা: সৌরভ তালুকদার
সম্পাদকমন্ডলী সদস্য
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস্ ফোরাম