খ্রীস্টমাসে কেক-সুবাসে নাক যত হোক ভরপুর,
রাইয়ের কৃপায় সে সুখ পালায় হাওয়ায় যেমন কর্পূর।
কেকের দোকান সস্তা দিলেও আমার ঘোড়ার ডিম ,
ভাগ্যে প্লেটে এক পিসও নেই প্লাম চকোলেট ক্রিম
সুগার হলে এসব দিকে দেখাও বারণ নাকি,
তোমরা যারা সুগারবিহীন, মিষ্টি খেতে লাকি,
বুঝবে কি আর , ডেসার্ট ছাড়া জীবন ডেজার্ট ধু ধু,
বাদ গিয়েছে মেঠাই ভাজা, তেতোই পড়ে শুধু।
রাইকে বলি বড়দিনে কেক না খাওয়া পাপ
( সাইকোলজির সুকৌশলে মনের ওপর চাপ)
সুন্দরী কন মুখ বেঁকিয়ে রাখো তো গল্পটা,
তোমার কাছে এইটুকু পাপ সাগরে কয় ফোঁটা,
বিয়ের পরে নিত্যদিনের মিথ্যে যদি ধরি,
কবার তবে নরক যাবে , বোঝোই আশা করি,
হাড় জ্বালিয়ে করলে কালি বছর ঊনতিরিশ
শান্ত হয়ে ক্ষান্ত দিয়ে গিলো না আর বিষ,
বাড়লে সুগার মারবে স্নায়ু , কমজোরি হয় বৃক্ক,
বুড়ো হয়ে খোকার মতো বায়না করা শিখছো?
উল্টে আমিই সেন্টু খেয়ে যুদ্ধে হেরে ভুত,
কই গেলে গো সান্টা বুড়ো, উপহারের দূত?
শুধুই কি আর বাচ্চাদেরই দেখলে তোমার হবে
বড়’র মাঝেও শিশুর বাসা, বুঝবে তুমি কবে?
মনে শুধু এই বলেছি দেড়েল বুড়োটিকে,
ঢেউয়ের মতো ভাবনা হঠাৎ এলো আমার দিকে,
ক’দিন আগেই এসেছিলো পাড়ার ছেলের দল,
ফুটপাতিয়া ভিখিরিদের বিলাবে কম্বল,
পার কম্বল ছ’শো টাকা, তেমন হিসেব শুনে,
হাজার তিনেক দিয়েছিলাম তাদের হাতে গুনে,
এখন কিছু কেক যদি দিই কিনে ওদের হাতে,
রোগের বারণ ছাড়াই যাঁদের কেক পড়ে না পাতে,
তাঁদের যদি এ ক্রীসমাসে করাই মিঠে-মুখ,
আমার অসুখ-ফাঁক ভরাবে ওঁদের হাসির সুখ।
রাইকে বলি ভয়ে ভয়ে, হে সুন্দরী, যাবে?
ফুঁসলাতে চায় পরপুরুষ, তাকিয়ে তেমনভাবে,
ফোঁস করে কন গিন্নি আমার , কোন সে চুলোর দোরে?
চুলকে মাথা নামটা বলি ‘ ওই মিও আমোরে’
কেকের দোকান? হ্যাঁগো তোমার শিক্ষা কি আর হয় না?
ডাক্তারে যে বলছে এত, একটু তাতে ভয় না?
আমি বলি একটা নাগো, কিনবো একশোখানা,
রাইয়ের মুখের ভাবগতিকে সন্দেহ দেয় হানা,
বরটা কি তার পুরো পাগল হয়ে গেলো নাকি,
( দুষ্টুলোকে বলে বিশেষ ছিলো না আর বাকি)।
রহস্য সব উঠিয়ে দিয়ে অগত্যা তাই বলি,
চাখবো না রাই , কিনে সেসব বিলাবো কেবলই।
আমার মতো কিপটে যখন খরচা এত করে,
একটা কেমন ম্যাজিক আসে রাইকিশোরীর স্বরে,
পাড়ার থেকে আরো কটা পাগল গেলো জুটে
কেকের সাথে জামাকাপড়, খেলনা এলো উঠে
সেসব যখন বিলোতে যাই সকালে চব্বিশে,
দেওয়ার সুখে সুগার-বিষাদ কোথায় গেলো পিষে!
হঠাৎ করে ভিড়ের থেকে ময়লাটে এক পাকু,
একখানা কেক এগিয়ে বলে খাও না তুমি কাকু!
কাকু কি রে! দাদু ডাকিস, বললো হেসে রাই,
হাতে সে কেক নিয়ে আমি তেনার দিকে চাই।
ঘাড় নেড়ে তার সম্মতিতে আরামসে কামড়াই।